ফুটসাল একটি ফুটবল-ভিত্তিক ক্রীড়া, যা ফুটবল মাঠের চেয়ে ছোট একটি শক্ত মাঠে এবং প্রধানত অভ্যন্তরীণ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্রীড়াকে সংক্ষিপ্ত স্তরের ফুটবল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি ৫ জনের দলের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত ফুটবল, যা অভ্যন্তরীণ ফুটবলের সাথে মিল রয়েছে।[২]
ফুটসাল পাঁচ জন খেলোয়াড়ের দুটি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, যাদের মধ্যে একজন গোলরক্ষক থাকে। এই ক্রীড়ায় সীমাহীন খেলোয়াড় বদলের অনুমতি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ফুটবলের কিছু অন্যান্য বিন্যাসের বিপরীতে, এই ক্রীড়া লাইন দ্বারা চিহ্নিত একটি শক্ত মাঠে আয়োজন করা খেলা হয়; যেখানে দেয়াল অথবা বোর্ড ব্যবহার করা হয় না। এটি ফুটবলের চেয়ে ছোট, কঠিন, কম লাফানো বল দিয়ে খেলা হয়।[৩] এই মাঠের পৃষ্ঠ, বল এবং নিয়ম বল নিয়ন্ত্রণ এবং ছোট পাস প্রদানের জন্য তৈরিকৃত।[৪] এই ক্রীড়াটি "তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা এবং কৌশল"-এর উপর জোর দিয়ে থাকে।[৫]
ইতিহাস
উৎপত্তি
১৯৩০ সালে উরুগুয়েরমোন্তেভিদেওর একজন শিক্ষক হুয়ান কার্লোস সেরিয়ানি কর্তৃক ওয়াইএমসিএ-এর জন্য অভ্যন্তরীণ ফুটবলের একটি সংস্করণ তৈরি করার মাধ্যমে ফুটসালের উদ্ভাবন হয়েছে।[৬] এই ক্রীড়াটি মূলত বাস্কেটবল মাঠের জন্য বিকশিত হয়েছিল।[৭] ১৯৩৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নতুন ক্রীড়ার জন্য নিয়মের একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। ফুটবল ইতিমধ্যে উরুগুয়েতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এবং দেশটি ১৯৩০ বিশ্বকাপ এবং ১৯২৪ এবং ১৯২৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের পর এটি আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। সেরিয়ানির লক্ষ্য ছিল ফুটবলের মতো একটি দলগত খেলা তৈরি করা, যা ঘরের ভেতরে অথবা বাইরে উভয় স্থানে খেলা যেতে পারে।
নিয়মাবলী লেখার সময়, সেরিয়ানি ফুটবলের নিয়মগুলো একত্রিত করেছিলেন, যেখানে বলটি হাত ব্যতীত শরীরের প্রতিটি অংশের সাথে স্পর্শ করতে পারতো। এছাড়াও ফুটসালের নিয়ম প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্রীড়ার নিয়মও ব্যবহার করা হয়েছিল; যার মধ্যে বাস্কেটবল হতে খেলোয়াড়দের সংখ্যা (প্রতি দলে পাঁচ) এবং খেলার সময়কাল (৪০ মিনিট); ওয়াটার পোলো হতে গোলরক্ষণ নিয়ম; এবং দলগত হ্যান্ডবল হতে মাঠ এবং গোলের মাপ অন্যতম।
ওয়াইএমসিএ অবিলম্বে দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে এই ক্রীড়াটি ছড়িয়ে দিয়েছিল। এটি সহজেই সকলে, সর্বত্র এবং যেকোন আবহাওয়ায়, অন্যান্য ক্রীড়ার খেলোয়াড়দের সারা বছর ধরে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করেছিল। এই সকল কারণে জোয়াও লোতুফো তার দেশ ব্রাজিলে খেলাটি আনতে এবং শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে রাজি করিয়েছিলেন।
প্রাথমিকভাবে নিয়মগুলো অভিন্ন ছিল না। ১৯৫৬ সালে, হাবিব মাফুজ এবং লুইজ গনজাগা গোনসাগা দে ওলিভেইরা ফের্নান্দেস ব্রাজিলেরসাও পাওলোর ওয়াইএমসিএ-এর মধ্যে জ্যেষ্ঠদের প্রতিযোগিতা আয়োজন করার অনুমতি দেওয়ার জন্য নিয়মগুলো সংশোধন করেছিলেন। লুইজ গনজাগা গোনসাগা দে ওলিভেইরা ফের্নান্দেস ১৯৫৬ সালে "বুক অব রুলস অব ফুইতসাল" নামক ফুটসালের নিয়মাবলীর একটি বই লিখেছিলেন, যা পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গৃহীত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, পেরু, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল নিয়ে গঠিত কনফেদেরাসিওন সুদামেরিকানা দে ফুতবোল দে সালোন গঠিত হয়েছে। এর কিছুদিন পরেই একটি অনন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এটি দক্ষিণ আমেরিকান গণমাধ্যমের পাশাপাশি জনগণের কাছে বেশ আকর্ষিত করেছিল, যার ফলে দর্শক নিয়মিতভাবে ফুটসাল অনুসরণ করতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে সাংবাদিক হোসে আন্তোনিও ইংলেস এই ক্রীড়াটির দ্রুত বিস্তারে বেশ অবদান রেখেছিলেন, সেইসাথে খেলাটি সংজ্ঞায়িত করার জন্য "ফুটসাল" নামটি তৈরি করা ব্যক্তি হিসেবে তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ারএস্তাদিও ন্যাশিওন্যাল মানে গ্যারিঞ্চায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার ৫৬,৪৮৩ জন দর্শকের সামনে ইতিহাসের সবচেয়ে দর্শকের উপস্থিতিতে ফুটসাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।[৮]
নামকরণ
ফুটসাল স্পেনীয় শব্দ "ফুতবোল সালা" অথবা "ফুতবোল দে সালোন" এবং পর্তুগিজ শব্দ "ফুতেবোল দে সালাও" (সকল শব্দের অর্থ "অভ্যন্তরীণ ফুটবল") হতে আগত। ১৯৮৫ সালে স্পেনেরমাদ্রিদে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সময়, স্পেনীয় নাম "ফুতবোল সালা" ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে ফিফার সাথে "ফুতবোল" নামটি নিয়ে বিতর্কের পর বিশ্ব ফুটসাল অ্যাসোসিয়েশন বর্তমান নামটি নিবন্ধিত করেছে। তারপর থেকে, ফুটসাল আনুষ্ঠানিকভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নাম হয়ে উঠেছে এবং বর্তমানে ফিফাও এই শব্দটি ব্যবহার করছে।
পরিচালনা পরিষদ
ফুটসালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হল বিশ্ব ফুটসাল অ্যাসোসিয়েশন (এএমএফ) এবং ফিফা। এএমএফ হল ফুটসালের মূল পরিচালনা পরিষদের উত্তরাধিকারী সংগঠন। ফিফা পরবর্তীকালে ফুটসালের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে, ফিফা এবং এএমএফের মধ্যে পরিচালনা পরিষদের পুনর্মিলনের জন্য আলোচনা সফল হয়নি, যার ফলে ফিফা তাদের নিজস্ব আলাদা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।
আন্তর্জাতিক ফুটসাল জোট (আইএফএ) হল বিশ্বের উচ্চমানের ফুটসাল প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য গঠিত দেশগুলোর একটি অংশীদারিত্ব। এটি ফিফার সাথে প্রতিযোগিতা করার পরিবর্তে নিজেদের আনুষঙ্গিক হিসেবে প্রকাশ করে থাকে। এর সদস্যতা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ওশেনিয়া থেকে বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত। আইএফএ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পুরুষদের জন্য একটি বিশ্বকাপ এবং ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত নারীদের জন্য একটি বিশ্বকাপ অন্যতম।[৯]
↑ কখগঘঙচ"UEFS History"। ১৪ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"UEFS Champions League MALE"। ৬ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"UEFS Cup MALE"। ৬ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Cup of European Veterans MALE"। ৬ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"UEFS Champions League FEMENINO" (স্পেনীয় ভাষায়)। ২৯ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Copa UEFS FEMENINO" (স্পেনীয় ভাষায়)। ৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১০।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Futsal World Ranking"। Futsalworldranking.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)