ব্রুনাই-এর পর্যটন সম্প্রসারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়। ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। পর্যটন মন্ত্রণালয় দেশটিতে ইকো-পর্যটন, রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের জন্যে ব্যবস্থাদি, ইসলামী সাংস্কৃতিক গন্তব্য ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোকে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে পর্যটন খাত বিকাশের জন্যে কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ব্রুনাই-এর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে দেশটিতে ৭৮,৪৬৩ পর্যটক আগমন করে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৫,৫৯৯।[১][২]
সামগ্রিক অবস্থা
ব্রুনাই ডলার আসিয়ান অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা, যা এই অঞ্চলের পর্যটকদের ব্রুনাই ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে। এক ব্রুনাই ডলার সমান ৯,৭৪০ ইন্দোনেশিয়ান রুপি, ২.৯ মালয়েশিয়ান রিংগিট, ৩২.৯ ফিলিপাইন পেসো এবং ২৫.৫ থাই বাথ। পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে, শক্তিশালী মুদ্রার কারণে ব্রুনাইতে ভ্রমণ অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব দেশগুলোর তুলনায় ব্যয়বহুল। তাই এই অঞ্চলের পর্যটকরা অন্যান্য আসিয়ান দেশগুলোতে ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে আসিয়ান অঞ্চলের বাহিরের পর্যটকরা ব্রুনাই ভ্রমণে আসে।[৩][৪]
২০১৪ সালে ব্রুনাইতে আগত পর্যটকদের মধ্যে ৯৫% স্থলপথে, ৪% আকাশ পথে এবং ১% সমুদ্র পথে আগমন করে।[৫]
সরকারি পদক্ষেপ
২০১৫ সালের বাজেটে ব্রুনাইয়ের পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্যে প্রায় ৩০০,০০০ ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশটির জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় পর্যটন খাতের বিকাশের জন্য বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এই খাতের উন্নয়নে ব্রুনাই বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অন্যান্য খাতের মধ্যে সমন্বয় করার পরিকল্পনাও করেছে।[৬] Brunei is also seeking for the Foreign direct investment in tourism sector along with collaborations with various agencies.[৫]
টিউটং গন্তব্য কর্মসূচী
টিউটং গন্তব্য কর্মসূচী ব্রুনাই সরকারের গৃহীত অন্যতম পাইলট কর্মসূচী। এর উদ্দেশ্য দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য টিউটং-এর পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি করা। টিউটং জেলা দপ্তর দেশটির বিভিন্ন পর্যটন প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এই কর্মসূচী তৈরি করা হয়েছে। ২০১৩ সালে এই কর্মসূচী প্রাথমিকভাবে আরম্ভ হয়। কর্মসূচীটি শুরুর পর প্রায় ২,০০০ পর্যটক টিউটং পরিদর্শনে আসে। টিউটং-এ ৩০ টিরও বেশি পর্যটন গন্তব্য রয়েছে।[৭][৮] ব্রুনাই-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-ফিলিপাইন-ইস্ট আসিয়ান উন্নয়ন অঞ্চল (BIMP-EAGA)-এর ৫০ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল টিউটং পরিদর্শন করেছে।[৯]
পাখি দর্শন কর্মসূচী ২০১৫
ব্রুনাই পর্যটন মহাপরিকল্পনায় পাখি দর্শনকে অন্যতম প্রাকৃতিক পর্যটন কর্মসূচী হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। ২০১৫ সালে পর্যটন উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে ৩ দিনব্যাপী একটি পাখি দর্শন কর্মসূচী পালিত হয়। এই কর্মসূচীতে মালয়েশিয়ান ন্যাচার সোসাইটি, বার্ডিং কনজারভেশন কাউন্সিল এবং ব্রুনাই বার্ডারস গ্রুপ সহায়তা করে।[১০]
পর্যটকদের শিষ্টাচার
ব্রুনাই-এর রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। ব্রুনাইয়ে আগত পর্যটকদের কিছু শিষ্টাচার মেনে চলতে নির্দেশ দেয়া হয়। নারীদেরকে গ্রামীণ ও সংরক্ষিত অঞ্চলে শালীন পোশাক পরিধান করার পরামর্শ দেয়া হয়। রমজান মাসে ঘরের বাহিরে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। ব্রুনাইয়ের পর্যটন গন্তব্যের অনেকগুলোই মসজিদ। তবে মসজিদে প্রবেশের সময় অমুসলিম পর্যটকদের উপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হয়। মসজিদে প্রবেশের সময় নারীদের মুখমন্ডল, ঘার ও হাটুর নিচের অংশ আবৃত রাখার ব্যাপারে বলা হয়। ব্রুনাইতে অ্যালকোহোল বিক্রয় নিষিদ্ধ। তবে ১৭ বছরের ঊর্ধ্বের অমুসলিমরা অনধিক ২ বোতল শুল্কমুক্ত স্পিরিট বা ওয়াইন এবং ১২ ক্যান বিয়ার ব্রুনাইতে প্রবেশের সময় নিজেদের সাথে নিয়ে আসতে পারে। প্রত্যেকটি আমদানির মাঝে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি থাকতে হবে।[১১][১২][১৩]
প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ
ব্রুনাই পর্যটনের অন্যতম জনপ্রিয় বিষয় ইকো-পর্যটন এবং ইসলামী পর্যটন। দেশটির কিছু প্রধান পর্যটন গন্তব্যসমূহ:
সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ; বন্দর সেরি বেগাওয়ানের অবস্থিত একটি মসজিদ
ব্রুনাই জাদুঘর; ব্রুনাইয়ের জাতীয় জাদুঘর
ইস্তানা নুরুল ইমান; ব্রুনাইয়ের সুলতানের নিবাস
জেরুডং পার্ক; দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ব্যয়বহুল পার্ক