বহরমপুর, ভারতেরপশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর ও পৌরসভা এলাকা। কলকাতা, রাজ্যের রাজধানী থেকে বহরমপুরের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল)। এটি পশ্চিমবঙ্গের সপ্তম বৃহত্তম শহর (কলকাতা, আসানসোল, শিলিগুড়িবর্ধমান ও দুর্গাপুর এর পরে) এবং পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত। ২০১১ সালে, বহরমপুর একটি পৌর নিগমে পরিণত হওয়ার জন্য মনোনীত হয়। পূর্বে এটি ব্রহ্মপুর নামে পরিচিত ছিল কারণ অনেক ব্রাহ্মণ পরিবারের এখানে বসতি ছিল।
১৭০৪ সালে বাংলা-বিহার-ওড়িষার রাজধানী মুর্শিদাবাদ নগর পত্তনের সময় বহরমপুর ছিল রাজধানীর দক্ষিণে একটি গ্রাম। তখন তার নাম ছিল সাতপুকুরিয়া ব্রহ্মপুর। গ্রামটার পূর্ব ও পশ্চিম দু'দিক দিয়ে ভাগীরথী নদী প্রবাহিত ছিল। সেসময় গ্রামটায় ৭০০ ঘর ব্রাহ্মণ বাস করতো তাই স্থানটির নাম হয় ব্রহ্মপুর। পলাশীর যুদ্ধর পরে ইংরেজ আমলে বহরমপুর শহরের পত্তন ঘটে। নিজেদের দরকারেই পলাশির যুদ্ধের পরে এই এলাকাতে সেনানিবাস তৈরি করে ইংরেজরা। নতুন নবাব মীর জাফর আলী খান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ব্রহ্মপুর মৌজায় ৪০০ বিঘা জমি দান করেন। ১৭৬৫ সালে বহরমপুর ক্যান্টনমেন্টের সূচনা হয়। ইংরেজদের উচ্চারনে ব্রহ্মপুর হয়ে যায় বহরমপুর।
জনসংখ্যার উপাত্ত
ভারতের ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুসারে বহরমপুর শহরের জনসংখ্যা হল ৩০৫৬০৯ জন।[২] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।
পরিবহণ ব্যবস্থা
রেল যোগাযোগ : বহরমপুর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ উভয় এর সাথেই রেল এর মাধ্যমে যুক্ত। এই শহরের প্রধান রেল স্টেশন দুটি হল বহরমপুর কোর্ট ও ভাগীরথী নদীর অপর তীরে খাগড়াঘাট রোড রেলওয়ে স্টেশন। পূর্ব রেল এর শিয়ালদহ শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন হতে রাণাঘাট- লালগোলা শাখা লাইনের উপর অবস্থিত বহরমপুর কোর্ট একটি 'বি' শ্রেণির স্টেশন। ভাগীরথী এক্সপ্রেস (১৩১০৩/১৩১০৪), হাজারদুয়ারী এক্সপ্রেস (১৩১১৩/১৩১১৪), ধন ধান্যে এক্সপ্রেস (১৩১১৭/১৩১১৮), একাধিক শিয়ালদহ- লালগোলা প্যাসেঞ্জার এই স্টেশনের সাথে নদীয়া, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার সংযোগ করেছে। খাগড়াঘাট রোড স্টেশন হাওড়া বিভাগের হাওড়া - আজিমগঞ্জ - ফরাক্কা লাইনের উপর অবস্থিত। এর উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গ ও আসাম এর ট্রেন সংযোগ আছে। ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, পুরী-কামাখ্যা এক্সপ্রেস, পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস, নবদ্বীপ ধাম-মালদা টাউন এক্সপ্রেস, তিস্তা- তোর্সা এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেস, রাধিকাপুর এক্সপ্রেস, হাটেবাজারে এক্সপ্রেস হল এই লাইনের গুরুত্বপূর্ণ দুরপাল্লা ট্রেন। উভয় রেলপথ এর মধ্যে ভাগিরথীর উপর সেতু স্থাপন এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন এর কাজ ২০০৩ সালে শুরু হয়েছে যা চালু হলে এই শহর তথা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটবে। এছাড়া কাশিমবাজার, নিউ বলরামপুর হল্ট, লালবাগ কোর্ট রোড, মুর্শিদাবাদ, ডাহাপাড়া ধাম, নিয়ালিশ পাড়া, চৌরিগাছা, কর্ণসুবর্ণ এই শহরের নিকটবর্তী অন্যান্য রেল স্টেশন।
সড়ক যোগাযোগ : বহরমপুর মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শুধু তাই নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় অবস্থানে আছে, এটা উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বাংলার যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে। এই শহরের মধ্যে দিয়ে গেছে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক (ভারত)। স্থানীয় পরিবহনের জন্য রিকশা ও ই-রিকশা (টুকটুক গাড়ী হিসাবে পরিচিত) উপর নির্ভরশীল। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে নিয়মিত বাস সার্ভিস আছে। বহরমপুর এর প্রধান বাস টার্মিনাস টি হল "মোহনা"। কলকাতা (ধর্মতলা) থেকে নিয়মিত বাস সার্ভিস ছাড়াও এখান থেকে দুমকা (ঝাড়খণ্ড), দুর্গাপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ী, আসানসোল, বর্ধমান, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, বোলপুর, রামপুরহাট, নলহাটি, মালদা, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, কৃষ্ণনগর, রাণাঘাট ইত্যাদি পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অংশের জন্য বাস সার্ভিস আছে।
জলপথ যোগাযোগ : বহরমপুর শহর এর উত্তর-দক্ষিণে ভাগীরথী নদী পারাপারের জন্য নৌকা ও লঞ্চ রয়েছে। এছাড়াও বহরমপুর থেকে আজিমগঞ্জ, লালবাগ, জিয়াগঞ্জ ইত্যাদি অন্যান্য শহরে পাওয়া যায়।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
সুব্রত সাহা (মন্ত্রী - খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উদ্যানপালন )