মোহাম্মদ আজাদ আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. আজাদ আলীর জন্ম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভার কুশবাড়িয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আরজান আলী প্রামাণিক এবং মায়ের নাম রাজিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর আজাদ সুলতানা। তাদের দুই ছেলে, এক মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণীর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন মো. আজাদ আলী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। মে মাসে ভারতে যান। জুন মাসের শেষে তাকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সাত নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাবসেক্টর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ করেন। বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন করে তিনি খ্যাতি পান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর নাটোর জেলার অন্তর্গত ইশ্বরদী-রাজশাহী রেলপথের পাশে নাবিরপাড়ার কাছেই ছিল আবদুলপুর রেল জংশন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই রেলপথ সচল রাখার জন্য ট্রেনে নিয়মিত টহল দিত। নভেম্বর মাসে মো. আজাদ আলীর নেতৃত্বাধীন গেরিলা দলের ওপর দায়িত্ব পড়ে ওই টহল ট্রেনে অ্যাম্বুশের। তারা রেকি করে স্থান নির্ধারণ করেন নাবিরপাড়া। তখন সেখানে জনবসতি ছিল না। দুই পাশে ছিল বিস্তৃত আখখেত। রাতে মো. আজাদ আলীর নেতৃত্বে গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে পড়লেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। অন্ধকারে হেঁটে পৌঁছালেন রেললাইনের ধারে। সেখানে তারা রেললাইনে বিস্ফোরক লাগাতে থাকলেন। এমন সময় হঠাৎ দূরে দেখা গেল ট্রেন ইঞ্জিনের আলো। দ্রুত তারা আড়ালে অবস্থান নিলেন। কিন্তু ট্রেনটি অদূরে থেমে গেল। এই সুযোগে মো. আজাদ আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে আবার কাজ শুরু করলেন। কিন্তু এক সহযোদ্ধার ভুলে আগেই ঘটল বিস্ফোরণ। উড়ে গেল আজাদ আলীর বাঁ হাতের কবজি। তিনি টেরও পেলেন না। ঘটনাচক্রে তাদের অপারেশনও সফল হলো।
সেদিন বিস্ফোরক লাইনের নিচে স্থাপনের পর তারা যখন মাইনের সঙ্গে যুক্ত তার ক্যামোফ্লেজ করছিলেন তখন দূরে ট্রেন ইঞ্জিনের আলো দেখা যায়। কথা ছিল টহল ট্রেন অ্যাম্বুশস্থলে এলে তারা বিস্ফোরণ ঘটাবেন। কিন্তু তার এক সহযোদ্ধার ভুলে ছয়টি মাইন একসঙ্গে আগেই বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর মো. আজাদ আলী ও তার সহযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে যেতে থাকেন। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি তার বাঁ হাতের কবজি উড়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর ঘড়িতে সময় দেখতে গিয়ে দেখেন তার হাতের কবজি নেই। এদিকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আবদুলপুরে অবস্থানরত টহল ট্রেনটি দ্রুত নাবিরপাড়ার দিকে আসার সময় মাইন বিস্ফোরণে সৃষ্ট গর্তে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি প্রচণ্ড হুড়মুড় শব্দে খাদের ভেতর উল্টে পড়ে। এতে ১৬ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য ছিল টহল ট্রেনকে অ্যাম্বুশ করে বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেওয়ার। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
পাদটীকা
বহি:সংযোগ