ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ইতিহাস সূচিত হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট (২৯ শ্রাবণ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ) ভারতব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্গত একটি স্বাধীন অধিরাজ্য রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল। ১৯৫০ সালে প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পূর্বাবধি ষষ্ঠ জর্জ (অ্যালবার্ট ফ্রেডেরিক আর্থার জর্জ) ছিলেন এই দেশের রাজা। একই সঙ্গে ভারত বিভাগের ফলে ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাংশ নিয়ে পৃথক পাকিস্তান অধিরাজ্য স্থাপিত হয়। দেশভাগের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় ১ কোটি মানুষকে দেশান্তরী হতে হয় এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে।[১] প্রথমে লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ও পরে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীভারতের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। জওহরলাল নেহেরু হন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারত একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় এবং একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হয়। এই সংবিধান অনুযায়ী ভারতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।[২] স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে এবং অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়। এই দেশের কৃষি ও শিল্পব্যবস্থা বিশেষ উন্নতি লাভ করে। বর্তমানে ভারতে এমন এক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যাকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মনে করা হয়। তবে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, জাতভিত্তিক দাঙ্গা, নকশালবাদ, জঙ্গিসন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস (বিশেষত জম্মু ও কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে) এখনও বড়ো সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। কয়েকটি অঞ্চলের মালিকানাকে কেন্দ্র করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে ভারতের বিবাদ রয়েছে। ১৯৬২ সালে এই বিবাদ থেকে ভারত-চীন যুদ্ধের সূচনা ঘটে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
ভারত একটি পরমাণু অস্ত্রধারী রাষ্ট্র। ১৯৭৪ সালে ভারত তার প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষাটি চালায়।[৩] এরপর ১৯৯৮ সালে আরও পাঁচটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত।[৩] ১৯৫০ থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত ভারতের অর্থনীতি ছিল সমাজতান্ত্রিক-ধাঁচের। এই সময় অত্যধিক রেগুলেশন, সংরক্ষণবাদ ও রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ ভারতের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এর ফলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার মন্থর হয়ে পড়ে।[৪] ১৯৯১ সালে দেশে অর্থনৈতিক সংস্কার সাধিত হয়।[৫] এর ফলে বর্তমানে ভারত বিশ্বের দ্রুত বর্তমান অর্থব্যবস্থাগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে।
১৯৪৭-১৯৫০
স্বাধীন ভারতের প্রথম বছরগুলিতে বেশ কিছু উত্তেজক ঘটনা ঘটেছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিপুল হারে জনসংখ্যার আদানপ্রদান ঘটে, ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয় এবং পাঁচশোটিরও বেশি দেশীয় রাজ্যকে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে ভারতে একটি একক রাষ্ট্র গঠিত হয়।
পশ্চিম পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, বালুচিস্তান, পূর্ববঙ্গ ও সিন্ধ থেকে প্রায় ৩৫ লক্ষ[৬][৭][৮][৯][১০]হিন্দু ও শিখ মুসলিম পাকিস্তানে অবদমিত হওয়ার ভয়ে ভারতে চলে আসেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এক লক্ষ হিন্দু, মুসলমান ও শিখ মারা যান। দুই অধিরাজ্যের পাঞ্জাব ও বঙ্গ অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং কলকাতা, দিল্লি ও লাহোর শহর তিনটির সার্বিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। মহাত্মা গান্ধী সহ ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃবর্গের প্রয়াসে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে নাগাদ দাঙ্গা বন্ধ হয়। জনসাধারণকে শান্ত করতে গান্ধী প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করে প্রথমে কলকাতায় ও পরে দিল্লিতে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। দুই দেশের সরকারই অসংখ্য উদ্বাস্তু শিবির স্থাপন করে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী উদ্বাস্তু-কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকারী নাথুরাম গডসে ভারতভাগের জন্য গান্ধীকে দায়ী করে এবং তাঁকে মুসলিম-তোষণকারী আখ্যা দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
১৯৪৯ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও মুসলিম কর্তৃপক্ষের অবদমনের ফলে ১০ লক্ষ হিন্দু শরণার্থী পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। শরণার্থীদের আগমনের ফলে হিন্দু ও জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শরণার্থীদের চাপে ভারতের একাধিক রাজ্যের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়। যুদ্ধঘোষণা না করে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ও সর্দার পটেল লিয়াকত আলি খানকে দিল্লিতে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সমালোচকরা একে তোষণনীতি আখ্যা দিলেও, নেহেরু ও লিয়াকত আলি খান একটি চুক্তি সাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে উভয় রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান ও সংখ্যালঘু কমিশন স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। নীতিগতভাবে আপত্তি থাকলেও, পটেল শান্তিরক্ষার স্বার্থে চুক্তিটি সমর্থন করেন। পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সমর্থন জোগাড় ও চুক্তিটি বলবৎ করার পিছনেও তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল। খান ও নেহেরু একটি বাণিজ্যচুক্তিও সাক্ষর করেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বিপাক্ষিক বিবাদের নিরসন ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কয়েক হাজার হিন্দু পাকিস্তানে ফিরে যান। কিন্তু কাশ্মীর বিতর্ককে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন থেকেই যায়।
ব্রিটিশ ভারত ১৭টি প্রদেশ ও ৫৬২টি দেশীয় রাজ্য নিয়ে গঠিত ছিল। প্রদেশগুলি ভারত বা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে (বিশেষত পাঞ্জাব ও বঙ্গ) প্রদেশ খণ্ডিত করে দুই রাষ্ট্রেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশীয় রাজ্যগুলিকে অবশ্য স্বাধীন থাকা বা কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এর ফলে ভারত রাষ্ট্রটির মধ্যে মধ্যে নানা স্থানে মধ্যযুগীয় ও ঔপনিবেশিক রাজ্য ও উপরাজ্য বিচ্ছিন্ন দ্বীপের ন্যায় অবস্থান করতে থাকে। সর্দার বল্লভভাই পটেলের নেতৃত্বে ভারতের নতুন সরকার এই রাজ্যগুলির সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়া শুরু করে। রাজ্যগুলিকে জানানো হয়, ভারতের সংবিধানের অধীনতা স্বীকার না করলে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় তিনটি রাজ্যকে দখল করতে ভারত সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়:
জুনাগড় - পাকিস্তান এই হিন্দুপ্রধান রাজ্যটিকে দখল করতে চাইলে এখানে একটি গণভোট হয়। ভোটে ৯৯% অধিবাসী ভারতে যোগদানের পক্ষে মত প্রকাশ করে।[১১]
হায়দ্রাবাদ - এখানকার নিজাম সরকারের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলে পটেল সেনাবাহিনীকে রাজ্যদখলের নির্দেশ দেন। ১৯৪৮ সালের ১৩-১৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদ অধিকার করেন। পরের বছর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভুক্ত হয়।
১৯৪৭ সালের প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় থেকেই কাশ্মীরের অধিকার বিতর্কিত। রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে যুদ্ধবিরতির সময় স্থির হয় কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ ভারতের অধীনে থাকবে। জওহরলাল নেহেরু এই অঞ্চলে গণভোটের নির্দেশ দিলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান বলপূর্বক কাশ্মীর দখলের চেষ্টা করলে, কাশ্মীর অধিভুক্ত করতে ভারতের সুবিধা হয়। গণভোটটি আর কোনোদিনই নেওয়া হয়নি। ১৯৫০ সালে প্রবর্তিত সংবিধানে কাশ্মীরের জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থার বিধান দেওয়া হয়।
বর্তমানে ভারতের সংবিধান একটি প্রস্তাবনা, ২৪টি ভাগ ৪৪৮টি অনুচ্ছেদ, ১২টি তফসিল, ৫টি পরিশিষ্ট ও মোট ১১৩টি সংশোধনী নিয়ে লিখিত। ভারতের সংবিধানের খসড়া রচনা করেছিল ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি। এই সংবিধান ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ নভেম্বর এই সংবিধান কার্যকর করা হলে ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্রে পরিণত হয়। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পরিষদের অধিবেশনে একাধিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই কমিটিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মৌলিক অধিকার কমিটি, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কমিটি ও কেন্দ্রীয় সংবিধান কমিটি। ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট ড. বি. আর. আম্বেডকরের নেতৃত্বে খসড়া কমিটি গঠিত হয়। ড. আম্বেডকর ছাড়াও এই কমিটিতে আরও ছয় জন সদস্য ছিলেন। কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে সেটি ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে গণপরিষদে পেশ করেন।
গণপরিষদ সংবিধান রচনা করতে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন সময় নিয়েছিল। এই সময়কালের মধ্যে ১৬৬ দিন গণপরিষদের অধিবেশন বসে।[১২] একাধিকবার পর্যালোচনা ও সংশোধন করার পর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি গণপরিষদের মোট ৩০৮ জন সদস্য সংবিধান নথির দুটি হস্তলিখিত কপিতে (একটি ইংরেজি ও একটি হিন্দি) সই করেন। দুই দিন বাদে এই নথিটি ভারতের সর্বোচ্চ আইন ঘোষিত হয়।
পরবর্তী ৬০ বছরে ভারতের সংবিধানে মোট ১১৩টি সংশোধনী আনা হয়েছিল।
সরকারের আমলাতান্ত্রিক কাজকর্ম ও নীতিগুলির বর্গবিভাজন ও সারণিকরণ করা হয়েছে সংধিানের ১২টি তফসিলগুলিতে।
১৯৫০-১৯৭০
১৯৫২ সালে সংবিধানের অধীনে ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৬০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছিল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জওহরলাল নেহেরু দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন। রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদও সংসদের নির্বাচক মণ্ডলীর দ্বারা দ্বিতীয়বার ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
নেহেরু সরকার (১৯৫২-১৯৬৪)
১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালের নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয়লাভ করেছিল। এই সময়ে হিন্দু সমাজে নারীর আইনি অধিকার বৃদ্ধি এবং বর্ণাশ্রম ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণে ভারতীয় সংসদে একাধিক সমাজ সংস্কার-মূলক বিল পাস হয়। নেহেরু ভারতীয় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা পূর্ণ করানোর পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর শাসনকালে সারা দেশে কয়েক হাজার স্কুল, কলেজ ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি স্থাপিত হয়। নেহেরু ভারতে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে অর্থব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। কৃষকদের করমুক্ত রাখা, কায়শ্রমজীবীদের ন্যূনতম মজুরি ও সুযোগসুবিধা প্রদান এবং ইস্পাত, বিমান, জাহাজ, বিদ্যুৎ ও খনিশিল্পের মতো ভারী শিল্পগুলির রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণের পক্ষে ছিলেন নেহেরু। তাঁর আমলে প্রধান প্রধান জলাধার, সেচখাল, রাস্তা, তাপ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি চালু হয়েছিল।
১৯৫৩ সালে ভাষাভিত্তিক অন্ধ্ররাজ্যের দাবিতে পোট্টি শ্রীরামালুর অনশনে মৃত্যুবরণের পর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনিক বিভাগগুলির পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। নেহেরু রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন নিয়োগ করেন। এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হয়। পুরনো রাজ্যগুলি অবলুপ্ত হয় এবং ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে একাধিক নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদ্রাজ রাজ্য থেকে কেরল ও তেলুগু-ভাষী অঞ্চলগুলি পৃথক করে শুধুমাত্র তামিল-ভাষী অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত হয় তামিলনাড়ু। ১৯৬০ সালের ১ মে বোম্বাই রাজ্য ভেঙে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত গঠিত হয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৬৬ সালে ভারতের পাঞ্জাবি-ভাষী অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত হয় পাঞ্জাব রাজ্য।
ভারত জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। নেহেরুর বিদেশনীতি এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণা ছিল। নেহেরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন, উভয় রাষ্ট্রের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে বিশ্ব রাষ্ট্রমণ্ডলগুলিতে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল কোম্পানি মিশর সরকার অধিগ্রহণ করে নিলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিশরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব ১৮-৪ ভোটে পাস হয়। এই ভোটে ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতও মিশরকে সমর্থন করেছিল। প্যালেস্টাইন বিভাজনের বিরোধিতা করে ভারত বিতর্ক সৃষ্টি করে। ১৯৫৬ সালে ইসরায়েল, ব্রিটেন ও ফ্রান্স সিনাই দখল করলে ভারত তার বিরোধিতা করে। কিন্তু চীনের তিব্বত দখল বা সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক হাঙ্গেরির গণতন্ত্রকামী আন্দোলন অবদমনের বিরোধিতা ভারত করেনি। নেহেরু ভারতকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র করে তোলার পক্ষপাতী না হলেও, কানাডা ও ফ্রান্স ভারতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা করেছিল। ১৯৬০ সালে সপ্তসিন্ধুর জলবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়। ১৯৫৩ সালে নেহেরু পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চারটি যুদ্ধ হয়েছে, তার দু'টিই হয় এই যুগে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কাশ্মীর অধিকারের চেষ্টায় ভারত আক্রমণ করে। এই যুদ্ধের ফলে কাশ্মীরের এক তৃতীয়াংশে পাকিস্তানের আধিপত্য স্থাপিত হয়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান পুনরায় কাশ্মীর দখলের চেষ্টা করলে, ভারত সকল ফ্রন্টে পাকিস্তানকে আক্রমণ করে।
একাধিকবার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের প্রস্তাব রাখার পর, সেই প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে ১৯৬০ সালে ভারত পশ্চিম উপকূলের পর্তুগিজ উপনিবেশ গোয়াআক্রমণ করে অধিকার করে নেয়।
১৯৬২ সালে চিন ও ভারতের মধ্যে একটি ছোটো যুদ্ধ হয় হিমালয়ের সীমান্তকে কেন্দ্র করে। এই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়। এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ভারত সামরিক অস্ত্র উন্নয়নে মনোনিবেশ করে। চীনকর্তৃক অধিকৃত ভারতের নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি থেকে নিজের অধিকার প্রত্যাহার করে নেয় চীন। তবে আকসাই চীন নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত থাকে।
নেহেরু-উত্তর ভারত
১৯৬৪ সালের ২৭ মে জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর লালবাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পরও কাশ্মীর সমস্যা অমীমাংসিতই থেকে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাসখন্দ চুক্তি সাক্ষরের অব্যবহিত পরেই রহস্যজনকভাবে লালবাহাদুর শাস্ত্রী প্রয়াত হন। এরপরই তদনীন্তন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তথা নেহেরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি দক্ষিণপন্থী নেতা মোরারজি দেসাইকে পরাজিত করেছিলেন। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও খাদ্যসমস্যার কারণে ১৯৬৭ সালে কংগ্রেসের জনসমর্থন কিছুটা কমে এলেও এই দলই নির্বাচনে জয়লাভ করে। ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় টাকার অবমূল্যায়ন ঘটান। এর ফলে ভারতের ব্যবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর আমলে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মোরারজি দেসাই ইন্দিরা গান্ধীর সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। অন্যান্য প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা ইন্দিরা গান্ধীর আধিপত্য খর্ব করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক উপদেষ্টা পি এন হাকসরের পরামর্শ অনুসারে, ইন্দিরা গান্ধী সমাজতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করে পুনরায় তাঁর হৃত জনসমর্থন ফিরে পান। তিনি সফলভাবে রাজন্যভাতা বিলুপ্ত করেন এবং ব্যাংকগুলির রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ করেন। দেসাই ও ভারতের ব্যবসায়ী সমাজ এই নীতির বিরোধিতা করলেও জনমানসে এই নীতি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করার চিন্তাভাবনা শুরু করলে, তিনি বিরাট সংখ্যক সাংসদদের নিয়ে কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে আসেন এবং নিজস্ব কংগ্রেস (আর) দল গঠন করেন। এইভাবে ১৯৬৯ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান রূপকার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। ইন্দিরা গান্ধী সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসন করতে থাকেন।
১৯৭০–১৯৮০
১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী ও তাঁর কংগ্রেস (আর) দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসনক্ষমতা দখল করেন। ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক নীতির বাস্তবায়ন চলতে থাকে। ভারত পূর্ব পাকিস্তানেরস্বাধীনতা যুদ্ধেসহায়তা করে। এই যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। ভারত জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের বাইরে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ২০ বছরের মিত্রতা চুক্তি সাক্ষর করে। ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পরমাণু অস্ত্রপরীক্ষা চালায়। ইতিমধ্যে ভারতের আশ্রিত রাজ্য সিক্কিমে একটি গণভোটে চোগিয়াল রাজবংশকে উচ্ছেদ করে সিক্কিমের ভারতভুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিক্কিম আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের ২২তম রাজ্যে পরিণত হয়।
ভারতের সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী "অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা"র কারণে রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করা এই জরুরি অবস্থা ২৫ জুন ১৯৭৫ থেকে ২১ মার্চ ১৯৭৭ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এই আদেশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়, যার ফলে নির্বাচন বাতিল করা এবং নাগরিক অধিকার স্থগিত করা সম্ভব হয়। জরুরি অবস্থার অধিকাংশ সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিরোধীকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গান্ধী শাসনামলে ১,০০,০০০-এর বেশি রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক এবং ভিন্নমতাবলম্বীকে আটক করা হয়। এই সময়ে, তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর নেতৃত্বে একটি ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চালানো হয়।
জরুরি অবস্থা জারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি ইন্দিরা গান্ধী প্রস্তাব করেছিলেন, যা ভারতের রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেন এবং জুলাই থেকে আগস্ট ১৯৭৫-এর মধ্যে মন্ত্রিসভা ও সংসদের দ্বারা অনুমোদিত হয়। এর পেছনে যুক্তি ছিল যে, ভারতীয় রাষ্ট্রের উপর অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ধরনের আসন্ন হুমকি ছিল।[১৩][১৪]
কোভিড-১৯ অতিমারিটির প্রথম ঘটনা ভারতে ৩০ জানুয়ারি ২০২০ সালে হয়েছিল যেটি চীন থেকে শুরু হয়েছে। অনুসারে মোট সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা জন যার মধ্যে জনের মৃত্যু হয়েছে এবং জন সুস্থ হয়ে গেছে। ভারতে অন্যদেশের তুলনায় কম হারে মানুষদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে সংক্রমণের সংখ্যাটি যথেষ্ট পরিমাণে অবমূল্যায়ন হতে পারে। [১৫] ভারতে কোভিড-১৯ এর মৃত্যুর হার অনুসারে এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অযাচিত < অপারেটর।%।[১৬] ভারতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা অনুসারে প্রতি দশ লক্ষে জন।[১৬]
প্রাদুর্ভাবটি দিল্লি,[১৭]হরিয়ানা,[১৮]কর্ণাটক,[১৯]মহারাষ্ট্র[২০]গুজরাত,[২১] এবং উত্তরপ্রদেশ[২২] ইত্যাদি এক ডজনেরও বেশি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে মহামারী রোগ আইন, ১৮৯৭ এর বিধানসমূহ আহবান করা হয়েছে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগক্ষেত্রে এই ভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার ঘটনা অন্যান্য দেশের সাথে সংযুক্ত থাকায় ভারতও, সমস্ত পর্যটন ভিসা স্থগিত রেখেছে।[২৩] ২৩ টি রাজ্য ও সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ৫৪৮টি জেলা যেগুলো সম্পূর্ণরূপে লকডাউন বা অবরুদ্ধকরণের অধীনে আছে।[২৪]
২০২০ সালের ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে ভারত ১৪ ঘণ্টা স্বেচ্ছাসেবামূলক জনতা কার্ফু পালন করেছে। যেখানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটেছে সেই ৭৫টি জেলায় পাশাপাশি সমস্ত বড় শহরগুলিতেও সরকার অবরুদ্ধকরণ বা লকডাউন করে তা অনুসরণ করেছে । [২৫][২৬] পরে, ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ১৩০ কোটি জনসংখ্যা সমৃদ্ধ সারা ভারতে ২১ দিনের জন্য লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছেন।[২৭]
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেছিলেন যে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ভারতের "অভাবনীয় ক্ষমতা" ছিল এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ হিসাবে বিশ্বে ভারতের মোকাবিলা করার ক্ষমতার উপর বিশাল প্রভাব ফেলবে।[২৮]
অন্যান্য মন্তব্যকারীরা লকডাউন দ্বারা অর্থনৈতিক বিধ্বস্ততা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। এই অর্থনৈতিক বিধ্বস্ততার ফলে অস্থায়ী শ্রমিক, ক্ষুদ্র প্রকল্প, কৃষক এবং স্ব-কর্মসংস্থানকারীদের উপর বিরাট প্রভাব পড়েছে, যারা পরিবহনের এবং বাজারের যোগানের অভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না।[২৯]
শিব নাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৪ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে লকডাউন না হলে ভারতবর্ষে ৩১,০০০ রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারত।[৩০]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
↑Larres, Klaus। A companion to Europe since 1945। Wiley-Blackwell, 2009। আইএসবিএন1405106123, 9781405106122|আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Hari Das নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
↑"Interview with Indira Gandhi"। Interview relecast through India times। TV Eye। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬। ১১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑"Recalling the Emergency years"। The Indian Express। ২৯ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৮।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
«La borghesia industriale in particolare […] sembrava badare a crearsi, con il nuovo stile, una sua tradizione, e manifestare insieme la larghezza dei propri mezzi senza cadere nello sfoggio triviale» (Rossana Bossaglia[1]) Facciata di casa Galimberti Il Liberty a Milano si diffuse tra i primi anni del Novecento e lo scoppio della prima guerra mondiale. Nel capoluogo lombardo lo stile trovò, grazie allo stretto legame con la rampante borghesia industriale dell'epoca, un fertile t...
Flemish physician Baldwin Hamey the ElderBorn1568 Died1640 (aged 71–72)OccupationPhysician Baldwin Hamey the Elder, M.D., LRCP, also Baudouin Hamey (1568–1640) was a Flemish physician who settled in London. Life Hamey was born at Bruges, and studied at the University of Leyden, where he graduated M.D. in 1592. He was nominated by Johannes Heurnius for a post under Feodor II of Russia, who had asked the Rector of Leiden for a physician. He held the position from 1594 to 15...
العلاقات العراقية الغابونية العراق الغابون العراق الغابون تعديل مصدري - تعديل العلاقات العراقية الغابونية هي العلاقات الثنائية التي تجمع بين العراق والغابون.[1][2][3][4][5] مقارنة بين البلدين هذه مقارنة عامة ومرجعية للدولتين: وجه المقارنة
Badan Restorasi GambutGambaran UmumSingkatanBRGDasar hukum pendirianPeraturan Presiden Republik Indonesia Nomor 1 Tahun 2016StrukturKepalaHartono PrawiraatmajaDeputi Perencanaan dan Kerja SamaBudi WardhanaDeputi Edukasi, Sosialisasi, Partisipasi, dan KemitraanMyrna SafitriDeputi Penelitian dan PengembanganHaris GunawanSitus webhttp://www.brg.go.idlbs Badan Restorasi Gambut (disingkat BRG) adalah salah satu Lembaga Nonstruktural yang dibentuk berdasarkan Peraturan Presiden Republik Indone...
Tamara Awerbuch-Friedlander La Dra. Tamara Awerbuch, en 2015, en MIT.Información personalNacimiento años 1940 Montevideo (Uruguay) Nacionalidad Estadounidense, israelí y uruguayaEducaciónEducada en Universidad Hebrea de JerusalénInstituto Tecnológico de Massachusetts Información profesionalOcupación Matemática, naturalista y profesora de universidad Área Biología matemática, bioestadística y epidemiología Cargos ocupados Catedrático Empleador Universidad de Harvard Distinciones...
1951 studio album by Stan KentonCity of GlassStudio album by Stan KentonReleased1951 (original LP)1995 (re-issue CD)Recorded1947–1953 (1951 original 10 LP)other tracks 1947–1953 in Hollywood, CA. or New York CityStudioCapitol (Hollywood)GenreAvant garde jazz, third stream, big bandLength16:29 (1951 LP)63:15 (1995 CD)LabelCapitol RecordsProducerPete Rugolo, Jim ConklingLee Gillette CD by Michael CuscunaStan Kenton chronology Stan Kenton Presents(1950) City of Glass(1951) New Concep...
PT Bank Victoria International TbkJenisPublikKode emitenIDX: BVICIndustriJasa keuanganDidirikan28 Oktober 1994; 29 tahun lalu (1994-10-28)KantorpusatGraha BIP lantai 10, Jalan Gatot Subroto Kav. 23, Jakarta, IndonesiaTokohkunciAhmad Fajar (Presiden Direktur)AnakusahaBank Victoria SyariahSitus webwww.victoriabank.co.id Logo lama Bank Victoria International Bank Victoria Internasional adalah lembaga keuangan berjenis Perbankan. Bank ini berbasis di Jakarta, dan berdiri pada 28 Oktober 1994...
Wagenknecht ist eine Weiterleitung auf diesen Artikel. Weitere Bedeutungen sind unter Wagenknecht (Begriffsklärung) aufgeführt. Sahra Wagenknecht (2023) Sahra Wagenknecht (* 16. Juli 1969 in Jena; amtlich zunächst Sarah Wagenknecht [1]) ist eine deutsche Politikerin (parteilos, zuvor SED, PDS, Die Linke) und Publizistin. Dem Bundesvorstand der PDS gehörte Wagenknecht von 1991 bis 1995 und von 2000 bis zur Vereinigung 2007 mit der WASG an. In der Nachfolgepartei Die Linke kon...
Bilateral relationsNepal–Russia relations Nepal Russia Nepal–Russia relations (Russian: Российско-непальские отношения, Nepali: नेपाल रुस सम्बन्ध) are the bilateral relations between Russia and Nepal. Background Nepal and the Soviet Union had established diplomatic relations on June 5 - July 9, 1956. In April 1959, the countries signed several agreements, including the ones on economic and technical aid (foresaw free assistance in ...
Bicameral national legislature of Thailand National Assembly รัฐสภาRatthasapha26th ParliamentSeal of the National AssemblyTypeTypeBicameral HousesSenateHouse of RepresentativesHistoryFounded28 June 1932LeadershipMonarchVajiralongkorn since 13 October 2016 President of the National Assembly(Speaker of the House of Representatives)Wan Muhamad Noor Matha, Prachachart since 5 July 2023 Vice President of the National Assembly(President of the Senate)Pornpetch Wichitcholchai since 2...
Bài viết này là một bài mồ côi vì không có bài viết khác liên kết đến nó. Vui lòng tạo liên kết đến bài này từ các bài viết liên quan; có thể thử dùng công cụ tìm liên kết. (tháng 8 năm 2020) Bản mẫu:Przedsiębiorstwo infobox Kế hoạch của cảng biển Świnoujście với bến phà Swinoujście được đánh dấu Bến phà Chế độ xem bến bên trong Bến phà - điểm thông quan Cầu cảng mới được xây ...
Lasting attraction between dissolved cations and anions in solution In chemistry, the intimate ion pair concept, introduced by Saul Winstein, describes the interactions between a cation, anion and surrounding solvent molecules.[1] In ordinary aqueous solutions of inorganic salts, an ion is completely solvated and shielded from the counterion. In less polar solvents, two ions can still be connected to some extent. In a tight, intimate, or contact ion pair, there are no solvent molecule...
PausGregorius XIAwal masa kepausan30 Desember 1370Akhir masa kepausan27 Maret 1378PendahuluUrbanus VPenerusUrbanus VIInformasi pribadiNama lahirPierre Roger de BeaufortLahir± 1336Rosiers-d'Égletons, Limousin, PrancisMeninggal27 Maret 1378Roma, Italia Gregorius XI, nama lahir Pierre Roger de Beaufort (Rosiers-d'Égletons, Limousin, Prancis, ± 1336 – Roma, Italia, 27 Maret 1378), adalah Paus sejak 30 Desember 1370 sampai 27 Maret 1378. lbs Paus Gereja Katolik Daftar paus grafik masa jabata...
DamKakkayam DamKakkayam Dam ReservoirLocation in KeralaShow map of KeralaLocation in IndiaShow map of IndiaCoordinates11°33′04″N 75°55′30″E / 11.551°N 75.925°E / 11.551; 75.925 Kakkayam is a dam site located at Koorachundu in Kozhikode, Kerala.[1] Kakkayam is on the outskirts of the Western Ghats, and Malabar Wildlife Sanctuary, a 7,421-hectare (18,340-acre) abode of wild animals including elephants and bisons.[2][3] Kakkayam has an ...
Game brain (ゲーム脳, Gēmu nō) is a term coined by Akio Mori referring to human brains affected by the long-term effect of playing video games.[1] Mori, a professor in the Humanities and Sciences division of Nihon University in Japan, originally coined the term and presented the concept in his 2002 book The Terror of Game Brain (ゲーム脳の恐怖, Gēmu Nō no Kyōfu). It has been criticized by neuroscientists as pseudoscientific. Summary Example of an EEG reading filtered t...
For the Cossack peoples of Eastern Europe, see Cossacks. 1863 novel by Leo Tolstoy The Cossacks Portrait of a Cossack by Alexander LitovchenkoAuthorLeo TolstoyOriginal titleКазаки (Kozaky)TranslatorEugene Schuyler (1878), Peter Constantine (2004)CountryRussiaLanguageRussianGenreFictionPublisherThe Russian MessengerPublication date1863Published in English1878 (Scribner's)Pages161 p. (Paperback)ISBN0-679-64291-9 Wikisource has original text related to this article: The Cossacks ...
Public university in Bursa, Turkey Bursa Technical UniversityBursa Teknik ÜniversitesiTypeState Technical UniversityEstablishedJuly 21, 2010PresidentProf. Dr. Naci ÇağlarAcademic staff200LocationBursa, TurkeyWebsitewww.btu.edu.tr Bursa Technical University (Turkish: Bursa Teknik Üniversitesi) is a public research university in Bursa, Turkey. Bursa Technical University Rector is Professor Doctor Naci Çağlar.[1] Established in 2010, it is country's fifth technical university. The ...