মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব ভারতেরপশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেরমালদা বিভাগের একটি জেলা। এই জেলার মধ্য দিয়ে ভাগীরথী নদী বয়ে গিয়ে জেলাকে দুভাগে ভাগ করেছে। নদীর পশ্চিমের অংশ রাঢ় অঞ্চল ও পূর্বের অংশ বাগড়ি অঞ্চল নামে পরিচিত।[২] ৫.৩১৪ বর্গ কিলোমিটার (২,০৬২ বর্গ মাইল) আয়তনের এলাকা এবং ৭১.০২ লক্ষ জনসংখ্যা থাকায় এটি একটি জনবহুল জেলা। মুর্শিদাবাদ ভারতের নবমতম (ভারতের ৬৪১টি জেলার মধ্যে) জনবহুল জেলা।[৩] এই জেলার সদর দপ্তর বহরমপুর শহরে অবস্থিত।
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে গৌড় অঞ্চলের রাজা শশাঙ্কের রাজধানী মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসূবর্ণ অঞ্চলে ছিল। বাংলার অন্যতম পাল রাজা মহিপালের রাজধানী শহরও সম্ভবত এই জেলায় ছিলো।
মধ্যযুগ
আঠারো শতকের গোড়ার দিকে এই জেলাটির বর্তমান নাম এবং আঠারো শতকের শেষার্ধে এর বর্তমান আকারটি পাওয়া যায়। মুর্শিদাবাদ শহর, যা এই জেলারও নাম, এর প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদকুলি খানের নামানুসারে হয়েছে। ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব কর্তৃক করতলব খান বাংলা সুবাহের দিওয়ান নিযুক্ত হন। ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার রাজধানী ঢাকা থেকে মাকসুদাবাদে স্থানান্তরিত করেন। ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে মুর্শিদকুলি খান উপাধিতে সম্মানিত করেছিলেন এবং তার নতুন শিরোনাম অধিগ্রহণের পরে ১৭০৪ সালে এই শহরটির নাম মুর্শিদাবাদ রাখার অনুমতি মঞ্জুর করেন। নবাব মুর্শিদকুলি খান মুর্শিদাবাদকে সুবে বাংলার (বর্তমান বাংলা, বিহার ও ওড়িশা) রাজধানী করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধের পরে বহু বছর ধরে এখান থেকে রাজত্ব করেছিলো।
আধুনিক যুগ
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি ১৯১২ সালে ব্রজভূষণ গুপ্তের সভাপতিত্বে গঠিত হয়েছিলো। স্বদেশী আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন এই জেলাতেও সক্রিয় ছিলো। ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ কার্যকর হয় এবং পরবর্তী দুই দিনের জন্য মুর্শিদাবাদ জেলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিলো। হুগলি নদীটি পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরে নিশ্চিত করার জন্য ১৯৪৭ সালের ১৭ই আগস্ট র্যাডক্লিফ কমিশন চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণের সময় মুর্শিদাবাদকে ভারতীয় অধিসংঘে স্থানান্তরিত করে।
ভূ-প্রকৃতি
মুর্শিদাবাদ জেলায় উষ্ণ আদ্র ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন উষ্ণতা যথাক্রমে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস গ্রীষ্মকালে প্রবল কালবৈশাখীর প্রাদুর্ভাব ঘটে।
মুর্শিদাবাদ জেলা ২৩º৪৩' উঃ ও ২৪º৫২' উঃ অক্ষাংশ এবং ৮৭º৪৯' পূঃ ও ৮৮º৪৪' পূঃ দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।[২]
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যভাগে অবস্থিত এই জেলাটি অনেকটা ত্রিভূজের অনুরূপ আকৃতিবিশিষ্ট।
এই জেলার উত্তরে মালদহ জেলা ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা, দক্ষিণে নদীয়া জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে পূর্ব বর্ধমান জেলা, পশ্চিমে বীরভূম জেলা এবং উত্তর-পশ্চিমে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় জেলা অবস্থিত ৷
প্রশাসনিক এলাকা
প্রশাসনিক মহকুমা ও ব্লক
মুর্শিদাবাদ জেলা পাঁচটি মহকুমা নিয়ে গঠিত। পৌরসভা এলাকা বাদে প্রতিটি মহকুমায় একাধিক সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক রয়েছে যা আবার গ্রামীণ এলাকা এবং জনগণনা শহরে বিভক্ত। মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট ৮টি পৌরসভা ও ২৬টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক রয়েছে।
জেলার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী বাংলা ভাষায় কথা বলে। কথ্য উপভাষাটি (রাঢ়ী উপভাষা) কম-বেশি দক্ষিণবঙ্গের মতো, তবে কিছুটা আঞ্চলিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । বাংলা ভাষার একটি আঞ্চলিক উপভাষা, শেরশাবাদিয়া (জঙ্গীপুরী, মালদাইয়া নামেও পরিচিত) জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার জনসাধারণের মধ্যে বহুল প্রচলিত। এছাড়াও বাংলা ভাষার দ্বারা প্রভাবিত হিন্দি-উর্দু ভাষার একটি কথ্যভাষা, খোট্টা ভাষা জেলার উত্তরাংশের কিছু এলাকায় (বিশেষত ফারাক্কা, সামসেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গীপুর এলাকায়) ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত।