চিত্রা ১৯৬৩ সালের ২৭শে জুলাই কেরল রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম শহরে এক সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কৃষ্ণন নায়র ছিলেন তার প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক। তার বড় বোন কে. এস. বীণা এবং তার ছোট ভাই কে. মহেশও নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী। চিত্রা ডক্টর কে. ওমানাকুট্টির নিকট থেকে তার কর্ণাটকীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষন লাভ করেন। তিনি কেরল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থানসহ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।[৬] তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের জাতীয় প্রতিভা অন্বেষণ বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[১০]
সঙ্গীত জীবন
মালয়ালম চলচ্চিত্র
১৯৭৯ সালে চিত্রাকে মালয়ালম নেপথ্য সঙ্গীতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এম. জি. রাধাকৃষ্ণন, তিনি চলচ্চিত্র ও ব্যক্তিগত অ্যালবামের জন্য তার গান রেকর্ড করেন। আত্মহসম, স্নেহপুরবম মীরা, ও নান একানানু তার প্রারম্ভিক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। তিনি কে জে যেসুদাসের সাথে ভারত ও ভারতের বাইরে সরাসরি কনসার্টেও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বম্বে রবির সুরে নখক্ষতঙ্গল (১৯৮৬) চলচ্চিত্রের "মঞ্জল প্রসাদবুম" গানের জন্য তিনি তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছরে জেরি অমলদেবের সুরে নক্কেতাদুরাতু কান্নুম নাত্তু চলচ্চিত্রের "আয়িরাম কান্নুমায়ি" গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী বিভাগে কেরল রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে রবির সুরে বৈশালী চলচ্চিত্রের "ইন্দুপুষ্পন চুদি নিলকুম" গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
তামিল চলচ্চিত্র
তামিল চলচ্চিত্রে চিত্রার অভিষেক ঘটে ইলাইয়ারাজার সুরায়োজনে নিতনা অন্ত কুয়িল (১৯৮৫) চলচ্চিত্রের "পুজাইক্কেতা পুবিতু" গানে কণ্ঠ প্রদানের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৫ সালে পুবে পুচুদাবা চলচ্চিত্রের "চিন্না কুয়িল পাদুম" গান গাওয়ার পর তাকে চিন্নাকুয়িল উপাধি প্রদান করা হয়। তিনি সিন্ধু ভৈরবী চলচ্চিত্রের লোকসঙ্গীত ধারার শাস্ত্রীয় গান "পাদারিয়েন পাদিপ্পারিয়েন"-এ কণ্ঠ দিয়ে তার প্রথম শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার চতুর্থ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসে মিনসরা কানাভু (১৯৯৬) চলচ্চিত্রের "ও লা লা" গানের জন্য এবং ষষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আসে অটোগ্রাফ (২০০৪) চলচ্চিত্রের "ওব্বরু পুকালুমে" গানের জন্য।
কন্নড় চলচ্চিত্র
কন্নড় চলচ্চিত্রে চিত্রার অভিষেক ঘটে প্রীতি (১৯৮৬) চলচ্চিত্র দিয়ে। এস. পি. বালসুব্রমণ্যমের সাথে তার দ্বৈত গান "নি হাচ্চিদা এ কুমকুমা" গানটির সুর করেন জি. কে. ভেঙ্কটেশ। একই বছর এম. রঙ্গা রাও তাঁকে অরুণা রাগা চলচ্চিত্রের দুটি গানে কণ্ঠ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এরপর তিনি বাপ্পী লাহিড়ীর সুরে কে জে যেসুদাসের সাথে আফ্রিকাদাল্লি শীলা চলচ্চিত্রে "শীলা ও মাই শীলা" দ্বৈত গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৯০-এর দশক জুড়ে তিনি কন্নড় চলচ্চিত্রে সক্রিয় ছিলেন। তার একক এবং বালসুব্রমণ্যমের সাথে দ্বৈত গানগুলি তাকে খ্যাতি এনে দেয়।
চিত্রার পিতা কৃষ্ণন নায়র তার প্রথম সঙ্গীত গুরু। তিনি বাড়িতেই গান গাওয়া শুরু করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। তার মাতা শান্তা অপেশাদার বীণাবাদক ছিলেন। চিত্রা ও তার বড় বোন বীণা তার মায়ের নিকট থেকে কিছু ভক্তিমূলক শ্লোক শিখেন যা তারা সৃষ্টিকর্তার সামনে পরিবেশন করতেন।
কর্ম ও সহযোগী
চিত্রা মূলত দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে কাজ করে থাকেন। তার ভারতের অসংখ্য সঙ্গীত পরিচালকের সাথে কাজ করার খ্যাতি রয়েছে। তিনি এ আর রহমান, ইলাইয়ারাজা, এম. এম. কিরবানি, কোটি, এস. ভি. কৃষ্ণ রেড্ডি, হংসলেখা, রবীন্দ্রন, জনসন, শারিথ, এস. এ. রাজকুমার, মণিশর্মা, বিদ্যাসাগর, দেব, দেবী শ্রী প্রসাদ, অনু মালিক, মিকি জে মেয়ারের সুরে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম ও কন্নড় ভাষার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি এস. পি. বালসুব্রাহ্মণ্যম, কে জে যেসুদাস, এম. জি. শ্রীকুমার, মানো, হরিহরণ, উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, রাজেশ কৃষ্ণন, কার্তিক, পি. উন্নিকৃষ্ণন, শঙ্কর মহাদেবন, বিজয় যেসুদাসের সাথে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অসংখ্য দ্বৈতগানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
চিত্রা প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী বিজয়শঙ্করের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং চেন্নাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাদের একমাত্র কন্যা নন্দনা ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। নন্দনা ২০১১ সালে দুবাইয়েএ আর রহমানে কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশনা কালে এক পুল দুর্ঘটনায় পানিতে ডুবে মারা যায়।[১১][১২]
↑"Padma Awards Directory (1954–2009)"(পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
↑নায়র, সুলেখা (২৩ জানুয়ারি ২০০১)। "Nightingale of the south"। এক্সপ্রেস ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০।