আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাও (২০শে সেপ্টেম্বর ১৯২৩[১] - ২২শে জানুয়ারী ২০১৪), ব্যাপকভাবে পরিচিতি এএনআর নামে, একজন ভারতীয় অভিনেতা এবং প্রযোজক ছিলেন, যিনি মূলত তেলুগু চলচ্চিত্রে তাঁর কাজের জন্য পরিচিত। তিনি তার পঁচাত্তর বছরের অভিনয় জীবনে অনেক যুগান্তকারী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং তেলুগু চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন।[২] আক্কিনেনি সাতটি রাজ্য নন্দী পুরস্কার এবং পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ পেয়েছেন। শিল্প ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণের প্রাপক।[৩][৪][৫]
আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাও বর্তমান অন্ধ্র প্রদেশেরকৃষ্ণা জেলাররামপুরমে, ১৯২৪ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর, একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। তাঁর বাবা-মা আক্কিনেনি ভেঙ্কটরত্নম এবং আক্কিনেনি পুন্নাম্মা[১৩] ছিলেন কৃষক সম্প্রদায়ের। পিতামাতার দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ ছিল।
তিনি ১০ বছর বয়সে থিয়েটারে কাজ শুরু করেন[১৪] এবং একজন মঞ্চ অভিনেতা হয়ে ওঠেন। যেহেতু সেই সময়ে মহিলাদের বেশিরভাগই অভিনয় করা নিষিদ্ধ ছিল, পুরুষেরাই মহিলা চরিত্রে অভিনয় করতেন। আক্কিনেনি মহিলা চরিত্রে অভিনয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। হরিশচন্দ্র, কনকতারা, বিপ্রনারায়ণ, তেলুগু তাল্লি, আশাজ্যোতি এবং সত্যান্বেষণম নাটকে তাঁর ভূমিকা সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল। সেই সময়ের একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজক ঘন্টসালা বলরামাইয়া তাঁকে বিজয়ওয়াড়া রেলওয়ে স্টেশনে আবিষ্কার করার পর তাঁর অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। তিনি শ্রী সীতা রাম জননম (১৯৪৪) ছবিতে প্রধান ভূমিকা রামের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এটি ধর্মপত্নী (১৯৪১) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে আত্মপ্রকাশের পর হয়েছিল।
অভিনয়জীবন
তিনি তেলুগু, তামিল এবং হিন্দি ভাষায় ২৫৫টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[১৫] তাঁর বেশির ভাগ ছবিই ব্যবসায়িক এবং সমালোচনামূলক উভয় ক্ষেত্রেই সফল।[৩][৪][৫][১৬][১৭]
যদিও তিনি রাম ও কৃষ্ণের মতো পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত, তবে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো তিনি একজন নাস্তিক ছিলেন।[১৮]
ভক্তরা তাঁকে আদর করে নটসম্রাট বলে ডাকে। ১৯৫৩ সালে, তিনি দেবদাস অবলম্বনে নির্মিত দেবদাসু (১৯৫৩) চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। ডেকান হেরাল্ড বিবৃত করেছে যে অনেক সমালোচক আক্কিনেনির চিত্রায়নকে সমস্ত ভাষার সংস্করণগুলির মধ্যে সেরা বলে মনে করেছিলেন।[১৯]নবরাত্রি (১৯৬৬) ছবিতে আক্কিনেনি একটি ছবিতে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, শিবাজি গণেশনের পরে তিনি দ্বিতীয় অভিনেতা যিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।[২০]
তেলুগু চলচ্চিত্রের ভিত্তি মাদ্রাজ থেকে হায়দ্রাবাদে স্থানান্তরিত করতে আক্কিনেনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, তিনি শুধুমাত্র অন্ধ্র প্রদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলিতে কাজ করাই স্থির করে নিয়েছিলেন (বিজয়া বৌহিনী স্টুডিও এবং ভেনাস স্টুডিও চলচ্চিত্রগুলি ছাড়া)। ১৯৭৬ সালে, তিনি হায়দ্রাবাদে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রদানের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সেখানে অন্নপূর্ণা স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন।[২২]
দানশীলতা
আক্কিনেনি সমাজসেবায় খুব সক্রিয় ছিলেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে, তিনি একবার বলেছিলেন, "যদি তাঁর উপস্থিতি থাকে, আমি নিশ্চিত যে তিনি চাইবেন আমরা আমাদের পার্থিব দায়িত্ব ভালভাবে পালন করি এবং তাঁকে অন্ধভাবে উপাসনা না করে একজন ভাল মানুষ হতে পারি"।[২৩]
আক্কিনেনি তাঁর নিজ শহর রামপুরমে উন্নয়নের জন্য জন্মভূমি কর্মসূচির অধীনে আক্কিনেনি জন্মভূমি ট্রাস্ট স্থাপন করেন। তিনি আক্কিনেনি ভারাধি (তাঁর নামে নামকরণ করা একটি সেতু) নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যা সহজ সংযোগের সুবিধা দিয়ে তার গ্রামের অর্থনীতিকে উন্নত করেছিল। রামপুরমে, আক্কিনেনি একটি জল পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণে অবদান রেখেছিলেন।[২৪]
চলচ্চিত্র শিল্পে যাঁরা অবদান রেখেছেন তাদের সম্মান জানাতে তিনি ২০০৫ সালে আক্কিনেনি ইন্টারন্যাশনাল ফাউণ্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।[২৫] ২০১১ সালে তাঁর পরিবার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অন্নপূর্ণা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অফ ফিল্ম অ্যাণ্ড মিডিয়া, একটি অলাভজনক সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আক্কিনেনি তাঁর কর্মজীবনের শুরু থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়েছিলেন এবং গিতম বিশ্ববিদ্যালয়ে (ভাইজাগ) বৃত্তি প্রদান শুরু করেছিলেন। তিনি আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাও কলেজের প্রধান দাতা এবং সভাপতি ছিলেন, যেটি তাঁর নামাঙ্কিত।[২৬] তিনি ছিলেন বোর্ডের আজীবন সদস্য এবং অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য ও থিয়েটার আর্টস বিভাগের উপদেষ্টা। অভিনয় ও পরিচালনায় পারদর্শী শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি স্বর্ণপদক প্রদান করেছিলেন।[২৭] ২০১২ সালে, তিনি নিজের স্ত্রী অন্নপূর্ণার স্মরণে আক্কিনেনি অন্নপূর্ণা এডুকেশনাল ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন।[২৮]
ব্যক্তিগত জীবন
আক্কিনেনি ১৯৪৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অন্নপূর্ণাকে বিয়ে করেন। তাঁর নামে অন্নপূর্ণা স্টুডিওটি (স্থাপিত ১৯৭৫) তৈরি করা হয়েছিল এবং তিনি স্টুডিওর বেশ কয়েকটি প্রযোজনার জন্য উপস্থাপক হিসাবেও কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০১১ সালে অন্নপূর্ণা মারা যান।[২৯] দম্পতির ৫জন সন্তান ছিলেন: নাগার্জুন, ভেঙ্কট রত্নম, সরোজা, সত্যবতী এবং নাগা সুশীলা।
মৃত্যু
২০১৩ সালের ১৯শে অক্টোবর, আক্কিনেনি পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।[৩০] একটি বড় ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পর তিনি তাঁর চূড়ান্ত চলচ্চিত্র মানম- এর শুটিং চালিয়ে যান, কয়েকজন ডাক্তারের আশঙ্কা ছিল যে তিনি বেঁচে থাকবেন না।[৩১] ২০১৪ সালের ১৪ই জানুয়ারি অন্নপূর্ণা স্টুডিওর প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর শেষ প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল। এর এক সপ্তাহ পরে, ২০১৪ সালের ২২শে জানুয়ারি তিনি মারা যান।[৩২] ২০১৪ সালের ২৩শে জানুয়ারী তারিখে অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে ২১ বার বন্দুকের তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাঁর শেষক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।[৩৩][৩৪]
↑ কখReddem, Appaji (২০২২-০২-২২)। "Tollywood's great dilemma"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-১৬। After convincing producers and directors to shoot several movies in erstwhile united Andhra Pradesh, actor and producer Akkineni Nageswara Rao founded Annapurna Studios in Hyderabad in the 1970s.