মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (বীর প্রতীক)

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

শহীদ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মো. শহীদুল্লাহ’র জন্ম ঢাকার লালবাগের মনেশ্বর রোডে। তার বাবার নাম সফিকউল্লাহ এবং মায়ের নাম আংগুরা বেগম। তারা সাত ভাই ও তিন বোন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। []

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন মো. শহীদুল্লাহ। পুরান ঢাকায় মামার বাড়িতে থেকে স্কুলে পড়াশোনা করতেন তিনি। তার মামার নাম ছিল হাজি কাজী কাদের। তিনি সে সময় বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কয়েক দিন পর মো. শহীদুল্লাহ যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য মামার কাছে অনুমতি চান। কিন্তু মামা তাকে সে অনুমতি দেননি। পরে মে মাসের শেষ দিকে একদিন মামার বাড়ি থেকে পালিয়ে পুরান ঢাকার কয়েকজনের সঙ্গে ভারতে যান। সেখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ১১ নম্বর সেক্টর এলাকায় ছোটখাটো অপারেশনে অংশ নিতে থাকেন। এ সময় ২ নম্বর সেক্টরের সেক্টর প্রধান খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) তাঁদের কথা জানতে পারেন। তিনি ঢাকা শহরে বসবাসকারী বলে তাঁদের নিজ সেক্টরে নিয়ে এসে ঢাকাবাসী কয়েকজন ছাত্র-যুবকদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁদের পুনরায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে ঢাকা মহানগরের পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় গেরিলাযুদ্ধ করার জন্য পাঠানো হয়। কিশোর মো. শহীদুল্লাহ বেশ কয়েকটি দুঃসাহসিক অপারেশনে অংশ নেন। তাঁদের দল বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মো. শহীদুল্লাহসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ঢাকার অদূরেই। তারা বেশির ভাগ ছিলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর আনন্দে উদ্বেল মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য রওনা হলেন ঢাকার উদ্দেশে। কিন্তু পথে ঘটল মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। নদী পার হতে গিয়ে নৌকাডুবিতে সলিলসমাধি হলো মো. শহীদুল্লাহ, আবুল হোসেনসহ (বীর প্রতীক) ১০ জন দুর্ধর্ষ ও সাহসী মুক্তিযোদ্ধার। মুহূর্তেই আনন্দ পরিণত হলো শোকে। খোলামুড়া ঘাট ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে পুরান ঢাকার অধিবাসী কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কেরানীগঞ্জে। তারা ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় গেরিলাযুদ্ধ করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করার পর তারা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য ফিরছিলেন ঢাকায়। পথে ছিল ধলেশ্বরী নদী। তখন ধলেশ্বরী ছিল প্রমত্তা ও বেশ চওড়া নদী। মো. শহীদুল্লাহ, আবুল হোসেনসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা একটি নৌকায় খোলামুড়া ঘাট দিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন। মাঝনদীতে হঠাৎ নৌকা ডুবে যায়। মো. শহীদুল্লাহ, আবুল হোসেনসহ বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাই সাঁতার জানতেন না। সাঁতার জানা সহযোদ্ধারা দু-তিনজনকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা নদীতে অসহায়ভাবে ডুবে মারা যান। পরে স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় তাঁদের মরদেহ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৭-১১-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!