বিদ্যুৎ একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম সঞ্চালক ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এখনো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘এনার্জি আর্কিটেকচার পারফরম্যান্স ইনডেক্স-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে বিদ্যুতের কাঠামোগত দক্ষতা সূচকে বিশ্বের ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম।[১][২] আগস্ট, ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুতের মাথাপিছু উৎপাদন হল ৪০৭ কিঃওঃআঃ,[৩] যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলংকার মধ্যে সর্বনিম্ন।[৪]বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিদ্যুৎ খাতটি 'বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে' একীভূত অবস্থায় ছিল। এই খাতের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৯৮ সালে বিদ্যুৎ খাতটিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিদ্যুৎ বিভাগে পরিণত করা হয়।[৫]
ইতিহাস
শুরুর দিকে
ঢাকায় তথা বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল বিংশ শতকের প্রথম বছর। আর এর আর্থিক সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ। ৭ই ডিসেম্বর, ১৯০১ সালে প্রথম ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুতের বাতি জ্বলে উঠে। এর পূর্বে ১৯০১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা পৌরসভা কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয় যে সকল রাস্তায় ও এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে তার নাম। পৌরসভার অধীনে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য "দি ঢাকা ইলেকট্রিক ট্রাস্টিস" নামে পরিষদ গঠন করা হয় এসময়।[৬]
স্বাধীনতার পূর্বে
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকরা চলে যাবার সময় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটি ছিল একেবারে বিচ্ছিন্ন ধরনের, এ সময় কোন দূরবর্তী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা ছিল না। কিছু সুনির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হত সে সকল এলাকায় ব্যবহারের জন্য। বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এছাড়া কিছু শিল্প (চা, চিনি এবং টেক্সটাইল) এবং রেলওয়ে ওয়ার্কশপে নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হত। অধিকাংশ জেলাগুলিতে শুধুমাত্র রাতের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ঢাকা শহর যেখানে দুটি ১৫০০ কিলোওয়াটের জেনারেটর দ্বারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ ছিল ৬৬০০ ভোল্টের। পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানীর কর্তৃক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭ (সাত) মেগাওয়াট এবং দেশের সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২১ মেগাওয়াট।[৭][৮]
১৯৪৮ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিস্থিতির পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অধিদপ্তর তৈরি করা হয়। ১৯৫৯ সালে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ওয়াপদা) তৈরি করা হয়।[৮][৯] ১৯৬০ সালে, উচ্চতর ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় (সর্বোচ্চ উচ্চক্ষমতার কেন্দ্রের আকার ছিল সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ মেগাওয়াটের স্টিম টারবাইন)। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয় ও ১৯৬২ সালে এটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২টি ৪০ মেগাওয়াটের জেনারেটর স্থাপন করা হয়, যা তৎকালীন সময়ের জন্য একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।[১০] এর পাশাপাশি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ চলে। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ এবং ঢাকা-চট্টগ্রামের ট্রান্সমিশন লাইন কমিশনিং এই দেশের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নের প্রথম মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৭] ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়ায় ৮৮ মেগাওয়াট থেকে ৪৭৫ মেগাওয়াট। যার অধিকাংশই উৎপাদিত হত প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল চালিত জেনারেটর দ্বারা, স্টিম টারবাইন জেনারেটর দ্বারা এবং জল বিদ্যুৎ থেকে।[৮]
স্বাধীনতার পর থেকে একবিংশ শতকের শুরুর আগ পর্যন্ত
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গতি প্রদান করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করা হয় এবং পল্লী অঞ্চলের বিদ্যুতায়নকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।[৭]বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সারাদেশে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলতে থাকে। বিভিন্ন শহর ও নগরীর মধ্যে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের অন্তঃ সংযোগ করা হয় ২৩০ কিলোভোল্টের ও ১৩২ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইন দ্বারা। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বপ্রথম দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনকে একসাথে সংযুক্ত করা হয়। একটি ডাবল সার্কিট ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন দ্বারা যমুনা নদীর উপর দিয়ে এই সংযোগ দেয়া হয় যা যুক্ত করে টঙ্গী ও ঈশ্বরদীতে থাকা ১৩২ কেভির ট্রান্সমিশন লাইনকে।[৮] ১৯৭২ সালের পর থেকে ১৯৯১-৯২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়ায় ২৩৫০ মেগাওয়াট।[১১] ১৯৯৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সারাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে দাঁড় করায় ২৮১৮ মেগাওয়াটে।[৮] ১৯৮৬ সালের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা ব্যাপক হারে হ্রাস পায়, এ সময় গড় সিস্টেম লস ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ, এবং গড়ে বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৬ মাসের। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় সংসদে " বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত পুনর্গঠন " রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।[৮]
১৯৯০ সাল নাগাদ সারাদেশের মোট বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হত রাজধানী ঢাকায় ও এর আশে পাশের এলাকায়। সুষ্ঠুভাবে বৃহত্তর ঢাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে অতিরিক্ত বোঝা কমাতে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকার ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) তৈরি করা হয়।[৮] বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থাকে আরো গতি প্রদান করতে ২১ নভেম্বর, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থাকে পৃথক করে একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ তৈরি করে। ১৯৯৬ সালে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় ২৩০ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৮৩৮ সার্কিট কিলোমিটার এবং ১৩২ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৪৭৫৫ সার্কিট কিলোমিটার। ২০০১ নাগাদ এটি হয়ে ওঠে ২৩০ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষেত্রে ১১৪৪ সার্কিট কিলোমিটার এবং ১৩২ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে ৪৯৬২ সার্কিট কিলোমিটার।[১২]
একবিংশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত
একবিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক উন্নয়নের গতি অনেকটাই হ্রাস পায়। সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও দাতা সংস্থা গুলো থেকে বিনিয়োগের অভাবে[১৩] ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশের জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয় মাত্র ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।[১৪] এ সময় প্রতি বছর সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের মত। ২০০৫ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ সারাদেশের লোডশেডিং এর পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট।[১৫] লোডশেডিং এর পরিমাণ ২০০৬ সালের মে মাস নাগাদ নাগাদ ১০০০ মেগাওয়াট অতিক্রম করে এবং এ সময় সান্ধ্যকালীন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৪২০০ মেগাওয়াট। সরকারি কর্মকর্তাদের মতে এই লোডশেডিং এর পরিমাণ পরবর্তী বছর নাগাদ ১ হাজার ৬২৪ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে।[১৩] এ সময় বিদ্যুতের দাবীতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় আন্দোলন ঘটেছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ গোলাম রব্বানির নেতৃত্বে বিদ্যুতের প্রকট সমস্যা সমাধানে জন্য।[১৬] একই সময় রাজধানীর শনির আখড়ায় হাজার হাজার এলাকাবাসী বিদ্যুৎ ও পানির দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে আন্দোলন করতে।[১৭]
২০০৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এসে দাঁড়ায় ৪৯৪২ মেগাওয়াট আর প্রকৃত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট (৬ই জানুয়ারি, ২০০৯)।[১৮] ২০১০ ও ২০১১ সালে দৈনিক সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫১৭৪ মেগাওয়াট ও ৪৬৯৮.৫ মেগাওয়াট। ২০১১ সালের জুন মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪,৬০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬০০ মেগাওয়াট। অবশিষ্ট ২০০০ মেগাওয়াট বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে উৎপাদিত। ২০১২ সালের মার্চ মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৮০০৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। পিডিবি ২২ মার্চ, ২০১২ তারিখে রেকর্ড ৬০৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। [১৯] ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩,১৭৯ (মার্চ ২০১৭)।[৩] আর প্রকৃত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৭১ মেগাওয়াট (২৭ মে, ২০১৭)।[২০]
২০২১ সালে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, সিস্টেম দুর্বলতা ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে দুর্নীতি অন্যতম সমস্যা।[২১]
বিদ্যুতের চাহিদা সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে বেজ লোড, ইন্টারমিডিয়েট লোড এবং পিক লোড, যার উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে।[২২]বেজ লোড সেই পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা যার নিচে বিদ্যুতের চাহিদা কখনই নামে না এবং সব সময়ই এটি সরবারহ করতে হয়। পিক লোড হল সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা, সাধারণত সারাদিনের মোট চাহিদার ১৫% হয়ে থাকে পিক লোড। বেজ লোড এবং পিক লোডের অন্তর্বর্তীকালীন লোডকে বলা হয়ে থাকে ইন্টারমিডিয়েট লোড।[২২] বিদ্যুতের চাহিদার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তৈরি করা হয়েছে। পিকিং প্ল্যান্টগুলি মূলত ওপেন সাইকেলগ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, আর বেজ লোড প্ল্যান্টগুলি পরিচালিত হয় কম্বাইন্ড সাইকেলগ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে।[২৩] সাধারণত বেজ লোডের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হয়ে থাকে কয়লা ও গ্যাস চালিত কিংবা জলবিদ্যুৎ চালিত অপরদিকে পিক লোড বা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো হতে পারে ফার্নেস অয়েল বা ডিজেল চালিত। বাংলাদেশের অধিকাংশ বেজ লোড পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সরকারি মালিকানাধীন। আর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো হল রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট যা বেসরকারী মালিকানায় পরিচালিত। ২০১০ সাল নাগাদ তরল জ্বালানি দ্বারা পরিচালিত কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দ্বারা দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫% উৎপাদিত হত, ২০১১ সাল নাগাদ যা দাঁড়ায় ১৩% এবং ২০১২ সাল নাগাদ যা ছিল ১৭%।[১১] ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ১১টি রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট ছিল গ্যাস চালিত এবং ১৭টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট ছিল।[২৪]
জ্বালানির ব্যবহার
সারা বিশ্বে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জ্বালানির মুখ্য উৎস হল জীবাশ্ম জ্বালানি তথা ফসিল ফুয়েল। জ্বালানি মধ্যে রয়েছে তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয় জলবিদ্যুৎ। এছাড়াও পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক দেশে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যান্য উৎস যেমন বায়ু শক্তি, সৌর শক্তি কিংবা জিওথার্মাল শক্তিকে কাজে লাগিয়েও অনেক দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি
প্রাকৃতিক গ্যাস
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস সহজলভ্য হওয়ায় এটি হয়ে দাঁড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রধান জ্বালানি। বিংশ শতকের শেষের দিক থেকে দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কম হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে ২০১০ সালে "পাওয়ার সিস্টেম মাষ্টার প্ল্যান ২০১০" এ প্রকাশ করা হয় ভিশন - ২০৩০। এতে বলা হয় দেশের অভ্যন্তরীণ মুখ্য জ্বালানির উৎস তৈরি করতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৫০% জ্বালানির চাহিদা মেটাতে হবে যার ২৫% হবে কয়লা, ২০% হল প্রাকৃতিক গ্যাস ও বাকি ৫% হল হাইড্রো ও নবায়নযোগ্য শক্তি।[২৫] জ্বালানি ব্যবহারের নিম্নোক্ত তালিকা থেকে দেখা যায় গ্যাস ব্যবহার হ্রাস পাওয়ার হার।
পাওয়ার সিস্টেম মাষ্টার প্ল্যান ২০১০ অনুসারে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে কয়লাকে মূল জ্বালানি হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫০% উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে কয়লা ব্যবহার করে। অপরদিকে ২০২৪ সালের মধ্যে কয়লা ব্যবহার করে দেশে প্রায় ১২,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার।[২৬]
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা শুরু হয় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারকৃত কয়লার মূল উৎস বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শুরু হয় ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২টি ইউনিট নিয়ে ২০০৬ সালে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩য় ইউনিটের কাজ শুরু হয়। আগস্ট ২০১৬ সাল নাগাদ ৩য় ইউনিটের ৪০ শতাংশের মত কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩য় ইউনিটের কাজ শেষ হলে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়াবে ৫২৫ মেগাওয়াট।[২৭]
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে সাম্প্রতিক সময়ের সবচাইতে আলোচিত ও সমালোচিত তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প হল রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি খুলনা বিভাগেরবাগেরহাট জেলাররামপাল উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারকৃত কয়লার মূল উৎস হবে ভারত থেকে আমদানি করা কয়লা। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহন করা হবে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে তা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টসুন্দরবনের পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র্যের জন্য গুরুতর ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়।[২৮] বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠন, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বিভিন্ন বাম-দল এই প্রকল্প বন্ধ করার জন্য আন্দোলন চালাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিবরিশাল বিভাগেরপটুয়াখালী জেলারকলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে নির্মিত হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির ১ম ধাপের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)-এর মধ্যে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারকৃত কয়লার মূল উৎস হিসাবে চিন্তা করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা।[২৯] ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০১৯[সম্ভাব্য] সাল হতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।[৩০]
২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়নরত বৃহৎ আকার কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তালিকা ও উৎপাদন ক্ষমতা।[১৮]
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও এর উন্নয়ন নিশ্চিত জন্য করতে ২০০৮ সালের ১৮ই ডিসেম্বর থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি কার্যকর হয়।[৩১][৩২] টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ - স্রেডা এক্ট-২০১২ প্রনয়ন করে বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস হিসাবে সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়োমাস, বায়ো ফুয়েল, জিওথার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করা হয়েছে।[৩৩] এই কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত জ্বালানির ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।[৩৪]
২০১৭ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে রূপান্তরিত বিদ্যুৎ এর পরিমাণ।[৩৫][৩৬]
জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রধানত পানির মধ্যে জমা হওয়া বিভব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জেনারেটরের সাথে যুক্ত থাকা টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কোন বস্তুর মধ্যে জমা হওয়া বিভব শক্তির পরিমাণ ভূপৃষ্ঠ থেকে বস্তুর উচ্চতার উপর নির্ভর করে। বস্তুর উচ্চতা যত বেশি, বিভব শক্তির পরিমাণ তত বেশি। জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ পানি আটকানোর বাঁধ প্রদান করা হয় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি করতে। পরবর্তীতে উঁচু স্থান থেকে ছেড়ে দেয়ায় পানির মধ্যে থাকা বিভব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
চট্রগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলারকাপ্তাই উপজেলায়কাপ্তাই বাঁধ তৈরি করা হয়। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে আমেরিকার অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৬২ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়।এ বাঁধের পাশে ১৬টি জলকপাট সংযুক্ত ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি পানি নির্গমন পথ বা স্প্রিলওয়ে রাখা হয়েছে। এ স্প্রিলওয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক ফিট পানি নির্গমন করতে পারে। কাপ্তাই বাঁধের কারণে ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি ডুবে যায় যা ঐ এলাকার মোট কৃষি জমির ৪০ শতাংশ, এর ফলে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬২ সালে এটির নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর এতে দুটি ৪০ মেগাওয়াটের জেনারেটর স্থাপন করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিটের কাজ শুরু হয়। ৩ নম্বর ইউনিটের কাজ ১৯৮২ সালে শেষ হয়। ৪র্থ ও ৫ম ইউনিটের কাজ শেষ হয় ১৯৮৮ সালে। বর্তমানে মোট পাঁচটি ইউনিট চালু আছে যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।[১০][৩৭]
বায়ুর গতিশক্তি কে কাজে লাগিয়ে জেনারেটরের টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বায়ু যখন টারবাইনের ব্লেডের মধ্যে দিয়ে যায় তখন বায়ুর গতিশক্তি ঐ ব্লেডগুলোকে ঘুরায়। আর ঐ ব্লেডগুলোর সাথে রোটর সংযুক্ত থাকে যা ব্লেডগুলোর ঘূর্ণনের ফলে সক্রিয় হয়। এই রোটর জেনারেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে যার ঘূর্ণনের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হয় ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীতে অবস্থিত মুহুরী প্রজেক্টে। মুহুরী প্রজেক্ট হল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। ফেনীর মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ছয় একর জমির উপর স্থাপিত এটি। মুহুরী প্রজেক্ট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০০৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অবস্থিত ৪টি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াট (০.৯) বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।[৩৮][৩৯]
২০১৭ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলারকুতুবদিয়ায় চালু হয় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ু চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ৫০টি টারবাইন দ্বারা ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।[৪০] বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত নয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আশে পাশের প্রায় ৫৫০ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। [৪১][৪২] সমুদ্র সৈকতর দক্ষিণে আলী আকবরের ডেল এলাকায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবস্থিত। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নে ৬০ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অবস্থিত। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই লক্ষ্যে পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৫ মে। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
২০২৩ সালের ২৪ মে হতে এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংযুক্তের কাজ শুরু হয়েছে। লাইনটি কক্সবাজার সদরের খরুশকুল-চৌফলদন্ডি-পিএমখালীর উপর দিয়ে ঝিলংজা বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্রে সংযুক্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ২২টি টারবাইনের সবগুলো চালু হলে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এই কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম হবে শূন্য দশমিক ১২ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুশক্তি হতে ১৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে বায়ু শক্তি উৎস হতে মোট ১১৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত নয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত উৎপাদনে যাওয়া ২১১.৪৬ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুতের মধ্যে ২০১.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতই
জাতীয় গ্রীডের বাইরে। এর মধ্যে রয়েছে ৪৫ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম যার পরিমাণ প্রায় ১৭৮.৮৬ মেগাওয়াট। আরো রয়েছে প্রায় ৫০০টি সোলার পাম্প যাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ৬.৪৩ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ।[৪৩] বাংলাদেশে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৫৫০টি সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপনের পরিকল্প্না গ্রহণ করেছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিঃ।[৪৪]
পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন একাধারে যেমন সাশ্রয়ী আবার একই সাথে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের খরচ অত্যন্ত ব্যয় বহুল। এ ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক বর্জ্য জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। রাশিয়া এ প্রকল্পের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বর্তমানে ৩১টি দেশে ৬৭টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।[৪৫] বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে পাবনা জেলারঈশ্বরদী উপজেলার অন্তর্গত পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে "রাশিয়ান ফেডারেশনের এটমস্ট্রোয় এক্সপোর্টের" সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি ইউনিটের কাজ শেষ হবে। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৪০০ মেগাওয়াট। প্রথম ইউনিটের কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হবে আগস্ট ২০১৭ থেকে এটির ফুয়েল লোডিং এর কাজ শুরু হবে অক্টোবর ২০২২ সালে, এটি প্রথম বারের মত পাওয়ার আপ করা হবে ডিসেম্বর, ২০২২ সালে, এটির অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে অক্টোবর ২০২৩ সালে এবং পূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে অক্টোবর ২০২৪ সালে।[৪৬]
সিস্টেম লস
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম একটি সমস্যা হল সিস্টেম লস। সিস্টেম লস দু কারণে হতে পারে একটি হল ডিস্ট্রিবিউশনের কারণে লস আরেকটি হল ট্রান্সমিশনের কারণে লস।[৪৭] বাংলাদেশের সিস্টেম লসের বিগত কয়েক বছরের সামগ্রিক চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারী কমিশন। ১৩ই মার্চ, ২০০৩ সালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারী কমিশন আইন পাশের মাধ্যমে এটি গঠিত হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারী কমিশন কর্তৃক ২০১৫ সালের ২৭ই আগস্ট সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম পুনঃ নির্ধারিত হয়।[৪৮][৪৯] এ ক্ষেত্রে পিক আওয়ার হিসাব করা হয় বিকাল ৫ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবারহের সাথে জড়িত সংস্থাগুলো ২০১৭ সালে আরেকবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা করেছে।[৫০] ২০১৫ সালে মোট দশটি ভাগে ভাগ করা সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্য তালিকাটি নিম্নে প্রদান করা হলঃ
বাংলাদেশের বিদ্যুতের মূল্য তালিকা (১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ থেকে কার্যকর)[৫১]
↑মুনতাসীর, মামুন (ডিসেম্বর, ১৯৯৬।)। ঢাকা সমগ্র ২, (বিদ্যুৎ বাতি)। সাহিত্যলোক, ৩২/৭ বিডন স্ট্রীট, কলিকাতা, ৭০০০০৬।: নেপালচন্দ্র ঘোষ। পৃষ্ঠা পৃ: ৬৯ – ৭২।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
↑ কখগ"ইতিহাস"। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে http://www.bpdb.gov.bd/। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৮-মে-২০১৭।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
↑ কখবাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র(পিডিএফ)। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নায়ন বোর্ড। ২০১০। পৃষ্ঠা ১। ২৬ মে ২০১২ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৭।