বাংলাদেশে পরিচিত অপরিচিত অনেক পর্যটক-আকর্ষনীয় স্থান আছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য,বিস্তীর্ণ হাওর, চা বাগান সহ ইত্যাদি অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত । বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে বাংলাদেশেরকক্সবাজার।বাংলাদেশে রয়েছে একমাত্র পাহাড়ঘেরা দ্বীপ মহেশখালিসহ আর ও অনেক আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সমস্যাসমূহ
বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অসুবিধা ছাড়াও, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকরা উদ্বিগ্ন থাকেন। এছাড়া পর্যটন শিল্পের প্রচার এবং প্রসারের জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয়ের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকরা ছিনতাইসহ নানা রকমের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিশেষত নারী ও বিদেশি পর্যটকরা বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। দিনের বেলায় ফেরিওয়ালাদের উৎপাত ছাড়াও পর্যটন স্পটে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের কারণে পর্যটকেরা অনুৎসাহিত হন। এছাড়াও পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় অনেকেই অনাগ্রহী ও অনুৎসাহী হয়।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। নতুন করে কৌশল ঠিক করে সম্ভাবনার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটনে মডেল হতে পারে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটক আকর্ষণে যে বৈচিত্র্য তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্প আজ বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের অনেকখানি সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সফল হবে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রাচীন যুগের ইতিহাস ও শিল্প, সাহিত্য, কালচার ও প্রথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্যও পর্যটকরা নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে দূর-দূরান্তে ছুটে চলে প্রতিনিয়ত। পর্যটন হলো একটি বহুমাত্রিক শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি অনুদান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় সাধন করার পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা দরকার পর্যটনের জন্য। পর্যটন শিল্পের উপাদান ও ক্ষেত্রগুলো দেশে ও বিদেশে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের অধিকতর বিকাশ ঘটানো সম্ভব।[১][২][৩][৪]
পতেঙ্গা সৈকত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। পতেঙ্গা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌ একাডেমী এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সন্নিকটে।
রাতের বেলা এখানে নিরাপত্তা বেশ ভালো এবং রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো থাকে। স্থানীয় লোকের মতে, এখানে সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবার অত্যন্ত সস্তায় পাওয়া যায়। তেমনি একটি জনপ্রিয় খাবার হল,মসলাযুক্ত কাঁকড়া ভাজা, যা শসা ও পিঁয়াজের সালাদ সহকারে পরিবেশন করা হয়। সন্ধাকালে সৈকতে চমৎকার ঠাণ্ডা পরিবেশ বিরাজ করে এবং লোকজন এখানকার মৃদু বাতাস উপভোগ করে। পুরা সৈকত জুড়ে সারিবদ্ধ পাম গাছ আছে। অসংখ্য মাছ ধরার নৌকা এখানে নোঙ্গর করা থাকে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য স্পীডবোট পাওয়া যায়। অধিকাংশ পর্যটক পতেঙ্গা সৈকতে আসে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।
ফয়েজ লেক মানব সৃষ্ট একটি খাল যা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশে অবস্থিত। এটি শহরের উত্তরাংশের পাহাড়ী ঢালের পানি প্রবাহকে বাধের মাধ্যমে আটকিয়ে খালটি ১৯২৪ সালে নির্মাণ করা হয় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। রেলওয়ে কলোনির অধিবাসিদের পানির সুবিধা প্রদানের উদ্দেশে। পরে এটির নাম রেলওয়ে প্রকৌশলী মি. ফয় এর নামানুসারে ফয়'জ লেক নামে পরিচিতি পায়। পাহারতলী মুলত চট্টগ্রামের একটি রেল এলাকা, যেখানে কারখানা, শেড আছে। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেলওয়ে কর্মচারী বাস করে। বর্তমানে এখানে, বগি ওয়ার্কশপ, ডিজেল ওয়ার্কশপ,, লোকো শেড, পরীক্ষাগার, ভাণ্ডার, ইলেকট্রিক ওয়ার্কশপ, একটি স্কুল (স্থাপিত- ১৯২৪) অবস্থিত।
এটি রেলওয়ের সম্পত্তি। যাইহোক, বর্তমানে হ্রদটি কনকর্ড গ্রুপের বাবস্থয়াপনায়, চিত্তবিনোদন পার্ক হিসেবে আছে। [৫]
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতগুলোর একটি হচ্ছে কক্সবাজার। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণে আসছে। কক্সবাজার সৈকতে গেলে দেখা যায় অভাবনীয় দৃশ্য। হাজার হাজার নারী-পুরুষ শিশুর অপূর্ব মিলনমেলা। তাদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত সাগর তীর। ভাটার টানে লাল পতাকার সতর্ক সংকেত না মেনে আবেগ আর উচ্ছ্বাসে মেতে সমুদ্রের পানিতে নেমে দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে অনেক পর্যটক।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পানিতে ডুবে প্রাণহানির ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য নেটিং ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেয়া হলেও এ পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। শহরের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল নিধন, সরকারি খাসজমি দখল করে অবৈধ ইমারত গড়ে ওঠার কারণে পর্যটন শহর এখন শ্রীহীন। তবুও কক্সবাজারের টানে পর্যটকরা আসছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, ইনানিতে পাথরের সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ির ঝরনা, ডুলহাজারা সাফারিপার্কসহ কক্সবাজার জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে।
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল,শামুক-ঝিনুক, সামুদ্রিক শৈবাল, গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, সামুদ্রিক মাছ, উভচর প্রাণী ও পাখি দেখা যায়।
দ্বীপটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন তিনটি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড (টেকনাফ) হতে আসা যাওয়া করে। এছাড়া টেকনাফ থেকে স্পীডবোটও চলাচল করে।
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা
চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলার অন্তর্গত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। এখানে পর্যটক আকৃষ্ট অনেক কিছু দেখার আছে। বিশেষত কাপ্তাই হ্রদ যা, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত বাঁধের দ্বারা সৃষ্ট। এই হ্রদের স্বচ্ছ ও শান্ত পানিতে নৌকা ভ্রমণ অত্যন্ত সুখকর । হ্রদের উপর আছে ঝুলন্ত সেতু। জেলার বরকল উপজেলার শুভলং-এর পাহাড়ি ঝর্ণা ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ভরা বর্ষামৌসুমে মূল ঝর্ণার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে।[৬] এছাড়া, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ এলাকা।
মিনি কক্সবাজার বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায়রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নেপদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি নদীকেন্দ্রীক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এর চারদিকে নদী হওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো দেখায় তাই পর্যটকরা এর নাম দিয়েছে মিনি কক্সবাজার। তিন নদীর মোহনা একসাথে মিলিত হওয়ায় সেখানে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক ভাবে পর্যটকদের নদীতে ঘুরতে হলে কিংবা নদীতে নামতে হলে অনেক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।বাংলাদেশের ইলিশের জন্য চাঁদপুর বিখ্যাত একটি নাম। বালু চর, পদ্মার চর ও মেঘনার চর নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। বেসরকারিভাবে ‘স্বপ্ন ট্যুরিজম’ এ পর্যটন কেন্দ্রটি পরিচালনা করে।
চাঁদপুর ত্রি-নদীর মোহনা বড় স্টেশন চাঁদপুর
চাঁদপুর ত্রি-নদীর মোহনা হলোবাংলাদেশের জেলা চাঁদপুর এর রুপালি ইলিশ চাঁদপুরকে এনে দিয়েছে ‘ইলিশের বাড়ি’ নামের সুখ্যাতি। ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। ফলে তাজা ইলিশের স্বাদ নিতে এবং অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক চাঁদপুরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভিড় করেন। চাঁদপুর ঘুরতে গিয়ে বড় স্টেশনে আসেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলটি মোলহেড নামেও পরিচিতি লাভ করেছে। তিন নদীর মোহনায় সূর্যাস্তের দৃশ্য, ছোট ছোট নৌকার ভেসে চলা, নদীর কূলে পানি আছড়ে পড়ার শব্দ অন্যরকম এক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে, যা মনে দাগ কেটে থাকে।
এই সাজেক উপত্যকায় রয়েছে দুটি পাড়া - রুইলুই এবং কংলাক। ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেক "রাঙামাটির ছাদ" নামেও পরিচিত।
নিজুম দ্বীপ, নোয়াখালী
দ্বীপদেশ না হলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশের আঙ্গিনার চরগুলো এই অভিজ্ঞতার ষোল আনাই পূরণ করতে পারে। আজকের আয়োজনে থাকছে সেরকম একটি অকৃত্রিম জায়গা নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের নানা দিক।
নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভির চর- এই চার চর নিয়ে পুরো নিঝুম দ্বীপ।
প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে ১৯৪০ সালে। তারও প্রায় এক দশক পড় গড়ে ওঠে জনবসতি। দ্বীপটিকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। ২০১৩ সালে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায় নিঝুম দ্বীপ।
নাফাখুম জলপ্রপাত, বান্দরবান পার্বত্য জেলা
নাফাখুম জলপ্রপাত বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত। একে বাংলার নায়াগ্রাও বলা হয় কারণ পানি প্রবাহের পরিমানের দিক থেকে এটিকে বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত। নাফাখুম দেখতে থানচি বাজার থেকে সাঙ্গু নদী পথে নৌকা দিয়ে রেমাক্রি যেতে হয়। রেমাক্রীতে রয়েছে মারমা বসতি, মারমা ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। রেমাক্রী থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা পায়ে হাটলে তবেই দেখা মিলে প্রকৃতির এই অনিন্দ্য রহস্যের। রেমাক্রী খালের পানি নাফাখুমে এসে বাক খেয়ে প্রায় ২৫-৩০ ফুট নিচের দিকে নেমে গিয়ে প্রকৃতি জন্ম দিয়েছে এই জলপ্রপাতের।
কেওক্রাডং পাহাড়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা
কেওক্রাডং (Keokradong) পাহাড় বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় ৩১৭২ ফুট উঁচু এ পর্বতকে এক সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মনে করা হত কিন্তু আধুনিক পদ্ধতিতে পরিমাপে বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসাবে এর অবস্থান পঞ্চম। কেওক্রাডং নামটি এসেছে স্থানীয় আদিবাসী মারমাদের থেকে। কেওক্রাডং বা কেওকাড়াডং বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বান্দরবানে অবস্থিত। এক সময় এটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ধরা হত। তবে আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল বলে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ হল তাজিংডং।
রিছাং ঝর্ণা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা
রিছাং ঝর্ণা (সাপ মারা রিসাং ঝর্ণা নামেও পরিচিত) খাগড়াছড়ি জেলায়মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে অবস্থিত একটি পাহাড়ি ঝর্ণা। খাগড়াছড়ি শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। এই ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। রিছাং শব্দটি এসেছে খাগড়াছড়ির মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা থেকে । মারমা ভাষায় রিং শব্দের অর্থ পানি আর ছাং এর অর্থ উঁচু স্থান হতে কোনো কিছু গড়িয়ে পড়াকে বুঝায় । অর্থাৎ রিছাং শব্দ দ্বারা উঁচু স্থান হতে জলরাশি গড়িয়ে পড়াকে বুঝায় ।এর অপর নাম তেরাং তৈকালাই।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বনভূমি গঙ্গা ও রূপসা নদীর মোহনায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূল তথা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। ২০০ বছর পূর্বে সুন্দরবনের প্রকৃত আয়তন ছিলো প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কিলোমিটার যা কমে এখন ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। এই সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ সীমানায়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দেয়ায় সুন্দরবন এখন বিশ্ব মানবতার সম্পদ। ধারণা করা হয় সুন্দরী গাছের নামানুসারেই সুন্দরবনের নাম করন হয়েছে। এই বনে সুন্দরী গাছ ছাড়াও, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, গড়ান, আমুরসহ ২৪৫ টি শ্রেণী এবং ৩৩৪ প্রজাতির গাছ রয়েছে। পৃথিবীতে মোট ৩টি ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবন সর্ববৃহৎ। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীব-বৈচিত্র্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবহমান কাল ধরে আর্কষন করে আসছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, খালের পাড়ে শুয়ে থাকা কুমির এবং বানরের দল পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ করে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। ধারণা করা হয়,১৫শ শতাব্দীতে খান-ই-জাহান এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে। [৭]
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮•৫ ফুট পুরু।
মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মত। বাকি ৭০টি গম্বুজ আধা গোলাকার।[৮]
কুয়াকাটাবাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। কুয়াকাটা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত। বরিশাল বিভাগের শেষ মাথায় পটুয়াখালী জেলারকলাপাড়া উপজেলারলতাচাপলী ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণে এ সমুদ্রসৈকত। দৈর্ঘ্য ১৮ কিমি এবং প্রস্থ ৩ কিমি। [৯][১০]পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে কুয়াকাটা অবস্থিত। ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার, বরিশাল থেকে ১০৮ কিলোমিটার।
পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা "সাগর কন্যা" হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়, সব চাইতে ভালোভাবে সূর্যোদয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির বাঁক থেকে আর সূর্যাস্ত দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা। বর্তমানে সমুদ্রের করাল গ্রাসে প্রশস্ততা কিছুটা কমেছে। কুয়াকাটা পরিচ্ছন্ন সৈকত আর কক্সবাজারের চেয়ে অনেক কম কোলাহল। যারা একটু নিরিবিলি সৈকত পছন্দ করেন তাদের জন্য বেড়ানোর আদর্শ জায়গা কুয়াকাটা। সৈকত ঘেঁষেই আছে সারি সারি নরিকেল বাগান। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ সমুদ্রের ঢেউ। ঢেউগুলো যখন এসে পায়ের ওপর আছড়ে পড়ে, তখন স্নিগ্ধতা মন ছুঁয়ে যায়। [১০] কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে রয়েছে আকর্ষণীয় স্থান গঙ্গামতির চর। সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার জিরোপয়েন্ট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্বদিকে গড়ে তোলা হয়েছে পরিকল্পিত ইকোপার্ক। ৭০০ একর জায়গাজুড়ে এ পার্কটি অবস্থিত। এ পার্কের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধনকারী ৪২ হাজার বৃক্ষ রয়েছে।
তারুয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের ভোলা জেলারচরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। জেলা সদর থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। একশত পয়ত্রিশ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনের কিলোমিটার নৌ-পথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন বিশাল সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশি, নানা ধরনের পাখিদের কল-কাকলি, বালুকাময় মরুপথ অার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছায়াঘন মনকাড়া নিবিঢ় পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ, বৈচিত্রময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছেন। বর্তমানে তরুয়া বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আবহমানকাল ধরে।
থেকে হাওরটির উৎপত্তি হয়েছে। নিকলী ছাড়াও এই হাওরের পরিধি পার্শ্ববর্তী মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১১০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি ও জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। ঢাকার সাথে সহজ সড়ক ও রেল যোগাযোগ এই হাওরের পর্যটন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিকলীতে একাধিক আবাসিক হোটেল গড়ে উঠায় পর্যটকরা এখন একাধিক দিন হাওর ভ্রমণের সুবিধা পাচ্ছে। বর্ষায় এই হাওর যখন পানি দ্বারা পূর্ণ হয় তখন ব্যাপক হারে পর্যটক বৃদ্ধি পায়
সোনারগাঁও জাদুঘর, নারায়ণগঞ্জ জেলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত এই জাদুঘর। গ্রামবাংলার লোক সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’, যা সোনারগাঁও জাদুঘর নামে পরিচিত। নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও একটি প্রাচীন জনপদ, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষা বিধৌত এ জনপদটির অবস্থান ও বয়স কতোদিনের এ বিষয়ে গবেষনার যথেষ্ট দাবী রাখলেও এ কথাটি অস্বীকারের জো নেই যে সোনারগাঁও সভ্যতার বয়স ইতোমধ্যে দেড় সহস্র বছর পেরিয়ে গেছে। উয়ান চুয়াং এর মতো বিশ্বখ্যাত চৈনিক পন্ডিত এবং তিববতীয় ইতিহাস প্যাগ সাম জ্যাং জং এর ধারনানুসারে তৎকালীন সুবর্ণগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য পরিচয় বিধৃত আছে প্রাক সোনারগাঁয়ের ইতিহাসে। সুবর্ণগ্রাম বা আধুনিক সোনরগাঁয়ের ভিত্তী যদিও গড়ে উঠেছে হিন্দুশাহী প্রশাসনিক কেন্দ্র বিক্রমপুরের পতনের পর তারপরেও বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র স্বাক্ষ্য দেয় যে, প্রাক সুলতানি যুগে সুবর্ণগ্রাম একটি আভ্যন্তরীন আর্ন্তজাতিক নদী বন্দর হিসেবে এর অস্তিত্ব এ উপমহাদেশের পরিধি ছাপিয়েও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপ্ত হয়েছিল। বৈদিক যুগে গ্রীক নাবিক ও ব্যবসায়ীদের যে প্রাচীন নিম্নবঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের তটরেখা বরাবর সমৃদ্ধ নগরীও বানিজ্য বন্দর গুলোতে পদচারনা ছিল তার পরিচয় কিন্তু মিলে অজানা গ্রীক নাবিকদের লেখা ‘‘পেরিপ্লাস’’ গ্রন্থ থেকে। পেরিপ্লাস গ্রন্থের অজানা নাবিকেরা ব্রহ্মপুত্রের তট বেয়ে এ অঞ্চলে যাতায়াত ছিল মূলত এ বদ্বীপের সমৃদ্ধ বস্ত্র শিল্পের জন্য। ঐতিহাসিক ও বিদগ্ধ পন্ডিতদের ধারনা নিম্নবঙ্গের বিশেষ করে সুবর্ণগ্রামের পৃথিবীখ্যাত চারু ও কারু শিল্প জাত দ্রব্যাদির জন্যই এখানে আসা বিচিত্র কিছুই ছিল না গ্রীক নাবিকদের। হিন্দু পুরানের রানী কৈকিয়ির আব্দার ছিল সুবর্ণগ্রামের সুক্ষ্ম বস্ত্রের জন্যে। মিথই বলি আর ইতিহাসই বলি এ সমস্ত ঘটনার সূত্রপাত খৃস্টপুর্বকাল থেকেই । কাজেই একথাটা বলা যায় খৃষ্টপূর্বকালের বদ্ধীপের এই নিম্নভূমি ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করেছিল। আরেকটি সূত্র স্বাক্ষ্য দেয় সুগন্ধিজাত মশলা রপ্তানিতেও সুবর্ণগ্রাম বন্দর নগরীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। চারু ও কারু শিল্প বিকাশের জন্যে যে উর্বর ভূমির প্রয়োজন ছিল তার প্রকৃষ্ট স্বাক্ষী হলো ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলিবাহিত সমভূমি। প্রাচীন বৌদ্ধ দোহার সুক্ষ্ম কার্পাসিক বস্ত্র যে কার্পাস থেকে উৎপত্তি হতো তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রাচীন চর্য্যাপদের ভাষায় সোনারগাঁও অঞ্চলের ভূমি বর্তমানে কাপাসিয়া অঞ্চলকেই বুঝাই একথাও স্বীকার্য্য। বর্তমান নিবন্ধে সোনারগাঁও অঞ্চলের কথা যে স্থানকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে প্রাচীনত্বের সীমানায় তার পরিধি বিশাল এলাকা জুড়ে। বর্তমানের সংকুচিত ইতিহাসের সোনারগাঁও, সোনারগাঁও উপজেলা কেন্দ্রিক বৃত্তাবদ্ধ হয়ে পরেছে। প্রাচীনত্বের বিশাল সোনারগাঁয়ের লুপ্ত চারু-কলা লোকশিল্পের বিস্তারিত বিবরন উদঘটন করা সময় সাপেক্ষ এবং সুচিন্তিত বাস্ত্তনিষ্ট গবেষনার ব্যাপার। বর্তমান প্রবন্ধে প্রাচীনত্বের সোনারগাঁয়ের বিশালত্বকে বিসর্জন দিয়ে শুধু উপজেলা ভিত্তীক গবেষনা সীমাবদ্ধতার জন্যে নিবন্ধকার ক্ষমাপ্রার্থী। সোনারগাঁয়ের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা সোনারগাঁও অঞ্চলের লোকশিল্পকে তুলে আনা সময় সাপেক্ষ এবং একটি পূর্নাঙ্গ গবেষনার বিষয়। একথা স্মরণ রাখতে হবে যে, সোনারগাঁও শুধু প্রশাসনিক গুরুত্ব ও রাজধানী হবার কারনেই বিখ্যাত হয়ে উঠেনি। সোনারগাঁও সুবিখ্যাত হয়েছিল অর্থনৈতিক প্রাচুর্য্য, ভূমি বিন্যাস, কৃষি কৌমজাত উপকরনাদি নির্মাণ ও তার নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্যেই। সোনারগাঁয়ের প্রাচুর্য্য ও সমৃদ্ধতার উৎস ছিল তার নিজস্ব উর্বর ভূমি ও এলাকার দক্ষ চারু-কারু শিল্পীদের উৎপাদিত শিল্পকর্মের জন্যে। পরবর্তীকালে সোনারগাঁয়ের এ সমৃদ্ধ ধারাকে আত্মস্থ ও ধাতস্ত করে ঢাকার সমৃদ্ধ চারু ও কারু শিল্প গড়ে উঠে। এর পশ্চাৎভূমি ছিল সোনারগাঁ অঞ্চলের বিখ্যাত লোকশিল্প। এ লোকশিল্পের ক্ষীয়মান ধারার উত্তরসূরী আমরাই। আমরা এর ধারাবাহিকতার সাথে একাত্ম হতে না পারলেও স্মরণাতীত কালের সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প হাজার বছর ধরে আমাদের অনুপ্রেরনা যোগাবে। প্রত্যাশা রইল সোনারগাঁয়ের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প গবেষনায় এগিয়ে আসবে। গবেষনা হলে তথ্যাদি প্রকাশ পেলে সোনারগাঁয়ের লুপ্ত ইতিহাস আরো বর্নাঢ্য হবে। মঙ্গল আলোকে উদ্ভাসিত হবে লোক ও কারু শিল্পের চিরায়ত নান্দনিকতার ইতিহাস।
টাঙ্গাইল ২০১ গম্বুজ মসজিদ
২০১ গম্বুজ মসজিদ হলো বাংলাদেশেরটাঙ্গাইল জেলারগোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ হিসাবে স্বীকৃত। মসজিদটির নকশা করা হয়েছে ২০১টি গম্বুজ ও ৯টি মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে। মসজিদটি নির্মাণাধীন রয়েছে।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান, টাঙ্গাইল
মধুপুর জাতীয় উদ্যানবাংলাদেশের অন্যতম একটি জীববৈচিত্র্যপূর্ণ উন্মুক্ত উদ্যান। টাঙ্গাইলেরমধুপুর উপজেলায় অবস্থিত এই বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা দেয়া হয় ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে। নিসর্গপ্রেমীদের কাছে মধুপুরের জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের অনেক স্থান থাকলেও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়ের শালবন একটি ঐতিহাসিক স্থান। বিশেষ করে মে মাসে শালের জীর্ণ পাতারা ঝরে পড়ে নতুন পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয়। চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ ও বনের অভ্যন্তরে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও লতা-গুল্ম মন ভরিয়ে দেয়। তখন বনের মধ্যে এখানে সেখানে থাকে বেগুনী রঙ্গের জারুল বৃক্ষের মনকাড়া ফুলের বাহার। তবে জুন মাস এলেই সেই দৃশ্যপট পাল্টিয়ে শালবনটি ঘন জঙ্গলে রূপ নেয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আয়তন ২০,৮৪০ একর। প্রধান ফটক দিয়ে বনের মধ্যে ঢুকলে চোখপড়ে শুধু শালবন আর সবুজের সমারোহ। বনের অভ্যন্তরে আছে নানান জাতের, নানা বাহারের গাছ-গাছরা, যেমন-শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বথ, বট সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, আজুকি/হারগাজা, বেহুলা ইত্যাদি। আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ী আলু, শটি; আছে নাম না জানা বিচিত্র ধরণের লতা-গুল্ম। দর্শনীয় প্রাণীদের মধ্যে আছে অসংখ্য বানর, হনুমান, আছে নানান জাতের পাখ-পাখালি, হরিণ, বন বিড়াল, বনমোরগ, বাগডাসা ইত্যাদি। বনের ঠিক মাঝখানে আছে একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। লহরিয়া বিট অফিস সংলগ্ন এই কেন্দ্রে দেখতে পাওয়া যায় চোখ জুড়ানো চিত্রা হরিণের বিচরণ। সেখানেও হনুমানের সমারোহ সকলকে মুগ্ধ করবেই। পাশেই সু-উচ্চ টাওয়ারে উঠলে মধুপুর পার্কের অভ্যন্তরে সবুজ বৃক্ষ-রাজী দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুগ্ধ হতে হয়। সেখান থেকে দোখলা রেস্ট হাউজের দিকে রওনা হলে রাস্তার দু’পাশে দেখা যায় সবুজ শাল বন আর নানান প্রজাতির বৃক্ষরাজি। সেখানে নেই কোন জনারাণ্য। আছে শুধু শুনশান নিরবতা আর পাখ-পাখালির কলরব। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেট থেকে দোখলা রেস্ট হাউজ পর্যন্ত দুরত্ব প্রায় ১০ কিঃ মিঃ। সড়কপথে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশের প্রধান যানবাহন গাড়ি। আশেপাশে বনের অন্যান্য স্থানে ঘুরলে আরও খানিকটা পথ পারি দিতে হয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আশেপাশের এলাকাগুলো আদিবাসী অধ্যুসিত গ্রাম। জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ময়মনসিংহ বন বিভাগের রসুলপুর রেঞ্জ কার্যালয় অবস্থিত। উহার পাশেই আছে জলই রেস্ট হাউজ ও মহুয়া কটেজ। মধুপুর বনের অভ্যন্তরের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সবুজ অরণ্যের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পরিবেশ নৈসর্গিক। ইট বিছানা রাস্তায় চলতে চলতে রাস্তার দুধারে সবুজ বন-বনানীর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মন হারিয়ে যায় কোলাহলমুক্ত একটি নীরব-নিথর বনবিথির মাঝে।
লালবাগের কেল্লাবাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। সম্রাট আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে লালবাগ কেল্লা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রাসাদ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তৎকালীন লালবাগ কেল্লার নামকরণ করা হয় আওরঙ্গবাদ কেল্লা বা আওরঙ্গবাদ দুর্গ। পরবর্তীতে সুবাদার শায়েস্তা খাঁনের শাসনামলে ১৬৮৪ খিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে দুর্গটি পরিত্যাক্ত হয়। সে সময়ে নতুন ভাবে আওরঙ্গবাদ কেল্লা বাদ দিয়ে লালবাগ কেল্লা নামকরণ করা হয়। যা বর্তমানে প্রচলিত।
বর্তমানে ( প্রেক্ষিত ২০১২ ) বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই কেল্লা এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।
প্রশস্ত এলাকা নিযে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-
আহসান মঞ্জিলপুরনো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৭২ সাল। ১৯০৬ সালে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিষ্ঠাতাকাল ১৮৭২। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে তখনকার জামালপুর পরগনার (বর্তমান ফরিদপুর-বরিশাল) জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ রংমহল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর জমিদারের ছেলে শেখ মতিউল্লাহ এটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করেন।
১৮৩৫ সালের দিকে বেগমবাজারে বসবাসকারী নবাব আবদুল গনির বাবা খাজা আলীমুল্লাহ এটা কিনে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৮৭২ সালে নবাব আবদুল গনি নতুন করে নির্মাণ করে তার ছেলে খাজা আহসানউল্লাহর নামে ভবনের নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। এই ভবনটি ১৮৮৮ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আহসান মঞ্জিলই ঢাকার প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য। যেখানে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা হয় নবাবদের হাতে। মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের সবসময়ই আকৃষ্ট করত। লর্ড কার্জন ঢাকায় এলে এখানেই থাকতেন। বাংলাদেশ সরকার আহসান মনঞ্জিলকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে। ১৯৯২ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা ৪ হাজার ৭৭। এই রংমহলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ১৯০৪ সালের আলোকচিত্রশিল্পী ফ্রিৎজকাপের তোলা ছবি অনুযায়ী ৯টি কক্ষ সাজানো হয়েছে। [১১]
শহীদ মিনারভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত।
প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা সম্পন্ন করে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর। মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেক বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি।
অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে।[১২]
শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও এটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত শহীদ মিনার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে।[১৩]
জাতীয় সংসদ ভবনবাংলাদেশেরজাতীয় সংসদের প্রধান ভবন। এটি ঢাকার শেরে-বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত। প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই কান এটির মূল স্থপতি।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আটটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের অধিবেশনগুলি অনুষ্ঠিত হয় পুরনো সংসদ ভবনে, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) জন্য আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬১ সালে। ১৯৮২ সালের ২৮শে জানুয়ারি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর একই বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম (এবং শেষ) অধিবেশনে প্রথম সংসদ ভবন ব্যবহৃত হয়। তখন থেকেই আইন প্রণয়ন এবং সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূল কেন্দ্র হিসাবে এই ভবন ব্যবহার হয়ে আসছে। লুই কান কমপ্লেক্সের অবশিষ্ট অংশের ডিজাইন করেন। জাতীয় সংসদ ভবন জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের একটি অংশ। কমপ্লেক্সের মধ্যে আরো আছে সুদৃশ্য বাগান, কৃত্রিম হ্রদ এবং সংসদ সদস্যদের আবাসস্থল।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।[১৪]
এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিল।
শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, চীন, তিব্বত, মায়ানমার ( তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন।
খ্রিষ্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।
৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে হিউয়েন ৎসাং পুন্ড্রবর্ধনে আসেন ও তার বিস্তারিত বিবরণে সোমপুরের বিহার ও মন্দিরের কোন উল্লেখ নেই।
গোপালের পুত্র ধর্মপাল (৭৮১ - ৮২২ খ্রি) সিংহাসনে আরোহণ করে দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন ও রাজ্যকে বাংলা বিহার ছাড়িয়ে পাকিস্তানের উত্তর - পশ্চিম সীমান্তের গান্ধার পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। সম্রাট ধর্মপাল অনেক নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ ছিলেন ও তিনিই বিক্রমশীলা ও সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। অন্য মতে, বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাস গ্রন্থ "পাগ সাম জোন ঝাং" এর লেখক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০)কর্তৃক সোমপুরে নির্মিত বিশাল বিহার ও সুউচ্চ মন্দিরের উল্লেখ করেছেন।
সোমপুর বিহারের ভিক্ষুরা নালন্দা, বুদ্ধগয়া প্রভৃতি ভারতীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে অর্থ ও ধন রত্ন দান করতেন বলে বিভিন্ন লিপিতে উল্লেখ করা আছে যা ১০ - ১১শ শতাব্দীতে সমৃদ্ধশীল অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে।
পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থানগড়) এবং অপর শহর কোটিবর্ষ (বর্তমান বানগড়)এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তর্গত নওগাঁ জেলারবদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। অপর দিকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব পশ্চিমদিকে মাত্র ৫ কিমি।
এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত, প্লাইস্টোসীন যুগের বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাটি লালচে। অবশ্য বর্তমানে এ মাটি অধিকাংশ স্থানে পললের নিচে ঢাকা পড়েছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উচুতে অবস্থিত পাহাড় সদৃশ স্থাপনা হিসেবে এটি টিকে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন একে 'গোপাল চিতার পাহাড়' আখ্যায়িত করত। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর, যদিও এর প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এটি প্রত্ন সংগ্রহে সমৃদ্ধ। এই প্রত্ন সংগ্রহশালাটি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এটি পরিচালনা করে থাকে।[১৫][১৬][১৭] বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী মহানগরের কেন্দ্রস্থল হেতেম খাঁ-তে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্র এবং রাজশাহী কলিজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য আবদান রয়েছে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তারা বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। ঐ বছরে তারা রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। এই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য শরৎ কুমার রায়ের দান করা জমিতে জাদুঘরটির নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে। একই বছরের ১৩ নভেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা জাদুঘর অকস্মাৎ এতে সংরক্ষিত সকল নিদর্শন দাবি করে বসে। তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেলের প্রচেষ্টায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে জারীকৃত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরেন্দ্র জাদুঘরকে এর নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যপারে স্বাধিকার প্রদান করা হয়
বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারেরও অধিক। এখানে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মহেনজোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, খিষ্ট্রীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধু মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তি সহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরের অমূল্য সংগ্রহের অন্তর্ভুত। মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা বিশেষ ভাবে উল্যেখয়োগ্য। এখানে প্রায় ৫০০০ পুঁথি রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পযর্ন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এখানে রয়েছে। নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে উদ্ধারকৃত ২৫৬টি ঐতিহাসিক সামগ্রী রয়েছে।
বাঘা মসজিদরাজশাহী জেলা সদর হতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘা উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। সুলতান নাসিরউদ্দীন নসরাত শাহ ১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। [১৮]
মসজিদটি ১৫২৩-১৫২৪ সালে (৯৩০ হিজরি) হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নসরাত শাহ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদের সংস্কার করা হয় এবং মসজিদের গম্বুজগুলো ভেঙ্গে গেলে ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদে নতুন করে ছাদ দেয়া হয় ১৮৯৭ সালে।[১৯]
প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন সমৃদ্ধ অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা বাঘা দরগা শরীফ বা বাঘা মসজিদ ।বাঘার এই ব্যিখাত ও বহুল প্রচারিত শাহী মসজিদ এককালে এতদঞ্চলে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত এক সাধকের প্রতি বাংলার সুলতানি আমলের অন্যতম সুযোগ্য শাসকের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন।যা বর্তমানে দেশের ৫০ টাকার নোটে ও ১০ টাকার ডাক টিকিটে শোভা পাচ্ছে।
মহাস্থানগড়বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর।[২০][২১] এটি সোমপুর এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলারশিবগঞ্জ উপজেলায়।[২২] বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে অবস্থিত।
কাঞ্চনজঙ্ঘা, তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার (যার উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৮,১৬৯ ফুট) সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। বাংলাদেশ থেকে এত দূরের পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া খুবই চমৎকৃত হবার মতই দৃশ্য। প্রতিবছর অক্টোবর মাস এলেই মনটা আনচান করতে থাকে। মন চলে যায় উত্তরে, দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায়। এই বুঝি পাহাড়-পর্বত দেখা দিল। এই বুঝি আকাশ ফুঁড়ে উঁকি দিল শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং পাহাড়ের ওপরে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখার আশায় বারবার ছুটে যাই তেঁতুলিয়া।
রামসাগরদিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট দিঘি। এটি বাংলাদেশে মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় দিঘি।[১২] তটভূমিসহ রামসাগরের দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। দীঘিটির পশ্চিম পাড়ের মধ্যখানে একটি ঘাট ছিল যার কিছু অবশিষ্ট এখনও রয়েছে। বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথর স্ল্যাব দ্বারা নির্মিত ঘাটটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল যথাক্রমে ৪৫.৮ মিটার এবং ১৮.৩ মিটার। দীঘিটির পাড়গুলো প্রতিটি ১০.৭৫ মিটার উঁচু।[১২]
ঐতিহাসিকদের মতে, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ (রাজত্বকাল: ১৭২২-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ) পলাশীর যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে) এই রামসাগর দিঘি খনন করেছিলেন।তাঁরই নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রামসাগর।[২৩]
সিলেট বিভাগ
সুনামগঞ্জ টাঙ্গুয়ার হাওর
টাঙ্গুয়ার হাওরবাংলাদেশের জেলা সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। প্রায় ১২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। টাঙ্গুয়ার হাওর বর্তমানে পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন শত শত পর্যটক শতাধিক নৌকা নিয়ে হাওরজুড়ে ভেসে বেড়ান। অনেকে নৌকা নিয়ে হাওরেই রাতযাপন করেন। এটি একদিকে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা তৈরি করলেও এটিকে হাওরে জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন অনেকে। নানা রকম দেশি ও পরিযায়ী পাখি দেখতে শীত মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে যান পাখিপ্রেমীরা।
জাফলং, বাংলাদেশেরসিলেট বিভাগেরসিলেট জেলারগোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি এলাকা। জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে[২৪], ভারতেরমেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তি এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।[২৫] মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত।[২৪] সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালখান অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তলভঙ্গ। এই উত্তলভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।[২৬]
বাংলাদেশে চার ধরনের কঠিন শিলা পাওয়া যায়, তন্মধ্যে ভোলাগঞ্জ-জাফলং-এ পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি।[২৭] এছাড়া বর্ষাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী শিলং মালভূমির পাহাড়গুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে ঐসব পাহাড় থেকে ডাওকি নদীর প্রবল স্রোত বয়ে আনে বড় বড় গণ্ডশিলাও (boulder)।[২৫] একারণে সিলেট এলাকার জাফলং-এর নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায়। আর এই এলাকার মানুষের এক বৃহৎ অংশের জীবিকা গড়ে উঠেছে এই পাথর উত্তোলন ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণকে ঘিরে।
মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক, বাংলাদেশেরসিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজার জ়েলারবড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলিতে অবস্থিত একটি ইকোপার্ক। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই ইকোপার্কের অন্যতম আকর্ষণ হলো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, পরিকুণ্ড জলপ্রপাত, শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, এবং চা বাগান। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে সমধিক পরিচিত। পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বনাম: আদম আইল পাহাড়) কঠিন পাথরে গঠিত; এই পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়েছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাবমতে] প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়ে মাধবছড়া হয়ে প্রবহমান। সাধারণত একটি মূল ধারায় পানি সব সময়ই পড়তে থাকে, বর্ষাকাল এলে মূল ধারার পাশেই আরেকটা ছোট ধারা তৈরি হয় এবং ভরা বর্ষায় দুটো ধারাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় পানির তীব্র তোড়ে। জলের এই বিপুল ধারা পড়তে পড়তে নিচে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট কুণ্ডের। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে|[২৮]
অর্থনৈতিক প্রভাব
২০১৮ - ২০১৯ সালে জিডিপিতে দেশের পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। মোট কর্মসংস্থানের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের সুযোগ তৈরি করছে এই খাত।[২৯]
২০১৯ সালে ৫ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ভ্রমণে গিয়েছেন ১৩ লাখ পর্যটক। দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি পর্যটক। দেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ জনবল। পরোক্ষভাবে ২৩ লাখ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ জনবলের কর্মসংস্হান হয়েছে এই খাতে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।[৩০]
↑Hossain, Md. Mosharraf, Mahasthan: Anecdote to History, 2006, Preface, Dibyaprakash, 38/2 ka Bangla Bazar, Dhaka, ISBN 984 483
↑Brochure: Mahasthan – the earliest city-site of Bangladesh, published by the Department of Archaeology, Ministry of Cultural Affairs, Government of the People’s Republic of Bangladesh, 2003
↑Majumdar, Dr. R.C., History of Ancient Bengal, First published 1971, Reprint 2005, p. 10, Tulshi Prakashani, Kolkata, আইএসবিএন৮১-৮৯১১৮-০১-৩.
↑"জেলার ঐতিহ্য"। দিনাজপুর জেলা তথ্য বাতায়ন।accessdate=20 July,2014।অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); |ইউআরএল= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
Supertall skyscraper condo-hotel in downtown Chicago, Illinois Trump International Hotel and Tower (Chicago)Trump International Hotel and Tower in August 2021General informationStatusCompletedTypeCondo-hotelArchitectural styleModernLocation401 North Wabash Avenue, ChicagoCoordinates41°53′20″N 87°37′35″W / 41.8889°N 87.6264°W / 41.8889; -87.6264Construction started17 March 2005Completed3 January 2009Opening30 January 2009Cost$847 millionHeightAntenna spire1,...
ArachnidaRentang fosil: 430–0 jtyl PreЄ Є O S D C P T J K Pg N Silur awal – Saat ini Arachnida dari buku Ernst Haeckel, Kunstformen der Natur, 1904 Klasifikasi ilmiah Kerajaan: Animalia Filum: Arthropoda Subfilum: Chelicerata Kelas: ArachnidaCuvier, 1812 Ordo Acarina Acariformes Ixodida Amblypygi Araneae †Haptopoda Opiliones Palpigradi Parasitiformes †Phalangiotarbida Pseudoscorpionida Ricinulei Schizomida Scorpiones Solifugae Uropygi Arachnida adalah kelas hewan invertebrata A...
Este artigo ou secção contém uma lista de referências no fim do texto, mas as suas fontes não são claras porque não são citadas no corpo do artigo, o que compromete a confiabilidade das informações. Ajude a melhorar este artigo inserindo citações no corpo do artigo. (Agosto de 2020) Myotis elegans Estado de conservação Quase ameaçada Classificação científica Reino: Animalia Filo: Chordata Classe: Mammalia Ordem: Chiroptera Família: Vespertilionidae Género: Myotis Espécie:...
Untuk kegunaan lain, lihat Ketika Senyummu Hadir. Ketika Senyummu HadirSutradara Sophan Sophiaan Produser Hendrick Gozali Johnny Pondanga Ditulis oleh Djasman Djakiman PemeranSendy TarorehVivi SamodroFendy SukowatiDebbie Cynthia DewiFrans TumbuanRatna RiantiarnoZainal AbidinNani WidjajaDina LorenzaNovita SariAmastasia DauUci Bing SlametWilly DozanSimon PSFajar SurachmanPenata musikBilly S. BudiardjoPerusahaanproduksiPT Garuda FilmPT Lia Indah Swastika FilmTanggal rilisNegara Indone...
Rich Mullins, 1997 Richard Wayne ‚Rich‘ Mullins (* 21. Oktober 1955 in Richmond, Indiana; † 19. September 1997 in Lostant, Illinois) war ein US-amerikanischer Sänger und Songwriter christlicher Popmusik. Inhaltsverzeichnis 1 Leben 2 Diskografie 2.1 Studioalben 2.2 Kompilationen 2.3 Singles 3 Literatur 4 Einzelnachweise Leben Mullins veröffentlichte sein erstes Album Rich Mullins 1986. Seine größten Erfolge feierte er mit den Songs Awesome God, Sometimes by Step, Elijah, Sing Your Pr...
لا يزال النص الموجود في هذه الصفحة في مرحلة الترجمة من الإنجليزية إلى العربية. إذا كنت تعرف اللغة الإنجليزية، لا تتردد في الترجمة من النص الأصلي باللغة الإنجليزية. (أبريل 2019) تحوي هذه المقالة أو هذا القسم ترجمة آلية. فضلًا، ساهم في تدقيقها وتحسينها أو إزالتها لأنها تخالف سي...
Minnesota affiliate of the US Green Party This article has multiple issues. Please help improve it or discuss these issues on the talk page. (Learn how and when to remove these template messages) The topic of this article may not meet Wikipedia's notability guidelines for companies and organizations. Please help to demonstrate the notability of the topic by citing reliable secondary sources that are independent of the topic and provide significant coverage of it beyond a mere trivial mention....
Hợp chúng quốc là chỉ quốc gia thể chế liên bang lấy đoàn kết dân chúng, thực hiện dân chủ làm ý nghĩa chủ yếu, thí dụ Hợp chúng quốc Hoa Kỳ, Hợp chúng quốc México, một ít quốc gia này đều là quốc gia thể chế liên bang mà thực hiện chế độ dân chủ. Thể chế liên bang là đối lập với thể chế đơn nhất. Quốc gia thể chế đơn nhất chỉ có một cái chính phủ trung ương đại bi...
Paku KuntilanakSutradara Findo Purwono HW Produser (Executive Producer) Yoen K Ody Mulya Hidayat Ditulis oleh Abbe AC PemeranDewi PerssikHeather StormKeith FooKiwilRizky MocilHardi FadhillahEdi BrokoliNani WidjajaBaron HermantoCynthiara AlonaPenata musikJoseph S. DjafarSinematograferBoy FerdinalPenyuntingAzis NatandraDistributorMaxima PicturesTanggal rilis23 Juli 2009Durasi90 menitNegara Indonesia Bahasa Indonesia PrekuelSetan Budeg Paku Kuntilanak adalah film horor Indonesia yang diril...
Achmad SampurnaWakil Gubernur Jawa BaratMasa jabatan27 Oktober 1992 – 14 April 1998GubernurYogie Suardi MemetNana NurianaPendahuluSuryatna SubrataPenggantiDedem RuchliaBupati SerangMasa jabatan3 November 1988 – 22 Maret 1993GubernurYogie Suardi MemetPendahuluTjakra SumarnaPenggantiSolichin Dachlan Informasi pribadiLahir(1939-11-27)27 November 1939Rangkasbitung, Banten, Hindia BelandaMeninggal8 Januari 2000(2000-01-08) (umur 60)Jakarta, IndonesiaKarier militerPihak...
تشيد الحصون في مواقع إستراتيجية إما لوقوعها على محاور انتقال حيوية أو لارتفاعها وإطلالها على مساحة ممتدة جزء من سلسلة مقالات حولإستراتيجية أبعاد رئيسية * استراتيجية إدارة استراتيجية استراتيجية عسكرية تفكير استراتيجي تخطيط استراتيجي نظرية الألعاب دراسات استراتيجية مفكر...
Ethnic group in northern Vietnam Tày redirects here. For the language, see Tày language. TàyFlag of Thô Autonomous Territory, used since 1947 to 1954.Tày womenTotal population1,845,492 (2019)[1]Regions with significant populationsNorthern Vietnam: Cao Bằng, Lạng Sơn, Bắc Kạn, Thái Nguyên, Quảng Ninh, Bắc Ninh, Bắc Giang ProvincesLanguagesVietnamese • TàyReligionThen,[2] Buddhism[3] Percentage of Tày people by Province (2009)[4] &...
Unorganized territory in Maine, United StatesNortheast Piscataquis, MaineUnorganized territoryLocation in Piscataquis County and the state of Maine.Coordinates: 45°54′37″N 69°05′13″W / 45.91028°N 69.08694°W / 45.91028; -69.08694CountryUnited StatesStateMaineCountyPiscataquisArea • Total1,820.4 sq mi (4,714.8 km2) • Land1,710.5 sq mi (4,430.3 km2) • Water109.8 sq mi (284.5 km2)E...
Welsh television actor This article is about the actor. For the record producer, see Pete Wingfield. Peter WingfieldPeter Wingfield at Japan Expo 2010Born (1962-09-05) 5 September 1962 (age 61)Cardiff, WalesAlma mater Brasenose College, Oxford Medical College of St Bartholomew's Hospital University of Vermont Years active1990–presentWebsitewww.peterwingfield.com Dr Peter Wingfield (born 5 September 1962) is a Welsh-born television actor, well known for his television roles as...
Coordenadas: 41° 54' 30.1 N 12° 28' 57.4 E Fachada da Villa Medici em Roma. A Villa Medici é um palácio de Roma cujos jardins são contíguos com os grandes jardins da Villa Borghese Pinciana, na Colina do Píncio, próximo da Trinità dei Monti. Foi fundada por Fernando I, Grão-Duque da Toscana, tem alojado a Academia Francesa em Roma desde 1803. Uma evocação musical das fontes do seu jardim é apresentada no poema sinfónico Fontane di Roma, de Ottorino Respighi. Hist...
Railway station in Hereford, Herefordshire, England For a history of railways in Hereford, see Railways in Hereford. HerefordGeneral informationLocationHereford, HerefordshireEnglandCoordinates52°03′41″N 2°42′30″W / 52.06139°N 2.70833°W / 52.06139; -2.70833Grid referenceSO515405Managed byTransport for WalesPlatforms4Other informationStation codeHFDClassificationDfT category C1HistoryOriginal companyShrewsbury and Hereford RailwayPre-groupingShrewsbury and H...
American television sitcom The Texas WheelersMark Hamill, Gary Busey and Jack Elam (1974)GenreSitcomCreated byDale McRavenStarring Jack Elam Gary Busey Mark Hamill Karen Obediear Tony Becker Theme music composerJohn PrineCountry of originUnited StatesOriginal languageEnglishNo. of seasons1No. of episodes8 (list of episodes)ProductionProducerChris HaywardRunning time22 minutesProduction companyMTM EnterprisesOriginal releaseNetworkABCReleaseSeptember 13, 1974 (1974-09-13) –July 24,...
Southeast Asian volleyball tournament 2023 SEA Men's V.LeagueTournament detailsHost nations Indonesia PhilippinesCityBogorSanta RosaDates21–30 JulyTeams4 (from 1 confederation)Venue(s)2 (in 2 host cities)Tournament statisticsMatches played12Attendance14,000 (1,167 per match)Official websiteSEA V.LeagueFirstNext → The 2023 SEA Men's V.League was the inaugural edition of the SEA V.League, contested by four men's national teams that are the members of the Southe...