অন্ধ্রপ্রদেশ

অন্ধ্রপ্রদেশ
ఆంధ్ర ప్రదేశ్
রাজ্য
উপর থেকে, বাম থেকে ডানে: বেঙ্কটেশ্বর মন্দির তিরুমালায়, গোদাবরী সেতু রাজামুন্দ্রি, এবং বিজগ সমুদ্রবন্দর
ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশের অবস্থান
ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশের অবস্থান
স্থানাঙ্ক (বিজয়ওয়াড়া): ১৬.৫১° উত্তর ৮০.৫২° পূর্ব
দেশ ভারত
অঞ্চলদক্ষিণ ভারত
প্রতিষ্ঠা১ নভেম্বর ১৯৫৬; ৬৮ বছর আগে (1956-11-01)
রাজধানীহায়দ্রাবাদ
অমরাবতী (প্রস্তাবিত)
বৃহত্তম শহরবিশাখাপত্তনম
জেলা১৩টি
সরকার
 • রাজ্যপালবিশ্বভূষণ হরিচন্দন
 • মুখ্যমন্ত্রীচন্দ্র বাবু নাইডু (টিডিপি)
 • বিধানসভাদ্বিকক্ষীয় (১৭৫ + ৫৮ আসন)
 • রাজ্যসভা আসন১১টি
 • লোকসভা আসন২৫টি
আয়তন
 • মোট১,৬০,২০৫ বর্গকিমি (৬১,৮৫৫ বর্গমাইল)
এলাকার ক্রম৭ম
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৪,৯৩,৮৬,৭৯৯
 • ক্রম১০ম
 • জনঘনত্ব৩০৮/বর্গকিমি (৮০০/বর্গমাইল)
বিশেষণঅন্ধ্রীয়
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
UN/LOCODEAP
যানবাহন নিবন্ধনAP
সাক্ষরতা৬৭.৪১%
সরকারি ভাষাতেলুগু
^† তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের যুগ্ম রাজধানী

অন্ধ্রপ্রদেশ (তেলুগু: ఆంధ్ర ప్రదేశ్ তেলুগু: [আন্ধ্র্য প্র্যদেশ্ ] (শুনুন)) হল ভারতের ২৮টি রাজ্যের একটি। এই রাজ্য ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল অঞ্চলে অবস্থিত। এই রাজ্যের আয়তন ১,৬০,২০৫ কিমি (৬১,৮৫৫ মা)। এটি আয়তনের হিসেবে ভারতের সপ্তম বৃহত্তম রাজ্য। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, অন্ধ্রপ্রদেশের জনসংখ্যা ৪৯,৩৮৬,৭৯৯। জনসংখ্যার হিসেবে এটি দেশের দশম বৃহত্তম রাজ্য। অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরে তেলেঙ্গানাছত্তিশগড়, দক্ষিণে তামিলনাড়ু, উত্তর-পূর্বে ওড়িশা, পশ্চিমে কর্ণাটক ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এই রাজ্যের উত্তরপূর্ব দিকে গোদাবরী বদ্বীপ এলাকায় পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ইয়ানাম জেলা (আয়তন ৩০ কিমি (১২ মা)) অবস্থিত।

অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য ৯৭২ কিমি (৬০৪ মা)। এটি ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম উপকূলরেখা (গুজরাতের পরেই)। অন্ধ্রপ্রদেশ দুটি অঞ্চলে বিভক্ত: উপকূলীয় অন্ধ্ররায়ালসীমা। তাই এই রাজ্যকে সীমান্ধ্র নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। রাজ্যের ১৩টি জেলার মধ্যে ৯টি উপকূলীয় অন্ধ্র এলাকার ও ৪টি রায়ালসীমার। বিশাখাপত্তনমবিজয়ওয়াড়া এই রাজ্যের দুটি বৃহত্তম শহর। ১০ বছরের জন্য হায়দ্রাবাদ শহরটি অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার যৌথ রাজধানী। অন্ধ্রপ্রদেশ ভারতের একমাত্র রাজ্য যার রাজধানী রাজ্যের মূল ভূখণ্ডের বাইরে অবস্থিত। এই রাজ্যের রাজধানী হায়দ্রাবাদ অন্ধ্রপ্রদেশ-তেলঙ্গানা সীমান্ত থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পূর্বঘাট পর্বতমালা, নাল্লামালা বনাঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি এবং গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল এই রাজ্যের প্রধান ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। প্রচুর ধান উৎপন্ন হয় বলে এই রাজ্যকে "ভারতের চালের ঝুড়ি" বলা হয়। তেলুগু এই রাজ্যের সরকারি ভাষা।এটি ভারতের একটি ধ্রুপদি ভাষা। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এই রাজ্য বেশ সমৃদ্ধ। তিরুমালা মন্দির সহ এখানে অনেক দ্রষ্টব্য স্থান রয়েছে।

ইতিহাস

বৈদিক সাহিত্যে অন্ধ্রপ্রদেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। ঋগ্বেদীয় ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দ) অনুসারে, অন্ধ্র জাতি উত্তর ভারত পরিত্যাগ করে দক্ষিণ ভারতে চলে গিয়েছিল। তেলুগু ভাষার মূল উৎসটি দেখা যায় গুন্টুর জেলার কাছে পাওয়া শিলালিপি এবং খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর রেনাতি চোল রাজাদের শিলালিপিতে।

প্রাচীন ইতিহাস

সাতবাহন সাম্রাজ্য

প্রাচীন সাতবাহন রাজারা অন্ধ্র শাসন করতেন। পুরাণে সাতবাহনদের "অন্ধ্রভৃত্য" নামে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরাণে ৩০ জন অন্ধ্র রাজার নাম পাওয়া যায়। এঁদের অনেকের মুদ্রা ও শিলালিপিও পাওয়া গিয়েছে। সাতবাহনদের রাজধানী ছিল অমরাবতী। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে অন্ধ্রপ্রদেশ মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন হলে সাতবাহনরা স্বাধীনতা লাভ করে।

সিমুক (খ্রিস্টপূর্ব ২৩০–২০৭ অব্দ) খ্রিস্টপূর্ব ২৩০ অব্দে স্বাধীনতা অর্জনের পর সিমুক সাতবাহন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অধুনা মহারাষ্ট্র ভূখণ্ড ও মালওয়া সহ মধ্যপ্রদেশ ভূখণ্ডের একাধিক অংশও জয় করেন। তিনি শ্রীকাকুলামে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর রাজা হন তারই ভাই কানহা (বা কৃষ্ণ) (খ্রিস্টপূর্ব ২০৭–১৮৯ অব্দ)। তিনি অধুনা অন্ধ্রপ্রদেশ ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ অংশ জয় করেন।

সাকর্ণী(খ্রিস্টপূর্ব ১৮০–১২৪ অব্দ)

প্রাচীন সাতকর্ণী মুদ্রা, মহারাষ্ট্রবিদর্ভ ধরন
ব্রাহ্মী লিপিতে সাতবাহনদের খ্রিস্টপূর্ব ১ অব্দের মুদ্রা: "(শতক) নিষ". ব্রিটিশ মিউজিয়াম

তার উত্তরসূরি সাতকর্ণী ছিলেন সাতবাহন সাম্রাজ্যের সপ্তম শাসক। কথিত আছে, তিনি ৫৬ বছর রাজত্ব করেছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব ২২০ অব্দে সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতনের পর অন্ধ্র ইক্ষ্বাকু রাজবংশ, পল্লব রাজবংশ, আনন্দ গোত্রিকা রাজবংশ, রাষ্ট্রকূট রাজবংশ, বিষ্ণুকুণ্ডী রাজবংশ, পূর্ব চালুক্য রাজবংশচোল রাজবংশ এই অঞ্চল শাসন করেছিল।[]

ইক্ষ্বাকু

"অন্ধ্র ইক্ষ্বাকু রাজবংশ" (সংস্কৃত इक्ष्वाकु, তেলুগু ఇక్ష్వాకులు) অন্ধ্রপ্রদেশ অঞ্চলের প্রথম রাজবংশ, যার অস্তিত্ব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। এই রাজবংশ কৃষ্ণা-গুন্টুর অঞ্চল শাসন করত। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষার্ধে কৃষ্ণা নদীর অববাহিকা তথা পূর্ব অন্ধ্র এঁদের শাসনের অধীনে আসে। পুরাণে অন্ধ্র ইক্ষ্বাকুদের "শ্রীপার্বতীয় অন্ধ্র" নামে উল্লেখ করা হয়েছে।[][] এঁদের রাজধানী ছিল বিজয়পুরী (নাগার্জুনকোন্ডা)। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, অন্ধ্র ইক্ষ্বাকুদের সঙ্গে পৌরাণিক ইক্ষ্বাকুদের যোগ ছিল। যদিও কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, একটি স্থানীয় উপজাতীয় গোষ্ঠীর শাসকরা অন্ধ্র ইক্ষ্বাকু উপাধি গ্রহণ করে অন্ধ্র অঞ্চল শাসন করতেন।[][]

প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, অন্ধ্র ইক্ষ্বাকুরা সাতবাহনদের ঠিক পরেই কৃষ্ণা নদী উপত্যকায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। নাগার্জুনকোন্ডা, জাগ্‌গায়াপেটা, অমরাবতীভাট্টিপ্রোলু শহরে ইক্ষ্বাকুদের শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে।[]

পল্লব

খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে আভিরা ও তাদের সহযোগী শক্তিগুলি উপকূলীয় অন্ধ্র অঞ্চল আক্রমণ করলে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক অরাজকতা দেখা দেয়। এই সময় ইক্ষ্বাকু শাসনের পতন হয় এবং বৃহৎফলায়ান, আনন্দগোত্র ও সালঙ্কায়ন রাজবংশের উত্থান ঘটে। মাঞ্চিকাল্লু শিলালিপির সিংহবর্মা এই সময় কৃষ্ণা উপত্যকায় স্বাধীন পল্লব রাজ্য স্থাপন করেছিলেন।

খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে হিরাহাড়াগল্লির মাইদাভোলু অঞ্চলের শিবস্কন্দ বর্মার শাসনকালে পল্লবরা এই অঞ্চলের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়। শিবস্কন্দ বর্মা ছিলেন পল্লবদের প্রথম উল্লেখযোগ্য শাসক। তিনি কৃষ্ণা অববাহিকা থেকে তার রাজ্য দক্ষিণে দক্ষিণ পেন্নার ও পশ্চিমে বেলারি পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন। তিনি অশ্বমেধ ও অন্যান্য বৈদিক যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছিলেন।

দক্ষিণ অন্ধ্র অঞ্চলের পল্লবদের অধিকাংশ প্রাকৃত ও সংস্কৃত সনদগুলি দেখে মনে করা হয় তারা দক্ষিণ অন্ধ্রের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্ধে পশ্চিম চালুক্য শাসক দ্বিতীয় পুলকেশী যখন অন্ধ্র আক্রমণ করেন, তখনও এই অঞ্চলে পল্লবদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর আগে পল্লবরা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। আসলে তারা ছিল সাতবাহন রাজাদের অধীনস্থ রাজকর্মচারী।[]

বিষ্ণুকুণ্ডী

ইক্ষ্বাকু রাজবংশের পতনের পর, বিষ্ণুকুণ্ডী রাজবংশই প্রথম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি যারা সমগ্র অন্ধ্র অঞ্চল, কলিঙ্গ ও তেলঙ্গানার কিছু অঞ্চল নিজেদের অধিকারে আনতে সক্ষম হয়েছিল এবং খ্রিস্টীয় পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা পালন করেছিল।[]

সালঙ্কায়ন

খ্রিস্টীয় ৩০০ অব্দ থেকে ৪৪০ অব্দ পর্যন্ত কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী উপকূলীয় অন্ধ্র অঞ্চলে সালঙ্কায়ন রাজবংশ শাসন করেছিল। এই রাজবংশের রাজধানী ছিল পশ্চিম গোদাবরী জেলার এলুরুর কাছে ভেঙ্গি (অধুনা পেডাভেগি) শহর। এঁরা ছিলেন ব্রাহ্মণ শাসক। তাদের রাজকীয় প্রতীক ও গোত্র নাম শিবের বাহন নন্দীর সঙ্গে যুক্ত।[]

প্রশাসনিক বিভাজন

অঞ্চল

জনসংখ্যার উপাত্ত

জীবনযাত্রার মান

অটল মিশন ফর রেজুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশনের (এএমআরইউটি) সহজ জীবনযাপনের জরিপে বলা হয় , বেঁচে থাকা সবচেয়ে সহজ এখানেই।

অর্থনীতি

এই রাজ্য মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে প্রসিদ্ধ। এইসব পণ্য ভিনরাজ্যে পাঠানো হয়। এই রাজ্য আয়কর প্রদানে দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ অবদান রাখে। প্রায় ৪৬ হাজার কোটি রুপি আয়কর আদায় হয় এখান থেকে।

শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হারে এই রাজ্য ভারতের সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। ১৫-২৯ বর্ষীয়দের ৪৫% এবং সামগ্রিকভাবে ৫৫.১% অংশগ্রহণ রয়েছে ।

শিক্ষা ও গবেষণা

নেল্লোর জেলায় ভারতের প্রধান মহাকাশ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র রয়েছে।

পাদটীকা

  1. G. Durga Prasad, History of the Andhras up to 1565 AD, P.G. Publishers, Guntur, p. 116
  2. "History of the Andhras" (পিডিএফ)Durga Prasad। P. G. PUBLISHERS। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৯  |অধ্যায়= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. Andhra Ikshvaku inscriptions
  4. Ancient India, A History Textbook for Class XI, Ram Sharan Sharma, National Council of Educational Research and Training, India , pp 212
  5. "Ancient and medieval history of Andhra Pradesh"P. Raghunadha Rao। Sterling Publishers, 1993। পৃষ্ঠা 68। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৯ 
  6. "Ancient and medieval history of Andhra Pradesh"P. Raghunadha Rao। Sterling Publishers, 1993। পৃষ্ঠা 70। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-০৯ 
  7. Ancient Indian History and civilization By S. N. Sen

বহিঃসংযোগ

সরকার

টেমপ্লেট:Major Cities of Andhra Pradesh

টেমপ্লেট:Hindu Temples in Andhra Pradesh

টেমপ্লেট:Krishna basin

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!