মো. আবদুল গণি (জন্ম: ১৯২৮ - মৃত্যু: ৩১ মার্চ, ২০০২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. আবদুল গণির জন্ম নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের মীর্জানগর গ্রামে। তার বাবার নাম আহমেদউল্যা বেপারী এবং মায়ের নাম হাজেরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। তাদের চার ছেলে ও তিন মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
ইপিআরে চাকরি করতেন মো. আবদুল গণি। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট ইপিআর হেডকোয়ার্টারের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৫ নম্বর সেক্টরে। জৈন্তাপুর, হরিপুর, রাধানগর, জাফলং, গোয়াইনঘাটসহ আরও কয়েকটি স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ২৩ অক্টোবর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গোয়াইনঘাটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৫ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারাও সহযোগী হিসেবে অংশ নেন। কয়েক দিন ধরে সেখানে যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধের কিছুদিন আগে মো. আবদুল গণি একদল মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেতরে এসে গোয়াইনঘাটের ভাঙা সেতুতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হন। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যুদ্ধের পর তারা মো. আবদুল গণির নেতৃত্বে নিরাপদে ভারতের ক্যাম্পে ফিরে যান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার অন্তর্গত তামাবিলের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ক্ষিপ্রগতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ চালায় একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন। একটি ক্ষুদ্র দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. আবদুল গণি। মুহূর্তেই শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। প্রচণ্ড আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানি সেনারা ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে শুরু করল। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর দখলে এল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী ঘাঁটি।
তামাবিলের ওপর দিয়ে সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং সড়ক। ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের যোগাযোগের মাধ্যম ওই সড়কপথ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের এক দল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে সমবেত হন তামাবিলে। ১ মে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আকস্মিকভাবে তামাবিলে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পাকিস্তানি সেনারা তামাবিল দখল করে নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অবস্থান নেন। কয়েকদিন পর ৫ মে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে তামাবিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধারা অধিকাংশই ছিলেন ইপিআর সদস্য। এই আক্রমণে সার্বিক নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মোতালিব, সুবেদার মেজর বি আর চৌধুরী, সুবেদার মজিবুর রহমান। একটি দলের নেতৃত্ব দেন মো. আবদুল গণি। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তামাবিল থেকে পালিয়ে যায়। ওই যুদ্ধে মো. আবদুল গণি যথেষ্ট সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তামাবিল দখল করেন। অনেক দিন তামাবিল তাদের দখলেই ছিল। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
পাদটীকা
বহিঃসংযোগ