মোহাম্মদ আবদুল হাকিম

মো. আবদুল হাকিম
জন্ম১৯৪৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

মোহাম্মদ আবদুল হাকিম (জন্ম: ১৯৪৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মো. আবদুল হাকিমের জন্ম চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম সোনা মিয়া পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম সাহানারা বেগম। তার স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম। তাদের এক ছেলে তিন মেয়ে। []

কর্মজীবন

মো. আবদুল হাকিম পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে । ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। ছুটি শেষ হলে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে এসেও শেষ পর্যন্ত আর যোগ দিতে যাননি। বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে যাওয়ার পর তাকে মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর চাঁদপুর নৌবন্দরের অদূরে অবস্থিত ডাকাতিয়া নদীর লন্ডন ঘাটে আমেরিকার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি লোরেন নোঙর করেছিল। তাতে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য ও সমরাস্ত্র। মুক্তিবাহিনীর একদল নৌকমান্ডো ওই সময় অবস্থান করছিলেন চাঁদপুরে। তারা খবর পাওয়ামাত্র ওই জাহাজে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। নৌকমান্ডো মো. আবদুল হাকিমসহ তারা ছিলেন ১৫-১৬ জন। তারা লিমপেট মাইনসহ ওই রাতেই লন্ডন ঘাটের অপর পাড়ে ডব্লিউ রহমান জুটমিলের পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় বন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার ছিল এবং রাতে বন্দরে সার্বক্ষণিক সার্চলাইটের আলো জ্বেলে রাখা হতো। বন্দরে থাকা জাহাজের আলোও জ্বালানো থাকত। নদীতে ছিল গানবোটের অনবরত টহল। রাতের অন্ধকারে নদীতে নেমে পড়লেন মো. আবদুল হাকিম ও তার দুই সহযোদ্ধা। তাদের বুকে গামছা দিয়ে বাঁধা লিমপেট মাইন। কোমরে ছুরি। সাঁতরিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছালেন লক্ষ্যস্থলে। সফলতার সঙ্গে জাহাজের গায়ে মাইন লাগিয়ে সরে গেলেন নিরাপদ স্থানে। একটু পর বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো মাইন। বিধ্বস্ত জাহাজ ডুবতে থাকল পানিতে। নিরাপত্তা কঠিন থাকার মধ্যেই নৌকমান্ডোরা এর ভেতরেই অপারেশন করার জন্য সেখানে যান। মো. আবদুল হাকিম, মোমিনউল্লাহ পাটোয়ারীসহ তিনজন নদীতে নেমে ওই জাহাজে লিমপেট মাইন লাগাতে যান। বাকিরা নদীর পাড়ে তাদের নিরাপত্তায় থাকেন। মো. আবদুল হাকিমেরা বুকে মাইন বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘপথ সাঁতরিয়ে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান। তারপর নিজেদের কচুরিপানার আড়াল করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাতে মাইন লাগন। মাইন লাগানোর পর তারা দ্রুত সাঁতরিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। একটু পর তিনটি মাইন বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। শব্দে বন্দরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও জাহাজের নাবিক ও সান্ত্রিরা হকচকিত হয়ে পড়ে। মো. আবদুল হাকিমদের দুঃসাহসিক অভিযানে এমভি লোরেন বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে নিমজ্জিত হয়। স্বাধীনতার পর অনেক বছর সেখান থেকে সেই জাহাজ অপসারণ করা হয়নি। সেটি নৌকমান্ডোদের দুর্ধর্ষ অভিযানের স্মৃতি বহন করে। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৭-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৫১৪। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৭৫। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!