মঙ্গল মিয়া

মঙ্গল মিয়া
মৃত্যু
১৯৮২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

মঙ্গল মিয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মঙ্গল মিয়ার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার ভাটামাখা গ্রামে। তার বাবার নাম আনোয়ার আলী এবং মায়ের নাম কেউ বলতে পারেননি। স্ত্রী জাহেরা বেগম। তার দুই ছেলে, ছয় মেয়ে।[]

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন মঙ্গল মিয়া । ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসে সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার কথা বলে তাদের সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে সালদা নদী, মন্দভাগ, কসবা এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে সুবেদার পদ থেকে অবসর নেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১৮ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মন্দভাগ রেলস্টেশনে মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন ভারতীয় এলাকায় একটি ক্যাম্পে। সেদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান এক দল পাকিস্তানি সেনা কসবা রেলস্টেশন থেকে রেলের একটি ট্রলিতে করে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও রেশন নিয়ে রওনা হয়েছে সালদা নদী রেলস্টেশনে। ট্রলির নিরাপত্তায় রয়েছে আরেক দল পাকিস্তানি সেনা। তারা সব মিলে ছিলো প্রায় ২০০ জন। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করার। তারা দ্রুত সীমান্ত অতিক্রম করে অবস্থান নেন মধ্যবর্তী মন্দভাগ স্টেশনের কাছে। তারা ছিলেন ৪০ জন। দলের নেতৃত্বে আবদুল ওয়াহাব (বীর বিক্রম)। মঙ্গল মিয়া ছিলেন সহদলনেতা। তাদের অস্ত্র বলতে ছিল দুটি মেশিনগান, সাতটি এলএমজি, একটি দুই ইঞ্চি মর্টার ও একটি রকেট লাঞ্চার। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত অবস্থান নিলেন গাছপালা ও ঝোপঝাড়ের আড়ালে। মঙ্গল মিয়াসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা। অদূরে রেলস্টেশন। সেই রেলস্টেশনের দিকে আসছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট এক দল। শত্রু পাকিস্তানি সেনাদলের বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদ এলাকায় ঢুকে পড়ার সাথে সাথে একসঙ্গে গর্জে উঠল মঙ্গল মিয়া ও তার সহযোদ্ধাদের অস্ত্র। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। পেছনে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা যে যেভাবে পারল এদিক-সেদিক ঝাঁপিয়ে পড়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে দিশেহারা জীবিত পাকিস্তানি সেনারা শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেল। পাকিস্তানি সেনারা রেলট্রলিকে মাঝে রেখে রেললাইনের দুই পাশ ধরে সারিবদ্ধভাবে হেঁটে আসছিল। রেললাইনের সমান্তরাল রাস্তায় ছিল আরেক দল পাকিস্তানি সেনা। রেলট্রলি ও সেনারা অ্যামবুশের মধ্যে ঢোকামাত্র মঙ্গল মিয়ারা একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে রকেট লাঞ্চারের একটি গোলা ট্রলি ভেদ করে চলে যায়। গুলিবিদ্ধ কয়েকজন সেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনারা রেললাইনের আড়ালে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। দুই পক্ষে প্রায় ঘণ্টাখানেক তুমুল যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা শেষ পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১০-০৩-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৩৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৫৫। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!