মনোজ বাজপেয়ী (হিন্দি: मनोज बाजपेयी; জন্ম: ২৩ এপ্রিল ১৯৬৯) হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি প্রধানত হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করেন এবং পাশাপাশি তেলুগু ও তামিল চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি তিনবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও চারবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তিনি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন।
বিহারেরবেতিয়া শহরের নিকটবর্তী বেলওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী বাজপেয়ী শৈশব থেকেই অভিনেতা হওয়ার আগ্রহ দেখান। তিনি সতের বছর বয়সে দিল্লিতে পাড়ি জমান এবং রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি চারবার এই বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাখ্যাত হন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি মঞ্চে অভিনয় চালিয়ে যান। বাজপেয়ীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে দ্রোহকাল (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে এক মিনিটের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এবং এরপর তিনি শেখর কাপুরেরব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে ডাকাত চরিত্রে একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরকম কয়েকটি অনুল্লেখ্য চরিত্রে অভিনয়ের পর তিনি ১৯৯৮ সালে রাম গোপাল বর্মার অপরাধ নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র সত্য-তে গ্যাংস্টার ভিকু মহাত্রে চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি তার প্রথম আলোচিত সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর তিনি কৌন? (১৯৯৯), শূল (১৯৯৯) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন। বাজপেয়ী এরপর জুবেদা (২০০১) চলচ্চিত্রে একজন রাজকুমার, অক্স (২০০১) চলচ্চিত্রে ধারাবাহিক খুনী, রোড (২০০২) চলচ্চিত্রে একজন চিত্তবিকারগ্রস্থ খুনী চরিত্রে অভিনয় করেন।
বাজপেয়ী পিঞ্জর (২০০৩) চলচ্চিত্রের জন্য একটি বিশেষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি একাধিক ছোট, অনুল্লেখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তার কর্মজীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। তিনি ২০১০ সালে রাজনৈতিক রোমহর্ষক রাজনীতি চলচ্চিত্রে একজন লোভী রাজনীতিবিদ চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। ২০১২ সালে তিনি গ্যাংস অব ওয়াসেপুর চলচ্চিত্রে সরদার খান চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পরবর্তী কাজগুলো হল চক্রব্যূহ (২০১২) চলচ্চিত্রে একজন নকশালপন্থী ও স্পেশাল ২৬ (২০১৩) চলচ্চিত্রে সিবিআই কর্মকর্তা। ২০১৬ সালে তিনি হংসল মেহতা পরিচালিত জীবনীমূলক নাট্যধর্মী আলীগড় চলচ্চিত্রে অধ্যাপক রামচন্দ্র সিরস চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার তৃতীয় ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার এবং এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ভোঁসলে চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ৬৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেশ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
বাজপেয়ী ১৯৬৯ সালের ২৩শে এপ্রিল বিহারেরপশ্চিম চম্পারণ জেলারবেতিয়ার নিকটস্থ বেলওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২] পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়, এবং নায়ক মনোজ কুমারের নামানুসারে তার নাম রাখা হয়।[৩][৪] তার এক ছোট বোন পুনম দুবে চলচ্চিত্র শিল্পের একজন ফ্যাশন ডিজাইনার।[৫] তার পিতা কৃষক এবং মাতা গৃহিণী। কৃষকের পুত্র হিসেবে বাজপেয়ী ছুটির দিনগুলোতে কৃষিকাজ করতেন।[৩] শৈশব থেকেই তার ইচ্ছা ছিল তিনি অভিনেতা হবেন।[৬]
তার পিতা তাদের শিক্ষার জন্য অর্থসংস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতেন। তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত একটি "কুড়েঘর বিদ্যালয়ে" পড়াশোনা করেন, এবং পরে বেতিয়ার খ্রিস্ট রাজা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।[৪][৭] তিনি বেতিয়ার মহারানী জনকী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।[৬]
তিনি ১৭ বছর বয়সে নতুন দিল্লিতে পাড়ি জমান এবং সেখানে প্রথমে সত্যবতী কলেজ ও পরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েররামজস কলেজে পড়াশোনা করেন।[৪] বাজপেয়ী ওম পুরী ও নাসিরুদ্দীন শাহদের মত অভিনেতাদের নিকট থেকে রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়ের নাম শুনেন এবং সেখানে ভর্তির আবেদন করেন। তিনি তিনবার সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হন এবং আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন।[৩] তিনি এরপর অভিনেতা রঘুবীর যাদবের পরামর্শে পরিচালক ও অভিনয়ের প্রশিক্ষক ব্যারি জনের কর্মশালায় অংশ নেন। বাজপেয়ীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে জন তাকে তার প্রশিক্ষণ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন।[৪] এরপর তিনি চতুর্থবারের মত রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। তারা তাকে শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রহণের পরিবর্তে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব দেয়।[৪]
বাজপেয়ী দিল্লির একটি মেয়েকে বিয়ে করেন, কিন্তু তার কর্মজীবনের সংগ্রামের দিনগুলোতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[২] অভিনেত্রী শাবানা রাজার, যিনি নেহা নামেও পরিচিত, প্রথম চলচ্চিত্র করীব (১৯৯৮) মুক্তির কিছুদিন পর তার সাথে বাজপেয়ীর পরিচয় হয়। তারা ২০০৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হনে। এই দম্পতির একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।[৮][৯]
কর্মজীবন
অভিষেক ও আলোচিত সাফল্য (১৯৯৪–২০০১)
বাজপেয়ী শুরুতে গোবিন্দ নিহলানিরদ্রোহকাল (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে এক মিনিটের একটি চরিত্রে অভিনয় করেন,[৬] এরপর তিনি জীবনীনির্ভর নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র ব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪)-এ অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী নির্বাচন পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া চলচ্চিত্রটির পরিচালক শেখর কাপুরকে তাকে নেওয়ার পরামর্শ দেন।[১০] বাজপেয়ীকে মূলত এই চলচ্চিত্রের ডাকাত বিক্রম মাল্লাহ চরিত্রের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল, যা অবশেষে নির্মল পাণ্ডের কাছে চলে যায়।[৪] বাজপেয়ী এই চলচ্চিত্রে ডাকাত মান সিংহের চরিত্রে কাজের সুযোগ পান। সেই সময় তিনি হংসল মেহতা পরিচালিত কলাকার টেলিভিশন ধারাবাহিকে এবং দূরদর্শন চ্যানেলে ইমতিহান ধারাবাহিকে কাজ করছিলেন।[৪]
মহেশ ভাট যখন তাকে দূরদর্শনে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক স্বভিমান (১৯৯৫)-এ কাজ করার প্রস্তাব দেন, তখন তিনি অভিনয়জীবনে থিতু হওয়ার জন্য লড়াই করছিলেন।[১১] তিনি অল্প পারিশ্রমিকে ধারাবাহিকটিতে কাজ করার জন্য রাজি হন।[১২] পরবর্তীকালে তিনি দস্তক (১৯৯৬) ও তামান্না (১৯৯৭)-এর মত চলচ্চিত্রে ছোটখাট চরিত্রে কাজ করেন।[১৩] পরিচালক রাম গোপাল বর্মা তাকে হাস্যরসাত্মক দাউদ (১৯৯৭) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রের জন্য বাছাই করেন। চলচ্চিত্রটি সমাপ্ত হওয়ার পর বর্মা বাজপেয়ীকে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।[১৪] তিনি অতঃপর তাকে তার পরবর্তী চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজের সুযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।[১১] তাদের পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল অপরাধ নাট্যধর্মী সত্য (১৯৯৮)। এই চলচ্চিত্রে গ্যাংস্টার ভিকু মহাত্রে চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করা জে. ডি. চক্রবর্তীকে নিয়ে মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডে তাদের সংযোগ স্থাপন করেন।[১৫]
সত্য চলচ্চিত্রটির বেশিরভাগ অংশই মুম্বইয়ের বাস্তবিক বস্তিতে ধারণ করা হয়।[১৫] এটি ১৯৯৮ সালে ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং বেশিরভাগই ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[১৬]অনুপমা চোপড়া বাজপেয়ী ও বাকিদের অভিনয়কে "এত ভালো যে আপনি তাদের ঘর্মাক্ত শরীরে মুম্বইয়ের ময়লার গন্ধ ঠের পাবেন" বলে উল্লেখ করেন।[১৫] চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক দিক থেকেও সফল হয়,[১৭] এবং বাজপেয়ী তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।[১৮]ফিল্মফেয়ার তার এই অভিনয়কে তাদের ২০১০ সংখ্যায় বলিউডের "সেরা ৮০ প্রতীকী অভিনয়"-এর একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।[১৯] বাজপেয়ী আবার ১৯৯৯ সালে বর্মার পরিচালনায় কৌন? এবং প্রযোজনায় শূল চলচ্চিত্রে কাজ করেন। কৌন? একটি বাড়িতে মাত্র তিনটি চরিত্র নিয়ে নির্মিত রহস্যকাহিনি, যাতে বাজপেয়ী একজন বিরক্তিকর বাচাল আগন্তুক চরিত্রে অভিনয় করেন।[২০] চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।[২১]শূল চলচ্চিত্রে তাকে একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেখা যায় যিনি বিহারের মতিহারি জেলার রাজনৈতিক অপরাধী সংঘের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। সাইফি বাজপেয়ীর এই চলচ্চিত্রের অভিনয়কে "সত্যিকার অর্থেই চমকপ্রদ [...] বিশেষত রবীনা ট্যান্ডনের সাথে অনুভূতিপূর্ণ দৃশ্যগুলো।"[২২] চলচ্চিত্রটি হিন্দি ভাষায় শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে এবং বাজপেয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।[২৩] এছাড়া তিনি তেলুগু প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র প্রেম কথা (১৯৯৯)-এ অভিনয় করেন।[২৪]
বাজপেয়ীর পরবর্তী কাজগুলো হল রবীনা ট্যান্ডনের বিপরীতে জাগো (২০০৪), মকরন্দ দেশপাণ্ডেরহনন ও থ্রিলার ইনতেকাম।[৩৫]জাগো চলচ্চিত্রে তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার ১০ বছর বয়সী কন্যা ধর্ষণের শিকার ও খুন হওয়ার পর আইন নিজের হাতে তুলে নেয়।[৩৬] একই বছর তিনি যশ চোপড়ার প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী বীর-জারা চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ৫৫তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়, এবং বিশ্বব্যাপী ₹৯৪০ মিলিয়ন আয় করে সেই বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে।[৩৭][৩৮] ২০০৫ সালে বাজপেয়ী ধর্মেশ দর্শনের নাট্যধর্মী বেওয়াফা, থ্রিলার ফারেব এবং ইংরেজি ভাষার রিটার্ন টু রাজাপুর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৩৯][৪০][৪১] এছাড়া তিনি তেলুগু প্রণয়ধর্মী হ্যাপি (২০০৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৪২]
২০০৭ সালে বাজপেয়ী ১৯৭১ চলচ্চিত্রে মেজর সুরজ সিং চরিত্রে কাজ করেন। চলচ্চিত্রটিতে ছয়জন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈনিকের গল্প বিবৃত হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে ধৃত হওয়ার পর পাকিস্তানি কারাগার থেকে পালিয়ে আসে।[৪৩]সিএনএন-আইবিএন-এর রাজীব মসন্দ চলচ্চিত্রটির সমালোচনা করেন, কিন্তু লিখেন "[বাজপেয়ী] তার সেরাটা দিয়েছেন, তিনি বেশিরভাগই মনোযোগ ধরে রেখেছেন এবং এই কৌশলে এমন একটি চরিত্র সৃষ্টি করেছেন যে কথা বলার চেয়ে চোখ দিয়েই বেশি বলেছে।"[৪৪] এরপর তিনি জুহি চাওলার বিপরীতে গণেশ আচার্যের নাট্যধর্মী স্বামী চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন।[৪৫] এই বছরের বাজপেয়ীর মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ কাজ হল অমনিবাস চলচ্চিত্র দস কাহানিয়াঁ। তিনি সঞ্জয় গুপ্ত পরিচালিত জহির গল্পে দিয়া মির্জার বিপরীতে অভিনয় করেন।[৪৬] ২০০৭ সালে তার মুক্তিপ্রাপ্ত সকল চলচ্চিত্রই ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়। পরের বছর তিনি তারকাবহুল হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র মানি হ্যায় তো হানি হ্যায় (২০০৮)-এ অভিনয় করেন, এটিও বক্স অফিসে চরমভাবে ব্যর্থ হয়।[৩৪]
তেলুগু ভাষার বেদম চলচ্চিত্র নির্মাণকালে বাজপেয়ী কাঁধে আঘাত পান এবং প্রায় দুই বছর পর্দায় অনুপস্থিত ছিলেন।[৪৭] তিনি ২০০৬ সালের দিল্লি বন্ধ অভিযানের ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হাস্যরসাত্মক জুগাড় (২০০৯) চলচ্চিত্র দিয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় কাজের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে ফিরে আসেন।[৪৮] তার পরবর্তী কাজ হল রহস্য থ্রিলার এসিড ফ্যাক্টরি (২০০৯), এটি ২০০৬ সালের মার্কিন চলচ্চিত্র আননোন-এর পুনর্নির্মাণ।[৪৯] তিনি অপহৃত হয়ে ফ্যাক্টরিতে আবদ্ধ এবং কীভাবে সেখানে এলো সেই স্মৃতিভ্রষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হিসেবে একটি কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করেন।[৫০] চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা তার পরবর্তী কাজেও চলতে থাকে।[৫১]মধুর ভান্ডারকরেরজেল (২০০৯) চলচ্চিত্রে তিনি আজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি এই চরিত্রটিকে চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রের (নীল নিতিন মুকেশ অভিনীত) "বর্ণনাকারী" ও "উপদেষ্টা" হিসেবে অভিহিত করেন।[৫০][৫২]
রাজনীতি ও অতঃপর (২০১০-বর্তমান)
২০১০ সালে বাজপেয়ী প্রকাশ ঝায়ের বিশাল নির্মাণব্যয়ের তারকাবহুল রাজনৈতিক থ্রিলার রাজনীতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এটি ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারত থেকে অনুপ্রাণিত। বাজপেয়ীর অভিনীত বীরেন্দ্র প্রতাপ সিং চরিত্রটি মহাভারতেরদুর্যোধন চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত, তাকে একজন লোভী রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যায়, যে নিজেকে একটি রাজনৈতিক পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি বলে দাবি করে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার নিখত কাজমি তার পর্যালোচনায় বাজপেয়ীকে উল্লেখ করে লিখেন, "তিনি তার দৃশ্যগুলোতে চোখের পলক ফেলতে দেননি" এবং "তার সম্মোহনকর অভিনয়ের স্মৃতি বারবার ফিরে আসছিল।"[৫৩] ভারতীয় বাণিজ্য সাংবাদিকরা রাজনীতির ₹৬০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন।[৫৪] তবে চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয় এবং বিশ্বব্যাপী ₹১.৪৩ বিলিয়ন আয় করে।[৩৮] বাজপেয়ী এই চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৫৫] তিনি এরপর দুটি তেলুগু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল বেদম (২০১০) ও পুলি (২০১০); এবং তারপর হাস্যরসাত্মক দস তোলা (২০১০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৫৬] এছাড়া তিনি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র রামায়ণ: দি এপিক-এ রাম চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন। এটি ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে নির্মিত।[৫৭]
বাজপেয়ীর পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল ভারতীয় বর্ণপ্রথা ভিত্তিক সংরক্ষণ বিষয় নিয়ে নির্মিত সামাজিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র আরক্ষণ (২০১১)। চলচ্চিত্রটি কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পূর্বেই উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, ও অন্ধ্রপ্রদেশে নিষিদ্ধ হয়।[৫৮] চলচ্চিত্রটিকে নিয়ে বাণিজ্য সাংবাদিকদের প্রত্যাশা উচ্চ ছিল, কিন্তু অবশেষে এটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।[৫৯][৬০] বাজপেয়ীর পরবর্তী কাজ ছিল থ্রিলার লঙ্কা (২০১১)। বলিউড হাঙ্গামারতরণ আদর্শ লিখেন, "লঙ্কা মনোজ বাজপেয়ীর চলচ্চিত্র, তিনি এটি নিয়ন্ত্রণকারী অভিনয় করেছেন। তিনি কঠিনতম বিষয়গুলো সামলে নিয়েছেন এবং কোন প্রকার হেঁচকি ছাড়াই চতুর সংলাপগুলো বলেছেন।"[৬১]
২০১২ সালে বাজপেয়ী অনুরাগ কাশ্যপের দুই খণ্ডের অপরাধধর্মী চলচ্চিত্র গ্যাংস অব ওয়াসেপুর-এ অভিনয় করেন। তার অভিনীত সরদার খান চরিত্রটি প্রথম খণ্ডে দেখানো হয়। এই চরিত্রের প্রস্তুতি হিসেবে বাজপেয়ী তার মাথার চুল কামিয়ে ফেলেন এবং চার কেজি ওজন কমান।[৬২] চলচ্চিত্রটি ২০১২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব,[৬৩] ও টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে,[৬৪] এবং ২০১৩ সালে সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।[৬৫]গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর ভারতে ২২শে জুন মুক্তি পায় এবং ইতিবাচক পর্যালোচনা অর্জন করে। অনুপমা চোপড়া তার সরদার খান চরিত্রটিকে সত্য-এর ভিকু মহাত্রের পর তার সেরা অভিনয় বলে অভিহিত করেন।[৬৬] বাজপেয়ী এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৬৭] তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল চট্টগ্রামের অস্ত্র লুণ্ঠনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত ঐতিহাসিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র চিটাগং (২০১২)। বাজপেয়ী বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী সূর্য সেন চরিত্রে অভিনয় করেন, এবং এই কাজের জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক নেননি।[৬৮] এই বছরে তার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল চক্রবুহ্য, এতে তিনি একজন নকশালপন্থী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রের জন্য তিনি ৫ কেজি ওজন কমান।[৬৯] লেখক ও গীতিকার জাভেদ আখতারচক্রবুহ্যকে "গত ২০ বছরের সেরা চলচ্চিত্র" বলে উল্লেখ করেন।[৭০] অপরদিকে, ইন্ডিয়া টুডের এক পর্যালোচনায় চলচ্চিত্রটিকে "অপেশাদার প্রচেষ্টা" বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু বাজপেয়ীর অভিনয়ের প্রশংসা করে।[৭১]
২০১৩ সালে বাজপেয়ী অভিনীত পাঁচটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এই বছরে তার প্রথম চলচ্চিত্র সমর, এর মাধ্যমে তার তামিল চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি এই চলচ্চিত্রে একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।[৭২] তিনি এরপর নীরজ পাণ্ডের থ্রিলার স্পেশাল ২৬-এ কাজ করেন। ১৯৮৭ সালের অপেরা হাউজ ডাকাতি উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে তিনি সিবিআই কর্মকর্তা চরিত্রে অভিনয় করেন।[৭৩] এরপর তিনি অপরাধধর্মী চলচ্চিত্র শুটআউট অ্যাট ওয়াডালায় গ্যাংস্টার শাবির ইবরাহিম কাস্কর থেকে অনুপ্রাণিত একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।[৭৪] বাজপেয়ী সত্যাগ্রহ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মত প্রকাশ ঝার পরিচালনায় কাজ করেন। এই চলচ্চিত্রটি সমাজকর্মী আন্না হাজারের ২০১১ সালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত।[৭৫] তারকাবহুল এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে বাণিজ্য সাংবাদিকদের প্রত্যাশা উচ্চ ছিল কারণ কাকতালীয়ভাবে মুম্বই ও দিল্লি গণধর্ষণের গণপ্রতিবাদের সময়ে এটি মুক্তি পায়।[৭৬]সত্যাগ্রহ দেশের অভ্যন্তরে ₹৬৭৫ মিলিয়ন আয় করে।[৭৭] বাজপেয়ী এরপর ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারত অবলম্বনে নির্মিত একই নামের ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রে যুধিষ্ঠির চরিত্রে কণ্ঠ দেন।[৭৮] ২০১৪ সালে বাজপেয়ী তামিল মারপিটধর্মী চলচ্চিত্র আনজান-এ খল চরিত্রে অভিনয় করেন।[৭৯]
বাজপেয়ী তার পরবর্তী চলচ্চিত্র তেবর (২০১৫)-এও খল চরিত্রে অভিনয় চালিয়ে যান। এটি ২০০৩ সালের তেলুগু ভাষার ওক্কাডু চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। চলচ্চিত্রটি নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।[৮০][৮১] একই বছর তাকে রবীনা ট্যান্ডনের সাথে দেশপ্রেমের বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র জয় হিন্দ-এ দেখা যায়। ছয় মিনিট দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রটি ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে ওয়ো রুমসের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়।[৮২] ২০১৬ সালে বাজপেয়ী তাণ্ডব নামে আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেন। দেবাশীষ মখিজা পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে একজন সৎ পুলিশ কনস্টেবল কি ধরনের চাপ ও ঘটনার মুখোমুখি হয় তা দেখানো হয়েছে। এটিও ইউটিউবে মুক্তি পায়।[৮৩] একই বছর তিনি হংসল মেহতার জীবনীনির্ভর নাট্যধর্মী আলীগড় চলচ্চিত্রে অধ্যাপক রামচন্দ্র সিরস চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটিতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার যৌন অভিমুখিতার কারণে বহিষ্কৃত সমকামী অধ্যাপকের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। বাজপেয়ী এই চরিত্রের প্রস্তুতি হিসেবে সিরাসের কিছু ভিডিও ক্লিপ দেখেন।[৮৪] চলচ্চিত্রটি ২০তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ও ২০১৫ মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।[৮৫][৮৬]আলীগড় ২০১৬ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি মুক্তির পর ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[৮৭] বাজপেয়ী এই কাজের জন্য ১০ম এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার তৃতীয় ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।[৮৮][৮৯] এরপর তিনি রাজেশ পিল্লাইয়ের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ট্রাফিক (২০১৬)-এ একজন ট্রাফিক কনস্টেবল চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি ২০১১ সালের মালয়ালম ভাষার একই নামের চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ।[৯০] এই বছরের তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হল জীবনীনির্ভর ক্রীড়াধর্মী চলচ্চিত্র বুধিয়া সিং - বর্ন টু রান। এতে তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ম্যারাথন দৌড়বিদ বুধিয়া সিংয়ের কোচ চরিত্রে অভিনয় করেন।[৯১] এরপর তিনি হাস্যরসাত্মক সাত উছাক্কে (২০১৬) ও নীরজ পাণ্ডে পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অউচ-এ অভিনয় করেন।[৯২][৯৩]
২০১৭ সালে বাজপেয়ীর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র গোয়েন্দা থ্রিলার নাম শাবানা। এটি ২০১৫ সালের বেবি চলচ্চিত্রের স্পিন-অফ, এতে তাপসী পান্নু তার পূর্বের চলচ্চিত্রের শাবানা চরিত্রে পুনরায় কাজ করেন।[৯৪] একই বছর তিনি অপরাধ নাট্যধর্মী সরকার ৩-এ পুনরায় রাম গোপাল বর্মার পরিচালনায় কাজ করেন। এটি সরকার চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের তৃতীয় কিস্তি। এই চলচ্চিত্রটিতে তিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।[৯৫] এই বছরের শেষভাগে তাকে নাট্যধর্মী রুখ চলচ্চিত্রে স্বল্পস্থায়ী একটি চরিত্রে দেখা যায়।[৯৬]
২০১৮ সালে বাজপেয়ী অপরাধ থ্রিলার আইয়ারী চলচ্চিত্রে নীরজ পাণ্ডের পরিচালনায় পুনরায় কাজ করেন। এতে তিনি কর্নেল অভয় সিং চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তার অনুগ্রহভাজন মেজর জয় বকশির (সিদ্ধার্থ মালহোত্রা) পশ্চাদ্বাবন করে। চলচ্চিত্র সমালোচক নম্রতা জোশি চলচ্চিত্রটির দৃশ্যপটের সমালোচনা করেন এবং বাজপেয়ী ও একটি গানকে এই চলচ্চিত্রকে বাঁচানোর একমাত্র অবলম্বন বলে উল্লেখ করেন।[৯৭] বাজপেয়ী এরপর আহমেদ খানের বাগী ২ চলচ্চিত্রে টাইগার শ্রফ ও দিশা পাটানির সাথে কাজ করেন।[৯৮] এই বছরের শেষভাগে তিনি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী মিসিং চলচ্চিত্রে তাবুর বিপরীতে অভিনয় করেন এবং এই চলচ্চিত্র দিয়ে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের নিকট থেকে নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[৯৯][১০০]দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর শুভ্র গুপ্ত চলচ্চিত্রটিকে "বাজে তালগোল পাকানো" বলে উল্লেখ করেন।[১০১] তিনি এরপর জন আব্রাহামের সাথে মারপিটধর্মী সত্যমেব জয়তে (২০১৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[১০২] একই বছর তিনি মনস্তাত্ত্বিক নাট্যধর্মী গলি গুলিয়াঁ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এটি দিপেশ জৈনের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র, যাতে তিনি পুরনো দিল্লিতে বসবাসকারী ইলেকট্রিশিয়ান চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি বাস্তবতার উপর তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন।[১০৩] চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ২২তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, এবং এটি ২০১৭ এমএএমআই চলচ্চিত্র উৎসব, লস অ্যাঞ্জেলেসের ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব, আটলান্টা চলচ্চিত্র উৎসব, ক্লিভল্যান্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।[১০৪][১০৫] এই কাজের জন্য তিনি মেলবোর্নের ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।[১০৬] এই বছরে তার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হল তাবরেজ নূরানির তারকাবহুল নাট্যধর্মী লাভ সোনিয়া। এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় লন্ডন ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে এবং ২০১৮ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর ভারতে মুক্তি পায়।[১০৭]
দেবাশীষ মাখিজার ভোঁসলে চলচ্চিত্রে বাজপেয়ী বাঁচার আশা ক্ষীণ এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত মুম্বই পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করেন, যার স্থানীয়দের দ্বারা শহর থেকে অভিবাসিত লোকদের বিতাড়িত করাকালীন এক উত্তর ভারতীয় তরুণীর সাথে বন্ধুত্ব হয়।[১০৮] চলচ্চিত্রটি এবং তার অভিনয় সমালোচকদের নিকট থেকে ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে এবং নম্রতা জোশি তার অভিনয় সম্পর্কে বলেন, "তার ভোঁসলে চরিত্রটিকে আত্মীকরণে বিস্ময়কর এবং তিনি কেবল তার মুখভঙ্গিই নয় বরং তার পুরো শরীর কাজে লাগিয়েছেন।"[১০৯] এই চরিত্রে জন্য তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে দ্বিতীয় এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন।[১১০][১১১]
শিল্পকলায় তার অবদানের জন্য ২০১৯ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে।[১১২] একই বছর তিনি অভিষেক চৌবের মারপিটধর্মী সোনচিড়িয়া চলচ্চিত্রে ডাকাত মান সিংহ চরিত্রে অভিনয় করেন। রাজা সেন তার পর্যালোচনায় লিখেন বাজপেয়ী "বিদ্রোহী প্রধান হিসেবে অনবদ্য।"[১১৩] এরপর তাকে রাজ নিদিমরু ও কৃষ্ণ ডি.কে.'র গোয়েন্দা মারপিটধর্মী নাট্য ওয়েব ধারাবাহিক দ্য ফ্যামিলি ম্যান-এ দেখা যায়। বাজপেয়ী এতে মধ্যবিত্ত লোকের ছদ্মবেশে গোয়েন্দা এজেন্সিতে কর্মরত গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেন। ধারাবাহিকটি ও তার অভিনয় সমালোচকদের নিকট থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে, এবং হিন্দুস্তান টাইমস-এর রোহিত নাহার লিখেন, "মনোজ বাজপেয়ী, তিনি যেমনটা করে থাকেন, এককথায় অসাধারণ।"[১১৪] তিনি ২০২০ ফিল্মফেয়ার ওটিটি পুরস্কারে সমালোচকদের বিচারে নাট্যধর্মী ধারাবাহিকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন।[১১৫]
পরিচালক রাম গোপাল বর্মা বাজপেয়ীকে তার নিজের জন্য "শিক্ষা" বলে গণ্য করেন এবং বলেন তিনি "আমি যাদের সাথে কাজ করেছি তন্মধ্যে সেরা অভিনেতা"।[১৪] বাজপেয়ীর ব্যান্ডিট কুইন চলচ্চিত্রের পরিচালক শেখর কাপুর বলেন, "মনোজের অল্প কাজ করে অনেক কিছু উপস্থাপন করার সামর্থ্য রয়েছে। তিনি কখনো কোন দৃশ্যে অতি-অভিনয় করেন না এবং যৎসামান্য সংলাপেও পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক কাজ করেন।"[১৪] পরিচালক হংসল মেহতার মতে, মনোজের "মাত্র অল্প কয়েকজনের মত নিজেকে রূপান্তর করার সামর্থ্য রয়েছে।"[১২৮]
সত্য চলচ্চিত্রে ভিকু মহাত্রে চরিত্রে বাজপেয়ীর অভিনয় এবং তার সংলাপ "মুম্বই কা কিং কৌন? ভিকু মহাত্রে" (মুম্বইয়ের রাজা কে? ভিকু মহাত্রে)-এর জন্য একে হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম স্মরণীয় চরিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।[১২৯][১৩০][১৩১][১৩২]কে কে মেনন এই চরিত্রটিকে অন্যান্য পদ্ধতিগত অভিনেতাদের জন্য বাঁকবদল হিসেবে অভিহিত করে বলেন, "সত্য চলচ্চিত্রে মনোজের অসাধারণ অভিনয় না দেখা গেলে ইরফান খান ও আমার মত অভিনেতাকে হয়ত এখনো অনুকূল অভ্যর্থনা পেতে অপেক্ষা করতে হত। মনোজ আমাদের জন্য সেই দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছেন।"[৪] সাংবাদিক-লেখক জয় অর্জুন সিং তার পপকর্ন এসেয়িস্টস বইতে এই চরিত্র সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেন "[এই চরিত্রের] 'পার্থিবতা' ও 'অকৃত্রিমতা' বাজপেয়ীর অভিনয়ে বিরতিহীন পরিশ্রমের সূক্ষ্ম ফলাফল।"[১৩৩]
↑রাজ্যধ্যক্ষ, মৃদুলা (১১ জুলাই ১৯৯৮)। "Powerful performer"। রেডিফ.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
↑ কখগচোপড়া, অনুপমা (৩১ আগস্ট ১৯৯৮)। "Two of a kind"। ইন্ডিয়া টুডে (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
↑ কখগচোপড়া, অনুপমা (২০ জুলাই ১৯৯৮)। "Nowhere man"। ইন্ডিয়া টুডে (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
↑"Shool" (ইংরেজি ভাষায়)। সাইফি। ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
↑"47th National Film Awards"(পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। চলচ্চিত্র উৎসব অধিদপ্তর। ২২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
↑দাস, রঞ্জিতা (৯ ডিসেম্বর ২০০০)। "A cop-out!"। রেডিফ.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
↑চোপড়া, অনুপমা (১০ নভেম্বর ২০০৩)। "Slow saga"। ইন্ডিয়া টুডে (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑"51st National Film Awards"(পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। চলচ্চিত্র উৎসব অধিদপ্তর। ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑"Inteqam" (ইংরেজি ভাষায়)। বলিউড হাঙ্গামা। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑বর্মা, সুকন্যা (৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৪)। "Why make a film on rape?"। রেডিফ.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑সেন, রাজা (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Hum Aapke Hain Corn!"। রেডিফ.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑গুপ্ত, প্রতিম ডি. (২৬ নভেম্বর ২০০৭)। "One tight slap"। দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑শাহ, কুনাল এম (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "Back-logged"। মুম্বই মিরর (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২১।
↑আদর্শ, তরণ (৯ ডিসেম্বর ২০১১)। "Lanka" (ইংরেজি ভাষায়)। বলিউড হাঙ্গামা। ২৩ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২১।
↑উপাধ্যায়, কারিশমা (২১ জুন ২০১২)। "Bajpai the baddie"। দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০২১।
↑খান, আতিফ (১৫ ডিসেম্বর ২০১৬)। "Going global"। দ্য হিন্দু (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২১।
↑রাজ, অশোক (২০০৯)। Hero Vol.2 (ইংরেজি ভাষায়)। হে হাউজ। পৃষ্ঠা ২০২। আইএসবিএন9789381398036। ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২১।
জয়, অর্জুন সিং (২০১১)। Popcorn Essayists। ওয়েস্টল্যান্ড। পৃষ্ঠা ৭০। আইএসবিএন9789380658353। ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২১।
বহিঃসংযোগ
উইকিমিডিয়া কমন্সে মনোজ বাজপেয়ী সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।