ধারণা কর হয়, চট্টগ্রাম জয় করা প্রথম মুসলিম, বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ কবিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৭০ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের সময়, শেখ নুরুল্লাহ চৌধুরী ও শেখ মুজিরুল্লাহ চৌধুরী তিন গম্বুজবিশিষ্ট রমজান মিয়া মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।[২] উপজেলার প্রাচীন মসজিদটি বাটইয়া ইউনিয়নের দৌলত রামদি গ্রামে অবস্থিত।[৩] এছাড়া হৈয়া মিয়া মসজিদটি এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য তিন-গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। সুফি দরবেশ ছনখোলা কবিরহাটে কার্যক্রম চালিয়েছিলেন এবং তাকে নরোত্তমপুরের একটি মাজারে সমাহিত করা হয়। কবিরহাট মাদ্রাসা ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯শ শতাব্দীতে এই এলাকার জমিদার ছিলেন কবির পাটওয়ারী। কবির পাটওয়ারীর মৃত্যুর পর পরবর্তীতে জমিদার হন আহাম্মদ আলী মিঞা। উক্ত আহাম্মদ আলী মিঞা তৎকালীন সময়ে এলাকার রাজা ঈশ্বর চন্দ্র সিংহ বাহাদুরের নাম অনুসারে কবির পাটওয়ারী দীঘির দক্ষিণ পাড়ে "ঈশ্বরগঞ্জ" নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে উক্ত বাজারকে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তর করে কবির পাটওয়ারীর নাম অনুসারে কবিরহাট নামাকরণ করা হয়। সেই থেকে কবিরহাটকে কেন্দ্র করে কবিরহাট স্কুল, কবিরহাট কলেজ, কবিরহাট মাদ্রাসা, কবিরহাট হাসপাতাল, কবিরহাট পৌরসভা, কবিরহাট উপজেলাসহ বিভিন্ন কিছুর নামকরণ হয়।
১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে কবিরহাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় রাজাকাররা কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি শিবির স্থাপন করে। তারা বিদ্যালয়টি হত্যা করার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করত এবং বিদ্যালয়ের পূর্ব অংশে তারা মৃতদেহ চাপা দেওয়ার জন্য একটি গর্ত খনন করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা ২৭ সেপ্টেম্বর ঘোষবাগের আলিপুর গ্রামে ও কোম্পানির হাট এলাকায় লুণ্ঠন করে এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৭ অক্টোবর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার জলিলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে ও তার সহযোগীদের হত্যা করে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়েও কবিরহাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২০০৬ সালে নোয়াখালীর সদর উপজেলা তথা সুধারাম থানা থেকে পৃথক হয়ে উপজেলাটি গঠিত হয়। পূর্বে এই এলাকা সদর পূর্বাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমান কবিরহাট উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা পঞ্চাশের দশকে অবিভক্ত ঘোষবাগ ইউনিয়নের অন্তর্গত ছিল। ওই দশকের শেষের দিকে চাপরাশীর হাট ইউনিয়ন গঠিত হয়। সাম্প্রতিক কালে ঘোষবাগ ইউনিয়নের অংশবিশেষ নিয়ে কবিরহাট পৌরসভা এবং চাপরাশীর হাট ইউনিয়নকে বিভক্ত করে ধানশালিক ইউনিয়ন গঠিত হয়।
প্রশাসনিক এলাকা
কবিরহাট উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কবিরহাট থানার আওতাধীন।
এখানকার মোট জনসংখ্যা ৪,২৭,৯১৩ জন (প্রায়); যাদের মধ্যে পুরুষ ২,০২,৩৮৬ জন ও মহিলা ২,২৫,৫২৭ জন। জন-ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,৮৪৮ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২,৪৫,৬৪৪ জন; যাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,১৭,৫৪০ জন ও মহিলা ভোটার ১,২৮,১০৪ জন। বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০%। মোট পরিবার সংখ্যা ৮২,৯৭০ টি।
স্বাস্থ্য
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স - ১টি,
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র - ৫টি।
শিক্ষা
শিক্ষার হার ৯৫%; যা পুরুষদের মধ্যে ৬৮% ও মহিলাদের মধ্যে ৬২%।
প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৮৭টি (সরকারি - ৫২টি, বে-সরকারি - ৩৫টি);
জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় - ৭টি;
উচ্চ বিদ্যালয় - ১৮টি (সহশিক্ষা - ১৭টি, বালিকা - ১টি);
↑গোলাম মুহিউদ্দিন নসু (৫ ডিসেম্বর ২০১৬)। "রমজান মিয়া জামে মসজিদ"। সমকাল। ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২২।