১৯৫৪ সালে মহেশখালী থানা গঠিত হয়।[৩] মহেশখালী থানাকে ১৯৮৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।[৪] মহেশখালী উপজেলা আরো তিনটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো হল: সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা।[৫] বর্তমানে মহেশখালী উপজেলায় ১টি পৌরসভা এবং ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ মহেশখালী উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম মহেশখালী থানার আওতাধীন।
অধ্যাপক ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগোর মতে, ১৫৫৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রচণ্ড ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়।[৭] একজন পর্তুগিজ ভ্রমণকারী আরাকান অঞ্চলে এই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তাছাড়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে উত্তর দক্ষিণমুখী পাহাড় এবং তার পাদদেশে প্রবাহিত চ্যানেল থাকার কারণে অনুমিত হয় যে, দ্বীপটি একসময় মূল ভূ-খণ্ডের সাথে যুক্ত ছিল।[৫]
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো তার রচিত গ্রন্থ চট্টগ্রামে মগশাসন গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আরাকানী শাসন শুরু হলে মূল ভূ-খন্ড থেকে পৃথক থাকার কারণে মহেশখালী দ্বীপের উপর শাসকগোষ্ঠীর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আর তাই এই দ্বীপাঞ্চলে গড়ে ওঠেনি সুশৃঙ্খল কোনো জাতির আবাস। এখানে একটি সংঘবদ্ধ জলদস্যুদের আবাসস্থল গড়ে ওঠে বলে তিনি অনুমান করেছেন। মূলত কোম্পানী শাসনামলেই মহেশখালী দ্বীপটি ইংরেজদের নজরে পড়ে। সাগরের মাঝখানে অবস্থিত মনোরম দ্বীপটি, ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রবার্ট ওয়ারলেজ নামক জনৈক ইংরেজ কর্মচারী, বন্দোবস্তি নেবার জন্য আবেদন করলে ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে, দ্বীপটি বন্দোবস্তি সংক্রান্ত দলিল সম্পাদিত হয়।[৫]
১৭৮২ সালের ২০ নভেম্বর রবার্ট ওয়ারলেজ চট্টগ্রামের ইংরেজ কালেক্টর চার্লস ক্রাফটস-এর কাছে ২০,০০০ টাকার বিনিময়ে দ্বীপটি হস্তান্তর করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে দুরত্ব আর যোগাযোগের অসুবিধার কারণে জনাব ক্রাফটস স্থানীয় দেওয়ান কালিচরণ কানুনগোর কাছে ৪০,০০০ টাকার বিনিময়ে দ্বীপটির মালিকানা হস্তান্তর করেন। কালিচরণ কানুনগো নিঃসন্তান ছিলেন। চণ্ডিচরণ নামক এক ছেলেকে তিনি দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে কালিচরণ কানুনগোর মৃত্যু হলে তার স্ত্রী প্রভাবতী মহেশখালীর মালিক হন।[৫]
প্রভাবতির জীবদ্দশায় চণ্ডিচরণ শরৎচন্দ্র নামক এক পুত্রসন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় শরৎচন্দ্র অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় প্রভাবতীর নামে বন্দোবস্ত হয়। পরে শরৎচন্দ্র মহেশখালী দ্বীপের প্রজাবৎসল জমিদার হন। তিনিই জনসাধারণের পানীয় জলের অভাব মোচনের জন্য বিশাল একটি দীঘি খনন করেন (যা বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের সম্মুখে অবস্থিত)। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে নুরুল আমিন সরকার কর্তৃক জমিদারী প্রথার বিলোপ ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত শ্রীযুক্ত বাবু অজিত কুমার রায় বাহাদুর চৌধুরী মহেশখালী দ্বীপের জমিদার ছিলেন। বাবুদের মূল বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া গ্রামে। অজিত কুমার রায় বাহাদুর প্রজাবৎসল ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন।[৫]
মহেশখালীর ইতিহাসের সাথে সাথে নাথ সম্প্রদায়ের ইতিহাস উল্লেখযোগ্য। নাথ সম্প্রদায়ের প্রথম গুরু মীন নাথের শিষ্য গোরক্ষ নাথ-এর আবির্ভাব কাল একাদশ শতাব্দীতে এবং তার রচিত গ্রন্থ "গোরক্ষ বিজয়" প্রকাশিত হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। নাথ সম্প্রদায়ের চারজন সিদ্ধগুরু মীননাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা এবং কাহ্নপার প্রভাব বাংলা ছাড়িয়ে নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। কাজেই বাংলার প্রান্তে মহেশখালীতে নাথ সম্প্রদায়ের প্রভাবে মন্দির নির্মিত হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশের দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, বগুড়া অঞ্চলে গোরক্ষনাথের শিব মন্দির রয়েছে। দক্ষিণ প্রান্তে এটিই একমাত্র মন্দির। মন্দিরের অনতিদূরে একটি বাজারের নাম গোরকঘাটা বাজার। কাজেই এ মন্দিরে গোরক্ষনাথ এবং তার শিষ্যদের যাতায়াত ছিল বলে অনুমান করা যায়। আদিনাথ মন্দিরের লোক কাহিনীতে নেপাল রাজা, নূর মোহাম্মদ সিকদারের উল্লেখ আছে। গোরক্ষ বিজয়েও কবীন্দ্র দাস, শ্যামদাস, ভীমদাসসহ ফয়জুল্লাহ, সুকুর মুহাম্মদ প্রভৃতি মুসলমানের নামও পাওয়া যায়। কাজেই হিন্দু-মুসলমান মিলনের সেতু হিসাবে আবির্ভাব ঘটে এবং নাথ সম্প্রদায়ের প্রভাবে মহেশখালীতে আদিনাথ মন্দির নির্মিত হওয়া স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।[৫]
লোককাহিনী অনুসারে মহেশখালীর মৈনাক পাহাড়ে শিবের আবির্ভাব ঘটে ত্রেতাযুগে। রাম-রাবনের যুদ্ধের সময় শিবের আশির্বাদ লাভের জন্য রাক্ষসরাজ রাবন কৈলাশে যান শিবকে আনার জন্য। দেবতাদের অনুরোধে শিব রাবনকে শর্ত দেন যে, বিরতিহীনভাবে নিয়ে যেতে পারলে শিব লংকায় যেতে রাজি আছেন। শর্ত মেনে শিবকে মাথায় নিয়ে রাবন যাত্রা শুরু করে। কিন্তু প্রস্রাবের জন্য মৈনাক পাহাড়ে রাবনের যাত্রাবিরতি ঘটে। এতে শর্তভঙ্গ হওয়ায় শিব, মৈনাক পাহাড়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। লোককাহিনী মতে, একদিন স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে এক নাগা সন্ন্যাসীর সহায়তায় নেপাল থেকে পাথরের অষ্টভূজা দুর্গামূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমুদ্রের মধ্যে মৈনাক পর্বতের অবস্থান বলে রামায়নে উল্লেখ আছে। মহেশখালী দ্বীপ এবং সমুদ্রের মাঝখানে আদিনাথ পাহাড়টির নাম মৈনাক পাহাড়। আদিনাথ মন্দিরটি সমুদ্রস্তর থেকে ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত।[৫]
নাথ সম্প্রদায়ের ইতিহাস থেকে জানা যায় হিন্দু-মুসলমানদের সেতুবন্ধন হিসেবে মন্দিরটি ইতিহাসের স্বাক্ষী। উপমহাদেশের আদি তীর্থস্থান হিসেবে প্রত্যেক হিন্দু এখানে পূজা করে। তাই মন্দিরের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মন্দিরে হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টান সকলে ভগবান শিবের আরাধনা করেন। তাই অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক মনে করেন। প্রতিবছর শিব চতুর্দশী উপলক্ষে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এ মন্দিরে। এ উপলক্ষে ১০/১৫ দিন মেলা বসে। প্রাকৃতিক পরিবেশে মন্দিরটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। মন্দিরের তিনদিকেই সমুদ্র।[৫]
উপজেলার উত্তর প্রান্তে জনতা বাজার নামক স্থানে মহেশখালী সেতু নির্মিত হওয়ায় মূল ভূ-খণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে মহেশখালী। কোহেলিয়া নদীর উপর অন্য একটি সংযোগ সেতুর দ্বারা মূল মহেশখালীর সাথে যুক্ত হয়েছে উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়ন। এদিকে মহেশখালী চ্যানেল ধীরে ধীরে নাব্যতা হারাচ্ছে, নদীতে জেগে উঠছে চর। হয়ত একদিন নদীটি ভরাট হয়ে মূল ভূখন্ডের সাথে আবারো মিশে যাবে দ্বীপটি। তাছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমে বিরাট চর জেগে উঠেছে (২০১০) যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।[৫] তাই দ্বীপটি ধীরে ধীরে মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হয়ে এর দ্বীপ উপাধি হারাতে পারে।
নামকরণ
দ্বীপটির নামকরণের ইতিহাস সুবিদিত নয়। কিংবদন্তি অনুসারে, ছোট মহেশখালীর তৎকালীন এক প্রভাবশালী বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ সিকদার, মাঝে মাঝেই পাহাড়ে হরিণ শিকার করতে যেতেন। একদিন হরিণ শিকার করতে গিয়ে সারা দিন এদিক-ওদিক ঘুরেও শিকারের সন্ধান না পেয়ে একটি গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ কিছু একটার শব্দে তার তন্দ্রা টুটে যায়। শব্দ অনুসরণ করে তিনি দেখতে পান যে, একটি গাভী একটি মসৃণ শিলাখণ্ডের উপর বাট থেকে দুধ ঢালছে; এই গাভীটি তারই গোয়ালঘর থেকে কিছুদিন আগে হারিয়ে যায়। গাভী আর সেই সুন্দর শিলাখণ্ডটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। সেদিন রাতেই তিনি স্বপ্নে দেখতে পান, এক মহাপুরুষ তাকে বলছেন যে, শিলাখণ্ডটি একটি দেব বিগ্রহ। এ বিগ্রহ যেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেখানে রেখে তার উপর একটি মন্দির নির্মাণ করতে হবে। মন্দিরের নাম হবে আদিনাথ মন্দির। এ আদিনাথের (শিবের)[৭] ১০৮ নামের মধ্যে "মহেশ" অন্যতম। আর এই মহেশ নাম হতেই এই স্থান পরবর্তীতে মহেশখালী হয়ে যায়।[৫][৭] আবার, এটি প্রায় ২০০ বছর আগে মহেশখালী নামে পরিচিত হয়ে উঠে, বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর দ্বারাই এটির নামকরণ হয়েছিল বলেও অনেকের ধারণা।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহেশখালী উপজেলার মোট লোকসংখ্যা ৩,২১,২১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৬৯,৩১০ জন এবং মহিলা ১,৫১,৯০৮ জন। মোট জনসংখ্যার ৯০.০৮% মুসলিম, ৭.৮০% হিন্দু, ১.৩০% বৌদ্ধ এবং ০.৮২% অন্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে।[১]
শিক্ষা
মহেশখালী উপজেলার সাক্ষরতার হার ২০১১ আদমশুমারী অনুযায়ী ৩০.৮০%। এ উপজেলায় ১টি ডিগ্রী কলেজ, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ৩টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ১টি উচ্চ মাধ্যমিক টেকনিক্যাল কলেজ,৪টি আলিম মাদ্রাসা, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫টি দাখিল মাদ্রাসা, ৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[১]
মহেশখালী উপজেলার উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে উপজেলা পর্যন্ত ২টি পাকা সড়ক রয়েছে। বদরখালী ব্রীজ নির্মাণের ফলে মহেশখালী মুল ভূখণ্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে। বদরখালী ব্রীজ থেকে উপজেলা হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত সড়কপথের দুরত্ব ২৫ কিলোমিটার। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৬৮টি সড়কের মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২৮২ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক ৯১ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক ১৯১ কিলোমিটার। ফলে সড়কপথে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে মহেশখালীতে যাতায়াত সম্ভব। সড়কপথে জীপ, অটোরিক্সা, ট্রাক, টেম্পো চলাচল করে থাকে। জলপথের মধ্যে কক্সবাজার হতে মহেশখালী পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি উল্লেখযোগ্য। জলপথে মালবাহী ট্রলার, স্পীডবোট, যাত্রীবাহী লঞ্চ, নৌকা চলাচল করে থাকে।[৫]
লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
মহেশখালী উপজেলার লোকসংস্কৃতি ও লোক উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আদিনাথ মেলা। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কোন একদিন থেকে শুরু হয়ে প্রায় দশ-পনের দিন পর্যন্ত চলে এই মেলা। মেলায় দেশীয় পণ্যের পসরা বসে। মাটির কিংবা বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসের মধ্যে হাঁড়ি পাতিল, কলসি, হাতা, ধুছনী, লোহার তৈরি দা-বটি ইত্যাদি পণ্য মেলাতে কেনাবেচা হয়। মেলা উপলক্ষে নাটক, যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[৫]
প্রখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কাকাবাবু সিরিজের জোজো অদৃশ্য উপন্যাসে মহেশখালীর বর্ণনা দিয়েছেন। সাইক্লোন ইত্যাদি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন স্টর্ম সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে মহেশখালী সংলগ্ন এলাকায়।[৮]
অর্থনীতি
পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদন মহেশখালী উপজেলাকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্র। সামুদ্রিক মাছ ধরা, চিংড়ি চাষ করা এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণ এই দ্বীপের একটি বিকাশমান শিল্প। পান চাষ এখানকার ঐতিহ্যবাহী পেশা ও ব্যবসা। শুষ্ক মৌসুমে সামুদ্রিক শুঁটকির জন্য দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের ভিড় জমতে দেখা যায় এই দ্বীপে।[৫] এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ বালি। এ উপজেলায় ভূস্বামী, প্রান্তিক চাষী, বর্গাচাষী কৃষকেরা ছাড়াও রয়েছে ভূমিহীন কৃষকেরাও। মোট উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের পরিসংখ্যান হলো: লবণচাষী ৫৫%, কৃষি ২১.১৭%, পানচাষী ১৫%, ব্যবসায়ী ৬.৯০% এবং চাকরিজীবী ০.৯৭
মহেশখালী উপজেলায় মোট ২৭টি হাটবাজার রয়েছে এবং বাৎসরিক ১টি মেলা বসে। গোরকঘাটা বাজার, বড় মহেশখালী বাজার, কালারমারছড়া বাজার, হোয়ানক টাইমবাজার এবং আদিনাথ মেলা উল্লেখযোগ্য।[৪]
জীববৈচিত্র্য
মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও এখানে এক সময় হাতি, বাঘ, হরিণ, বানর, ভালুক, বিভিন্ন প্রকারের সাপ, পরিযায়ী পাখি, দেশীয় পাখিসহ বিভিন্ন প্রকারের জীবজন্তুর চারণভূমি ছিল মহেশখালী। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি আর নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস আর এক শ্রেণীর অসাধু শিকারীর চোরাদৃষ্টিতে মহেশখালীর জীব বৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে হরিণ, বানর, গুটিকয়েক সাপ আর শীতের মৌসুমে অল্প কিছু পরিযায়ী পাখি চোখে পড়ে।[৫]
প্রাকৃতিক দুর্যোগ
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ এপ্রিল দ্বীপটির ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ দিন। এদিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল মহেশখালীর দ্বীপ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। কত লোক প্রাণ হারিয়েছে কিংবা কত পরিবার সাগরের বুকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আজো পাওয়া যায়নি। এ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়কালীন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০-২৫০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাসে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬.১ মিটার। এ ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নেয় উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষ, পশু-পাখির জীবন। সরকারি হিসেবে কক্সবাজার জেলায় এ সময় নিহত হয় ৫০ হাজার মানুষ। শুধু প্রাণহানী নয়, জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা এতই ব্যাপক ছিলো যে, অসংখ্য বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জনপথ, বিদ্যালয়, মাদ্রাসা বিধ্বস্ত হয়ে যায়।[৫]