জুলু ভাষা (isiZulu ইসিজ়ুলু) একটি দক্ষিণ বান্টু ভাষা। ভাষাটি দক্ষিণ আফ্রিকারকোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশে (প্রাক্তন জুলুল্যান্ড) প্রচলিত। ধারণা করা হয়, জুলু জাতির লোকেরা আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ধরে এবং মধ্য আফ্রিকা থেকে ১৬শ শতকের পূর্বে এখানে বসতি স্থাপন করে। স্থানীয় খোইসান জাতির লোকেদের সাথে সংস্পর্শের ফলে জুলুদের ভাষায় তাদের অনেক শব্দ ঢুকে পড়ে। এদের মধ্যে শীৎকার ধ্বনিগুলি অন্যতম। এর ধ্বনিব্যবস্থাটিতে তিন ধরনের শীৎকার ধ্বনি রয়েছে, যেগুলি সম্ভবত খোইসান ভাষাগুলি থেকে ধার করা। বান্টু ভাষাগুলির মধ্যে কেবল জুলুর মতো দক্ষিণ বান্টু ভাষাগুলিতেই এই শীৎকার ধ্বনি দেখতে পাওয়া যায়। জুলু ভাষা অন্যান্য ভাষা থেকে, বিশেষ করে আফ্রিকান্স ও ইংরেজি ভাষা থেকে বহু শব্দ ধার করেছে। বেশিরভাগ জুলু শব্দ একটি স্বরধ্বনিতে শেষ হয়।
জুলু ভাষাটি নাইজার-কঙ্গো ভাষাপরিবারের বেনুয়ে-কঙ্গো শাখার বান্টু দলের দক্ষিণ-পূর্ব তথা ন্গুনি উপগ্রুপের একটি সদস্য ভাষা। জুলু ভাষার সাথে অন্যান্য গুনি (Nguni ঙ্গুনি) ভাষা যেমন খোসা (দক্ষিণ আফ্রিকা|দক্ষিণ আফ্রিকায়]] প্রচলিত), সুয়াটি (দক্ষিণ আফ্রিকা ও সোয়াজিল্যান্ডে প্রচলিত) এবং ডেবেলে (Ndebele ন্ডেবেলে) (দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকে প্রচলিত) ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এই ভাষাগুলি পরস্পর বোধগম্য, কিন্তু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে এগুলিকে আলাদা ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়। ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জুলু ও খোসা ভাষা একই ভাষার দুইটি উপভাষা হিসেবে গণ্য হবার যোগ্য, কিন্তু জুলু ও খোসা জাতির লোকেরা নিজেদেরকে ভিন্ন জাতির ও ভিন্ন ভাষার লোক মনে করে। খোসা, সুয়াটি ও ডেবেলে ভাষাভাষী লোকেরা খুব সহজেই জুলু ভাষা বুঝতে পারেন। নাটাল থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত ভাষাটি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জুলু থেকে উদ্ভূত একটি পিজিন ভাষা, ফানাগালো, একটি বাণিজ্য ভাষা হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার শহর ও খনি এলাকাগুলিতে সুপ্রচলিত।
জুলু দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের ১১টি সরকারি ভাষার একটি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৯২ লক্ষ মানুষের মাতৃভাষা জুলু; এরা মূলত কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের উত্তরাংশে বাস করে। এছাড়াও সোয়াজিল্যান্ড, বতসোয়ানা, লেসোথো, মালাউই এবং মোজাম্বিকে জুলু ভাষা প্রচলিত। সব দেশ মিলিয়ে জুলু ভাষার মাতৃভাষীর সংখ্যা প্রায় ৯৫ লক্ষ এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে জুলুভাষীর সংখ্যা আরও প্রায় ১ কোটি ৫৭ লক্ষ।
দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য আফ্রিকান ভাষাগুলির মত জুলু ভাষার মর্যাদাও জটিল। ১৯৫৩ সালের বান্টু শিক্ষা আইন অনুসারে জুলু ভাষায় শিক্ষা দান বৈধ। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে জুলু ভাষা ব্যবহৃত হয়। দশম শ্রেণী পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের একটি পাঠ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে জুলুভাষী ছাত্রদের ইংরেজিতে পড়ানো হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সমস্ত পড়াশোনা ইংরেজি বা আফ্রিকান্স ভাষাতে সম্পন্ন হয়।
১৮৫৯ সালে জুলু ভাষার প্রথম ব্যাকরণ প্রকাশিত হয়। ১৯৩০-এর পর থেকে জুলু ভাষায় বই প্রকাশনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের জুলু ভাষায় বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেল আছে। জুলু ভাষার বেশ কিছু সংবাদপত্র ও সাময়িকীও প্রকাশিত হয়।