শাখাওয়াত হোসেন

শাখাওয়াত হোসেন
মৃত্যু২৬ নভেম্বর, ১৯৭৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

শাখাওয়াত হোসেন (ডাক নাম বাহার) (জন্ম: অজানা, মৃত্যু: ২৬ নভেম্বর, ১৯৭৫ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [][]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শাখাওয়াত হোসেনের জন্ম নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের কাজলা গ্রামে। তার বাবার নাম মহিউদ্দিন তালুকদার এবং মায়ের নাম আশরাফুননেছা। মুক্তিযুদ্ধে তারা সাত ভাই ও তিন বোন সবাই অংশ নেন। চার ভাই খেতাবপ্রাপ্ত।

কর্মজীবন

শাখাওয়াত হোসেন ১৯৭১ সালে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ময়মনসিংহ দখলের জন্য অগ্রসর হতে থাকলে তিনি ইপিআরদের সংগঠিত করে মধুপুর সেতুর অপর পাশে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিমান আক্রমণ করে তাদের প্রতিরোধ ভেঙে দেয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তিনি ভারতে যান। তুরায় নিজের এক ভাই বেলাল এর সাথে এক্সপ্লোসিভ ও লিডারশিপ প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের ঢালু ও মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। এই ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন বাহারেরই সেজো ভাই কর্নেল আবু তাহের। তিনি পরে আরও কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। কামালপুরে কয়েক দিন পরপরই তারা গেরিলা হামলা চালাতেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের জুন মাসের একদিন মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অন্ধকার রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের দিকে যেতে থাকে। এ ঘটনা ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট। কয়েকটি দলের মধ্যে শাখাওয়াত হোসেন বাহার একটি দলের নেতৃত্বে। তার দলের কাছে অস্ত্র বলতে দুটি এলএমজি। বাকি সব স্টেনগান ও রাইফেল। একজন পথপ্রদর্শক তাঁদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অন্ধকারে পথপ্রদর্শকের ভুল নির্দেশনায় তারা শত্রুর প্রতিরক্ষা অবস্থানের একদম কাছে চলে যান। উপস্থিতি টের পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আক্রমণ করে। এদিকে কথা ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ শুরু করার আগে সেখানে ভারত থেকে দূরপাল্লার কামানের গোলা বর্ষণের। ঠিক তখনই শুরু হয় ভারত থেকে কামানের গোলাবর্ষণ। সেগুলো পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর না পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরই পড়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ এবং নিজেদের গোলায় শহীদ ও আহত হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। এতে অক্ষত মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। জীবন বাঁচাতে কেউ কেউ দলনেতার নির্দেশ ছাড়াই বিভিন্ন দিকে পশ্চাদপসরণ শুরু করেন। চরম সংকটময় এক অবস্থা। শাখাওয়াত হোসেন দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। একই সঙ্গে বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গোলন্দাজ দলকে পরিস্থিতি জানান। পরে তারা নিশানা ঠিক করে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। এরপর শাখাওয়াত হোসেন উদ্যোগ নেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণের। কিন্তু দেখা গেল তার দলের বেশির ভাগ সহযোদ্ধা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মনোবলও ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় তিনি পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। সেদিন শেষ পর্যন্ত তাঁদের আক্রমণের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তবে সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে তিনি দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেন। তার অস্ত্র দিয়ে গুলি করে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের ব্যতিব্যস্ত রাখেন। এ সুযোগে তার সহযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। তার একক প্রচেষ্টায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা প্রাণে বেঁচে যান।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ৩০-০৬-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

পাদটীকা

বহি:সংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!