আবদুল মজিদ মিয়া

আবদুল মজিদ মিয়া
মৃত্যু২০০৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আবদুল মজিদ (জন্ম: অজানা - মৃত্যুঃ ২০০৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। []

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবদুল মজিদের জন্ম গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার দাখিনখান গ্রামে। তার বাবার নাম মো. জনাব আলী এবং মায়ের নাম আয়েশা বেগম আহল্লাদী। তার স্ত্রীর নাম জরিনা বেগম। তাদের চার ছেলে ও চার মেয়ে।

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ব্যাটালিয়ন) সুবেদার মেজর ছিলেন আবদুল মজিদ। এর অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে এবং অধিনায়ক (কমান্ডিং অফিসার) ছিলেন বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল জলিল।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের শুরুতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে পাকিস্তানে (তখন পশ্চিম পাকিস্তান) বদলি করা হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে মার্চ মাসে রেজিমেন্টের অর্ধেক সদস্য ছুটিতে এবং আবদুল মজিদসহ বাকিরা যশোরের জগদীশপুরে বার্ষিক ফিল্ড এক্সসারসাইজে ছিলেন। তখন ওই এলাকা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। জনবসতি বা মানুষজন ছিল না। ফলে দেশের ঘটনাপ্রবাহ আবদুল মজিদেরা তেমন জানতেন না। ২৫ মার্চ রাত থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে কী ঘটেছিল, তা তাদের অজানা ছিল। ২৯ মার্চ দুপুরে তলব পেয়ে রাত আনুমানিক ১২টায় তারা সেনানিবাসে পৌঁছান। পরদিন সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১০৭ ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার দুররানী রেজিমেন্ট হেডকোয়ার্টারে আসেন এবং রেজিমেন্ট অধিনায়ককে জানান, তাদের নীরস্ত্র করা হলো। এরপর তিনি অস্ত্রাগারের চাবি নিয়ে চলে যান। এই খবর মুহূর্তেই বাঙালি সেনাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বিদ্রোহ করেন এবং অস্ত্রাগার ভেঙে যাঁর যাঁর অস্ত্র নিজ হাতে নিয়ে চারদিকে পজিশন নেন। খবর পেয়ে যশোর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ রেজিমেন্ট ও ২২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স তাদের আক্রমণ করে। আবদুল মজিদ ও তার সহযোদ্ধারা অত্যন্ত দৃঢ়তা ও দক্ষতার সঙ্গে ওই আক্রমণ প্রতিহত করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত কয়েকবার আক্রমণ করে। প্রতিবারই তারা সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন। যুদ্ধ চলাবস্থায় তিনি এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) কয়েকবার অধিনায়ক রেজাউল জলিলের কাছে গিয়ে অণুরোধ করেন, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু তিনি নেতৃত্ব দিতে অস্বীকার করেন। এ অবস্থায় তিনি হাফিজ উদ্দিনের ওপর যুদ্ধের নেতৃত দেন। যশোর সেনানিবাসে তাদের তুলনায় পাকিস্তানি সেনা ছিল অনেক বেশি। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মজিদ ও তার সহযোদ্ধারা বুঝতে পারেন, বেশিক্ষণ তারা যুদ্ধ চালাতে পারবেন না। সে জন্য তারা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় আবদুল মজিদ তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে আবার রেজাউল জলিলের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তিনি পুনরায় অস্বীকৃতি জানান। বরং একপর্যায়ে তাকে কৌশলে তার গাড়িতে তুলে অজানার উদ্দেশে রওনা হন। পথে আবদুল মজিদ বুঝতে পারেন, তার অধিনায়ক আসলে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি সঙ্গে সঙ্গে চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন। পাকিস্তানি সেনারা উত্তর-পূর্ব-দক্ষিণ, তিন দিক থেকে তাদের আক্রমণ করেছিল। পশ্চিম দিক দিয়ে আক্রমণ না করলেও সেদিকেও মাঝে মাঝে গুলি ছুটে আসছিল। তারা শেষ পর্যন্ত ওই দিক দিয়েই সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে চৌগাছায় একত্র হন। এরপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে আবদুল মজিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারণ তখন তাদের দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একমাত্র হাফিজ উদ্দিন ছাড়া আর কোনো সেনা কর্মকর্তা ছিলেন না। ফলে তখন নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তার ওপরেও অনেক সময় পড়ে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার পর আবদুল মজিদ প্রথমে ১১ নম্বর সেক্টরে, পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৭-০৮-২০১২"। ২০১৫-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৭০। আইএসবিএন 9789849025375 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!