গোবিন্দ বল্লভ পন্থ (১০ই সেপ্টেম্বর ১৮৮৭ - ৭ই মার্চ ১৯৬১) একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং উত্তর প্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু এবং বল্লভ ভাই প্যাটেলের পাশাপাশি, পন্থ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং পরে ভারত সরকারে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন উত্তর প্রদেশের (তখন ইউনাইটেড প্রভিন্স নামে পরিচিত) শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের একজন এবং হিন্দিকে ভারতীয় ইউনিয়নের সরকারি ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ আহ্বায়ক।
আজ, বেশ কয়েকটি ভারতীয় হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা তাঁর নাম বহন করছে। ১৯৫৭ সালে পন্থ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন পান।
প্রাথমিক জীবন
গোবিন্দ বল্লভ পন্থ ১৮৮৭ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর[১]আলমোড়ার কাছে খুন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন[১]। তিনি একটি মারাঠিকারহাদে ব্রাহ্মণ[১] পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যারা বর্তমান উত্তর কর্ণাটক থেকে কুমায়ুন অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছিল।[২] তাঁর মায়ের নাম ছিল গোবিন্দী বাই। তাঁর মাতামহ, বদ্রী দত্ত যোশী, একজন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি পন্থের ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর পিতা মনোরথ পন্থের একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন যাঁর কর্মক্ষেত্রে বদলির কারণে পন্থ মাতামহের কাছেই বড় হয়ে উঠেছিলেন।[৩]
পন্থ এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীকালে কাশীপুরে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন[৪]। এখানে, তিনি একটি স্থানীয় পরিষদ বা গ্রাম পরিষদকে তাদের কুলি বেগারের সফল চ্যালেঞ্জে সাহায্য করে ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে সক্রিয় বিরোধ শুরু করেছিলেন। এটি এমন একটি আইন ছিল যার ফলে স্থানীয়রা ভ্রমণকারী ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মালপত্র বিনামূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হতো। ১৯২১ সালে, তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং আগ্রা ও অবধের যুক্তপ্রদেশ বিধানসভায় নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতা সংগ্রামে
পন্থ দক্ষ আইনজীবী হিসেবে পরিচিত হওয়ার কারণে ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে কাকোরি মামলায় জড়িত রামপ্রসাদ বিসমিল, আশফাকুল্লা খান এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কংগ্রেস পার্টি দ্বারা নিযুক্ত করা হয়েছিল[৫]। তিনি ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন। জওহরলাল নেহেরু নিজের আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন যে কীভাবে পন্থ প্রতিবাদের সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার বিশাল চেহারার জন্য তিনি পুলিশের সহজ লক্ষ্য হয়ে উঠেছিলেন। এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন যার ফলে তিনি সারা জীবন নিজের পিঠ সোজা করতে পারেন নি।[৬]
১৯৩০ সালে, গান্ধীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লবণ সত্যাগ্রহ সংগঠিত করার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়[৫]। ১৯৩৩ সালে, তিনি হর্ষ দেব বহুগুণার (চৌকোটের গান্ধী) সাথে গ্রেফতার হন এবং তৎকালীন নিষিদ্ধ প্রাদেশিক কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে যোগদান করে সাত মাসের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৩৫ সালে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং পন্থ নতুন আইন পরিষদে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, পন্থ গান্ধীর উপদলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। একটি দল তাদের যুদ্ধের প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ রাজকে সমর্থন করার কথা বলেছিল, এবং সুভাষ চন্দ্র বসুর দল সমস্ত প্রয়োজনীয় উপায়ে ব্রিটিশ রাজকে বিতাড়িত করার জন্য পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার পক্ষে ছিল। ১৯৩৪ সালে, কংগ্রেস তাদের আইনসভা অসহযোগের অবসান ঘটায় এবং প্রার্থী দেয় এবং পন্থ কেন্দ্রীয় আইনসভায় নির্বাচিত হন। তিনি বিধানসভায় কংগ্রেস দলের উপনেতা হন।[৭]
১৯৪০ সালে, সত্যাগ্রহ আন্দোলন সংগঠিত করতে সাহায্য করার জন্য পন্থকে গ্রেফতার করা হয় এবং কারারুদ্ধ করা হয়। ১৯৪২ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন, এবার ভারত ছাড়ো প্রস্তাবে স্বাক্ষর করার জন্য, এবং ১৯৪৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে আহমেদনগর ফোর্টে তিন বছর অতিবাহিত করেন, এই সময় জওহরলাল নেহেরু পন্থের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে তাঁর জন্য মুক্তির আবেদন করলে তা সফল হয়েছিল।[৭]
১৯৪৫ সালে, ব্রিটিশ শ্রম সরকার প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দেয়।[৭] যুক্ত প্রদেশের ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং পন্থ আবার প্রথম ব্যক্তি হন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পরও ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তাঁর কার্যকাল অব্যাহত ছিল।
উত্তর প্রদেশে তাঁর বিচারমূলক সংস্কার এবং স্থিতিশীল শাসন ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করে তুলেছিল[৫]।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে, ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতিডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, "আমি পণ্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্তকে ১৯২২ সাল থেকে চিনতাম এবং এই দীর্ঘ মেলামেশায় তাঁর কাছ থেকে কেবল বিবেচনা নয়, স্নেহও পাওয়া আমার সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। এখন তাঁর শ্রম এবং তাঁর অর্জন মূল্যায়ন করার সময় নয়। এই দুঃখ শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়না। আমি কেবল তাঁর আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে পারি এবং যাঁরা তাঁকে ভালবাসেন ও প্রশংসা করেন তাঁদের এই দুঃখ সহ্য করার শক্তির জন্য প্রার্থনা করতে পারি।[১২]"