ভারতের জাতীয় পতাকা হল কেন্দ্রস্থলে ২৪টি দণ্ডযুক্ত ঘন নীল রঙের অশোকচক্র সংবলিত ভারতীয় গেরুয়া, সাদা ও ভারতীয় সবুজ এই তিন রঙের একটি আনুভূমিক আয়তাকার পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই আয়োজিত গণপরিষদের একটি অধিবেশনে পতাকার বর্তমান নকশাটি গৃহীত হয় এবং সেই বছর ১৫ অগস্ট এটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকার স্বীকৃতি লাভ করে। এরপরে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রেও জাতীয় পতাকার স্বীকৃতি বজায় রাখে। ভারতে এটিকে "তিরঙ্গা" নামে অভিহিত করা হয়। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসেরপিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত "স্বরাজ" পতাকার আদলে।[N ১]
ভারতের আইন অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা খাদি কাপড়ে তৈরি করতে হয়। এটি এক বিশেষ ধরনের হস্তচালিত তাঁত অথবা রেশমি কাপড় যেটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে মহাত্মা গান্ধী বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতীয় মানক ব্যুরো কর্তৃক জাতীয় পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট শর্তাবলি নির্ধারিত হয়। উৎপাদনের অধিকার খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের হাতে ন্যস্ত। এই কমিশনই বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠী উৎপাদনের স্বত্ব প্রদান করে থাকে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ ভারতের একমাত্র জাতীয় পতাকা উৎপাদনকারী সংস্থা।
জাতীয় পতাকার ব্যবহার ভারতীয় পতাকাবিধি ও জাতীয় প্রতীক-সংক্রান্ত অন্যান্য আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পুরনো বিধি অনুযায়ী স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলি ছাড়া অন্য দিনে সাধারণ নাগরিকেরা জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারতেন না। ২০০২ সালে ভারতীয় নাগরিক নবীন জিন্দলের আপিলের ভিত্তিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টভারত সরকারকে সাধারণ নাগরিকদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য পতাকাবিধি সংশোধনের নির্দেশ দেয়। এরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট পতাকাবিধি সংস্কার করে কয়েকটি সীমিত ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের জাতীয় পতাকার ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করে। ২০০৫ সালে পতাকাবিধি পুনরায় সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ধরনের বস্ত্র ব্যবহারের অতিরিক্ত ব্যবস্থা করা হয়। পতাকা উড্ডীয়নের প্রোটোকল ও অন্যান্য জাতীয় ও অ-জাতীয় পতাকাগুলির সঙ্গে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধিও পতাকাবিধিতে উল্লিখিত হয়েছে।
ইতিহাস
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারত ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের শাসকেরা ভিন্ন ভিন্ন নকশার একাধিক পতাকা ব্যবহার করতেন। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরে ভারত প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে এলে ভারতের তদনীন্তন ব্রিটিশ শাসকবর্গ একক ভারতীয় পতাকার ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন। পাশ্চাত্য হেরাল্ডিক আদর্শে নির্মিত স্টার অফ ইন্ডিয়া ছিল কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশের পতাকাগুলির সমরূপীয়। ব্লু ও রেড এনসাইন পতাকাদুটির ঊর্ধ্ব-বাম কোয়াড্র্যান্টে থাকত ইউনিয়ন ফ্ল্যাগ এবং দক্ষিণার্ধ্বের মধ্যভাগে রাজমুকুট-বেষ্টিত একটি "স্টার অফ ইন্ডিয়া"। স্টারটি যে "ভারতীয়ত্ব"-এর প্রকাশক, তা বোঝাতে রানি ভিক্টোরিয়া তার ভারতীয় প্রজাবর্গের প্রতিনিধিস্বরূপ সাম্রাজ্যের সেবায় "নাইট কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া" নামে একটি পদ সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর সকল দেশীয় রাজ্য বিকৃত রেড এনসাইন উড্ডীয়নের অধিকার সহ ইউরোপীয় হেরাল্ডিক মাপকাঠি-সম্মত প্রতীকসহ পতাকা লাভ করে।[১][২]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেড এনসাইন ব্রিটিশ ভারতের প্রতিনিধিরূপে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্ব অর্জন করেছিল। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ এবং ১৯৪৫-৪৭ সময়পর্বে জাতিসংঘে এই পতাকাটিই ভারতের পতাকা হিসেবে ব্যবহৃত হত।[৩]
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনতাপাশ থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তার গুরুত্ব অর্জন করতে শুরু করলে, একটি জাতীয় পতাকার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। ১৯০৪ সালে স্বামী বিবেকানন্দেরআইরিশ শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতা ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকার রূপদান করেন। এই পতাকাটি ভগিনী নিবেদিতার পতাকা নামে অভিহিত হয়। লাল চতুষ্কোণাকার এই পতাকার কেন্দ্রে ছিল বজ্র ও শ্বেতপদ্ম সংবলিত একটি হলুদ ইনসেট। পতাকায় "বন্দে মাতরম" কথাটি বাংলায় লিখিত ছিল। লাল রং ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক, হলুদ বিজয়ের ও শ্বেতপদ্ম পবিত্রতার প্রতীক।[৪]
১৯০৬ সালের ৭ অগস্ট কলকাতার পার্সিবাগান স্কোয়ারে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী এক সভায় প্রথম ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলিত হয়। এই পতাকা উত্তোলন করেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু। পতাকাটি কলকাতা পতাকা নামে পরিচিত হয়। এই পতাকায় উপরে, মধ্যে ও নিচে যথাক্রমে কমলা, হলুদ ও সবুজ রঙের তিনটি আনুভূমিক ডোরা ছিল। উপরের ডোরায় আটটি অর্ধ-প্রস্ফুটিত পদ্ম এবং নিচের ডোরায় সূর্য ও অর্ধচন্দ্র অঙ্কিত ছিল। মাঝে দেবনাগরী হরফে লিখিত ছিল "বন্দে মাতরম" কথাটি।[৫]
১৯০৭ সালের ২২ জুলাই জার্মানিরস্টুটগার্ট শহরে ভিখাজি কামা অন্য একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকার উপরে ছিল সবুজ, মধ্যে গেরুয়া ও নিচে লাল রং। সবুজ রং ছিল ইসলামের প্রতীক ও গেরুয়া হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রতীক। সবুজ ডোরাটির উপর ব্রিটিশ ভারতের আটটি প্রদেশের প্রতীক হিসেবে আটটি পদ্মের সারি অঙ্কিত ছিল। মধ্যের ডোরায় দেবনাগরী হরফে "বন্দে মাতরম" কথাটি লিখিত ছিল এবং নিচের ডোরায় পতাকাদণ্ডের দিকে অর্ধচন্দ্র ও উড্ডয়নভাগের দিকে একটি সূর্য অঙ্কিত ছিল। ভিখাজি কামা, বীর সাভারকর ও শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা একযোগে এই পতাকাটির নকশা অঙ্কন করেছিলেন।[৫]প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বার্লিন কমিটিতে ভারতীয় বিপ্লবীরা এই পতাকাটি গ্রহণ করেন। সেই থেকে এটি বার্লিন কমিটি পতাকা নামে অভিহিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মেসোপটেমিয়ায় সক্রিয়ভাবে এই পতাকাটি ব্যবহৃত হয়েছিল।[৬]মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেগদর পার্টি পতাকাটি কিছু সময়ের জন্য ভারতের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৭]
১৯১৭ সালে বাল গঙ্গাধর তিলক ও অ্যানি বেসান্ত পরিচালিত হোমরুল আন্দোলন একটি নতুন পতাকার জন্ম দেয়। এই পতাকায় পাঁচটি লাল ও চারটি সবুজ আনুভূমিক ডোরা ছিল। উপরের বাঁদিকে আয়তাকার ইউনিয়ন পতাকা ছিল আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষিত ডোমিনিয়ন মর্যাদা লাভের প্রতীক। উপরের উড্ডয়নভাগে ছিল সাদা অর্ধচন্দ্র ও তারা। হিন্দুদের পবিত্র সপ্তর্ষি মণ্ডলের প্রতীকরূপে সাতটি সাদা তারা পতাকায় খচিত ছিল। এই পতাকাটি অবশ্য সর্বসাধারণ্যে জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়।[৫]
এক বছর আগে ১৯১৬ সালে অধুনা অন্ধ্রপ্রদেশেরমছলিপত্তনম শহরের নিকটস্থ ভাটলাপেনামারু গ্রামের বাসিন্দা পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া একটি সাধারণ জাতীয় পতাকার রূপদানের চেষ্টা করেন। তার এই প্রচেষ্টা উমর সোবানি ও এস বি বোমানজির চোখে পড়ে। এঁরা একসঙ্গে ভারতীয় জাতীয় পতাকা মিশন হাতে নেন। ভেঙ্কাইয়া এই পতাকার জন্য মহাত্মা গান্ধীর অনুমোদন চাইতে গেলে গান্ধীজি তাকে "ভারতের মূর্তপ্রতীক ও দেশের সকল অমঙ্গলহারী" চরকার চিত্র পতাকায় যোগ করার পরামর্শ দেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রদর্শিত পথে হস্তচালিত চরকা ছিল ভারতের অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। ভেঙ্কাইয়া লাল ও সবুজ প্রেক্ষাপটে চরকার ছবি সংবলিত একটি পতাকা প্রস্তুত করেন। কিন্তু গান্ধীজি মনে করেন, এই পতাকাটিতে ভারতের সকল ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতিফলন ঘটেনি।[৮]
মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছানুসারে একটি নতুন পতাকার নকশা করা হয়। এই ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার উপরে ছিল সাদা, মধ্যে সবুজ ও নিচে নীল; যা যথাক্রমে সংখ্যালঘু ধর্মসম্প্রদায়, মুসলমান ও হিন্দুদের প্রতীক। তিনটি ডোরা জুড়ে খচিত ছিল চরকার ছবি। আনুভূমিক তেরঙা ডোরা সংবলিত এই পতাকাটি আয়ারল্যান্ডের জাতীয় পতাকার সমরূপ ছিল। উল্লেখ্য, আয়ারল্যান্ডের পতাকা আরেকটি প্রধান ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক।[৪] জাতীয় কংগ্রেসের আমেদাবাদ অধিবেশনে এটি উত্তোলিত হয়। যদিও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কখনই এটিকে সরকারি পতাকা হিসেবে গ্রহণ করেনি। স্বাধীনতা আন্দোলনে এর ব্যাপক প্রয়োগও অন্যদিকে চোখে পড়ে না।
পতাকার এই সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি অনেকের মনেই অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ১৯২৪ সালে কলকাতায় সর্বভারতীয় সংস্কৃত কংগ্রেস হিন্দুধর্মের প্রতীক রূপে গেরুয়া রং ও বিষ্ণুর গদার চিত্র পতাকায় সংযোজনের প্রস্তাব দেয়। এই বছরই "হিন্দু যোগী ও সন্ন্যাসী এবং মুসলমান ফকির ও দরবেশদের মধ্যে প্রচলিত ত্যাগের প্রতীক" গেরু বা গিরিমাটি রং পতাকায় যোগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। শিখেরা দাবি তোলে, হয় তাদের প্রতিনিধিরূপে হলুদ রং পতাকায় রাখতে হবে, নয়তো পতাকা থেকে ধর্মীয় প্রতীকতত্ত্ব বাদ দিতে হবে।
এই সব দাবির প্রেক্ষাপটে সমস্যা সমাধানের লক্ষে ১৯৩১ সালের ২ এপ্রিল কংগ্রেস কর্মসমিতি একটি সাত সদস্যের পতাকা সমিতি গঠন করে। "পতাকায় ব্যবহৃত তিনটি রং নিয়ে আপত্তি আছে; কারণ এই রংগুলি সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে চিহ্নিত" – এই মর্মে একটি প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু এই সকল অপ্রাতিষ্ঠিনিক আলাপ-আলোচনার ফলস্রুতিটি হয় অভাবনীয়। পতাকায় একটিমাত্র রং হলদেটে কমলা রাখা হয় এবং উপরের দণ্ডের দিকে চরকার চিত্র খচিত হয়। পতাকা সমিতি এই পতাকাটির প্রস্তাব রাখলেও, সমগ্র প্রকল্পে সাম্প্রদায়িক ভাবধারার প্রতিফলন ঘটেছে মনে করে, কংগ্রেস এই পতাকা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।
পরে ১৯৩১ সালের করাচি কংগ্রেস অধিবেশনে পতাকা সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রস্তাবটি পাস হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া অঙ্কিত একটি ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। এই পতাকায় আনুভূমিক গেরুয়া, সাদা ও সবুজের মধ্যস্থলে একটি চরকা খচিত ছিল। গেরুয়া ত্যাগ; সাদা সত্য ও শান্তি এবং সবুজ বিশ্বাস ও প্রগতির প্রতীক তথা চরকা ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও দেশবাসীর শ্রমশীলতার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়।[৪]
একই সময় আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্যবহৃত পতাকায় "Azad Hind" (আজাদ হিন্দ) কথাটি ও চরকার পরিবর্তে একটি লম্ফমান বাঘের ছবি যুক্ত করা হয়। এটি ছিল মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্র বসুর সশস্ত্র সংগ্রামের অনাস্থার প্রতীক। মণিপুরে প্রথমবার সুভাষচন্দ্র এই পতাকাটি উত্তোলন করেন।
স্বাধীনতা প্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে ভারতের জাতীয় পতাকার বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য গণপরিষদ স্থাপিত হয়। গণপরিষদ রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্যরা ছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, কে এম মুন্সি ও বি আর আম্বেডকর। পতাকা কমিটি স্থাপিত হয় ১৯৪৭ সালের ২৩ জুন। এই সময় এই কমিটি পতাকা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। তিন সপ্তাহ পরে ১৯৪৭ সালের ১৪ জুলাই তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পতাকাটি উপযুক্ত সংস্কারের পর সব দল ও সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণীয় করে তুলে জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হবে। পরে এমন প্রস্তাবও গৃহীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকার কোনো সাম্প্রদায়িক গুরুত্ব থাকবে না। চরকার পরিবর্তে সারনাথ স্তম্ভ থেকে ধর্মচক্র-টি গৃহীত হয় পতাকায়। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীন ভারতে প্রথমবার এই পতাকাটি উত্তোলিত হয়।[৯]
নকশা
নিচে বিভিন্ন বর্ণ মডেল অনুসারে ভারতীয় পতাকার সম্ভাব্য রংগুলির বর্ণনা দেওয়া হল। গেরুয়া, সাদা, সবুজ ও নীল – এই চারটি রং পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এটিকে সিএমওয়াইকে বর্ণ মডেল; ডাই রং ও প্যান্টন সমসংখ্যা অনুযায়ী এইচটিএমএলআরজিবিওয়েব রং (হেক্সাডেসিম্যাল নোটেশন) অনুযায়ী বিভক্ত করা হল।[৪]
সর্বোচ্চ ব্যান্ডের সরকারি (সিএমওয়াইকে) মূল্য হল (0,50,90,0) – এটি কমলা রঙের অনুরূপ – যার সিএমওয়াইকে = (0,54,90,0)। প্রকৃত গাঢ় গেরুয়ার সিএমওয়াইকে মূল্য যথাক্রমে (4, 23, 81, 5)) ও (0, 24, 85, 15))।[৪] পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া।[৮]
প্রতীক
স্বাধীনতাপ্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে বিশেষভাবে গঠিত গণপরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকাকে সব দল ও সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য করে হতে হবে।[৪] এই কারণে, অশোকচক্র সংবলিত গেরুয়া, সাদা ও সবুজ ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, যিনি পরবর্তীকালে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, তিনি গৃহীত পতাকার প্রতীকতত্ত্বটি ব্যাখ্যা করে নিম্নলিখিত ভাষায় তার গুরুত্ব বর্ণনা করেন:
“
ভাগোয়া বা গেরুয়া রঙ ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতীক। আমাদের নেতৃবৃন্দকে পার্থিব লাভের প্রতি উদাসীন ও আপন আপন কাজে যত্নবান হইতে হইবে। মধ্যস্থলে সাদা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বভাবের পথপ্রদর্শক সত্যপথ আলোর প্রতীক। সবুজ মৃত্তিকা তথা সকল প্রাণের প্রাণ উদ্ভিজ্জ জগতের সহিত আমাদের সম্বন্ধটি ব্যক্ত করিতেছে। সাদা অংশের কেন্দ্রস্থলে অশোকচক্রধর্ম অনুশাসনের প্রতীক। সত্য ও ধর্ম এই পতাকাতলে কর্মরত সকলের নিয়ন্ত্রণনীতি হইবে। এতদ্ভিন্ন, চক্রটি গতিরও প্রতীক। স্থবিরতায় আসে মৃত্যু। জীবন গতিরই মধ্যে। পরিবর্তনকে বাধাদান ভারতের আর উচিত হইবে না, তাহাকে সম্মুখে অগ্রসর হইতে হইবেই। এই চক্রটি শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের গতিশীলতার প্রতীক।[১০]
১৯৫০ সালে ভারতে সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তার এক বছর পরই, অর্থাৎ ১৯৫১ সালে, ভারতীয় মানক ব্যুরো (বিএসআই) প্রথম বার জাতীয় পতাকা উৎপাদন সংক্রান্ত কিছু বিনির্দেশ জারি করে। ১৯৬৪ সালে ভারত মেট্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করলে এই বিনির্দেশে কিছু সংশোধনী আনা হয়। তারপর ১৯৬৮ সালের ১৭ অগস্ট পুনরায় সংশোধিত হয় এগুলি।[৯] আকার, ডাই রং, ক্রোমাটিক মূল্য, উজ্জ্বলতা, ব্যবহৃত সুতোর সংখ্যা ও উত্তোলনরজ্জু সহ পতাকা উৎপাদনের সকল আবশ্যিক বিষয়ের উল্লেখ এই বিনির্দেশে পাওয়া যায়। এই নির্দেশনামা কঠোরভাবে অনুসৃত হয়। পতাকা উৎপাদনে কোনো খুঁত রাখা আইনত অপরাধ; এবং তার শাস্তি জেল, জরিমানা অথবা দুইই।[১১]
পতাকা উৎপাদনের জন্য একমাত্র খাদি নামক হস্তচালিত তাঁতবস্ত্রই ব্যবহার করা যায়। তুলা, রেশম ও উল ছাড়া অন্যকিছু খাদির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। পতাকা উৎপাদনে দুই ধরনের খাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে; প্রথমটি হল খাদি-বান্টিং, যা দিয়ে পতাকার মূল অংশটি প্রস্তুত করা হয় এবং দ্বিতীয়টি হল হালকা বাদামি রঙের খাদি-ডাক বস্ত্রখণ্ড, যেটি পতাকাকে পতাকাদণ্ডের রজ্জুর সঙ্গে ধরে রাখে। খাদি-ডাক এক অপ্রচলিত বয়নপদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে তিনটি সুতো একত্রে জালের আকারে বোনা হয়। উল্লেখ্য, প্রচলিত বয়নপদ্ধতিতে দুটি সুতোকে একসঙ্গে বোনা হয়ে থাকে। খাদি-ডাক অত্যন্ত দুর্লভ এক বয়নপদ্ধতি। ভারতে এক ডজনেরও কম বয়নশিল্পী এই ধরনের বয়নে সক্ষম। নির্দেশিকায় আরো বলা হয়েছে, প্রতি সেন্টিমিটারে ১৫০টি সুতোর বেশি বা কম থাকবে না, প্রতি সেলাইয়ে চারটি করে সুতো থাকবে[১১] এবং এক বর্গফুট পতাকার ওজন ২৫ গ্রামের বেশি বা কম হবে না।[৯][১২]
উত্তর কর্ণাটকেরধরওয়াদ ও বাগালকোট জেলার নিকটস্থ গদগের দুটি তাঁত ইউনিট থেকে বয়নকৃত খাদি আনা হয়। বর্তমানে হুবলি-ভিত্তিক কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ ভারতের একমাত্র লাইসেন্স-প্রাপ্ত জাতীয় পতাকা উৎপাদন ও সরবরাহ ইউনিট। খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশন (কেভিআইসি) ভারতে পতাকা উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রদানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তবে বিনির্দেশ অগ্রাহ্য করা হলে বিএসআই অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থার অনুমতি বাতিল করে দিতে পারে।[৯]
বোনার পর পতাকার উপাদানগুলি বিএসআই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বিনির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষার পর যদি উপাদানগুলি উত্তীর্ণ হয়, তবেই সেগুলিকে ফ্যাক্টরিতে ফেরত পাঠানো হয়। তারপর নির্ধারিত রঙে এগুলিকে ব্লিচ ও ডাই করা হয়। কেন্দ্রের অশোকচক্রটি হয় স্ক্রিন প্রিন্ট, অথবা স্টেনসিল বা যথাযথ বয়নের মাধ্যমে খচিত করা হয়। অশোকচক্র অত্যন্ত সযত্নে পতাকায় আঁকা হয়, যাতে পতাকার দুই দিক থেকেই সেটি দেখা যেতে পারে। বিএসআই তারপর রং পরীক্ষা করে; এবং তারপরেই পতাকা বিক্রি করা যায়।
ভারতে প্রতি বছর চার কোটি পতাকা বিক্রি হয়। মহারাষ্ট্র সরকারের সচিবালয় মন্ত্রালয় ভবনের শীর্ষস্থ পতাকাটি দেশের বৃহত্তম পতাকা (আকার ৬.৩ × ৪.২ মিটার)।[১২]
পতাকাবিধি
২০০২ সালের পূর্বাবধি ভারতের সাধারণ নাগরিকবৃন্দ জাতীয় ছুটির দিনগুলি ছাড়া অন্য সময়ে জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের অধিকারী ছিলেন না। শিল্পপতি নবীন জিন্দাল পতাকাবিধি ভঙ্গ করে তার কার্যালয় ভবনের শীর্ষে জাতীয় পতাকা উড্ডয়ন করলে পতাকাটি বাজেয়াপ্ত হয় এবং তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে এই ধরনের বিধি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। জিন্দাল দিল্লি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তার বক্তব্য ছিল, পূর্ণ মর্যাদা ও যথাযথ ব্যবহারবিধি অনুসরণ করে জাতীয় পতাকা উড্ডয়ন তার নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে; কারণ এটি দেশের প্রতি তার ভালবাসা ব্যক্ত করার একটি উপায়।[১৩][১৪] মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের হস্তান্তরিত হলে সর্বোচ্চ আদালত ভারত সরকারকে এই বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি স্থাপনের নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট জাতীয় পতাকাবিধি সংস্কার করেন এবং ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে সংশোধিত বিধি চালু হয়। এই নতুন পতাকাবিধি অনুযায়ী মর্যাদা, গৌরব ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে যে কোনো নাগরিক বছরের যে কোনো দিনই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন।
অন্যদিকে ভারতীয় সংঘ বনাম যশোবন্ত শর্মা মামলায়[১৫] পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, জাতীয় পতাকাবিধি বিধিবদ্ধ আইন না হলেও এই বিধির বিধিনিষেধগুলি জাতীয় পতাকার গৌরবরক্ষার্থে অবশ্য পালনীয়। জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের অধিকার পরম অধিকার নয়; এটি অর্জিত অধিকার এবং সংবিধানের ৫১ ক ধারা অনুযায়ী এটি মান্য করা উচিত।
পতাকার সম্মান
ভারতীয় আইন অনুসারে জাতীয় পতাকার ব্যবহার সর্বদা "মর্যাদা, আনুগত্য ও সম্মান" ("dignity, loyalty and respect") সহকারে হওয়া উচিত। "প্রতীক ও নাম (অপব্যবহার রোধ) আইন, ১৯৫০" ("The Emblems and Names (Prevention of Improper Use) Act, 1950") অনুসারে জারি করা "ভারতীয় পতাকা বিধি – ২০০২" ("Flag Code of India – 2002") পতাকার প্রদর্শনী ও ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশিকা বহন করে। সরকারি বিধিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকা কখনই মাটি বা জল স্পর্শ করবে না; এটিকে টেবিলক্লথ হিসেবে বা কোনো প্লাটফর্মের সম্মুখে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না; জাতীয় পতাকা দিয়ে কোনো মূর্তি, নামলিপি বা শিলান্যাস প্রস্তর আবরিত করা যাবে না ইত্যাদি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা বস্ত্র, উর্দি বা সাজপোষাক হিসেবে ব্যবহার করা যেত না। ২০০৫ সালের ৫ জুলাই সরকার পতাকাবিধি সংশোধন করে বস্ত্র বা উর্দি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করেন। যদিও নিম্নাবরণ বা অন্তর্বাস হিসেবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে।[১৬] এছাড়াও বালিশের কভার বা গলায় বাঁধার রুমালে জাতীয় পতাকা বা অন্য কোনো প্রতীকচিহ্ন অঙ্কণ করা নিষিদ্ধ।[১৭] ইচ্ছাকৃতভাবে উলটো অবস্থায় পতাকা উত্তোলন, কোনো তরলে ডোবানো বা উত্তোলনের আগে ফুলের পাপড়ি ছাড়া অন্য কিছু তাতে বাঁধা বা পতাকাগাত্রে কোনো কিছু লেখাও নিষিদ্ধ।[১০]
পতাকা ব্যবহার
জাতীয় পতাকার ব্যবহার ও প্রদর্শনী সংক্রান্ত একাধিক প্রথা অনুসৃত হয়ে থাকে। বহির্দ্বারে আবহাওয়া ব্যতিরেকে সূর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্যাস্তের সময় তা নামিয়ে ফেলা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি ভবনে রাতেও জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের রীতি আছে।
জাতীয় পতাকা কখনই উলটো অবস্থায় বর্ণনা করা, প্রদর্শিত করা, বা উত্তোলন করা অনুচিত। প্রথা অনুসারে পতাকাটিকে ৯০ ডিগ্রির বেশি আবর্তিত করা যায় না। কোনো ব্যক্তি যেন পতাকাকে উপর থেকে নিচে ও বাঁদিক থেকে ডান দিকে বইয়ের পাতার মতো "পড়তে" পারেন এবং আবর্তিত হওয়ার পরও যেন এই বৈশিষ্ট্যের ব্যতয় না হয়। ছেঁড়া বা নোংরা অবস্থায় পতাকার প্রদর্শনী অপমানজনক। পতাকাদণ্ড বা উত্তোলন রজ্জুর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য; এগুলিকেও যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়।
দেওয়াল প্রদর্শনী
কোনো পোডিয়ামের পশ্চাত-দেওয়ালে দুটি পরস্পর অভিমুখী পতাকাদণ্ডে গেরুয়া ডোরাটি উপরে রেখে আনুভূমিকভাবে পতাকাদুটিকে পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় প্রদর্শিত করতে হবে। ক্ষুদ্রাকার পতাকাদণ্ডে পতাকা প্রদর্শিত করলে দণ্ডটিকে দেওয়ালে কৌণিকভাবে স্থাপন করে তাকে রুচিসম্মতভাবে ঝোলাতে হবে। পরস্পর আড়াআড়ি দুটি পতাকাদণ্ডের উপর দুটি জাতীয় পতাকা একত্রে প্রদর্শিত হলে দণ্ডদুটির অভিমুখ পরস্পরের দিকে রাখতে হবে এবং পতাকাদুটি পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় প্রদর্শিত করতে হবে। জাতীয় পতাকা টেবিল, লেকটার্ন, পোডিয়াম বা ভবনের আচ্ছাদনরূপে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এমনকি প্রদর্শনীর খাতিরে রেলিং-এ ঝোলানোও নিষিদ্ধ।
অন্যান্য জাতীয় পতাকার সঙ্গে
বহির্দ্বারে অন্যান্য দেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে একযোগে প্রদর্শিত হওয়ার সময় পতাকা উড্ডয়নের একাধিক রীতি অনুসৃত হয়। বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখা হয় পতাকার সম্মানের প্রতি। এর অর্থ লাতিন বর্ণমালা অনুযায়ী বর্ণানুক্রমে যখন একাধিক দেশের জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয় তখন অন্যান্য পতাকার ডানদিকে (দর্শকের বাঁদিকে) রাখা হয় জাতীয় পতাকাকে। সকল পতাকা যেন সম আকারের এবং কোনো পতাকা যেন ভারতীয় পতাকার চেয়ে বড় না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা হয়। প্রত্যেক দেশের পতাকা পৃথক পৃথক পতাকাদণ্ডে থাকে। একই দণ্ডে একটি পতাকার তলায় অন্য একটি পতাকার প্রদর্শনী নিষিদ্ধ। অনুমতিক্রমে স্বাভাবিক দেশভিত্তিক বর্ণানুক্রমিক পতাকার সারির শুরুতে ও শেষে ভারতের পতাকা রাখা যায়। যদি আবদ্ধ বৃত্তে একাধিক জাতীয় পতাকার প্রদর্শনী করতে হয়, তবে বৃত্তটি ভারতের পতাকা দিয়ে ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে শুরু করতে হয়; অন্যান্য পতাকা ভারতীয় পতাকার পরে থাকবে এবং শেষ পতাকাটি ভারতীয় পতাকার শেষে থাকে। ভারতের জাতীয় পতাকা সর্বাগ্রে উত্তোলিত ও সর্বশেষে অবনমিত হয়।
পরস্পর আড়াআড়িভাবে অন্য জাতীয় পতাকার সঙ্গে প্রদর্শিত হওয়ার সময় ভারতের জাতীয় পতাকা সম্মুখভাগে ও অন্য পতাকার ডানদিকে (দর্শকের বাঁদিকে) স্থাপিত হয়। অবশ্য রাষ্ট্রসংঘের পতাকার ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার উভয় দিকেই রাখা যায়। সাধারণভাবে সম্মুখ অভিমুখে সর্ব দক্ষিণে জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের রীতি আছে।[১০]
অন্যান্য পতাকার সঙ্গে
কর্পোরেট পতাকা বা বিজ্ঞাপন ব্যানার জাতীয় অন্যান্য পতাকার সঙ্গে একযোগে প্রদর্শিত করতে হলে, পতাকাবিধি অনুযায়ী, পতাকাগুলিকে পৃথক পৃথক দণ্ডে স্থাপন করার নিয়ম আছে; ভারতের জাতীয় পতাকা সে ক্ষেত্রে এগুলির মধ্যস্থলে অথবা দর্শকের দৃষ্টি থেকে সর্ববামে অথবা পতাকামণ্ডলীতে অন্য পতাকার তুলনায় অন্তত এক পতাকা-প্রস্থ উচ্চতায় প্রদর্শিত হয়। জাতীয় পতাকার দণ্ড এই মণ্ডলীতে সবার আগে থাকে। যদি একই পতাকাদণ্ডে সব কটি পতাকা প্রদর্শিত করতে হয়, তবে জাতীয় পতাকা সবার উপরে থাকে। অন্যান্য পতাকার সঙ্গে শোভাযাত্রাকালে বাহিত হলে, জাতীয় পতাকা শোভাযাত্রার সম্মুখে অথবা সমাভিমুখী পতাকার সারিতে বাহিত হলে শোভাযাত্রার দক্ষিণে অবস্থান করে।[১০]
অন্তর্দ্বার প্রদর্শনী
কোনো সভাকক্ষে সভানুষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রকার অন্তর্দ্বার জনসমাবেশের সময় বিধি অনুসারে পতাকাটিকে ডান দিকে (দর্শকের বাঁদিকে) রাখতে হয়। অর্থাৎ, সভাকক্ষে বক্তার পাশে প্রদর্শিত করতে হলে এটিকে বক্তার ডানদিকে রাখতে হয়। অন্য সময় এটিকে শ্রোতার ডানদিকে রাখতে হয়।
পতাকাটির গেরুয়া রং শীর্ষে রেখে পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় প্রদর্শিত করতে হয়। পোডিয়ামের পশ্চাদস্থ দেওয়ালে লম্বভাবে প্রদর্শিত করতে হলে গেরুয়া ডোরাটিকে দর্শকদের দৃষ্টি অনুযায়ী বাঁদিকে রাখতে হয়; এবং পতাকারজ্জুটিকে শীর্ষে স্থাপিত হতে হয়।[১০]
কুচকাওয়াজ ও অনুষ্ঠান প্রদর্শনী
অন্য পতাকার সঙ্গে কোনো শোভাযাত্রা বা কুচকাওয়াজে বাহিত হলে জাতীয় পতাকাকে অন্য পতাকার ডান দিকে বা সর্বমধ্যে একাকী রাখতে হয়। মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ বা নামলিপি উন্মোচনের অঙ্গ হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায় না। জাতীয় পতাকা দিয়ে কিছু ঢাকাও বারণ। পতাকার সম্মানের অঙ্গ হিসেবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে একে অবনত করা যায় না। রেজিমেন্টাল পতাকা বা প্রাতিষ্ঠানিক পতাকা সম্মান প্রদর্শনের অঙ্গ হিসেবে অবনত করা হয়ে থাকে।
পতাকা উত্তোলন বা অবনমন অনুষ্ঠানের সময়, অথবা কুচকাওয়াজ বা রিভিউয়ের সময়, উপস্থিত ব্যক্তিসকলকে পতাকার দিকে মুখ করে উঠে দাঁড়াতে হয়। উর্দিধারী ব্যক্তিদের যথাবিধি অভিবাদন জানাতে হয়। পতাকার সারিতে বাহিত হলে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে পতাকাটি পার হওয়ার সময় উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান বা অভিবাদন জানাতে হয়। কোনো পদাধিকারী মস্তকাবরণ ছাড়াই অভিবাদন গ্রহণ করতে পারেন। জাতীয় সংগীত বাদনের পরই পতাকা অভিবাদন অনুষ্ঠিত হয়।[১০]
যানবাহনে প্রদর্শনী
কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও লেফট্যানেন্ট গভর্নরগণ, মুখ্যমন্ত্রীগণ, ক্যাবিনেট মন্ত্রীগণ ও ভারতীয় সংসদ ও রাজ্য বিধানসভার জুনিয়র ক্যাবিনেট সদস্যগণ, লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষগণ, রাজ্যসভা ও রাজ্য বিধানপরিষদের চেয়ারম্যানগণ, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ এবং সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগ-র্যাঙ্ক আধিকারিকবৃন্দই নিজেদের যানবাহনে জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের অধিকারী। তারা যখনই প্রয়োজন বোধ করেন তখনই তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড্ডয়ন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পতাকাটি একটি পতাকাদণ্ডে গ্রথিত থাকে। দণ্ডটি বনেটের সম্মুখ-মধ্যভাগে অথবা গাড়ির সম্মুখ-দক্ষিণভাবে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। যখন সরকারি গাড়িতে কোনো বিদেশি পদাধিকারী ভ্রমণ করেন, তখন তার দেশের পতাকা গাড়ির সম্মুখ-বামে ও ভারতের জাতীয় পতাকা গাড়ির সম্মুখ-দক্ষিণে প্রদর্শিত হয়।
রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে তাদের বিমানে জাতীয় পতাকা উড্ডয়ন করা হয়। যে দেশে ভ্রমণ করা হচ্ছে, সেই দেশের জাতীয় পতাকাও বিমানে উড্ডয়ন করা হয়। তবে মধ্যপথে অন্য কোনো দেশেও অবতীর্ণ হলে সৌজন্য স্মারক হিসেবে সেই দেশের জাতীয় পতাকাও উড্ডয়নের রীতি আছে। রাষ্ট্রপতি দেশের মধ্যে কোথাও সফরে গেলে বিমানের যে দিক দিয়ে ওঠেন ও অবতরণ করেন সেদিকে জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয়। রাষ্ট্রপতি যখন বিশেষ ট্রেনে দেশের মধ্যে কোথাও সফর করেন, তখন ড্রাইভারের ইঞ্জিন থেকে যে স্টেশন-প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে সেই দিকে মুখ করে জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয়। বিশেষ ট্রেনটি যখন নিশ্চল অবস্থায় থাকে বা কোনো স্টেশনে থামার জন্য প্রবেশ করে কেবল তখনই জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয়।[১০]
অর্ধনমন
কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকা অনুসারেই শোকের চিহ্ন হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার রীতি আছে; রাষ্ট্রপতি সেক্ষেত্রে শোককালীন সময়সীমাও নির্ধারিত করে দেন। অর্ধনমিত করার আগে পতাকাটি একবার পূর্ণ উত্তোলিত করা হয়। আবার সূর্যাস্তের সময় অবনমিত করার আগেও একবার পূর্ণ উত্তোলিত করে তারপর অবনমিত করা হয়। কেবলমাত্র জাতীয় পতাকাই অর্ধনমিত করা হয়; অন্যান্য পতাকা স্বাভাবিক উচ্চতায় থাকে।
রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। লোকসভার অধ্যক্ষ ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে দিল্লিতে এবং কোনো কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মৃত্যুতে দিল্লি ও রাজ্য রাজধানীতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। রাষ্ট্রমন্ত্রীদের মৃত্যুতে দিল্লিতে অর্ধনমিত রাখা হয়। রাজ্যপাল, লেফট্যানেন্ট গভর্নর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মৃত্যুতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
অপরাহ্নে কোনো পদাধিকারীর মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছলে যদি পরদিন সূর্যোদয়ের আগে অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন না হয় তবে পরদিন থেকে জাতীয় পতাকা উপরে উল্লিখিত স্থানকাল অনুসারে অর্ধনমিত থাকে। অন্ত্যেষ্টি স্থলেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, গান্ধী জয়ন্তী ও জাতীয় সপ্তাহ (৬-১৩ এপ্রিল), রাজ্যের প্রতিষ্ঠাদিবস বা ভারত সরকার নির্ধারিত অন্য কোনো জাতীয় উৎসবের দিন কেবলমাত্র মৃতের শরীর যে ভবনে রক্ষিত থাকে সেই ভবন ছাড়া অন্য কোথাও অর্ধনমিত থাকে না। এই ক্ষেত্রে শরীর ভবন থেকে অপসৃত হলে পতাকা পূর্ণ উত্তোলিত করা হয়।
কোনো স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে বিদেশি পদাধিকারীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা যেতে পারে। যদিও, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের মৃত্যুর পরে উপরে উল্লিখিত দিনগুলিতে ভারতীয় দূতাবাস জাতীয় পতাকা উত্তোলিত করতে পারে।
রাষ্ট্রীয়, সামরিক বা কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর অন্ত্যেষ্টিতে মৃতদেহ বা কফিনের উপর আচ্ছাদিত করা হয়। গেরুয়া রংটি মৃতদেহ বা কফিনের উপর দিকে থাকে। তবে পতাকাটি কবরস্থ বা চিতায় ভস্ম করা যায় না।[১০]
বিনষ্টীকরণ
জাতীয় পতাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা নোংরা হলে, এটিকে ফেলে দেওয়া বা অমর্যাদার সহিত নষ্ট করা যায় না। এটিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে পুড়িয়ে বা পতাকার মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য কোনো পন্থায় নষ্ট করা হয়ে থাকে। এছাড়াও গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে বা সসম্মানে কবরস্থ করেও এটি বিনষ্ট করা যেতে পারে। পতাকা কে অসম্মান করা অনুচিত।[১০]
↑ কখভারতের বর্তমান পতাকা পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার মূল নকশার একটি রূপান্তর,পরবর্তীকালে মাঝে সাদা অংশে ২৪টি দণ্ডযুক্ত অশোকচক্র স্থান পায়। মিসেস সুরাইয়া বদর-উদ-দিন ত্যাবি কর্তৃক জমা দেওয়া স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা অবশেষে ১৭ ই জুলাই ১৯৪৭ তারিখে পতাকা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত এবং গৃহীত হয়। তবে সাধারণভাবে পতাকার নকশা-প্রস্তুতকারক হিসেবে পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার নাম উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
↑ কখগঘ"Flag code of India, 2002"। Fact Sheet। Press Information Bureau, Government of India। ৪ এপ্রিল ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-১১।
↑ কখগঘঙচছজঝ"Flag Code of India"। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২৫ জানুয়ারি ২০০৬। ১০ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০০৬।
List of events ← 1955 1954 1953 1956 in the Belgian Congo → 1957 1958 1959 Decades: 1930s 1940s 1950s 1960s The following lists events that happened during 1956 in the Belgian Congo. Incumbent Governor-general – Léo Pétillon Events Date Event South Kivu Sugar Refinery is founded in Kiliba, South Kivu.[1] Alphonse De Valkeneer is appointed acting governor of the province of Équateur.[2] January Jean Paelinck (1906–1961) is appointed governor of Katanga Provin...
This is a compendium of the Filipino generals, commanders, leaders and who fought during the Philippine Revolution, Filipino-American War and the Post-war insurgencies against US occupation of the Philippines. There are 165 generals listed in this article. General officers Filipino generals in the Philippine Revolution of 1896 and the Filipino-American War of 1899 Name Gradea Affiliationb Provincec 1. Gregorio Aglipay General, Religious Auxiliary Lieutenant General Vicario General Castrence (...
(8615) 1979 MB2ВідкриттяВідкривач Е. Гелін,Ш. Дж. БасМісце відкриття Обсерваторія Сайдинг-СпрінгДата відкриття 25 червня 1979ПозначенняТимчасові позначення 1979 MB2 1979 OF1 1988 VF3Категорія малої планети Астероїд головного поясуОрбітальні характеристики[1] Епоха 4 листопада 2013 (2 4...
S.A. des Ateliers du Furan Rechtsform SA Gründung 1880 Auflösung 1950 Sitz Saint-Étienne, Frankreich Branche Automobilindustrie Die S.A. des Ateliers du Furan war ein französisches Unternehmen.[1][2] Inhaltsverzeichnis 1 Unternehmensgeschichte 2 Fahrzeuge 2.1 Automobile mit Markenname Jussy 2.2 Automobile mit Markenname SAF 3 Literatur 4 Weblinks 5 Einzelnachweise Unternehmensgeschichte Auguste Dombret gründete 1880 in Saint-Étienne das Unternehmen Dombret & Jussy. E...
Esta é uma lista de cidades na Bulgária. Capitais das províncias são exbidas em negrito. Mapa da Bulgária 1ª- Sófia, Capital da Bulgária 2ª- Plovdiv 3ª- Varna 4ª- Burgas ª- Ruse 6ª- Stara Zagora 7ª- Pleven 8ª- Dobrich 9ª- Sliven 10ª- Shumen 11ª- Haskovo 12ª- Pernik 13ª- Yambol 14ª- Pazardzhik 15ª- Blagoevgrad 16ª- Vratsa 17ª- Veliko Tarnovo 19ª- Vidin 20ª- Kardzhali 21ª- Asenovgrad 22ª- Kazanlak 23ª- Kyustendil 24ª- Montana 25ª- Dimitrovgrad 26ª- Lovech 27ª- S...
Montañas de la Reina Maud Ubicación geográficaContinente AntártidaCordillera Montañas TransantárticasCoordenadas 86°S 160°O / -86, -160Ubicación administrativaDivisión Región del Tratado AntárticoCaracterísticasMáxima cota Monte Kaplan (4,08 km)Superficie 92 848 km²Mapa de localización Montañas de la Reina Maud Ubicación (Antártida).[editar datos en Wikidata] Accidentes geográficos de la Antártida. La cordillera de la Reina Maud es...
This article is about opinion polling between Donald Trump and Joe Biden. For polls with other candidates, see Nationwide hypothetical polling for the 2020 United States presidential election. 2020 U.S. presidential election Timeline 2017–2019 January–October 2020 November 2020 – January 2021 Presidential debates Parties Polling national statewide News media endorsements primary general Fundraising Russian interference Presidential electors (fake electors) Electoral College vote count P...
У Вікіпедії є статті про інших людей із прізвищем Трух. Володимир Володимирович Трух Солдат Загальна інформаціяНародження 14 липня 1992(1992-07-14)с. Жабинці, Гусятинський район, Тернопільська область, УкраїнаСмерть 17 січня 2015(2015-01-17) (22 роки)поблизу Донецька, УкраїнаВійськов...
تركيب المقحل الحقلي الداخلي المقحل الحقلي أو ترانزستور الأثر الحقل (بالإنجليزية: Field-effect transistor) اختصاراً FET، هو نبيطة (مقحل) أحادي الاتجاه يتكون من 3 عناصر رئيسية المنبع، البوابة، المصب وينتقل التيار بين المنبع والمصب (أو بين المصب والمنبع لإنه أحادي القطب) عبر قناة ذات موصل
This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: Norway–Saudi Arabia relations – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (June 2011) (Learn how and when to remove this template message) Bilateral relationsNorwegian–Saudi relations Norway Saudi Arabia Norway – Saudi Arabia relations are foreign relat...
Turkish soldier For other Mehmet Emin, see Mehmet Emin. Mehmet Emin Yazgan1311-P. 88[1]Born1876Constantinople (Istanbul), Ottoman EmpireDiedFebruary 21, 1961Istanbul, TurkeyAllegiance Ottoman Empire TurkeyYears of serviceOttoman: 1895-1920Turkey: 1920-October 8, 1930RankMirlivaCommands held16th Regiment, 6th Division, Inspector of the Depot Forces of the Sixth Army, 109th Regiment, İzmir Military Court143rd Regiment, 2nd Regiment, Ankara Military Service Department, S...
2020 video game 2020 video gameTouhou Spell BubbleDeveloper(s)TaitoPublisher(s)JP: TaitoAS: Arc System WorksWW: Square EnixDirector(s)Mayu KikuchiProducer(s)Tomoyuki SawadaDesigner(s)Hidetake IyomasaComposer(s)Yu ShimodaSeriesTouhou Project, Puzzle BobblePlatform(s)Nintendo SwitchReleaseJP: February 6, 2020AS: October 15, 2020WW: October 29, 2020Genre(s)Puzzle, rhythmMode(s)Single-player, multiplayer Touhou Spell Bubble is a rhythm based competitive arcade puzzle game developed in 2020 by Tai...
Pemandangan dataran tinggi Guatemala dari Buena Vista Dataran tinggi Guatemala adalah wilayah dataran tinggi yang terletak di Guatemala selatan. Wilayah ini diapit oleh Sierra Madre de Chiapas di selatan dan dataran rendah Petén di utara. Dataran tinggi ini terdiri dari sejumlah lembah yang dikelilingi oleh pegunungan. Warga setempat menyebut wilayah ini Altos, yang berarti dataran tinggi. Pranala luar Map of Guatemala, including principal rivers Artikel bertopik geografi atau tempat Guatema...
Primeval being in Norse mythology For other uses, see Ymir (disambiguation). Ymir sucks at the udder of Auðumbla as she licks Búri out of the ice in a painting by Nicolai Abildgaard, 1790. In Norse mythology, Ymir[1] (/ˈiːmɪər/),[2] also called Aurgelmir, Brimir, or Bláinn, is the ancestor of all jötnar. Ymir is attested in the Poetic Edda, compiled in the 13th century from earlier traditional material, in the Prose Edda, written by Snorri Sturluson in the 13th ce...
Chính sách thị thực của Liban liên quan đến những yêu cầu mà công dân nước ngoài muốn đến Liban phải thỏa mẫn để được cho phép đến và ở lại quốc gia này. Bản đồ chính sách thị thực Chính sách thị thực của Liban Miễn thị thực Người sở hữu hộ chiếu của 7 quốc gia và vùng lãnh thổ sau cần thị thực để đến Liban lên đến 6 tháng mỗi năm để du lịch hoặc công tác (trừ khi ...
Railway station Chhattisgarh This article has multiple issues. Please help improve it or discuss these issues on the talk page. (Learn how and when to remove these template messages) This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: Telibandha railway station – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (Janu...
German bobsledder Harald CzudajCzudaj (front) in 1990 Medal record Men's Bobsleigh Representing Germany Olympic Games 1994 Lillehammer Four-man World Championships 1990 St. Moritz Two-man 1990 St. Moritz Four-man 1991 Altenberg Four-man 1995 Winterberg Four-man World Cup Championships 1997-98 Four-man Harald Czudaj (born 14 February 1963) is a German former bobsledder who competed during the 1990s. He competed in three Winter Olympics and won a gold medal in the four-man event at Lilleh...
Series of tennis tournaments US Open Series logo. The US Open Series is the name given by the United States Tennis Association (USTA) to a series of North American professional tennis tournaments leading up to and including the US Open. It is part of the North American hard court season. Emirates sponsored the series in the past, under a deal in place from 2012 to 2016.[1] The series was initially organized in 2004 as a way to focus more attention on American tennis tournaments by get...
German politician Ortwin RundeFirst Mayor of HamburgIn office12 November 1997 – 31 October 2001PresidentRoman HerzogJohannes RauChancellorHelmut KohlGerhard SchröderPreceded byHenning VoscherauSucceeded byOle von Beust Personal detailsBorn (1944-02-12) 12 February 1944 (age 79)Elbing, Germany (now Poland)Nationality GermanyPolitical partySocial Democratic PartyAlma materUniversity of MünsterUniversity of Hamburg Ortwin Runde (born 12 February 1944) is a German politicia...