কোপা আমেরিকা (স্পেনীয়: Copa América, বাংলা: আমেরিকা কাপ) অথবা কনমেবল কোপা আমেরিকা (বাংলা: কনমেবল আমেরিকা কাপ) (এছাড়াও স্পেনীয় ভাষায় কাম্পেওনাতো সুদামেরিকানো দে ফুতবল (স্পেনীয়: Campeonato Sudamericano de Fútbol) এবং পর্তুগিজ ভাষায় কোপা সুল-আমেরিকানা দে ফুতেবল (পর্তুগিজ: Copa Sul-Americana de Futebol) নামে পরিচিত) হচ্ছে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা, যেখানে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (কনমেবল) সদস্যপ্রাপ্ত পুরুষদের জাতীয় ফুটবল দলগুলো প্রতিযোগিতা করে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে।[১][২][৩] এই প্রতিযোগিতাটি ১৯১৬ সালে সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয়। এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে পরিচিত ছিল, অতঃপর ১৯৭৫ সালে বর্তমান নামে পরিবর্তন করা হয়েছে।[৪] এটি বর্তমানে চলমান প্রাচীনতম আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক দেখা ফুটবল প্রতিযোগিতা।[১] ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার দলগুলোকেও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
১৯৯৩ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতায় সাধারণত ১২টি দল অংশগ্রহণ করে — কনমেবল থেকে ১০টি দল এবং অন্যান্য কনফেডারেশন থেকে অতিরিক্ত ২টি দল। মেক্সিকো ১৯৯৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আসরে অংশগ্রহণ করেছে, ১৯৯৯ সাল (উক্ত আসরে এএফসি হতে জাপান অংশগ্রহণ করেছিল) এবং ২০১৯ সাল ব্যতীত (উক্ত আসরে এএফসি হতে জাপান এবং কাতার অংশগ্রহণ করেছিল) কনকাকাফ থেকে একটি অতিরিক্ত দল অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রতিযোগিতার ২০১৬ সালের আসরটি কোপা আমেরিকার ১০০তম বছর পূর্তি উৎযাপন করেছিল, যা কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিও নামে পরিচিত; উক্ত আসরে কনমেবল থেকে ১০টি দল ছাড়াও কনকাকাফের ৬টি দল অংশগ্রহণ করেছিল।[৫] মেক্সিকোর দুই বার রানার-আপ হওয়া এই প্রতিযোগিতায় কনমেবল বহির্ভূত দলের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য।
১৯১৬ সালে এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরের পর থেকে এপর্যন্ত ৪৭টি আসরে সর্বমোট ৮টি জাতীয় দল শিরোপা জয়লাভ করেছে। উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনা হচ্ছে এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল দল, যারা এপর্যন্ত ১৫টি করে শিরোপা জয়লাভ করেছে; পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল, যারা ৯টি শিরোপা জয়লাভ করেছে। এছাড়াও প্যারাগুয়ে, চিলি ও পেরু ২টি করে এবং কলম্বিয়া ও বলিভিয়া ১টি করে শিরোপা জয়লাভ করেছে। আজ পর্যন্ত, আর্জেন্টিনা এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিনবার শিরোপা জয়লাভ করেছে; আর্জেন্টিনা ১৯৪৫ এবং ১৯৪৬ সালে টানা দুইবার শিরোপা জয়লাভ করার পর পুনরায় ১৯৪৭ সালে শিরোপা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। অন্যদিকে, আর্জেন্টিনা (যারা ১৯১৬ সালের উদ্বোধনী আসর আয়োজন করেছিল) সর্বাধিক বার (৯ বার) এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র কনমেবল বহির্ভূত দেশ হিসেবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে, যারা ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ১০০তম বছর পূর্তি উৎযাপন করা কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিও আয়োজন করেছে। তিন বার (১৯৭৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ সালে) দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশ একত্রে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে।
দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম ফুটবল দল হিসেবে লিমা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব ১৮৫৯ সালে পেরুতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৯৩ সালে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং মহাদেশের জাতীয় দলগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ১৯১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে, উক্ত সময়ে আর্জেন্টিনামে বিপ্লবের শতবর্ষ স্মরণে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল। উক্ত প্রতিযোগিতায় চিলি এবং উরুগুয়ে অংশগ্রহণ করলেও কনমেবল উক্ত আসরকে আনুষ্ঠানিক আসর হিসেবে ঘোষণা করেনি। একইভাবে, স্বাধীনতার শতবর্ষ উদ্যাপনের জন্য আর্জেন্টিনা ১৯১৬ সালের ২ থেকে ১৭ই জুলাইয়ের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল, যেখানে আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে এবং ব্রাজিল অংশগ্রহণ করেছিল। এই তথাকথিত কাম্পেওনাতো সুদামেরিকানো দে ফুতবল বর্তমানে কোপা আমেরিকা নামে পরিচিত প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে হবে; আভেয়ানেদারএস্তাদিও রেসিং ক্লাবে অনুষ্ঠিত শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আর্জেন্টিনার সাথে ০–০ গোলে ড্র করার পর উরুগুয়ে এই প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
এই প্রতিযোগিতার সাফল্য দেখে উরুগুয়েয়ীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের একজন বোর্ড সদস্য এক্তোর রিভাদাভিয়া আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি এবং উরুগুয়ের অ্যাসোসিয়েশনগুলোর একটি কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন এবং ৯ই জুলাই আর্জেন্টিনায় স্বাধীনতা দিবসে কনমেবল প্রতিষ্ঠালাভ করে। পরবর্তী বছর, এই প্রতিযোগিতাটি পুনরায় আয়োজন করা হয়েছে, উক্ত আসরটি উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উক্ত আসরের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে উরুগুয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়লাভ করেছিল, যা বিকাম্পেওনাতো নামে পরিচিত। চারুয়ান মাটিতে উক্ত আসরের সাফল্য এই প্রতিযোগিতাটি এগিয়ে নিয়ে সাহায্য করেছে। রিউ দি জানেইরুতেফ্লু প্রাদুর্ভাবের পর ১৯১৮ সালে ব্রাজিল এই প্রতিযোগিতাটি বাতিল করে, তবে পরবর্তী বছরে ব্রাজিল এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল এবং শিরোপা নির্ধারণী প্লে-অফ ম্যাচে পূর্ববর্তী আসরের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে ব্রাজিল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নদক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়লাভ করেছে। চিলিরভিনিয়া দেল মারে অনুষ্ঠিত পরবর্তী আসরটি উরুগুয়ে জয়লাভ করেছিল।
১৯২১ সালের শুরুতে কনমেবলের সাথে যুক্ত হওয়ার পর প্যারাগুয়েএকই বছরের আসরে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে। হুলিও লিবোনাতির গোলের সুবাদে আর্জেন্টিনা প্রথমবারের মতো উক্ত আসরের শিরোপা জয়লাভ করেছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে, উরুগুয়ে এই প্রতিযোগিতায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল, যা সেই সময় বিশ্বের বৃহত্তম ফুটবল প্রতিযোগিতা হিসেবে পরিচিত ছিল। আর্জেন্টিনা অবশ্য খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না এবং চারুয়াস-এর সাথে এই প্রতিযোগিতায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত ১৯২৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের ফাইনালে পরাজিত হওয়ার পর আর্জেন্টিনা ১৯২৯ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উরুগুয়কে পরাজিত করে প্রতিশোধ নিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে বলিভিয়া এবং পেরু উভয়ই যথাক্রমে ১৯২৬ এবং ১৯২৭ সালে এই প্রতিযোগিতায় অভিষেক করেছিল।
বিশৃঙ্খলা
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের পর উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের মধ্যে শত্রুতার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রতিযোগিতাটিতে একসাথে অংশগ্রহণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর ১৯৩৫ সালে একটি বিশেষ সংস্করণের আয়োজন করা হয়েছে, যা ১৯৩৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। ১৯৩৯ সালের আয়োজক দেশ ছিল পেরু, যারা উক্ত আসরে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়লাভ করেছিল। একই সাথে ইকুয়েডর উক্ত আসরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক করেছিল।
১৯৪১ সালে সান্তিয়াগো প্রতিষ্ঠার ৪০০ বছর পূর্তি উদ্যাপনে চিলি উক্ত বছরের আসরের আয়োজন করেছিল, যার জন্য নবনির্মিত এস্তাদিও নাসিওনালের ধারণক্ষমতা ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ জন দর্শকে সম্প্রসারিত করা হয়েছিল। দলের বড় বিনিয়োগ এবং প্রাথমিক সাফল্য সত্ত্বেও, চিলির ফাইনালে পূর্ববর্তী আসরের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার কাছে পরাজিত হয়েছিল। উরুগুয়ে ১৯৪২ সালের আসরটি আয়োজন করেছিল এবং তার শিরোপা জয়লাভ করেছিল। চিলি ১৯৪৫ সালে পুনরায় দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের আসর আয়োজন করেছিল, যেখানে তারা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জয়লাভের বেশ কাছাকাছি ছিল; তবে শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে পরাজিত হওয়ার ফলে সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় এবং আর্জেন্টিনা পুনরায় চিলির মাটিতে শিরোপা জয়লাভ করেছিল।
পরবর্তীতে এই প্রতিযোগিতাটি একটি বড় বিঘ্নের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছিল, যার মধ্যে এর আসর নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি এবং বেশ কয়েকটি আসর অনানুষ্ঠানিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল; তবে পরবর্তীতে কনমেবল উক্ত আসরগুলোকে আনুষ্ঠানিক আসরের মর্যাদা প্রদান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আর্জেন্টিনা প্রথম দল হিসেবে ১৯৪৫, ১৯৪৬ এবং ১৯৪৭ সালের দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়লাভ করে টানা তিনটি শিরোপা জয়লাভ। এই তিনটি বার্ষিক আসরের পর, প্রতিযোগিতাটি প্রতি দুই বছর, তিন বছর এমনকি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এমনকি ১৯৫৯ সালে দুটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার মধ্যে একটি আর্জেন্টিনায় এবং অপরটি ইকুয়েডরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে, কিছু জাতীয় দল দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের আসর আয়োজন সম্পর্কে উদাসীন ছিল। কেউ কেউ প্রতি বছর অংশ নেয়নি, অন্যরা কম দল পাঠিয়েছিল; ইকুয়েডরে অনুষ্ঠিত ১৯৫৯ সালের আসরে অংশগ্রহণের ব্রাজিল পেরনামবুকো রাজ্যের একটি দল পাঠিয়েছিল। ১৯৬৩ সালে বলিভিয়া প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জয়লাভ করেছিল, তবে ১৯৬৭ সালের আসরে প্রথম খেলায় প্রথম বারের মতো অংশগ্রহণকারী ভেনেজুয়েলার কাছে পরাজিত হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে কোপা লিবের্তাদোরেস প্রতিষ্ঠা এই প্রতিযোগিতাটিকে তার অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা দেখার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেছিল।
আট বছর বিরতির পর, এই প্রতিযোগিতাটি ১৯৭৫ সালে পুনরায় শুরু হয়েছিল এবং উক্ত আসর হতেই আনুষ্ঠানিকভাবে কোপা আমেরিকা নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে। উক্ত সময়ে এই প্রতিযোগিতার কোন নির্দিষ্ট মাঠ ছিল না এবং প্রতিটি দেশে সারা বছর ধরে সকল ম্যাচ খেলা হতো। ৯টি দল গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করতো এবং পূর্ববর্তী আসরের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি সেমি-ফাইনালে অংশগ্রহণ করতো। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত এই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতি চার বছর অন্তর এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয়েছে।
নবরূপ
১৯৮৬ সালে, কনমেবল শুধুমাত্র একটি দেশে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং প্রতি বছর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কনমেবলের ১০টি দলের অংশগ্রহণে প্রতি দুই বছর অন্তর এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। পূর্বের মতো গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথম পর্বে দলগুলো অংশগ্রহণ করেছিল, তবে চূড়ান্ত পর্বে একটি নতুন, চূড়ান্ত রাউন্ড রবিন গ্রুপ অথবা একটি একক নির্মূল পদ্ধতির মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন দল নির্ধারণ করা হতো। এই পুনর্নবীকরণ এই প্রতিযোগিতাটিকে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় টেলিভিশন স্বত্বাধিকার পেতে সাহায্য করে। ১৯৮৭ কোপা আমেরিকা আয়োজনের মাধ্যমে ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনা এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছিল।
পূর্ববর্তী ফিফা বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফলে অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও হিসেবে প্রবেশ করে ঘরের মাঠে ম্যাচ এবং দিয়েগো মারাদোনার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ বিজয়ীদের নিয়ে গঠিত দল থাকা সত্ত্বেও, আর্জেন্টিনা সেমি-ফাইনালে পূর্ববর্তী আসরের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কাছে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার ফলে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। উরুগুয়ে আশ্চর্যজনকভাবে শক্তিশালী চিলির দলকে পরাজিত করে শিরোপা জয়লাভ করেছিল, যারা গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী ব্রাজিল দলকে ৪–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করেছিল।
নিজের শেষে অনুষ্ঠিত ১৯৮৯ কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়লাভ করার মাধ্যমে ১৯৭০ ফিফা বিশ্বকাপের পর ব্রাজিল তার প্রথম আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তী আসরে আর্জেন্টিনা চিলিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯১ কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়লাভ করার মাধ্যমে দীর্ঘ ৩২ বছর পর কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, যেখানে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আর্জেন্টিনার তৎকালীন অধিনায়ক গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। ইকুয়েডরে ১৯৯৩ কোপা আমেরিকায় প্রথমবারের মতো বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে এই প্রতিযোগিতাতি আয়োজন করা হয়েছে। সাধারণ ১০টি দলের সাথে, কনমেবল কনকাকাফ থেকে দুটি দেশকে (মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
উরুগুয়ে ১৯৯৫ সালে আয়োজক হিসেবে এই প্রতিযোগিতাটি জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল, যার মাধ্যমে উরুগুয়ের ফুটবলের পতনের সময় শেষ হয়েছি। ঘূর্ণায়মান স্বাগতিক নিয়মের বাস্তবায়নের সাথে সাথে কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে এবং ভেনেজুয়েলা প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। ব্রাজিল ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে পাঁচটি মহাদেশীয় শিরোপার মধ্যে চারটিতে জয়লাভ করেছিল। প্রথমটি, ১৯৯৭ সালে লেওনার্দো, দেনিলসন এবং রোনালদোর গোলের সাথে স্বাগতিক দেশ বলিভিয়াকে ৩–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়লাভ করেছিল, যা বলিভিয়ার উচ্চতায় ভার্দে-আমারেলার কনস্যাগ্রেশনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছিল। ১৯৯৯ সালে প্যারাগুয়ের আসুনসিওনে উরুগুয়েকে ৩–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে ব্রাজিল সফলভাবে শিরোপা রক্ষা করেছিল। তবে ২০০১ সালের কোপা আমেরিকায় হন্ডুরাস কোয়ার্টার-ফাইনালে ব্রাজিলকে পরাজিত করে কোপা আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম বড় চমকের সৃষ্টি করেছিল। উক্ত আসরে আয়োজক দেশ কলম্বিয়া প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়লাভ করেছিল। ২০০১ সালে একটি বিব্রতকর ফলাফলের পর ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করার পর দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলে নিজেদের পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল, পেরুতে অনুষ্ঠিত ২০০৪ সালের আসরটির ফাইনালে তারা পেনাল্টিতে জয়লাভ করেছিল। তিন বছর পর ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে দুই দল পুনরায় মুখোমুখি হয়েছিল, এবারও ব্রাজিল আর্জেন্টিনাকে ৩–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে অষ্টমবারের মতো শিরোপা জয়লাভ করেছিল। আর্জেন্টিনা ২০১১ সালের আসরটি আয়োজন করে এবং পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে কোয়ার্টার-ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিল। উরুগুয়ে সেমি-ফাইনালে পেরুকে ২–০ গোলের ব্যবধানে এবং ফাইনালে ৩–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে ফাইনালে পৌঁছাবে এবং প্যারাগুয়েকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে আর্জেন্টিনার মাটিতে তৃতীয়বারের মতো এবং টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়লাভ করেছিল। উক্ত আসরে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা অথবা ব্রাজিল উভয় দলটি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
২০১৫ সালের আসরটি চিলিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যারা ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজক ব্রাজিলের সাথে এই অধিকার অদলবদল করেছিল। উক্ত আসরে চিলি দেশের মাটিতে তাদের প্রথম শিরোপা জয়লাভ করেছিল। ২০১৬ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিও আয়োজনের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার শতবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়েছিল; উক্ত আসরটিই এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আমেরিকার বাইরে অনুষ্ঠিত আসর ছিল এবং কনমেবল এবং কনকাকাফের ১৬টি দল উক্ত আসরে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রতিযোগিতা চলাকালীন প্রচার মাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে কনমেবল এবং কনকাকাফ প্রতি ২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত কনকাকাফ গোল্ড কাপের সাথে কোপা আমেরিকার একত্রীকরণের বিষয়ে আলোচনা করছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি সুনীল গুলাটি এই প্রতিবেদনকে ভুল বলে অভিহিত করে বলেছিলেন যে এ ধরনের কোন আলোচনা হয়নি, তবে একটি নতুন প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা হতে পারে।[৯] উক্ত আসরে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চিলি শিরোপা জয়লাভ করেছিল।
২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত, এই প্রতিযোগিতাটি প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর হয়েছিল এবং ২০০৭ সাল থেকে প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর (২০১৬ কোপা আমেরিকা ব্যতীত) আয়োজন করা হয়।
আয়োজক
১৯৮৪ সালে কনমেবল দশ সদস্য কনফেডারেশনের মধ্যে কোপা আমেরিকা আয়োজনের অধিকারকে চক্রাকার করার নীতি গ্রহণ করেছিল। প্রথম চক্রটি ২০০৭ কোপা আমেরিকা পর্যন্ত অনুসরণ করে সম্পন্ন হয়েছিল, যা ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১১ সালে দ্বিতীয় চক্র শুরু হয়, আয়োজক দেশগুলো আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে বর্ণানুক্রমিক ক্রমে আবর্তিত হবে।[১০] চিলি, মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী আসরের আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, কিন্তু কনমেবল নির্বাহী কমিটি এই চক্রাকার সম্পাদন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যার ফলে কনমেবলের প্রতিটি সদস্য অ্যাসোসিয়েশনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়; প্রতিটি অ্যাসোসিয়েশন নিশ্চিত করবে যে তারা তাদের জন্য উপলব্ধ আসরটি আয়োজন করবে কি না, এটি করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আর্জেন্টিনা ২০০৮ সালের ২৪শে নভেম্বর আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছিল যে তারা ২০১১ কোপা আমেরিকা আয়োজন করবে।
২০১৫ কোপা আমেরিকা চক্রের ক্রম অনুসরণ করে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে, ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজনে ফলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়েছিল। যদিও কনমেবলের তৎকালীন সভাপতি নিকোলাস লেওজ মেক্সিকোতে (কনকাকাফ কনফেডারেশনের একজন সদস্য) উক্ত আসরটি আয়োজনের প্রস্তাব করেছিলেন এবং বোর্ড সদস্য ব্রাজিল এবং চিলি ২০১৫ এবং ২০১৯ সালের আসর বিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রাজিলীয় ফুটবল কনফেডারেশন নিশ্চিত করেছিল যে, ২০১৫ কোপা আমেরিকা ব্রাজিলেই অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ২০১২ সালের মার্চ মাসে এক ঘোষণায় জানানো হয়েছিল যে চিলি ২০১৫ কোপা আমেরিকা আয়োজন করবে, ব্রাজিলীয় ফুটবল কনফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি রিকার্দো তেইক্সেইরা তার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ব্রাজিলীয় ফুটবল কনফেডারেশন চিলির সাথে আসর আয়োজনের বিষয়ে অদলবদল করতে সম্মত হয়েছিল। ২০১২ সালের মে মাসে এই অদলবদলটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতার শতবর্ষ সংস্করণ কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিও জুন ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছি,[১১] যা কোপা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কনমেবল বহির্ভূত দেশে আয়োজিত আসর ছিল।
২০০৫ সাল থেকে প্রতিটি কোপা আমেরিকার আসরে নিজস্ব মাস্কট অথবা লোগো রয়েছে। ১৯৮৭ সালের আসরের মাস্কট গারদেলিতো হচ্ছে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মাস্কট।
এই প্রতিযোগিতাটি পূর্বে কাম্পেওনাতো সুদামেরিকানো দে ফুতবল (দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ) নামে পরিচিত ছিল। দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ অফ নেশনস ছিল ইংরেজি ভাষায় আনুষ্ঠানিক নাম। বর্তমান নামটি ১৯৭৫ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে এর কোন আয়োজক দেশ ছিল না এবং এটি হোম এবং অ্যাওয়ে নিয়মে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমান চূড়ান্ত আসরে আয়োজক দেশে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ১০–১২টি জাতীয় দল অংশগ্রহণ করে। চূড়ান্ত পর্বটি দুইটি ভাগে বিভক্ত থাকে: গ্রুপ পর্ব এবং নকআউট পর্ব। গ্রুপ পর্বে দলগুলো চারটি দলের তিনটি গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে। ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের উপর ভিত্তি করে একটি সূত্র ব্যবহার করে নির্বাচিত অন্যান্য দলগুলোর সাথে স্বাগতিকসহ ২–৩টি দল বাছাই করা হয়। অন্যান্য দলগুলোকে বিভিন্ন "পাত্রে" স্থান দেওয়া হয়, সাধারণত ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের উপর ভিত্তি করে এবং প্রতিটি পাত্রের দলগুলো এলোমেলোভাবে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়।
প্রতিটি গ্রুপের রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রতিটি দল একই গ্রুপের অন্যান্য দলের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়। প্রতিটি গ্রুপের শেষ ম্যাচগুলো বিশ্বের অনেক প্রতিযোগিতার মতো একই সময়ে আয়োজন করা হয় না। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দলের পাশাপাশি দুটি সেরা তৃতীয় স্থান অধিকারী দল নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়। পয়েন্টগুলো একটি গ্রুপের মধ্যে দলগুলোর অবস্থান করতে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৫ সাল শুরু করে, জয়ের জন্য তিন পয়েন্ট (এরপূর্বে জয়ের জন্য দুই পয়েন্ট প্রদান করা হতো, ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট এবং পরাজয়ের জন্য কোন পয়েন্ট প্রদান করা হয়নি।
প্রতিটি গ্রুপের প্রতিটি দলের অবস্থান নিম্নে উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়:
যদি উপরের তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে দুই অথবা ততোধিক দল সমতায় থাকে, তবে তাদের অবস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লিখিত নিয়ম প্রয়োগ করা হয়:
যেসকল দল সমতায় থাকে, তাদের ম্যাচে পয়েন্ট;
যেসকল দল সমতায় থাকে, তাদের গোল পার্থক্য;
যেসকল দল সমতায় থাকে, তাদের গোল সংখ্যা;
কনমেবল আয়োজক কমিটি দ্বারা এলোমেলোভাবে আয়োজিত লটারি।
নকআউট পর্বের ম্যাচগুলো একক নির্মূল পদ্ধতি অনুসারে আয়োজন করা হয়, যেখানে দলগুলো একে অপরের সাথে একটি মাত্র ম্যাচে মুখোমুখি হয়, যদি কোয়ার্টার-ফাইনাল এবং সেমি-ফাইনালে দুই দলের ফলাফল সমতায় থাকে, তবে ৯০ মিনিটের পর পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে, যদি ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের দুই দলের ফলাফল সমতায় থাকে, তবে পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। নকআউট পর্ব কোয়ার্টার-ফাইনালের মাধ্যমে শুরু হয়, অতঃপর সেমি-ফাইনাল, তৃতীয় স্থান নির্ধারণীর পর ফাইনালের মাধ্যমে শেষ হয়।
আমন্ত্রিত দল
কনমেবলের নিবন্ধিত জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কিছুটা সীমিত সংখ্যার কারণে, অন্যান্য মহাদেশের দেশগুলোকে সাধারণত বর্তমান প্রতিযোগিতা বিন্যাসের জন্য প্রয়োজনীয় ১২টি দল গঠনের জন্য অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে, অন্যান্য কনফেডারেশনের দুটি দল, সাধারণত কনকাকাফ থেকে যাদের সদস্যরা ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে দক্ষিণ আমেরিকার ঘনিষ্ঠ, তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সব মিলিয়ে ৯টি দেশ এপর্যন্ত আমন্ত্রণ পেয়েছে: কোস্টা রিকা (১৯৯৭, ২০০১, ২০০৪, ২০১১, ২০১৬), হন্ডুরাস (২০০১), জাপান (১৯৯৯, ২০১৯), জ্যামাইকা (২০১৫, ২০১৬), মেক্সিকো (১৯৯৩, ১৯৯৫, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫, ২০১৬), হাইতি (২০১৬), পানামা (২০১৬), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৩, ১৯৯৫, ২০০৭, ২০১৬) এবং কাতার (২০১৯)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রতিটি টুর্নামেন্টে আমন্ত্রিত ছিল, কিন্তু মেজর লীগ সকারের সাথে সময়ের দ্বন্দ্বের কারণে তারা প্রায়শই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ২০০৬ সালের ৩০শে অক্টোবর তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল ফেডারেশন ২০০৭ সালের আসরে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ গ্রহণ মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় ১২ বছরের অনুপস্থিতির অবসান ঘটিয়েছিল। ২০০১ সালের কোপা আমেরিকাতে কানাডা আমন্ত্রিত ছিল, কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে উক্ত আসর শুরুর ঠিক আগে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ২০১১ সালের কোপা আমেরিকাতে জাপান সরে দাঁড়িয়েছিল, কেননা ২০১১ তোহোকু ভূমিকম্প এবং সুনামির পর জাপানি খেলোয়াড়দের মুক্তি দিতে ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর অসুবিধার কথা উল্লেখ করে।[১২] স্পেন ২০১১ সালের আসরে আমন্ত্রিত ছিল, কিন্তু রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের মতে, স্পেনীয় খেলোয়াড়দের ছুটিতে বাধা দিতে না চাওয়ায় তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।[১৩]২০১৫ কোপা আমেরিকাতে জাপান তাদের বিদেশী খেলোয়াড়দের বোঝা নিয়ে আসার কারণে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং একই সময়ে অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এশিয়া অঞ্চলের খেলার কারণে চীন উক্ত আসর হতে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছিল।[১৪][১৫][১৬][১৭] ২০২১ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখে অস্ট্রেলিয়া ও কাতারকে২০২১ কোপা আমেরিকায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের এএফসি দ্বিতীয় পর্বের অবশিষ্ট খেলা ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত স্থগিত থাকার কারণে তারা এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছিল।[১৮][১৯]
গ্রু → গ্রুপ পর্ব কো → কোয়ার্টার-ফাইনাল ২য়/৩য়/৪র্থ → অবস্থান
শিরোপা
কনমেবল মিউজিয়ামে বর্তমান কোপা আমেরিকা শিরোপা (বামে) এবং কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিওর জন্য বিশেষভাবে প্রদানকৃত শিরোপা (ডানে)
কোপা আমেরিকা শিরোপা (যা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের প্রদান করা হয়) ১৯১০ সালে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর্নেস্তো বোশ কর্তৃক অ্যাসোসিয়েশনকে দান করা হয়েছিল, উক্ত বছরে আর্জেন্টিনা মে বিপ্লবের শতবার্ষিকী স্মরণে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। উক্ত প্রতিযোগিতাটি (উরুগুয়ে এবং চিলি অংশগ্রহণ করেছিল) "কোপা দেল সেন্সেনারিও" (শতবর্ষ কাপ) নামকরণ করা হয়েছিল।[২০] বর্তমান কোপা আমেরিকা শিরোপাটি ১৯১৬ সালে বুয়েনোস আইরেসের একটি গহনা দোকান "কাসা এসকাসানি" থেকে ৩,০০০ সুইস ফ্রাংক খরচ করে কেনা হয়েছিল।[২১]
কোপা আমেরিকা শিরোপাটির ওজন হচ্ছে ৯ কেজি (২০ পা) এবং লম্বা ৭৭ সেমি (৩০ ইঞ্চি), যা রৌপ্য দ্বারা তৈরি; এটি একটি ৩ স্তরের কাঠের ভিত্তির দাঁড়িয়ে রয়েছে, যার বেশ কয়েকটি ফলক রয়েছে। ফলকগুলোতে প্রতিযোগিতার প্রতিটি বিজয়ী দলের নাম (পাশাপাশি জয়ের বছর) খোদাই করা রয়েছে।[২২] পূর্বে শিরোপাটির এক ও দুই স্তরের ভিত্তি ছিল এবং ১৯৭৯ সালের আগে কোন ভিত্তি ছিল না, যেমনটি ১৯৭৫ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল।[২৩]
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কলম্বীয় ফুটবল ফেডারেশনের সদর দপ্তরে প্রতিযোগিতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বোগোতা একটি স্মারক শিরোপা উন্মোচন করা হয়েছিল; যা বিশেষভাবে কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিওর জন্য নকশা করা হয়েছিল।[২৪] এই শিরোপাটি মূল কোপা আমেরিকা শিরোপার আকৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে ২০১৬ সালের আসরের লোগো সংযুক্ত করা হয়েছিল। উক্ত শিরোপাটির কোন ভিত্তি থাকার কথা ছিল না। উক্ত শিরোপাটি লম্বায় ৬১ সেমি (২৪ ইঞ্চি) ছিল, যার ওজন ছিল ৭.১ কেজি (১৬ পা); এটি ২৪ ক্যারেট সোনা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। কনমেবল এবং কনকাকাফের প্রতীকগুলো উক্ত শিরোপায় খোদাই করা ছিল।[২৫] কোপা আমেরিকা সেন্সেনারিওর স্মারক শিরোপাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এপিকো স্টুডিও দ্বারা নকশা করা হয়েছিল এবং ইংল্যান্ডে টমাস লাইটের লন্ডন ওয়ার্কশপ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।[২৬][২৭] উক্ত আসরের বিজয়ী দল (চিলি) চিরস্থায়ীভাবে উক্ত শিরোপাটি নিজেদের কাছে রাখবে।
মূল শিরোপা ছাড়াও ১৯৯৭ সালের আসর থেকে প্রতিযোগিতার রানার-আপকে "কোপা বলিভিয়া" (রৌপ্য দ্বারা তৈরি একটি ছোট শিরোপা) প্রদান করা হয়।[২৮] ১৯৯৭ সালের কোপা আমেরিকার আয়োজক দেশটির নামানুসারে এই শিরোপাটির নামকরণ করা হয়েছে। এর একটি পাশে বলিভিয়ার একটি ছোট পতাকা সংযুক্ত রয়েছে।[২৯]
এই পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান নির্ধারণের জন্য, জয়ের জন্য ৩ পয়েন্ট, ড্রয়ের জন্য ১ পয়েন্ট এবং পরাজয়ের জন্য কোন পয়েন্ট প্রদান করা হয়নি। ফুটবলে পরিসংখ্যানগত নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত সময়ে নির্ধারিত ফলাফলগুলো জয় এবং পরাজয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এবং পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে নির্ধারিত ফলাফলগুলো ড্র হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। দলগুলোর অবস্থান নির্ধারণের জন্য, প্রথমে তাদের পয়েন্ট, অতঃপর গোল পার্থক্য এবং পরিশেষে স্বপক্ষে গোল গণনা করা হয়েছে।