ধারণা মতে, আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামের উৎপত্তি। বোমাং সার্কেল চীফের নথি পত্র ও ১৯৬৩ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আঁকা মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের সত্যতা পাওয়া যায়। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আতিকুর রহমান এর মতে আলী পাহাড়ের সাথে সঙ্গতিশীল নাম হল আলীকদম। তাছাড়া কথিত আছে যে, ৩৬০ আউলিয়া এ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাদের মধ্যে আলী নামে কোন এক সাধক এ অঞ্চলে আসেন। ওনার পদধুলিতে ধন্য হয়ে এ এলাকার নাম করণ হয় আলীকদম।
প্রশাসনিক এলাকা
পূর্ববর্তী সময়ে এটি লামা উপজেলার একটি ইউনিয়ন ছিল। ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলীকদম থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।[২] ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ফলে এটি উপজেলায় অধিষ্ঠিত হয়।[৪] এ উপজেলায় বর্তমানে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ আলীকদম উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আলীকদম থানার আওতাধীন।
আলীকদম উপজেলা পার্বত্যাঞ্চলের ইতিহাসের উপজীব্য। এখানকার বিলুপ্তপ্রায় আলীর সুড়ঙ্গ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন পুকুর। তাছাড়া এখানকার নয়াপাড়া গ্রামে প্রাচীন ইটভাটার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান, যা বর্তমানে নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বসতভিটা। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রন্থপ্রণেতা গবেষক আতিকুর রহমান সহ স্থানীয় সাংবাদিকরা ঐ এলাকায় মাটি খুঁড়ে ইট আবিষ্কার করেছেন। আবিস্কৃত ইটগুলোর গঠনপ্রণালীতে সুলতানী আমলের ইট বলে অনুমিত হয়। উদ্ধারকৃত ইটগুলোর দৈর্ঘ্য সাত ইঞ্চি, প্রস্থ সাড়ে চার ইঞ্চি আর পুরু দেড় ইঞ্চি মাত্র। আবিস্কৃত ইটগুলো বর্তমানে আলীকদম প্রেসক্লাবে রক্ষিত আছে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আলীকদম উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৪৯,৩১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৫,৬৫০ জন এবং মহিলা ২৩,৬৬৭ জন। মোট পরিবার ৯,৪২২টি।[১] মোট জনসংখ্যার ৫৮.৮১% মুসলিম, ৪.৩০% হিন্দু, ৩০.৯৬% বৌদ্ধ এবং ৫.৯৩% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[২]
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আলীকদম উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৬৩,৭৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩,৩১৫ জন এবং মহিলা ৩০,৪৮৪ জন। মোট পরিবার ৯,৪২২টি।[১] মোট জনসংখ্যার ৫৪.৭১% মুসলিম, ৩.০৩% হিন্দু, ৩০.৫৪% বৌদ্ধ এবং ৬.৫১% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
আলীকদম উপজেলা শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই অনগ্রসর জনপদ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলার সাক্ষরতার হার ৩১.৩%।[১] এ উপজেলায় ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[৫]
আলীকদম উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান প্রধান সড়কগুলো হল বান্দরবান-থানচি-আলীকদম, বান্দরবান-লামা-আলীকদম এবং চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়ক। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম পূর্বাণী চেয়ারকোচ এবং জীপগাড়ি।
আলীকদম উপজেলার পাহাড়ী-বাঙ্গালী জন সমাজের ঘূর্ণিয়মান অর্থনীতির চাকা এখনো ধীরলয়ে চলছে। বসবাসরত সিংহভাগ লোকজন অর্থনৈতিকভাবে সুযোগসুবিধা এখনো পায়নি। পাহাড়ী ভূমিতে জুম চাষ করে অধিকাংশ উপজাতীয় লোকজন জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই আদিম পদ্ধতিতে জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা আহরণ করে এলাকার সবুজ পাহাড়কে শ্মশানের ছাইয়ে পরিণত করলেও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসেনি তাদের।
অপরদিকে, বাঙ্গালী জনসমাজেও খেটে খাওয়া লোকের সংখ্যা বেশি। পাহাড়ের বাঁশ-কাঠ কেটে জঠর জ্বালা মিটালেও তাদের অর্থনীতির চাকা মাঝে মধ্যে থমকে দাঁড়ায় পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিধি-নিষেধের কারণে।
নদ-নদী
আলীকদম উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মাতামুহুরী নদী। এছাড়া রয়েছে তৈন খাল এবং চৈক্ষ্যং খাল।[৩]
দর্শনীয় স্থান
আলীকদম উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:[৩]
↑ কখগঘ"ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য"(পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)