ওড়িয়া ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের একটি ধ্রুপদীইন্দো-আর্য ভাষা। বাংলা ও অসমীয়া ভাষার সাথে ভাষাটির বহু মিল আছে। এটা ভারতের ওড়িশা বা উড়িষ্যা রাজ্যের প্রধান ভাষা যেখানকার ৮০% জনগোষ্ঠী এই ভাষায় কথা বলে। [১] তবে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যেও ওড়িয়া প্রচলিত। ভারতের মোট জনগোষ্ঠীর ৪.২% লোক ওড়িয়া ভাষায় কথা বলে। [২]
ধারণা করা হয় প্রায় ১৫০০ বছর আগে প্রাকৃত ভাষা থেকে ওড়িয়ার উৎপত্তি। উত্তর ভারতে প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে ওড়িয়া ভাষাতেই আরবি-ফার্সি ভাষার প্রভাব সবচেয়ে কম। তবে এ ভাষায় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ওড়িয়ার সাহিত্য প্রাচীন; ১০ম শতকেও ওড়িয়া সাহিত্যের নিদর্শন ছিল।[৩] দীর্ঘ সাহিত্য ইতিহাস এবং খুব কম ধারকৃত শব্দের ভিত্তিতে ওড়িয়াকে ষষ্ঠ ভারতীয় ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। [৪][৫][৬][৭]
ভারতের ২২টি সরকারী ভাষা ও ১৪টি আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে ওড়িয়া একটি। ওড়িশা রাজ্যের দৈনন্দিন কাজকর্ম, শিক্ষা, প্রশাসন, ব্যবসা ও গণমাধ্যমের ভাষা এটিই। এটা ওড়িশার প্রধান এবং ঝাড়খণ্ডের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা। [৮][৯][১০]
উপভাষা
ওড়িয়ার মূল উপভাষাগুলি নিচে দেয়া হল:
মুঘলবন্দী; একে মান্য ওড়িয়া-ও বলা হয়।
দক্ষিণী ওড়িয়া
উত্তর-পশ্চিমী ওড়িয়া
পশ্চিমী ওড়িয়া
উত্তর বালাশুরী
মেদিনীপুরী
হালবি
ধ্বনি-সংশ্রয়
ওড়িয়াতে ২৮টি ব্যঞ্জনধ্বনি ও ৬টি স্বরধ্বনি আছে।
স্বরধ্বনি
সম্মুখ
পশ্চাৎ
উচ্চ
i
u
মধ্য
e
o
নিম্ন
a
ɔ
ব্যঞ্জনধ্বনি
ওষ্ঠ্য
দন্ত্য
দন্তমূলীয়
মূর্ধন্য
তালব্য
কন্ঠ্য
কণ্ঠনালীয়
অঘোষ স্পর্শধ্বনি
p pʰ
t̪ t̪ʰ
ʈ ʈʰ
ʧ ʧʰ
k kʰ
ঘোষ স্পর্শধ্বনি
b bʰ
d̪ d̪ʰ
ɖ ɖʰ
ʤ ʤʰ
ɡ ɡʰ
অঘোষ উষ্মধ্বনি
s
h
নাসিক্যধ্বনি
m
n
ɳ
তরল
l, r
ɭ
শ্বাসাঘাত
ওড়িয়াতে সাধারণত শব্দের শেষ অক্ষরের আগের অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে।
ব্যাকরণ
বিশেষ্য
ওড়িয়া ভাষার বিশেষ্য পদগুলি নিচের ব্যাকরণিক ক্যাটেগরিগুলি দিয়ে চিহ্নিত হতে পারে
কারক: কর্তা, কর্ম, সম্বন্ধ, সম্প্রদান, অপাদান, করণ, অধিকরণ, সম্বোধন। সম্বোধন বাদে সব কারক অনুসর্গ দিয়ে চিহ্নিত হয়।
বচন: একবচন ও বহুবচন
লিঙ্গ: পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ
কোন নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক বা অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক নির্দেশক নেই।
বিশেষণ পদের রূপ বিশেষ্য পদের লিঙ্গ, বচন ও কারক দিয়ে প্রভাবিত হয়।
ক্রিয়া
ওড়িয়া ক্রিয়াপদ কর্তৃবাচ্যে কর্তার সাথে ও কর্মবাচ্যে কর্মের সাথে পুরুষ, বচন ও লিঙ্গ অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ক্রিয়াগুলিতে নিম্নলিখিত ক্যাটেগরিগুলি চিহ্নিত হয়ে থাকে:
তিনটি পুরুষ: ১ম-, ২য়-, ২য় (সম্ভ্রমার্থে)- ও ৩য় পুরুষ
দুইটি বচন: এক- ও বহুবচন
তিনটি কাল: বর্তমান, অতীত, ও ভবিষ্যৎ
দুইটি প্রকার: অনুজ্ঞা ও নিষ্ঠান্ত
তিনটি ভাব: নির্দেশক ভাব, অনুজ্ঞাবাচক ভাব, অভিপ্রায়ার্থক ভাব ও সাপেক্ষ ভাব
দুইটি বাচ্য: কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্য
পদক্রম
ওড়িয়ার সাধারণ পদক্রম কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া। বিশেষকগুলি বিশেষ্যের পূর্বে বসে। গৌণ কর্ম মুখ্য কর্মের পূর্বে বসে।
শব্দভাণ্ডার
ওড়িয়ার শব্দভাণ্ডারের অধিকাংশই সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। এছাড়াও ভাষাটতে আরবি, ফার্সি থেকে ধার করা শব্দ পাওয়া যায়। প্রাচীন কলিঙ্গ রাজ্যে (যা বর্তমান ওড়িশার পুরোটা ও অন্ধ্র প্রদেশের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ছিল) কথিত অস্ট্রোনেশীয় ভাষার শব্দও ওড়িয়া ভাষায় পাওয়া যায়।
লিখনপদ্ধতি
ওড়িয়া ভাষা এর নিজস্ব ওড়িয়া লিপিতে লেখা হয়। এটি একটি আবুগিদা লিপি যা বাম থেকে ডানে লেখা হয়। ওড়িয়া লিপি ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ওড়িয়া লিপির অক্ষরগুলি গোলাকৃতি হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় যে তাল পাতায় ধারালো কলম-সদৃশ বস্তু দিয়ে লেখা হত বলে সরলরেখা ও কোণাকৃতি অক্ষর ওড়িয়া লেখকেরা পাতা ছিঁড়ে যাবার ভয়ে ব্যবহার করতেন না।
তথ্যসূত্র
↑Mahapatra, B.P. (2002)। ভারতের ভাষাশুমারী: ওড়িশা(PDF)। Kolkata, India: Language Division, Office of the Registrar General। পৃষ্ঠা 14। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্ট ২০১৭।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
↑"ভারতের ষষ্ঠ ধ্রুপদী ভাষা ওড়িয়া"। The Telegraph। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্ট ২০১৭।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
↑Naresh Chandra Pattanayak (2011-09-01)। "Oriya second language in Jharkhand - Times Of India"। Articles.timesofindia.indiatimes.com। ২০১১-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্ট ২০১৭।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)