লোকি প্যাটারা (ইংরেজি: Loki Patera; /ˈloʊkiˈpætərə/) হল বৃহস্পতিরপ্রাকৃতিক উপগ্রহআইয়োর বৃহত্তম আগ্নেয় অবনমিত ভূমি। এটির ব্যাস২০২ কিলোমিটার (১২৬ মা)।[১] এটি গড়ে উঠেছে একটি সক্রিয় লাভা হ্রদ সহ একটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত হওয়া ভূত্বক নিয়ে।[২] সক্রিয়তার যে মাত্রা লোকি প্যাটারায় দেখা যায় তা পৃথিবীতে একটি অতিদ্রুত সম্প্রসারণসীল মধ্য-মহাসাগরীয় শৈলশিরার অনুরূপ।[৩]ভয়েজার ১-এর ইনফ্রারেড ইন্টারফেরোমিটার স্পেকট্রোমিটার অ্যান্ড রেডিওমিটার (আইআরআইএস) যন্ত্রে লোকি প্যাটারায় তাপ নিঃসরণের যে পরিমাণ ধৃত হয়েছে তা সালফার অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।[৪]
আইয়োতে লোকি প্যাটারার মতো লাভা হ্রদগুলি বিচ্যূত লাভা দ্বারা পরিপূর্ণ এবং একটি পাতলা কঠিনীভূত ভূত্বকের দ্বারা আবরিত অবনমিত ভূমি। এই লাভা হ্রদগুলি প্রত্যক্ষভাবে তলদেশের ম্যাগমা সঞ্চয়ের সঙ্গে সংযুক্ত।[৫] আইয়োর একাধিক লাভা হ্রদে তাপ নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের ফলে লোকি প্যাটারার সীমানা বরাবর চকচকে গলিত পাথরের অস্তিত্বের কথা জানান দিয়েছে। এই পাথরের কারণ হল প্যাটারার প্রান্তভাগ বরাবর হ্রদের ভূত্বকের ভাঙন। কঠিনীভূত লাভা তলদেশে তখনও গলনশীল লাভার তুলনায় ঘনতর বলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভূত্বকটি নিমজ্জিত হয়ে নতুন উত্তপ্ত গলিত পাথরকে প্রকাশ করতে পারে।[৬] লোকি প্যাটারার মতো ক্ষেত্রগুলিতে এটি পর্বে পর্বে ঘটতে পারে। বিপর্যয়ের কোনও এক পর্বে লোকি যখন ভূত্বক সুস্থির তখনকার তুলনায় দশ গুণ বেশি তাপ নিঃসরণ করতে পারে।[২] একটি অগ্ন্যুৎপাতের সময় নিমজ্জনশীল ভূত্বক প্যাটারা জুড়ে দৈনিক ১ কিলোমিটার (০.৬ মা) হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যতক্ষণ না হ্রদের ভূত্বক পুনরুত্থিত হয়। আরেকটি অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে যখন নতুন ভূত্বক গলিত লাভার উপর প্লবমান না থাকার মতো করে শীতল ও পুরু হয়ে পড়ে।[৭]
২০১৫ সালের ৮ মার্চ বৃহস্পতির দুই প্রাকৃতিক উপগ্রহ আইয়ো ও ইউরোপার মধ্যে এক বিরল কাক্ষিক পংক্তিবিন্যাসের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার ফলে গবেষকেরা লোকি প্যাটারা থেকে উদ্গত তাপ পৃথকভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ পান। তাঁরা এই কাজে সক্ষম হয়েছিলেন কারণ ইউরোপার পৃষ্ঠভাগ জলীয় বরফ দ্বারা আবরিত বলে অবলোহিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে অল্প পরিমাণ সূর্যালোকই প্রতিফলিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করতে সক্ষম হন যে, পুনরায় পৃষ্ঠভাগে উত্থিত লাভার দু’টি তরঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি ৪০০-৬০০ দিনে লোকি প্যাটারার উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। ছবিগুলির সাহায্যে গবেষকেরা আবিষ্কার করেন যে দক্ষিণপূর্ব অ্যারিজোনারলার্জ বায়নোকুলার টেলিস্কোপ মানমন্দিরের সাহায্যে বিষয়টি পূর্বেই ধরা গিয়েছিল। এই পর্যবেক্ষণের ফলে প্রমাণিত হয় যে লোকির দু’টি অর্ধাংশে ম্যাগমা সরবরাহের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।[৮]