শহীদ হাবিবুর রহমান (জন্ম: ১৯৫৩ - মৃত্যু: ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
হাবিবুর রহমানের জন্ম কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম মেহের আলী মণ্ডল এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম। [২]
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন হাবিবুর রহমান। দৌলতপুর উপজেলার বাড়াগাংদিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুন মাসের প্রথম দিকে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাব সেক্টরে। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, মিরপুর, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার অন্তর্গত শেরপুর গ্রামে সেপ্টেম্বর মাসের পর মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে একের পর এক গেরিলা অপারেশন করতে থাকেন। অবস্থানগত কারণে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিভিন্ন স্থানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন অস্থায়ী ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা এসব ক্যাম্পে অবস্থান করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকারদের ওপর প্রায়ই ঝটিকা আক্রমণ চালাতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ছোট দল শেরপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি সেনারা গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল হাবিবুর রহমানের অস্ত্র। তার সহযোদ্ধাদের অস্ত্রও একসঙ্গে গর্জে উঠল। এমন হঠাৎ আক্রমণে হকচকিত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। তবে দ্রুতই তারা এ অবস্থা কাটিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। শুরু হয়ে গেল দুই পক্ষের তুমুল যুদ্ধ। হাবিবুর রহমান সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের কয়েকটি গুলি এসে লাগল তার শরীরে। ঢলে পড়লেন মাটিতে।
মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে অ্যামবুশ (ফাঁদ) পেতে অপেক্ষা করছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা অ্যামবুশের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে গুলি শুরু করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা প্রথম হকচকিত হয়ে পড়লেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। দুই দলের মধ্যে অনেকক্ষণ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হাবিবুর রহমান যথেষ্ট বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন সংখ্যায় কম। উন্নত অস্ত্রশস্ত্রও তেমন ছিল না। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনারা ছিল ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা বেপরোয়াভাবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যান। এমন অবস্থায় হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করছিলেন। তাদের সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের তীব্রতা কিছুটা কমে যায়। পরিস্থিতি যখন মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে আসছে, ঠিক তখনই হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন হাবিবুর রহমান। পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েন তার এক সহযোদ্ধা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হাবিবুর রহমান মারা যান। শেরপুর ছিল হাবিবুর রহমানের নিজ গ্রাম। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
বহি:সংযোগ