তাইপে (/ˌtaɪˈpeɪ/;[৪] ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায়: [tʰǎɪpèɪ]; Hokkien POJ: Tâi-pak) তাইওয়ানের রাজধানী, বিশেষায়িত পৌরএলাকা ও প্রধান শহর, যা দাপ্তরিকভাবে তাইপেই সিটি নামে পরিচিত। তাইপেই শহরটি তাইওয়ান দ্বীপের উত্তরের অংশে অবস্থিত নিউ তাইপেই সিটি পৌরসভার একটি ছিটমহল, যা উত্তর বন্দর নগরী কেলুংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৫ কিমি দুরে অবস্থিত। শহরটির অধিকাংশ অংশ তাইপেই অববাহিকায় অবস্থিত, এটি একটি প্রাচীন হ্রদভূমি। অববাহিকাটি কেলুং এবং জিন্দিয়ান নদীর তুলনামূলকভাবে সরু উপত্যকা দ্বারা আবদ্ধ, যা শহরের পশ্চিম সীমান্তে তামসুই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।[৫]
তাইপে শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২,৭০৪,৮১০ জন।[৬] নিউ তাইপেই এবং কেলুংয়ের নিকটবর্তী শহরগুলি নিয়ে তাইপেই-কেলুং মেট্রোপলিটন এলাকা গঠিত হয়েছে, যাতে ৭,৪৭,৫৫৯ জন বসবাস করে। এটি বিশ্বের ৪০ তম সর্বাধিক জনবহুল নগর অঞ্চল। যেখানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ তাইওয়ানীয় নাগরিক মেট্রো জেলায় বাস করেন। "তাইপেই" নামটি পুরো মেট্রোপলিটন অঞ্চল বা শহরটিকে যথাযথভাবে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
তাইপেই তাইওয়ানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
তাইপেই সিটি উত্তর তাইওয়ানের তাইপেই অববাহিকায় অবস্থিত। এটি দক্ষিণে জিন্ডিয়ান নদী এবং পশ্চিমে তামসুই নদী দ্বারা সীমানা চিহ্নিত করেছে। পৌরসভার কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলসমূহ সাভাবিকভাবেই নিম্ন ভূমি, বিশেষ করে উত্তরদিকে অনেকটাই উচু, যেখানে কিজিং পর্বতের উচ্চতা ১,১২০ মিটার এবং ইয়াংমিংশান জাতীয় উদ্যান তাইপের সর্বোচ্চ আগ্নেগিরি (বর্তমান নিষ্ক্রিয়)। উত্তরে জেলা শিলিন ও বেইটু উত্তর দিকে বর্ধিত হয়ে ইয়াংমিংশান জাতীয় উদ্যানের সীমানা চিহ্নিত করেছে। তাইপেই শহরের আয়তন ২৭১.৭৯৯৭ বর্গকিলোমিটার, এটি তাইওয়ানের ২৫টি শহর ও জেলার মধ্যে ১৬তম স্থানে রয়েছে।
২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী তাইপে মূল শহরের জনসংখ্যা ২,৭০৪,৮১০ জন এবং তাইপেই মহানগরী অঞ্চলের জনসংখ্যা ৭,০৪৭,৫৫৯ জন।[৬] সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নগরীর জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে যখন পার্শ্ববর্তী নিউ তাইপে জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রাথমিক বছগুলিতে যখন দ্রুত জনসংখ্যার হ্রাস পাচ্ছিল, তখন নতুন নিম্ন ঘনত্বের বিকাশ এবং নগরীতে জন্মের পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১০ সাল থেকে আবারও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।[৬][৭][৮]
তাইপেইয়ের ভূগোল ও তাইপেই অববাহিকার অবস্থানের কারণে এর অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি তাইপেইয়ের জনসংখ্যা সমানভাবে বিন্যস্ত হয়নি।
তাইওয়ানের ব্যবসা, আর্থিক ও প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসাবে তাইপেই দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং এখন প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে অন্যতম বিশ্ব নগরীতে পরিণত হয়েছে।[৯] এই উন্নয়ন তথাকথিত তাইওয়ান অলৌকিক বিষয়ের একটি অংশ যা ১৯৬০-এর দশকে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নগরীতে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাইওয়ানের অর্থনীতি এখন ঋণদানকারী অর্থনীতি, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তাদের, যা $৪০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।[১০]
তাইপে শহরটি একটি বিশেষায়িত পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়, যা তাইওয়ান সরকারের এক্সিকিউটিভ ইউয়ান (কেন্দ্রীয় সরকার) বিভাগের অধীন। তাইপের মেয়র ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৪ সাল (নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত) পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন।[১১] ১৯৯৪ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র চার বছর মেয়াদের জন্য জনগণের জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম মেয়র হলেন চেন সুঁই বিয়ান, তিনি ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাইপেই শহর ১২টি প্রশাসনিক জেলায় বিভক্ত। প্রত্যেকটি জেলা আবার শহুরে গ্রামে বিভক্ত। গ্রামগুলো পাড়া বা উপকণ্ঠে (নাইবারহুট) বিভক্ত।[১২]
একাডেমিয়া সিনিকা সহ তাইওয়ানের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস তাইপেতে অবস্থিত। একাডেমিয়া সিনিকা হল তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক স্নাতক কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি (এনটিইউ) ১৯২৮ সালে জাপানী উপনিবেশিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এনটিইউ রাষ্ট্র ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা দান করে। তাইওয়ানের প্যান ব্লু ও প্যান গ্রীন আন্দোলন এখান থেকেই শুরু হয়েছিল।
তাইওয়ানের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বহুদিন থেকেই মার্কিন ও জাপানি শাসনামলের প্রভাব রয়েছে। বেসবল বিশেষ প্রচলিত হলেও বাস্কেটবল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৯৬২ সালে এশিয়ান বেসবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের মাধ্যমে বেসবল আরও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া টেবিল টেনিস বেশ জনপ্রিয়। লাতিশা চ্যান তাইপের সফল ডাবল টেনিস খেলোয়াড়।
নিচে এই শহরে আয়োজিত সাম্প্রতিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলির একটি তালিকা রয়েছে: