পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী (জন্ম: ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৫২) প্রথিতযশা ভারতীয় হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয়গায়ক, সুরকার, গীতিকার ও সংগীতগুরু। তাঁকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।[১]
হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তানরূপে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শ্রী অজিত চক্রবর্তী নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে ভারত বিভাজনের সময় চলে আসেন। ছোটো সন্তান সঞ্জয় চক্রবর্তীকে নিয়ে শ্যামনগরে বসবাস করতে থাকেন।
কলকাতার মর্যাদাপূর্ণ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে আইটিসি সঙ্গীত গবেষণা অকাদেমিতে যোগ দেন। এখানকার একমাত্র স্বর্ণপদকধারী হিসেবে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হন ও জ্যেষ্ঠ গুরু হিসেবে অদ্যাবধি শিক্ষা বিষয়ের নীতি-নির্ধারকের দায়িত্ব পালন করছেন।[৩]
প্রয়াত পিতা শ্রী অজিত কুমার চক্রবর্তী তার প্রথম গুরু ছিলেন। এরপর শ্রী পান্নালাল সামন্ত ও শ্রী কানাইদাস বৈরাগীর কাছ থেকে সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। পরবর্তীকালে পদ্মভূষণ পদকপ্রাপ্ত পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে দীক্ষিত হন। অরুণ ভাদুড়ি ছিলেন তার অগ্রজ গুরু ভাই। তারপরও তার প্রশিক্ষণ নেয়া অব্যাহত ছিল। এবার তিনি উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের সন্তান উস্তাদ মুনাওয়ার আলী খান তার দীক্ষাদাতা হন।[৪]
সঙ্গীতজীবন
এ পর্যন্ত শতাধিক গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। এর অধিকাংশই ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি থেকে বের হয়েছে। রেকর্ডগুলোয় অনেক বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় সুরের সম্মিলন ঘটেছে। এছাড়াও সরাসরি সঙ্গীত প্রদর্শনসহ সঙ্গীতের অনেক গোত্র যেমন: ঠুমরী, দাদরা, ভজন এবং শ্যামাসঙ্গীতের ন্যায় আধ্যাত্মিক গান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনেকসংখ্যক বাংলা গানের মধ্যে রবিঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের গানেও পারদর্শী তিনি।[৩]
সংগীত শিক্ষকতা
শাস্ত্রীয় সংগীত গুরু হিসেবে তিনি বহু নবীন প্রতিভা গড়ে তোলেন । তার কন্যাও তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে নিজ গুরুদেব জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের অণুপ্রেরণায় টালিগঞ্জ-এ শ্রুতিনন্দন নামে একটি শাস্ত্রীয় সংগীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাও করেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচলিত ভারতীয় রাগ সঙ্গীত সংরক্ষণ ও বিস্তৃতির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিশোর প্রতিভাদেরকে তার সঙ্গীত বিদ্যালয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন।
সম্মাননা
তাকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম সঙ্গীত কিংবদন্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অনেকগুলো পদকপ্রাপ্তি ঘটেছে তার। তন্মধ্যে ২০১১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ গৌরবান্বিত ও ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী পদক,[৫] ১৯৯৯-২০০০ সালে দিল্লিতে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে জাতীয় পুরস্কার কুমার গৌরব ও ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র ছন্দনীড়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[৬] প্রথম ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পাকিস্তান ও চীন সরকারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ লাভ করেন। জাজ সঙ্গীতের জন্মস্থান নিউ অর্লিয়েন্সে সঙ্গীত প্রদর্শনের পর তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাবেক ও বর্তমান উভয় মূখ্যমন্ত্রী থেকেই সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক রাজ্যের সর্বোচ্চ দুই সম্মাননা - মহাসঙ্গীত সম্মান ও বঙ্গভূষণ লাভ করেন। একই সালে আলভাস বিরাসাত পুরস্কার পান তিনি।[৭]ভারতের স্বাধীনতা দিবসেবিবিসি'র সূবর্ণজয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হন। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় তানসেন সম্মান লাভ করেন।[৮]
ব্যক্তিগত জীবন
চন্দনা চক্রবর্তীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। তাদের কন্যা কৌশিকী চক্রবর্তী হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রথীতযশা কণ্ঠশিল্পী। পুত্র অঞ্জন চক্রবর্তী সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ও সঙ্গীত পরিচালক।
তথ্যসূত্র
↑Sharma, Jyotirmaya (১৯ মার্চ ২০০৫)। "Ahoy Ajoy!"। The Hindu। ৬ মে ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১১।
↑Chatterjee, Guatam (৫ আগস্ট ২০০৫)। "Impeccable voice"। The Hindu। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১১।
↑Sharma, Jyotirmaya (২৮ এপ্রিল ২০০৬)। "In honour of Bade Khansaheb"। The Hindu। ৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১১।
↑"Padma Awards"(পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। নভেম্বর ১৫, ২০১৪ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২১, ২০১৫।