উচ্চ ব্রক্ষ্মের রাজা অরুণ যুগের পতনের পর আরাকানদের কর্তৃক নিপীড়িত ও অত্যাচারিত হয়ে চাকমারা ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈনছড়ি নদীকূলে মাত্র ১২টি গ্রামে বসতি স্থাপন করে। কিন্তু পরে ঐসব এলাকায় মগ ও পর্তুগীজদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেলে ষোড়শ শতাব্দীতে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর অরণ্যে বসতি স্থাপন করে। কিংবদন্তি আছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনকারী নান্যা নামের একব্যক্তি চেঙ্গী নদী বিধৌত চরের সত্ত্বাধিকারী ছিলেন বিধায় তার নামের সাথে সমন্বয় রেখে নান্যারচর নামকরণ করা হয়, যা বর্তমানে নানিয়ারচর নামে রুপান্তরিত হয়েছে।[১]
প্রশাসনিক এলাকা
১৯৭৯ সালে নানিয়ারচর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে নানিয়ারচর উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।[২] এ উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম নানিয়ারচর থানার আওতাধীন।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নানিয়ারচর উপজেলার জনসংখ্যা ৪২,৯৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২২,১৩০ জন এবং মহিলা ২০,৮৩৫ জন।[১] মোট জনসংখ্যার ১৪.৬৫% মুসলিম, ২.৪৬% হিন্দু, ৮১.৮৭% বৌদ্ধ এবং ১.০২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা ও মারমা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আধিক্য রয়েছে।[২]
২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নানিয়ারচর উপজেলার জনসংখ্যা ৪৮,৫২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৪,৬১৫ জন এবং মহিলা ২৩,৯০৬ জন। মোট জনসংখ্যার ১৪.৮৪% মুসলিম, ১.৮৭% হিন্দু, ৮৩.১৮% বৌদ্ধ এবং ০.০৮% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা ও মারমা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আধিক্য রয়েছে।[২]
শিক্ষা
নানিয়ারচর উপজেলার সাক্ষরতার হার ৩৮.৪০%।[২] এ উপজেলায় ১টি কলেজ, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ৮টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।[১]
নানিয়ারচর উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়ক এবং লংগদু-নানিয়ারচর সড়ক। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। এছাড়া এ উপজেলায় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌপথ। রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই হ্রদের উপর দিয়ে বিভিন্ন নৌযান যোগে এ উপজেলায় যাওয়া যায়।
নদ-নদী
নানিয়ারচর উপজেলার মধ্য দিয়ে চেঙ্গি নদী প্রবাহিত হয়ে কাপ্তাই হ্রদে পতিত হয়েছে।[৩] এ উপজেলার প্রায় এক পঞ্চমাংশ জুড়ে কাপ্তাই হ্রদের অংশবিশেষ অবস্থিত।[২]
হাট-বাজার
নানিয়ারচর উপজেলায় ৬টি হাট-বাজার রয়েছে। এগুলো হল বাকছড়ি ছানার বাজার, বগাছড়ি বন্ধু বাজার, নানিয়ারচর সদর বাজার, নানিয়ারচর টি এন টি বাজার, ঘিলাছড়ি বাজার এবং ইসলামপুর বউ বাজার। [৪]
নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সংঘর্ষে অনেক লোক হতাহত হয়। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর ল্যান্স নায়েক বীর শ্রেষ্ঠমুন্সি আব্দুর রউফ শাহাদাত বরণ করেন।[২]