আম্মান (ইংরেজি: /ɑːˈmɑːn/; আরবি: عمّان) মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র জর্ডানের উত্তর-মধ্যভাগে অবস্থিত দেশটির রাজধানী, বৃহত্তম নগরী এবং অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এছাড়া আম্মান আম্মান গভর্নরেটের প্রশাসনিক রাজধানী। প্রায় ১,৬৮০ বর্গকিলোমিটার (৬৪৮.৭ বর্গমাইল) আয়তনের নগরীটি কতগুলি ঢেউখেলানো পাহাড়ের উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নগরীর জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ।
আম্মান এলাকাতে বহু হাজার বছর ধরেই লোকালয় ছিল। প্রাচীনকালে এখানে আম্মোনীয় জাতির রাজধানী ছিল, খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে যার উল্লেখ আছে। আজ থেকে ২ হাজার বছর আগে মিশর এই নগরীটি বিজয় করে। এর পর কালানুক্রমে আরও অনেক শক্তি নগরীটিকে নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু অজানা কোনও কারণে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নগরীটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৮৭৮ সালে রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা কিছু ব্যক্তি এই এলাকাটিতে একটি ছোট গ্রাম স্থাপন করে। ১৯২১ সালে আম্মানের পুনরুত্থান ঘটে। ঐ বছর এটিকে আন্তঃজর্দান নামক একটি অঞ্চলের রাজধানী বানানো হয়। আন্তঃজর্দান অঞ্চলটি ১৯৪৬ সালে স্বাধীন জর্দান রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপ থেকে আম্মান নগরীর ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটে। বর্তমানে আম্মান উদারপন্থী ও পশ্চিমা ধারার আরব নগরীগুলির অন্যতম। পর্যটন খাতে সমৃদ্ধ এই নগরীতে আরব ও ইউরোপীয় পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে।
ভূগোল
আম্মান পূর্ব তীরে মালভূমিতে অবস্থিত, যা একটি উচ্চভূমি যা তিনটি প্রধান ওয়াদি (উপত্যকা) দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যা এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মূলত, শহরটি সাতটি পাহাড়ের উপর নির্মিত হয়েছে। আম্মানের ভূখণ্ড তার পাহাড় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নাম তারা পাহাড় বা পর্বতগুলির নামানুসারে নামকরণ করে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এ এলাকার উচ্চতা ৭০০ থেকে ১১০০ মিটার (২৩০০ থেকে ৩৬০০ ফুট)। আল-সালত এবং আল-জারকা যথাক্রমে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত, মাদাবা পশ্চিমে অবস্থিত, এবং আল-কারাক এবং মায়ান আম্মানের দক্ষিণপশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। আম্মানের একমাত্র অবশিষ্ট ঝর্ণা এখন জারকা নদীর পানি সরবরাহ করে।
আম্মানে যে গাছগুলি পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে আলেপ্পো পাইন, ভূমধ্যসাগরীয় সাইপ্রেস এবং ফিনেসিয়ান জুনিপার।
জলবায়ু
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের নিকটবর্তী পাহাড়ে আম্মানের অবস্থান হওয়ায় এটি অর্ধ-শুকনো জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় পড়েছে। গ্রীষ্মকাল হালকা গরম এবং বাতাসযুক্ত, তবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে এক বা দুটি তাপপ্রবাহ হতে পারে। বসন্তকাল সংক্ষিপ্ত এবং উষ্ণ হয়, যেখানে তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ২৮° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৩° ডিগ্রি ফারেনহাইট)। বসন্তকাল সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে শুরু হয় এবং প্রায় এক মাস স্থায়ী হয়। শীতকাল সাধারণত নভেম্বর মাসের শেষদিকে শুরু হয় এবং মার্চ মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তাপমাত্রা সাধারণত ১৭° ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৩° ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর কাছাকাছি বা এর নিচে থাকে, বছরের মাঝে মাঝে একবার বা দুইবার তুষারপাত হয়। আম্মানের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩০০ মিলিমিটার (১২ ইঞ্চি) এবং বছরের অধিকাংশ সময় খরা থাকে, যেখানে বেশিরভাগ বৃষ্টি হয় অক্টোরব থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে। প্রতি বছর কমপক্ষে ১২০ দিনের বেশি সময় ভারী কুয়াশা থাকাটা স্বাভাবিক। শহরে বিভিন্ন উচ্চতার পার্থক্য আবহাওয়ার পরিবেশ পরিস্থিতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে; একই সময়ে আম্মানের পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলে (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ১০০০ মিটার (৩,৩০০ ফুট)) বরফ জমে থাকতে পারে আবার নগরীর কেন্দ্রে (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ৭৭৬ মিটার (২,৫৪৬ ফুট)) বৃষ্টি হতে পারে।
আম্মান ৪১ সদস্য বিশিষ্ট সিটি কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা পাঁচ বছরের জন্য জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। সকল জর্দানীয় নাগরিক, যারা বয়স ১৮ বছরের বেশি তারা পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। যাহোক, সিটি মেয়রের জন্য নির্বাচন হয় না, মেয়রকে বাদশা সরাসরি নিয়োগ করে থাকেন।[৩] ১৯০৯ সালে ইসমাইল বাবুক কর্তৃক আম্মান সিটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি ছিলেন এর প্রথম মেয়র এবং ১৯১৪ সালে আম্মানের প্রথম সিটি ডিস্ট্রিক্ট সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছিল।[৪]
জনসংখ্যা
২০১৫ সালে আম্মানের জনসংখ্যা ৪,০০৭,৫২৬ জনে পৌঁছেছে, শহরটিতে জর্দানের পুরো জনসংখ্যার প্রায় ৪২% বসবাস করে। শহরের মোট ভূমি ১,৬৮০ বর্গ কিলোমিটার (৬৪৮ বর্গমাইল), যাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ২,৩৮০ জন (প্রতি বর্গমাইলে ৬২০০ জন)। বিংশ শতাব্দীতে অভিবাসী এবং শরণার্থীদের ধারাবাহিক ঢেউয়ের সাথে আম্মানের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮৯০ সালে আম্মানে প্রায় ১,০০০ জনসংখ্যা ছিল, যা থেকে মূলত অভিবাসনের ফলে ১৯৯০ সালে প্রায় ১,০০,০০০ জন বাসিন্দা হয়ে উঠে, তবে শহরের অধিক জন্মহারের কারণেও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আম্মান অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত ছিল যতক্ষণ না কার্কাসিয়ান ১৯শ শতাব্দীতে এখানে বসতি স্থাপন করে। আজ, প্রায় ৪০,০০০ কার্কাসিয়ান আম্মান এবং এর আশেপাশে বাস করে। ১৯১৪ সালে আম্মান হিজাজ রেলওয়ের একটি বড় কেন্দ্রস্থল হওয়ার পরে, আল-সালত থেকে বহু মুসলমান ও খ্রিস্টান ব্যবসায়ী পরিবার এ শহরে চলে এসেছিল। আম্মানের বাসিন্দাদের একটি বিশাল অংশের ফিলিস্তিনি শিকড় রয়েছে (শহুরে বা গ্রামীণ উৎপত্তি), এবং এই শহরে দুটি প্রধান জনসংখ্যার গোষ্ঠী আজ ফিলিস্থিনি বা জর্দানি বংশোদ্ভূত আরব। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা প্রায় ২% শতাংশ এর নিচে। ফিলিস্তিনি বা জর্দানি বংশোদ্ভূত মানুষের অনুপাত সম্পর্কে কোন সরকারি পরিসংখ্যান নাই।
১ মধ্য এশিয়ার অংশ হিসেবে ধরা হয়। ২ তাইওয়ান নামে পরিচিত. ৩ পূর্ণনাম: শ্রী জয়াবর্ধেনাপুরা কোট্টে. ৪ আনুষ্ঠানিক ৫ প্রাতিষ্ঠানিক ৬ জেরুসালেমের উপরে উভয়ের দাবি রয়েছে ৭ এশিয়ার সাথে যুক্ত হলেও ইউরোপীয় রাজনীতি ও সমাজ জীবন ধারার সাথে যুক্ত ৮ আন্ত:মহাদেশীয় রাষ্ট্র ৯ মেলানেশিয়ার অর্ন্তগত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি ও সামাজিক জীবনের সাথে যুক্ত১৩ মেলানেশিয়ার অর্ন্তগত.