আবদুল জলিল (জন্ম: ১৯৪৩ এবং মৃত্যু :৮ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আবদুল জলিলের জন্ম যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পাল্লা গ্রামে। তার বাবার নাম মোহর আলী মোড়ল এবং মায়ের নাম ইয়ার বানু। তার স্ত্রীর নাম হালিমা বেগম। এ দম্পতির চার ছেলে ও তিন মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে আবদুল জলিল ইপিআরের ৭ নম্বর উইংয়ের অধীনে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি সীমান্ত বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে নিজ এলাকা যশোরের ঝিকরগাছায় চলে আসেন। পরে ওখানকার ইপিআরে সঙ্গে যোগ দেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর ভারতে যান।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে সন্ধ্যাবেলায় যশোর জেলা সদরের পশ্চিমে ঝিকরগাছা উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণের জন্য অতি সন্তর্পণে মুক্তিবাহিনীর একটি দল এগিয়ে যায়। দলে ছিল গণবাহিনীর ১৫ জন ও ইপিআরের কয়েকজন। তারা দোসহাতিনায় অবস্থান নেন। সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্ত ডিফেন্স ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন অলীক কুমার গুপ্ত। সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন আবদুল জলিল। আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ডিফেন্স লক্ষ্য করে একযোগে গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধাদের সব অস্ত্র। পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম দিকে পাল্টা আক্রমণের তেমন সুযোগ পেল না। ওখান থেকে শোনা গেল শুধু চিৎকার আর আর্তনাদ। বিপর্যস্ত হয়ে গেল শত্রুর ডিফেন্স। একটু পর তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। আবদুল জলিল ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ১০ জন সেনা নিহত হয়। তাদের পাঁচটি চায়নিজ রাইফেল, কিছু হেলমেট ও খাদ্য মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন গেরিলা যোদ্ধা আহত হন। আবদুল জলিল মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের বসরা সাব-সেক্টরের অধীন ঝিকরগাছা ও শার্শা এলাকায় যুদ্ধ করেন। বেশিরভাগ সময় তিনি ঝিকরগাছায় অবস্থান করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই এলাকায় প্রতিনিয়ত যুদ্ধ হয়েছে। মে মাসের দিকে পাকিস্তানি সেনারা ঝিকরগাছা উপজেলার আজমপুর, বোদখানা, দোসহাতিনা, গঙ্গাধরপুর গ্রামে বিভিন্ন দিন আক্রমণ করে। আবদুল জলিল ইপিআরদের সঙ্গে নিয়ে তখন পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান। ফলে তখন পাকিস্তানিরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানিরা জানতে পারে, এসব আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইপিআরের আবদুল জলিল। তখন তারা লোকজনের সামনে বলে, ‘জলিল জিন হে না, রকেট হে।’ সেই থেকে আবদুল জলিল হয়ে যান রকেট জলিল। আবদুল জলিল একবার ঝিকরগাছার সিংড়ি ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামে রাস্তায় মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শত্রুপক্ষের কয়েকজনকে হতাহত করেন। এক দিন বেনেয়ালি এলাকা থেকে এক বিদেশি নারী যাজককে তিনজন পাকিস্তানি সেনা ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে আবদুল জলিল সহযোদ্ধা হাজারী লাল তরফদারকে সঙ্গে নিয়ে তাদের আক্রমণ করেন এবং নারী যাজককে উদ্ধার করেন। দুই পাকিস্তানি সেনা তাদের হাতে নিহত হয়। একজনকে তারা জীবিত অবস্থায় আটক করেন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ