সাউদার্ন রুট হলো ঢাকা মেট্রোরেলের অনুমোদিত এমআরটি লাইন ৫ রেলপথের একটি শাখা; এর অন্য শাখা হলো নর্দার্ন রুট। এই রুটটি বর্তমানে পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। সাউদার্ন রুটের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে শুরু হবে এবং ২০৩০ বা ২০৩১ সালের মধ্যে চালু করার কথা রয়েছে।
ইতিহাস
২০০৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বাংলাদেশ সরকারকে তারা ঢাকায় একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করে। একই বছর মার্কিন পরামর্শক ফার্ম লুই বার্জার গ্রুপ ঢাকার জন্য একটি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা তৈরি করে।[১] বিশ্বব্যাংক এই পরিকল্পনাটি তৈরি করতে সহায়তা করে যা ঢাকায় পাঁচটি এমআরটি লাইন নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলো।[২] সেই পাঁচটি মেট্রো লাইন ছিল এমআরটি লাইন ১, এমআরটি লাইন ২, এমআরটি লাইন ৪, এমআরটি লাইন ৫ এবং এমআরটি লাইন ৬।[৩] ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাথে ৩.৩২৬ কোটি মার্কিন ডলারের প্রাক-নির্মাণ কাজের জন্য একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা প্রয়োজনীয় অর্থের ৭৪.৬০% ছিলো।[৪] ২৯ মার্চ ২০২১-এ ইজিআইএস রেল এসএ, এজিস ইন্ডিয়া কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ওরিয়েন্টাল কনসাল্টেন্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড এবং এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড রুটের পরামর্শের জন্য ডিএমটিসিএলের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিগুলো যৌথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা ও রুটের জন্য প্রকিউরমেন্টের কাজ করে।[৫] প্রাথমিকভাবে গাবতলী থেকে ত্রিমোহনী সেতু এলাকা পর্যন্ত সাউদার্ন রুট নির্ধারণ করা হয়। এই যাত্রাপথে গণভবনের নিকটস্থ কলেজ গেট ও আসাদ গেটে দুটি ভূগর্ভস্থ স্টেশনের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। ডিএমটিসিএল এই দুটি স্টেশনের অবস্থান নির্ধারণের জন্য একটি জরিপ করার পরিকল্পনা করেছিলো। গুরুত্বপূর্ণ ভবনের কাছাকাছি জরিপ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমতি নেওয়া দরকার ছিলো। ২০২২ সাল পর্যন্ত রুটের এ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণে জটিলতা সমাধানের জন্য একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।[৬] সাউদার্ন রুট নির্মাণ প্রকল্পের মোট বাজেট ধরা হয় ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে এডিবি ৫৩.১৯% প্রদান করবে বলে আশা করা হয়েছিলো। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে এক অংশীদার সভায় সরকার এডিবিকে ৬.৩৮% বেশি অর্থ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছিলো।[৭] ২০২৩ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়া রুটের জন্য ১৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন প্রদানের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টে স্বাক্ষর করে।[৮] প্রকল্পের আওতায় গাবতলী ও দশেরকান্দিতে দুটি ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৪ সালের জুন মাসে রুটটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।[৯] ২০২৩ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া লাইনের জন্য ১০০ কোটি ডলার প্রদানের ঘোষণা দেয়।[১০] এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সাউদার্ন রুটের জন্য ৩০০ কোটি ডলার তহবিল নিশ্চিত করে। ২০২৪ সালের মার্চে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির কাছে সাউদার্ন রুট নির্মাণের প্রস্তাব জমা দেয়।[৮] ২০২৪ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে প্রস্তাবিত খরচ যৌক্তিক পরিমাণে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[১১] পরবর্তীতে আগস্ট ২০২৪ সালে ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নির্দেশে সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে প্রকল্পটি বাদ দিয়ে এমআরটি লাইন ২ বাস্তবায়ন করা, যাত্রাপথের প্রথম আটটি স্টেশন বাদ দিয়ে হাতিরঝিল থেকে দাশেরকান্দি অংশ পর্যন্ত নির্মাণ করা, এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিরত থাকা।[১২]