চিটাগাং কিংস হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএল এ অংশগ্রহণকারী একটি ক্রিকেট দল, যেটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই দলের নিজস্ব গ্রাউন্ড হলো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। চিটাগাং কিংস নামে দলটি বিপিএল দ্বিতীয় আসরের রানার্স আপ হয়েছিল এবং ২০২২ সালে বিপিএলের ৮ম আসরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নামে ২য় কোয়ালিফায়ার বা অঘোষিত সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়।
ফ্র্যাঞ্চাইজির ইতিহাস
চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে যোগ দেয়, যা এসকিউ স্পোর্টসের মালিকানাধীন ছিল। এসকিউ স্পোর্টস খেলোয়াড়দের অর্থ পরিশোধে দেরি করা এবং ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর, তাদেরকে ক্রিকেটীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং দুর্নীতির কারণে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকদেরও নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৩ সালে দলটি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এর নেতৃত্বে এবং খালেদ মাহমুদ এর কোচিংয়ে ফাইনালে উঠেছিল। ২০১৫ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পর দলটির নাম পরিবর্তন করে চিটাগাং কিংস থেকে চিটাগং ভাইকিংস রাখা হয় এবং এটি ১ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১] এটি ডিবিএল গ্রুপ এর একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, ডিবিএল স্পোর্টস লিমিটেডের মালিকানাধীন ছিল।[২]
ডিবিএল স্পোর্টস লিমিটেড ২৯ জুলাই ২০১৯ সালে দলের মালিকানা বাতিল করে।[৩] এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টুর্নামেন্টের ফরম্যাট পরিবর্তন করে এবং ২০১৯–২০ মৌসুমের জন্য সব দলগুলোর মালিকানা নিজ হাতে নেয়।[৪]
২০১৯ সালে আকতার গ্রুপ দলটির মালিকানা গ্রহণ করে এবং নাম পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স রাখে। তবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ ছিল।
২০২৪ সালে এসকিউ স্পোর্টস পুনরায় দলটির মালিকানা গ্রহণ করে এবং পুরনো নামে দল পরিচালনা শুরু করে।[৫]
উদ্বোধনী আসরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ডোয়াইন ব্রাভো, কেভন কুপার ও জেসন রয়দের নিয়ে শক্তিশালী দল গড়ে চিটাগং কিংস। তবে কাগজে-কলমে এত শক্তিশালী দল নিয়েও মাঠে নিজেদের পূর্ণ সামর্থ্য দেখাতে পারেনি তারা। বরিশাল বার্নার্সের দল নকআউট পর্বে যাওয়ায় বিতর্কিতভাবে তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। টিম ম্যানেজমেন্ট এই সিদ্ধান্তে খুব অসন্তুষ্ট ছিল, কারণ নকআউট ম্যাচের দিন রাত ২টায় তাদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বিপিএলের প্রথম আসরে এই দলের অধিনায়ক ছিলেন মিসবাহ উল হক এবং কোচ ছিলেন নুরুল আবেদিন।
ডেভিড মিলার ও রায়ান টেন ডেসকাটের মতো ব্যাটসম্যানদের নিয়ে মাহমুদউল্লাহ ও জেসন রয়কে ধরে রাখে দলটি। এবার, তারা টানা তিনটি ম্যাচ জিতে প্লে অফে এগিয়ে যায়। চট্টগ্রাম কিংস ফাইনালে পৌঁছে তবে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস পুনরায় শিরোপা লাভ করে। এই আসরের পর এসকিউ স্পোর্টসের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ও খেলোয়াড়দের বিলম্ব করে বেতন দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। পরে এসকিউ স্পোর্টসকে সকল প্রকার ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়াসহ নিষিদ্ধ করা হয়। একই সাথে দলটিকে বিলুপ্ত করা হয়।
চিটাগাং ভাইকিংস নামে এবং ডিবিএল গ্রুপের মালিকানায় বিপিএলে বন্দর নগরীর নতুন প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দলটি তামিম ইকবালকে আইকন খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচন করে। তারা টেবিলের তলানিতে অবস্থান করে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়।
ভাইকিংস কাগজে-কলমে শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন করে। শুরুতে মিসবাহ-উল-হক দলকে নেতৃত্ব দিলেও বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়ার পর দায়িত্ব নেন লুক রঙ্কি। এ আসরে ৩টি ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়।
দলটি এবারের বিপিএলে অংশ নিতে না চাইলেও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের অনুরোধ অংশ নেয়। টেবিলের চতুর্থ স্থানে থেকে এলিমিনেটরে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হেরে যায়।
খেলোয়াড়দের সরাসরি চুক্তির সময়কালে বিসিবি এবং অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরবর্তীকালে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, বিসিবি এই আসরের জন্য নিয়ম ও প্রবিধানে কিছু পরিবর্তন করে এবং সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাদ দেয়, বিসিবি এই আসরের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বোর্ড নিজেই টুর্নামেন্টটি পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে টুর্নামেন্টটির নামকরণ করে বঙ্গবন্ধু বিপিএল টি-টোয়েন্টি ২০১৯। [৬] দলটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল বিসিবি নিজেই।[৭]
চট্টগ্রামের স্পন্সরশিপ স্বত্ব কিনে আখতার গ্রুপ দলটির নাম দেয় 'চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স'। তারা ক্রিস গেইল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো খেলোয়াড়দের দলে নেয়।[৮] এ আসরে তারা গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে আটটি ম্যাচ জিতে এবং চার ম্যাচে পরাজয় লাভ করে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এক বছর বিরতির পর ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিপিএলের অষ্টম আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এবারের আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হিসেবে আখতার গ্রুপের সঙ্গে যোগ দেয় ডেল্টা স্পোর্টস। ড্রাফটের আগে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ এবং তিন বিদেশী খেলোয়াড় বেনি হাওয়েল, কেনার লুইস এবং উইল জ্যাকসকে সরাসরি সাইনিংয়ে নিয়োগ দেয়।[৯]
দীর্ঘ ৯ বছর পর চিটাগাং কিংস নামে বিপিএল এ অংশ নিচ্ছে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী দলটি।[১০] চিটাগাং কিংসের ৯ কোটি টাকা দেনা থাকলেও বোর্ডের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সেটি কমিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকায় আনা হয়েছে, যা তিন কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে বিসিবি।[১১] এ আসরে সাকিব আল হাসান, মইন আলি, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে নিজেদের দলে নেয় চিটাগাং কিংস। এছাড়া, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদিকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও শন টেইটকে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।[১০]