পর্তুগিজরা আনুমানিক ১৫২০ সালে দিলি প্রতিষ্ঠা করে, তারা এই শহরটিকে ১৭৬৯ সালে পর্তুগিজ তিমুরের রাজধানী করে। পরবর্তীতে ১৮৬৪ সালে এটিকে একটি শহর হিসেবে ঘোষণা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, পর্তুগাল এবং এর উপনিবেশগুলি নিষ্ক্রিয় ছিল, তবে মিত্ররা পূর্ব তিমুরকে জাপানি আক্রমণের একটি সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসাবে আশঙ্কা করে এবং অনতিবিলম্বে অস্ট্রেলিয়ান ও ডাচ বাহিনী ১৯৪১ সালে এই দ্বীপটি দখল করে নেয়। ১৯৪২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে, জাপানিরা প্রায় ২০,০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে এবং উপনিবেশের উপনিবেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই দিলি দখল করে নেয়।
১৯৪৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, জাপানিরা আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ পর্তুগালকে ফিরিয়ে দেয়।
পূর্ব তিমুর একতরফাভাবে ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর পর্তুগাল থেকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষিত হয় । তবে এর নয় দিন পরে ৭ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ান বাহিনী দিলি আক্রমণ করে । ১৭ জুলাই ১৯৭৬,ইন্দোনেশিয়াপূর্ব তিমুর কে ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে এবং একে ২৭ তম প্রদেশ তিমুর হিসেবে ঘোষণা করে। ইন্দোনেশীয় তিমুর কে দিলির রাজধানী করে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ান ও স্বাধীনতাপন্থী বাহিনীর মধ্যে একটি গেরিলা যুদ্ধ হয়, এই যুদ্ধে ১০ হাজার পূর্ব তিমুরবাসী এবং কিছু বিদেশী বেসামরিক মানুষ মারা যায়। ১৯৯১ সালে দিলি গনহত্যা মিডিয়া কভারেজ পেলে আন্তর্জাতিক সমর্থন পুনরুজ্জীবিত হয় এবং পূর্ব তিমুরবাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়তা করে।
১৯৯৯ সালে পূর্ব তিমুরকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নেয়া হয় এবং ২০ শে মে ২০০২-এ দিলি সদ্য স্বাধীন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের তিমুর-লেস্ট এর রাজধানী হয়। ২০০৬ সালের মে মাসে, সামরিক শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে লড়াই ও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং শহরটির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। শহরটিতে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিদেশী সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ে।
ভূগোল ও প্রশাসন
দিলি লেসর সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের পূর্বতম তিমোর দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এটি দিলি পৌরসভা প্রশাসনের কেন্দ্র যা এই অঞ্চলের প্রশাসনিক সত্তা। এতে আতাউরো দ্বীপ এবং দিলি শহরের নিকটবর্তী বেশ কিছু শহরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শহরটিকে নাইন ফেটো, ভেরা ক্রুজ, ডম এলেক্সো এবং ক্রিস্টো রে প্রশাসনিক থানা তে (পূর্বে উপ- জেলাগুলিতে ) এবং কয়েকটি সুকোতে বিভক্ত করা হয়, যার প্রত্যেকটির নেতৃত্বে রয়েছে এক একজন নির্বাচিত শেফে দ্য সুকো । ৪টি থানার ২৬ টির মধ্যে ১৮ টি সুকো শহর হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। [৩]
পৌরসভায় একজন নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিল রয়েছে। [৪]
জনসংখ্যা
২০১০ সালের আদমশুমারি থেকে জানা যায়, দিলির বিভিন্ন শহরে মোট জনসংখ্যা ১৯৩,৫৬৩ জন। আতাউরো এবং মেটিনারোর মতো গ্রামীণ অঞ্চল সহ পুরো জেলার জনসংখ্যা ২৩৪,৩৩১।
কাজের সন্ধানে দেশজুড়ে যুবকদের দিলিতে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের কারণে দিলি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এক মিশ্রনে পরিনণত হয়েছে। এটি আরেকটি প্রকট সমস্যার (লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা)জন্ম দিয়েছে। দিলিতে পুরুষের সংখ্যা নারীদের চেয়ে বেশি। ২০০১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে, দিলি জেলার জনসংখ্যা ১২.৫৮% হারে বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে শুধু মাত্র ৫৪% বসবাসকারী শহরে জন্মগ্রহণ করে। বাউকেতে জন্মগ্রহণ করে শতকরা ৭%,বোবোনারো এবং ভিকিউকিতে জন্মগ্রহণ করে শতকরা ৫%, এরমেরার জন্মগ্রহণ করে শতকরা ৪% এবং বাকি মানুষ অন্যান্য জেলা ও বিদেশে জন্মগ্রহণ করে।[৫]
জলবায়ু
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী দিলি ক্রান্তীয় আর্দ্র এবং শুষ্ক জলবায়ুর শহর।
১৯৯৯ তে, ইন্দোনেশিয়ান সামরিক এবং স্থানীয় ইন্দোনেশিয়া সমর্থক মিলিশিয়াদের সহিংসতায় দিলির বেশিরভাগ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় (অপারেশন স্কর্চড আর্থ)।[৭] তবে এই শহরটিতে এখনও পর্তুগিজ যুগের অনেকগুলি ভবন রয়েছে।উদাহরণস্বরূপ, ১৯৩০ এর দিকে নির্মিত প্রাক্তন মার্কেট হল যা এখন কংগ্রেস সেন্টার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাক্তন পর্তুগিজ গভর্নরের কার্যালয় এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এটি পূর্বে ইন্দোনেশিয়ান-নিযুক্ত গভর্নর এবং পূর্ব তিমুর (ইউ এন টি এ ই টি) এর জাতিসংঘের ট্রানজিশনাল প্রশাসন দ্বারাও ব্যবহৃত হতো।
এমনকি ইন্দোনেশিয়ান শাসনে পর্তুগিজ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, আভিনিদা, মেরেচাল, কারমোনার মতো পর্তুগিজ রাস্তার নামগুলি অপরিবর্তিত থেকে যায়, যদিও পরে সেগুলির নামের শুরুতে ইন্দোনেশিয়ান শব্দ জালান বা 'রাস্তা' যোগ করে দেয়া হয়। ইন্দোনেশিয়ান শব্দ Jalan বা 'রাস্তা'। মোটায়েলের রোমান ক্যাথলিক চার্চ ইন্দোনেশিয়ান দখল প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। জাকার্তার দখলে ছিল চার্চ অব দ্য ইম্যামাকুলেট কনসেপ্ট, ডোলির রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিসের আসন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম গির্জা,এবং 'ইন্টিগ্রেশন মনুমেন্ট' যা ১৯৭৬ সালে এই অঞ্চলটির ইন্দোনেশীয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার একটি স্মৃতি। স্মৃতিস্তম্ভটি পূর্ব তিমোরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরহিত একটি মূর্তি যার কব্জির শেকল ভাঙা, স্মৃতিস্তম্ভটি এখনও চূর্ণ করা হয়নি।
ক্রিস্টো রে হল ২ মিটার (৮৮.৬ফুট) উঁচু যীশুর একটি মূর্তি যা একটি ভূগোলকের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ক্রিস্টো রে, দিলির পেনিন্সুলা উপদ্বীপের শেষে অবস্থিত। এটি শহরের অন্যতম প্রধান একটি আকর্ষণ। ক্রিস্টো রে ছিল পূর্ব তিমুরের জন্য ইন্দোনেশিয়ার একীকরনের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়ান সরকারের উপহার।
.
শিক্ষা
দিলির স্কুলগুলির মধ্যে "সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল" (Colégio de São José)অন্যতম।
দিলিতে পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিদ্যালয় রয়েছে। তিমুরের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত "সেন্ট অ্যান্টনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল", যা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ায় এবং পরিবর্তিত অস্ট্রেলিয়ান পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে, "এসকোলা পর্তুগুয়েসা রুই সিনাট্টির" নামে একটি পর্তুগিজ স্কুল, "দিলি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল" নামে একটি অস্ট্রেলিয়ান পরিচালিত স্কুল, "কিউএসআই ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অফ দিলি" নামে পরিচিত একটি আমেরিকান পাঠ্যক্রম স্কুল, এবং "মহার্লিকা আন্তর্জাতিক স্কুল" (পূর্বে ডিলি শিক্ষা ও উন্নয়ন কেন্দ্র), এবং একটি ফিলিপাইন আন্তর্জাতিক স্কুল। দিলি ভিত্তিক "ইউনিভারসিডাইডে ন্যাশনাল দ্য তিমোর লেস্টে" (ইউএনটিএল) হল পূর্ব তিমুরের প্রধান উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দিলিতে অবস্থিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে রয়েছে বেসরকারী স্নাতক বিশ্ববিদ্যালয়, "ইউনিভার্সিডেড দা পাজ" (ইউএনপিএজেড), "ইউনিভার্সিডেড দিলি "(ইউএনডিআইএল) এবং একটি কমিউনিটি ভিত্তিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান "দিলি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি" (ডিআইটি) ।
পর্তুগিজ শাসনের অধীনে, দীর্ঘ রানওয়ে বিশিষ্ট বাউকাউ বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমান যাত্রার কাজে ব্যবহৃত হত, তবে ইন্দোনেশীয় আগ্রাসনের পরে এটি ইন্দোনেশিয়ান সামরিক বাহিনী দখল করে নেয় এবং বেসামরিক যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
টুইন টাউন(বোন শহর)
দিলির বেশ কিছু শহরের সাথে চুক্তিবদ্ধ। নিচে শহরগুলির তালিকা দেয়া হলঃ
↑"Klimatafel von Díli, Insel Timor / Ost-Timor"(পিডিএফ)। Baseline climate means (1961-1990) from stations all over the world (German ভাষায়)। Deutscher Wetterdienst। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৬।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)
↑"Geminações de Cidades e Vilas: Coimbra" (Portuguese ভাষায়)। Associação Nacional de Municípios Portugueses। ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)