"মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটি ১৮৫০- এর দশকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অফিস থেকে উদ্ভূত হতে পারে।[১৮][১৯] তবে মার্কিন নৌ কৌশলবিদ আলফ্রেড থায়ের মাহান ১৯০২ সালে "আরব ও ভারতের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে" বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করার পর আরো ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। [৬][২০] এই সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ও রুশ সাম্রাজ্যের মাঝে মধ্যএশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরবর্তীতে গ্রেট গেম নামে পরিচিত হয়। আলফ্রেড মাহান কেবল এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বই উপলব্ধি করেননি; বরং তিনি এর কেন্দ্র পারস্য উপসাগরের গুরুত্বও উপলব্ধি করেন।[২১] তিনি পারস্য উপসাগর-বর্তী অঞ্চলটিকে মধ্যপ্রাচ্য হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং তিনি বলেন যে, মিশরের সুয়েজ খালের পরে রুশদের ব্রিটিশ ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য এটি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ।[২২]১৯০২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত "পারস্য উপসাগর ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক" প্রবন্ধে তিনি প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।[২৩] তিনি বলেন,
মধ্যপ্রাচ্য, যদি আমি এমন একটি শব্দ গ্রহণ করি, যা আমি দেখিনি, তাহলে কোনো দিন তার মাল্টা এবং সেইসাথে তার জিব্রাল্টার প্রয়োজন হবে। নৌবাহিনীর গতিশীলতার গুণ রয়েছে, যা সাময়িক অনুপস্থিতির সুবিধা বহন করে; কিন্তু অপারেশনের প্রতিটি দৃশ্যে এটিকে রিফিট, সরবরাহের ঘাঁটি খুঁজে বের করতে হবে এবং দুর্যোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এডেন, ভারত এবং পারস্য উপসাগরে সুযোগ সৃষ্টি হলে শক্তিতে মনোনিবেশ করার সুবিধা থাকা উচিত"।[২৪]
মাহানের নিবন্ধটি দ্য টাইমসে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল এবং অক্টোবরে স্যার ইগনাটিয়াস ভ্যালেন্টাইন চিরোলের লেখা "দ্য মিডল ইস্টার্ন কোয়েশ্চেন" শিরোনামে একটি ২০-নিবন্ধসম্পন্ন সিরিজে নিবন্ধটিকে অনুসরণ করা হয়েছিল। এই সিরিজ চলাকালীন স্যার ইগনাশিয়াস মধ্যপ্রাচ্যের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করেন এবং এতে তিনি বলেন যে, মধ্যপ্রাচ্য এশিয়ার সেই অঞ্চলগুলো যেগুলো ভারতের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় বা ভারতে যাওয়ার পথ নির্দেশ করে।"[২৫]১৯০৩ সালে সিরিজটি শেষ হওয়ার পর দ্য টাইমস শব্দটির পরবর্তী ব্যবহার থেকে উদ্ধৃতি চিহ্ন সরিয়ে দেয়।[২৫]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তুরস্ক ও ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলকে কেন্দ্র করে অবস্থিত এলাকাগুলোকে "নিকট প্রাচ্য" হিসাবে উল্লেখ করার প্রথা ছিল এবং "দূরপ্রাচ্য" বলতে তখন চীন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা বোঝানো হতো।[২৬] কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য বলতে তখন কেবল মেসোপটেমিয়া থেকে বার্মা পর্যন্ত অঞ্চলকে বোঝানো হত অর্থাৎ নিকট প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্যের মধ্যবর্তী অঞ্চল। ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য কায়রোভিত্তিক একটি মধ্যপ্রাচ্য কমান্ড প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত ব্যবহার লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় শব্দটির অন্যান্য ব্যবহারের মতোই ১৯৪৬ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।[২৭]
১৯১৮ সালে উসমানি সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে "নিকট প্রাচ্য" শব্দটি ইংরেজিতে সাধারণ ব্যবহারের বাইরে চলে যায় এবং তখন 'মধ্যপ্রাচ্য' শব্দটি মুসলিম বিশ্বের পুনরায় উদীয়মান দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যাহোক, "নিকট প্রাচ্য" ব্যবহারটি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন ইতিহাসসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক শাখা কর্তৃক ধরে রাখা হয় এবং এটি "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটির অনুরূপ একটি অঞ্চল বর্ণনা করে। (প্রাচীন নিকট প্রাচ্য দেখুন)
"মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটিকে সাংবাদিক লুয়ে খরাইশ এবং ইতিহাসবিদ হাসান হানাফী ইউরোপকেন্দ্রিক সেইসাথে উপনিবেশবাদী শব্দ বলেও সমালোচনা করেছেন।[৩৪][৩৫][৩৬]অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস স্টাইলবুক মতে, পূর্বে নিকট প্রাচ্য শব্দটি দূরতর পশ্চিম দেশগুলোকে নির্দেশ করত এবং মধ্যপ্রাচ্য পূর্বের দেশগুলোকে উল্লেখ করত; তবে এখন তারা সমার্থক। এটি নির্দেশ করে যে,
মধ্যপ্রাচ্য ব্যবহার করুন, যদি না নিকট প্রাচ্য একটি গল্পে একটি উৎস দ্বারা ব্যবহার করা হয়। (ইংরেজির ক্ষেত্রে) Mideast (মিড ইস্ট) গ্রহণযোগ্য, তবে Middle East (মিডল ইস্ট) পছন্দের।[৩৭]
সম্ভবত পশ্চিমা সংবাদপত্রের প্রভাবের কারণে মধ্য প্রাচ্যের আরবি প্রতিশব্দ 'الشرق الأوسط' (Ash-Sharq al-Awsaṭ) মূলধারার আরবি প্রেসে প্রমিত ব্যবহার হয়ে উঠেছে। যার অর্থ উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপে ব্যবহৃত হওয়া "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দের মতোই।। মাশরিক উপনামটি (প্রাচ্যের মূল আরবি থেকে উদ্ভূত) আরবি ভাষী বিশ্বের পূর্ব অংশ (মাগরেব হচ্ছে পশ্চিম অংশ)[৩৯]লেভান্তের চারপাশের ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করে। যদিও শব্দটি পাশ্চাত্যে উদ্ভূত হয়েছিল, আরবি ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ভাষাও এর অনুবাদ ব্যবহার করে। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ফার্সি প্রতিশব্দ হল خاورمیانه (খাভার-ই মিয়ানেহ ), হিব্রু המזרח התיכון (হামিজরাচ হাতিখন), তুর্কি Orta Doğu এবং গ্রীক ভাষায় হল Μέση Ανατολή (মেসি আনাতোলি )।
কয়েকটি ধারণা প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সমান্তরাল হয়ে আসছে। বিশেষ করে নিকট প্রাচ্য, উর্বর চন্দ্রকলা ও লেভান্ত। নিকট প্রাচ্য, উর্বর চন্দ্রকলা এবং লেভান্ত হল ভৌগলিক ধারণা, যা আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ অংশকে নির্দেশ করে এবং ভৌগোলিক অর্থে নিকট প্রাচ্য মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী। এছাড়া আরবি ভাষী হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলকেও কখনো কখনো এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সভ্যতা গঠনের আগে প্রস্তর যুগে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উন্নত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। কৃষিজীবীদের দ্বারা কৃষি জমির অনুসন্ধান ও পশুপালকদের দ্বারা যাজকীয় জমির অনুসন্ধানের ফলে এই অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন স্থানান্তর ঘটেছিল এবং এর মাধ্যমেই এই অঞ্চলে জাতিগত ও জনসংখ্যার রূপরেখা তৈরি হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে ছয়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তারকারী চারটি খিলাফত ছিল রাশিদুন খিলাফত, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফত ও ফাতেমীয় খিলাফত। এছাড়াও এই অঞ্চলে মঙ্গোলরা আধিপত্য বিস্তার করতে আসে এবং আর্মেনিয়া রাজ্যও একদা এই অঞ্চলের কিছু অংশকে তাদের প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে। সেলজুকরা এই অঞ্চলে শাসন করে এবং তুর্কো -ফার্সি সংস্কৃতির বিস্তার করে। ফ্রাঙ্করা ক্রুসেড যুদ্ধের ফলে কিছু রাজ্যের দখল পায়, যা প্রায় দু শতাব্দী ধরে টিকে থাকে। জোসিয়া রাসেল ১০০০ সালে "ইসলামি অঞ্চল" হিসাবে অভিহিত করা অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন হিসেবে অনুমান করেছেন। এর মধ্যে আনাতোলিয়ায় ৮ মিলিয়ন, সিরিয়ায় ২ মিলিয়ন এবং মিশরে ১.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা ছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। [৪৭] ষোড়শ শতাব্দীর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আবারো দুই প্রধান শক্তি আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এর মধ্যে পশ্চিমে বর্তমান তুরস্ক কেন্দ্রীক উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং পূর্বে পারস্য বা বর্তমান ইরান-কেন্দ্রীক সফবীয় রাজবংশ। সেই সাথে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান কাঠামো গঠন শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে। বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য কেন্দ্রীয় শক্তির সাথে মিত্রতা করে এবং যুদ্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও তাদের মিত্রদের কাছে পরাজিত হয়। তবে প্রাথমিকভাবে উসমানীয় সাম্রাজ্য ব্রিটিশ ও ফরাসি আদেশের অধীনে কয়েকটি পৃথক দেশে বিভক্ত হয়ে যায়। এই ধরনের অন্যান্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপীয় শক্তি বিশেষ করে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের চূড়ান্ত প্রস্থান। ১৯৭০ এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে কিছু অংশে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
২০ শতকে এই অঞ্চলের খনিজ তেলের উল্লেখযোগ্য মজুদ এটিকে নতুন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। ১৯৪৫ সালের দিকে এখানে তেলের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচুর পরিমাণে তেল-সম্পদ রয়েছে।[৪৮] এ অঞ্চলে ধারণাকৃত তেলের মজুদ, বিশেষত সৌদি আরব ও ইরানের মজুদ সারা বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ফলে আন্তর্জাতিক তেল কার্টেল ওপেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সর্বদা আধিপত্যশীল।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন মধ্যপ্রাচ্য ছিল দুটি পরাশক্তি এবং তাদের মিত্রদের মধ্যে আদর্শিক লড়াইয়ের একটি নাট্যমঞ্চ ; একদিকে ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার ওয়ারশ চুক্তি। কারণ তারা উভয় আঞ্চলিক মিত্রদের প্রভাবিত করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। রাজনৈতিক অমিল ছাড়াও দুটি ব্যবস্থার মধ্যে "আদর্শগত দ্বন্দ্ব" ছিল।[৪৯] তদুপরি লুইস ফসেট যেমন যুক্তি দিয়েছেন যে, উভয়ের মাঝে বিতর্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে এও ছিল যে, এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য পরাশক্তিদের আকাঙ্ক্ষা এবং এই অঞ্চলে থাকা তেলের সুবিশাল ভান্ডার। এটি এমন একটি প্রেক্ষাপটে চলছিল, যখনে তেল পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। এসব প্রাসঙ্গিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব বিশ্বকে সোভিয়েতের প্রভাব থেকে সরানোর চেষ্টা করছিল। ২০ ও ২১ শতক জুড়ে অঞ্চলটি আপেক্ষিক শান্তি এবং সহনশীলতার সময়কালেও সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ অনুভব করেছে।[৪৯]
মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের সংকীর্ণতার জন্য অভিবাসন পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭০ ও ৯০ এর দশকে পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী আরব রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে মিশর, ইয়েমেন এবং লেভান্তের দেশগুলোর শ্রমিকদের জন্য ইউরোপ কর্মসংস্থানের একটি সমৃদ্ধ উৎস হয়ে উঠেছিল। ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলো তখন ঔপনিবেশিক সম্পর্কের কারণে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে তরুণ শ্রমিকদের আকৃষ্ট করেছিল।[৫০] ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মতে, আরব দেশগুলো থেকে ১৩ মিলিয়ন প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। আরব দেশগুলোর প্রবাসীরা এই অঞ্চলে আর্থিক ও মানব পুঁজির সঞ্চালনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
২০০৯ সালে আরব দেশগুলো মোট ৩৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল এবং অন্য আরব দেশগুলো থেকে জর্ডান, মিশর ও লেবাননে পাঠানো রেমিট্যান্স তাদের ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য আয়ের তুলনায় ৪০ থেকে ১৯০ শতাংশ বেশি।[৫১]সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধের ফলে সোমালি প্রবাসীদের আকার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক শিক্ষিত সোমালি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় চলে গিয়েছে। তুরস্ক, ইসরায়েল ও ইরানের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অনারব দেশগুলোতেও অভিবাসন গতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আরব দেশগুলো থেকে অভিবাসনকারীদের একটি বিশেষ সংখ্যা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের থেকে উৎপাদিত হয়েছে, যারা জাতিগত বা ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হয়ে অভিবাসী হয়েছে এবং তারা অবশ্যই জাতিগত আরব, ইরানী বা তুর্কি নয়। এই কারণেই গত শতাব্দীতে বিপুল সংখ্যক কুর্দি, ইহুদি, অ্যাসিরিয়, গ্রীক, আর্মেনীয় ও ম্যান্ডিয়ানরা ইরাক, ইরান, সিরিয়া এবং তুরস্কের মতো দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পরে ইরান থেকে খ্রিস্টান, বাহাই, ইহুদি ও জরথুস্ত্রীয়দের মতো অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতি চলে গিয়েছে।[৫২][৫৩]
ফার্সি দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা। যদিও এটি কেবল ইরান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর কিছু সীমান্ত এলাকায় বলা হয়; কিন্তু দেশটি এই অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ও জনবহুল। ফার্সি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখার অন্তর্গত। এ অঞ্চলে কথিত অন্য পশ্চিম ইরানী ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে আচোমে, দাইলামি, কুর্দি উপভাষা, সেমানি ও লুরি। তৃতীয়-সর্বোচ্চ কথ্য ভাষা হল তুর্কি এবং এটি মূলত তুরস্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে তুরস্ক এই অঞ্চলের বৃহত্তম এবং জনবহুল দেশগুলোর। তুরস্ক ছাড়াও এটি প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রচলিত আছে। এটি তুর্কি ভাষার একটি সদস্য, যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়ায়। আরেকটি তুর্কি ভাষা হল আজারবাইজানীয় ভাষা। আজারবাইজানী লোকজন ছাড়াও ইরানের আজারিরা এই ভাষায় কথা বলে।
হিব্রুইস্রায়েলের দুটি সরকারী ভাষার একটি, অন্যটি হল আরবি। হিব্রুতে ইস্রায়েলের জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি কথা বলে এবং বাকি ২০% আরবি ব্যবহার করে।গ্রীক সাইপ্রাসের দুটি সরকারী ভাষার একটি এবং সে দেশের প্রধান ভাষা। এছাড়া গ্রীক ভাষাভাষীদের ক্ষুদ্র সম্প্রদায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিদ্যমান আছে। ২০ শতক পর্যন্ত এটি এশিয়া মাইনর (তুর্কি ভাষার পরে সেখানে দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা) ও মিশরে ব্যাপক প্রচলিত ছিল। প্রাচীনকালে প্রাচীন গ্রীক ছিল পশ্চিম মধ্যপ্রাচ্যের অনেক অঞ্চলের ভাষা এবং ইসলামের বিজয়ের আগ পর্যন্ত এটি সেখানে ব্যাপকভাবে কথিত ছিল। ১১ শতকের শেষের দিকে এটি এশিয়া মাইনরের প্রধান কথ্য ভাষাও ছিল। এরপর এটি ধীরে ধীরে তুর্কি ভাষার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় কারণ আনাতোলিয়ায় তুর্কিদের ব্যাপক প্রসার হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ফরাসি ভাষা শেখানো হয় এবং লেবাননের অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং মিডিয়াতে ব্যবহার করা হয়। মিশর ও সিরিয়ার কিছু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এটি পড়ানোও হয়। মাল্টীয় ভাষা যা একটি সেমেটীয় ভাষা, এটি মিশরের ফ্রাঙ্কো-মাল্টীয় প্রবাসীরা ব্যবহার করে। ইসরায়েলে ফরাসী ইহুদিদের ব্যাপক অভিবাসনের কারণেে এটি ইসরায়েলের প্রায় ২০০,০০০ ইহুদিদের স্থানীয় ভাষাও।এই অঞ্চলে আর্মেনীয় ভাষাভাষীদেরও পাওয়া যায়। জর্জীয় প্রবাসীরা জর্জীয় ভাষায় কথা বলে।
১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে দেশত্যাগের কারণে ইসরায়েলি জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রুশ ভাষায় কথা বলে।[৬২] রুশ বর্তমান ইসরায়েলে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় অনানুষ্ঠানিক ভাষা। খবর, রেডিও ও সাইন বোর্ডগুলো হিব্রু এবং আরবি ভাষার পরে সারা দেশে রুশ ভাষায় পাওয়া যায়। সার্কাসীয়ও এই অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা। ইস্রায়েলের প্রায় সমস্ত সার্কাসিয় জাতির লোক এই ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম রোমানীয়-ভাষী সম্প্রদায় ইজরায়েলে পাওয়া যায়। ১৯৯৫ সালের হিসাব মতে, সেখানে রোমানীয় ভাষায় মোট জনসংখ্যার ৫% কথা বলে থাকে।[নোট ২][৬৩][৬৪]
বাংলা, হিন্দি ও উর্দু মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা ব্যবহার করে থাকে। যেমন: সৌদি আরব (সেখানে জনসংখ্যার ২০–২৫% দক্ষিণ এশীয়), সংযুক্ত আরব আমিরাত (সেখানে ৫০- ৫৫% দক্ষিণ এশীয়) ও কাতার। এ সকল দেশে প্রচুর সংখ্যক পাকিস্তানী, বাংলাদেশী ও ভারতীয় অভিবাসী রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, লেবানন ও ইস্রায়েল বাদে পর্যটন অর্থনীতির একটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকয় পরিণত হয়েছে। কারণ আদিকাল থেকে এই অঞ্চল সামাজিকভাবে রক্ষণশীল প্রকৃতির এবং এর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও জর্ডান পর্যটন সুবিধার উন্নতি ও পর্যটন-সম্পর্কিত বিধিনিষেধমূলক নীতিগুলো কিছু শিথিল করার কারণে বৃহত্তর সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ করতে শুরু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় অঞ্চলে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিশেষ করে ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে, যা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৩০% এর প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে ২০০৫ সালে মোট আঞ্চলিক বেকারত্বের হার ছিল ১৩.২%,[৬৮] যুবকদের মধ্যে তা ২৫%[৬৯] এবং দেশ হিসেবে মরক্কোতে ৩৭% ও সিরিয়ায় ৭৩% পর্যন্ত।[৭০]
জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) দ্বারা চিহ্নিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবগুলোর মধ্যে তীক্ষ্ণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর ক্রমবর্ধমান ফ্রিকোয়েন্সি হল জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রধান প্রভাব। এই অঞ্চলটি তার শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক পরিবেশের কারণে এ ধরনের প্রভাবের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক মাটির মতো জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আইপিসিসি (আইপিসিসি) অনুমান করে যে, ২১ শতক জুড়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে এবং এই অঞ্চলের কিছু অংশ ২১০০ সালের আগে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।[৭৭][৭৮][৭৮][৭৯]
জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই দুষ্প্রাপ্য জল এবং কৃষি সম্পদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এর অন্তর্ভুক্ত সকল দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। এটি কিছু এই অঞ্চলের কিছু দেশকে প্যারিস চুক্তির মতো পরিবেশগত চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মত ইস্যুতে যুক্ত হতে প্ররোচিত করেছে। তবে বর্তমান এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিকাশের দিকে মনোযোগ দিয়ে একটি জাতীয় স্তরে আইন ও নীতিও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।[৭১][৮০]
↑ইতালীয় ভাষায় "Vicino Oriente" (প্রাচ্যের নিকটবর্তী) অভিব্যক্তিটি পূর্বে তুরস্ককে বোঝাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্য বা সমস্ত পূর্ব এশিয়া বোঝাতে Estremo Oriente (দূর পূর্ব বা চরম প্রাচ্য) ব্যবহার করা হয়েছিল।
↑ইসরায়েলের ১৯৯৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইস্রায়েলে ২৫০,০০০ রোমানীয় ভাষাভাষী মানুষ ছিল এবং তখন দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৫,৫৪৮,৫২৩ (১৯৯৫ সালের আদমশুমারি)
তথ্যসূত্র
↑Population 1971–2010 (pdfওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১২-০১-০৬ তারিখে p. 89) IEA (OECD/ World Bank) (original population ref OECD/ World Bank e.g. in IEA Key World Energy Statistics 2010 p. 57)
↑Palmer, Michael A. Guardians of the Persian Gulf: A History of America's Expanding Role in the Persian Gulf, 1833–1992. New York: The Free Press, 1992. আইএসবিএন০-০২-৯২৩৮৪৩-৯ pp. 12–13.
↑Clyde, Paul Hibbert, and Burton F. Beers. The Far East: A History of Western Impacts and Eastern Responses, 1830-1975 (1975). online
↑Norman, Henry. The Peoples and Politics of the Far East: Travels and studies in the British, French, Spanish and Portuguese colonies, Siberia, China, Japan, Korea, Siam and Malaya (1904) online
↑Hanafi, Hassan। "The Middle East, in whose world? (Primary Reflections)"। Nordic Society for Middle Eastern Studies (The fourth Nordic conference on Middle Eastern Studies: The Middle East in globalizing world Oslo, 13–16 August 1998)। ৮ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
↑Novikova, Gayane (ডিসেম্বর ২০০০)। "Armenia and the Middle East"(পিডিএফ)। Middle East Review of International Affairs। ২১ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪।
↑Middle Eastওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ২০১৬-০৪-১৫ তারিখে What Is The Middle East And What Countries Are Part of It? worldatlas.com. Retrieved 16 April 2016.
↑Baumer, Christoph (২০১৬)। The Church of the East: An Illustrated History of Assyrian Christianity। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 276। আইএসবিএন9781838609344।
↑Cecolin, Alessandra (২০১৫)। Iranian Jews in Israel: Between Persian Cultural Identity and Israeli Nationalism। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 138। আইএসবিএন9780857727886।
↑Jenkins, Philip (২০২০)। The Rowman & Littlefield Handbook of Christianity in the Middle East। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা XLVIII। আইএসবিএন9781538124185।
↑Curtis, Michael (২০১৭)। Jews, Antisemitism, and the Middle East। Routledge। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন9781351510721।
↑IPCC, 2014: Climate Change 2014: Synthesis Report. Contribution of Working Groups I, II and III to the Fifth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate Change [Core Writing Team, R.K. Pachauri and L.A. Meyer (eds.)]. IPCC, Geneva, Switzerland, 151 pp.।
Beaumont, Peter; Blake, Gerald H; Wagstaff, J. Malcolm (১৯৮৮)। The Middle East: A Geographical Study। David Fulton। আইএসবিএন978-0-470-21040-6।
Bishku, Michael B. (২০১৫)। "Is the South Caucasus Region a Part of the Middle East?"। Journal of Third World Studies। 32 (1): 83–102। জেস্টোর45178576।
Cleveland, William L., and Martin Bunton. A History Of The Modern Middle East (6th ed. 2018 4th ed. online
Cressey, George B. (1960). Crossroads: Land and Life in Southwest Asia. Chicago, IL: J.B. Lippincott Co. xiv, 593 pp. ill. with maps and b&w photos.
Fischbach, ed. Michael R. Biographical encyclopedia of the modern Middle East and North Africa (Gale Group, 2008).
Freedman, Robert O. (1991). The Middle East from the Iran-Contra Affair to the Intifada, in series, Contemporary Issues in the Middle East. 1st ed. Syracuse, NY: Syracuse University Press. x, 441 pp. আইএসবিএন০-৮১৫৬-২৫০২-২ pbk.
Goldschmidt, Arthur Jr (১৯৯৯)। A Concise History of the Middle East। Westview Press। আইএসবিএন978-0-8133-0471-7।
Halpern, Manfred. Politics of Social Change: In the Middle East and North Africa (Princeton University Press, 2015).
Ismael, Jacqueline S., Tareq Y. Ismael, and Glenn Perry. Government and politics of the contemporary Middle East: Continuity and change (Routledge, 2015).
Lynch, Marc, ed. The Arab Uprisings Explained: New Contentious Politics in the Middle East (Columbia University Press, 2014). p. 352.