মোহাম্মদ নূরুল হক বীর প্রতীক

মোহাম্মদ নূরুল হক
জন্ম১২ অক্টোবর, ১৯৪৭
জাতীয়তা বাংলাদেশ
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন নূরুল হক

মোহাম্মদ নূরুল হক (জন্ম: ১২ অক্টোবর, ১৯৪৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ নূরুল হকের জন্ম চট্টগ্রাম মহানগরের চাঁদগাঁওয়ের বাদামতলীর খাজা রোডে। তার বাবার নাম শামসুল হুদা এবং মায়ের নাম মোস্তফা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বেগম। তাদের দুই ছেলে। []

কর্মজীবন

নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পর আর লেখাপড়া করতে পারেননি মোহাম্মদ নূরুল হক। ১৯৭১ সালে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো দলে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম নৌবন্দরে সফল অপারেশন শেষে মো. নূরুল হকসহ নৌ-কমান্ডোরা ফিরে গিয়েছিলেন ভারতে। কয়েক দিন পর তিনিসহ ১১ জন আবার চট্টগ্রামে আসেন। সেবার কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিলো না। কিন্তু তারা চাইলেন, বন্দরে পুনরায় অপারেশন করতে। এদিকে অপারেশন জ্যাকপটের পর বন্দরে তুমুল কড়াকড়ি। তাদের পক্ষে সেখানে অপারেশন করা দুঃসাধ্য। এ অবস্থায় তাদের দলনেতা উৎসাহী হলেন বহির্নোঙরে অপারেশন করতে। এর আগে একদিন নূরুল হক একাই দুঃসাহসিকভাবে ওই অপারেশন করেন। পরে বহির্নোঙরে অপারেশনেও তিনি অংশ নেন। কিন্তু তাদের সেই অপারেশন ব্যর্থ হয় ট্র্যাজিক এক ঘটনার মধ্য দিয়ে। এর আগে মধ্য সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে দু-তিন দিনের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা অপারেশন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের আগে নৌ-কমান্ডো কয়েকজন মিলে মানত করলেন, তারা মহসিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করবেন। মানতের খাসি কিনতে একাই গেলেন মোহাম্মদ নূরুল হক। যাওয়ার পথে তার চোখে পড়ল পাকিস্তানি সেনাদের একটি জিপ। নূরুল হক নিজের কাছে থাকা গ্রেনেড বের করে দাঁতের কামড়ে সেফটি পিন খুলে ছুড়ে দিলেন জিপ লক্ষ্য করে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো সেটি। লোকজন দিগিবদিক ছুটে পালাতে থাকল। গাড়িতে আগুন জ্বলতে থাকলো। সামনের কাচ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আরোহী সবাই আহত হয়। একজনের এক হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে মাটিতে। মোহাম্মদ নূরুল হক আর দেরি করলেন না; জনতার ভিড়ে মিশে গেলেন। পরে আবারও নৌ-কমান্ডোরা রাতে ভাটার সময় সমুদ্রের পানিতে নেমে লক্ষ্যস্থলের দিকে যাত্রা শুরু করেন। অনেকক্ষণ সাঁতরেও তারা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। পরে জোয়ারের ধাক্কায় তারা পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় সমুদ্রের তীরে পৌঁছান। তখন তাদের কারও জ্ঞান ছিল না। ১১ জনের মধ্যে সাতজনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। তারা সমুদ্রের যে কূলে অচেতন অবস্থায় পৌঁছান, সেখানে পাকিস্তানি সেনা বা তাদের সহযোগী কেউ ছিল না। গ্রামবাসীর চোখে পড়ে রক্ষা পান। বাকি চারজনের ভাগ্যে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। তাদের একজন ছিলেন মো. নূরুল হক। তারা মৃতপ্রায় অবস্থায় ভেসে ওঠেন মেরিন একাডেমির জেটির কাছে। সেখানে ছিল সশস্ত্র প্রহরা। পাকিস্তানি সেনারা তাদের আটক করে ব্যাপক নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। নির্যাতনে একজন (মোহাম্মদ হোসেন বীর প্রতীক) শহীদ হন। মো. নূরুল হকসহ তিনজনকে পরে ঢাকা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। সেখানেও তাদের ওপর চলে ব্যাপক নির্যাতন। স্বাধীনতার পর তারা ছাড়া পান। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৫৩৫। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৯২। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!