সিউল (কোরীয়: 서울; /soʊl/; কোরীয়: [sʰʌul] (শুনুনⓘ); আক্ষ. অনু. Capital) পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম মহানগরী। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অংশে হান নদীর তীরে অবস্থিত। সিউল নগরকেন্দ্র থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে পীতসাগর অবস্থিত। শহরটি উত্তর কোরিয়ার সাথে সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সিউল শহরটি দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রশাসন ও শিল্পকারখানার প্রাণকেন্দ্র। শহরটির মোট আয়তন প্রায় ৬০০ বর্গকিলোমিটার এবং এখানে প্রায় ১০ লক্ষ লোক বাস করে।
সিউল শহরটি দুই হাজার বছরেরও বেশি আগে ১৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩৯৪ সাল থেকে সিউল শহরটি অবিভক্ত কোরিয়ার রাজধানী ছিল। কোরীয় ভাষাতে "সউল" শব্দের অর্থ "রাজধানী। শহরটি সরকারীভাবে হানসোং (১৯১১ সাল পর্যন্ত) বা কিয়োনসোং (১৯১১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত) নামে পরিচিত হলেও সাধারণ লোকেরা এটিকে "সউল" বলেই ডাকত। ১৯৪৫ সালে জাপানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিলাভের পর শহরটির নাম সরকারীভাবে "সউল" বা সিউল রাখা হয়। ১৯৪৮ সালে দুই কোরিয়া বিভক্ত হয়ে গেলে সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে পরিণত হয়।
সিউল শহরটি পর্বত দিয়ে ঘেরা। সবচেয়ে উঁচু পর্বতটি হল শহরের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত বুখানসান পর্বত (উচ্চতা ৮৩৬ মিটার)। পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে প্রবহমান হান নদীটি শহরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে।
সিউলের ব্যবসাবাণিজ্যিক এলাকাগুলি শহরের কেন্দ্রে ও হান নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। কলকারখানাগুলি শহরের পশ্চিম অংশে (বিশেষ করে ইয়েওংদেউংপো এলাকাতে) অবস্থিত। অন্যদিক অপেক্ষাকৃতি নিম্নবিত্ত আবাসিক এলাকাগুলি শহরের পূর্ব অংশে অবস্থিত। শহরের উত্তর অংশটি পর্বতময় এবং এখানে অনেক উদ্যান ছাড়াও রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ বা চোংওয়াদায়ে (নীল বাড়ি) অবস্থিত।
সিউলের জলবায়ু মহাদেশীয় প্রকৃতির। এখানে চারটি ঋতু বিদ্যমান। গ্রীষ্মকালগুলি গরম ও আর্দ্র এবং শীতকালগুলি শীতল ও তুলনামূলকভাবে শুষ্ক। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত হয়।
বর্তমানে সিউল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শহর হিসেবে পরিগণিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে শহরটির বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উত্থান ঘটে। জাপানের টোকিও এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহর ও লস অ্যাঞ্জেলেসের পরে সিউল শহরের অর্থনীতি বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম নগর অর্থনীতি। সামসুং, এলজি এবং হুন্দাই-এর মত বৃহৎ পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি শহরের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
শহরটি ১৯৮৮ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং যৌথভাবে ২০০২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করে।
সিউল শহরে প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশি পর্যটক বেড়াতে আসে।[৪] ফলে এটি বিশ্বের ৯ম সর্বোচ্চ দর্শিত শহর। [৫]