ফ্রান্স, ইতালি ও বেলজিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যকার আলোচনার পর ১৯৫৪ সালের ১৫ই জুন তারিখে সুইজারল্যান্ডেরবাজেলে উয়েফা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[৪] প্রতিষ্ঠাতা সভায় ২৫টি অ্যাসোসিয়েশন উপস্থিত ছিল, তবে উক্ত সভায় উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও বাকি ৬টি অ্যাসোসিয়েশনও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেব স্বীকৃতি অর্জন করেছে; সর্বমোট ৩১টি অ্যাসোসিয়েশন উয়েফার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।[৫] সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়ার বিভাজনের ফলে নতুন অঙ্গ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে উয়েফা ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ৫০টি অ্যাসোসিয়েশন বেশি সদস্যে উন্নীত হয়েছে। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত এই সংস্থাটির প্রধান সদরদপ্তর ফ্রান্সেরপ্যারিসে এবং পরবর্তীকালে বের্নে অবস্থিত ছিল। ১৯৯৫ সালে উয়েফার সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের নিওঁয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
উয়েফার সদস্যপদ ইউরোপের একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতির সাথে অধিকাংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ (৫৫টি সদস্যের মধ্যে ৪৮টি জাতিসংঘের সার্বভৌম সদস্য রাষ্ট্র), যদিও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র (মোনাকো) এবং জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র (ভ্যাটিকান সিটি) এই সংস্থার সদস্য নয়। কিছু সদস্য সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়, কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষাপটে একটি বৃহত্তর স্বীকৃত সার্বভৌম রাষ্ট্রের অংশ, যার মধ্যে রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস (যুক্তরাজ্যের দেশ), জিব্রাল্টার (ব্রিটিশ বৈদেশিক অঞ্চল), ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ (ডেনমার্ক রাজ্যের মধ্যকার অঙ্গ দেশ) এবং কসোভো (সীমিত স্বীকৃতিসহ রাজ্য), তবে এই দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে ক্রীড়া সম্পর্কিত সরকারি অনুষ্ঠান উয়েফা সদস্য সত্তার সাথে আঞ্চলিক স্তরে বহন করা হয়।
কিছু উয়েফা সদস্য আন্তঃমহাদেশীয় রাষ্ট্র (আজারবাইজান, জর্জিয়া, কাজাখস্তান, রাশিয়া এবং তুরস্ক) এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উভয় (আর্মেনিয়া এবং সাইপ্রাস) ইউরোপের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। যে সব দেশ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সদস্য ছিল, তারাও ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থার সদস্য ছিল, বিশেষ করে ইসরায়েল (কারণ ১৯৭৪ সালে তাদের এএফসি গ্রুপ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল) এবং কাজাখস্তান। কিছু উয়েফা সদস্য অ্যাসোসিয়েশন তাদের অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অঞ্চলের বাইরের দলগুলোকে তাদের "ঘরোয়া" প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ফরাসি ক্লাব মোনাকো (যদিও একটি পৃথক সার্বভৌম সত্তা) লীগ ১-এ; ওয়েলশ ক্লাব কার্ডিফ সিটি, সোয়ানসি সিটি এবং নিউপোর্ট কাউন্টিপ্রিমিয়ার লীগে; উত্তর আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক ক্লাব ডেরি সিটিলীগ অব আয়ারল্যান্ডে এবং লিশটেনস্টাইনের ৭টি স্থানীয় লিকটেনস্টাইন সুইস লীগে অংশগ্রহণ করে, কেননা লিশটেনস্টাইনের কোন ঘরোয়া লীগ নেই, কেবল একটি কাপ প্রতিযোগিতা রয়েছে।[৬]
উয়েফার প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় দলগুলো ফিফা বিশ্বকাপে সফলতা অর্জন করেছে। এখন পর্যন্ত ২১টি আসরের মধ্যে ইউরোপীয় দলগুলো ১২টি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়লাভ করেছে। ইতালি এবং জার্মানি চারটি করে শিরোপা জয়লাভ করেছে; অন্যদিকে, ফ্রান্স দুটি এবং ইংল্যান্ড ও স্পেন একটি করে শিরোপা জয়লাভ করেছে। স্পেনের লা লিগা, ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লীগ, জার্মানির বুন্দেসলিগা, ইতালির সেরিয়ে আ এবং ফ্রান্সের লীগ ১ নিয়ে গঠিত তথাকথিত "বিগ ফাইভ ইউরোপিয়ান লীগ" আয়োজনের জন্যও এই দেশগুলোর অ্যাসোসিয়েশন কাজ করে।
↑ইজরায়েল ১৯৯২ সাল থেকে উয়েফার সহযোগী সদস্য ছিল, তাই ইজরায়েলি ক্লাবগুলো ১৯৯২-৯৩ এবং ১৯৯৩-৯৪ সালে উয়েফা ক্লাব প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার যোগ্য ছিল যদিও ইজরায়েল তখন উয়েফার পূর্ণ সদস্য ছিল না।
↑এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের প্রাক্তন সদস্য (১৯৯৪-২০০২) উয়েফায় যোগ দেয়।
↑১৯১১ সালে Związek Polski Piłki Nożnej (বিচ্ছিন্ন অস্ট্রীয় ফুটবল ইউনিয়নের অংশ) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, বর্তমান ফেডারেশনের পূর্বসূরি।
প্রতিযোগিতা
আন্তর্জাতিক
জাতীয় ফুটবল দলের জন্য উয়েফা যে প্রধান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেটি হচ্ছে উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, যা শুরু হয়েছে ১৯৫৮ সালে এবং প্রথম ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। ১৯৬৪ সালের আগে এটি ইউরোপিয়ান নেশনস কাপ নামেও পরিচিত ছিল। উয়েফা নেশনস লীগ নামক সাম্প্রতিক একটি দ্বিবার্ষিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যা ফিফা ফ্রেন্ডলির প্রতিস্থাপক রূপে খেলা হয়। উয়েফা জাতিভিত্তিক দলের জন্য অনূর্ধ্ব-২১,অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-১৭ প্রতিযোগিতাও আয়োজন করে।
উয়েফা ইউরোপে দলভিত্তিক ফুটবলের জন্য প্রধান দুটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেঃ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ যা ১৯৫৫ সালে শুরু হয় ও ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাব’স কাপ (বা শুধু ইউরোপিয়ান কাপ) নামেও পরিচিত ছিল; এবং উয়েফা কাপ, যা ১৯৭১ সালে শুরু হওয়া জাতীয় পর্যায়ে কাপ বিজয়ীদের নিয়ে নকআউট প্রতিযোগিতা। আরেকটি তৃতীয় প্রতিযোগিতা কাপ উইনার্স কাপ ১৯৬০ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৯৯ সালে উয়েফা কাপের সাথে একত্রীত হয়েছে। কেবল চারটি দল তিনটি প্রতিযোগিতাই জিতেছে, যা কাপ উইনার্স কাপ জেতেনি এমন দলের জন্য বর্তমানে আর সম্ভব নয়। ইউরোপের দশটি দল তিনটি ট্রফির দুটিই জিতেছে। এর মধ্যে সবাই কাপ উইনার্স কাপ জিতেছে কিন্তু ছটি দলের চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতা ও চারটি দলের উয়েফা কাপ জেতা বাকী আছে।
উয়েফা সুপার কাপ, যাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ বিজয়ী ও উয়েফা কাপ বিজয়ী (পূর্বে কাপ উইনার্স কাপ বিজয়ী) অংশ নেয়, ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু হয়।
উয়েফা ইন্টারটোটো কাপ একটি গ্রীষ্মকালীন প্রতিযোগিতা যা পূর্বে মধ্য ইউরোপের কিছু দেশ আয়োজন করত। উয়েফা ১৯৯৫ সালে এটি পুনরায় চালু করে উয়েফা কাপের বাছাই পর্ব হিসেবে। সম্প্রতি উয়েফা আধা-পেশাদার দলের জন্য উয়েফা রিজিয়নস কাপ চালু করেছে। নারী দলের জন্য উয়েফা উইমেন’স কাপ চালু আছে।
↑Vieli, André (২০১৪)। "UEFA: 60 years at the heart of football"(পিডিএফ)। UEFA.com। Nyon: Union of European Football Associations। পৃষ্ঠা 169। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০।