লাক্ষাদ্বীপ (মালয়ালম: লাক্ষাদুইপ্ অর্থাৎ "লক্ষ দ্বীপ") বা লক্ষদ্বীপভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এটি ৩৬টি দ্বীপের একটি দ্বীপপুঞ্জ যা পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে ল্যাকাডিভ সাগরের মধ্যে সামুদ্রিক সীমানা হিসেবে কাজ করে। এটি ভারতের মালাবার উপকূল থেকে ২০০ থেকে ৪৪০ কিমি (১৩০ থেকে ২৭০ মাইল) দূরে অবস্থিত । ভৌগোলিক মতবাদ অনুসারে, অসংখ্য মৃত প্রবাল কীটের দেহাবশেষ সঞ্চিত হয়ে সমুদ্র মধ্যে এই দ্বীপসমূহের সৃষ্টি হয় । তাই এই দ্বীপপুঞ্জকে 'প্রবাল দ্বীপ'ও বলা হয়ে থাকে ।
যদিও এই অঞ্চলটি লক্ষদ্বীপ নামে পরিচিত, আসলে এটি কেবল ভৌগোলিকভাবে দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রীয় দ্বীপসমূহর নাম। লক্ষদ্বীপের অর্থ সংস্কৃত এবং মালয়ালম ভাষায় "এক লাখ দ্বীপ"।[৩] ৩২ বর্গ কিলোমিটার (১২ বর্গ মাইল) আয়তনের লক্ষদ্বীপ হল ভারতের সবচেয়ে ছোট কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল। লক্ষদ্বীপের রাজধানী হল কাভারাত্তি । সমগ্র অঞ্চলটি একটি জেলা ও ১০টা মহকুমায় বিভক্ত পরিচালিত এবং এটি কেরালা উচ্চ ন্যায়ালয়ের ক্ষেত্রাধিকার অম্তর্গত।
ইতিহাস
দ্বীপপুঞ্জটিতে কোনো প্রাচীন আদিবাসী বাসিন্দা নেই। ইতিহাসবিদরা এই দ্বীপপুঞ্জটিতে বসতি স্থাপনের ইতিহাস সম্পর্কে ভিন্ন মতপোষণ করেছেন। খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে অঞ্চলটিতে মানব বসতির পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। দ্বীপপুঞ্জটি প্রাচীন কাল থেকে নাবিকদের মধ্যে পরিচিত ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের বৌদ্ধ জাতকের কাহিনীতে এই দ্বীপপুঞ্জটির কথা উল্লেখ আছে। সম্ভবত সপ্তম শতকে এই অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটে এবং এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। মধ্যযুগে এই অঞ্চলটি চোল সাম্রাজ্য এবং কান্নুরের রাজ্য দ্বারা শাসিত ছিল। ক্যাথলিক পর্তুগীজদের এখানে আগমন হয় ১৪৯৮ সালে, পরে ১৫৪৫ সালে দ্বীপটি থেকে তাঁদেরকে বহিষ্কৃত করা হয়। এর পর অঞ্চলটি প্রথমে আরাক্কালের মুসলিম হাউজ এবং তার পর টিপু সুলতান দ্বারা শাসিত হয়। ১৭৯৯ সালে টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর এই অঞ্চলটির অধিকাংশই ব্রিটিশদের হাতে যায়। ব্রিটিশদের প্রস্থানের পর ১৯৫৬ সালে দ্বীপপুঞ্জটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়।
বর্তমানে লক্ষদ্বীপের দশটি দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলটির জনসংখ্যা ৬৪,৪৭৩ জন। অঞ্চলটির সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাচীন জনগণ ইসলাম(সুন্নী) সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। জাতিগতভাবে দ্বীপপুঞ্জটির জনগণের মিল ভারতের নিকটতম রাজ্য কেরালার মালয়ালী জনগণের সঙ্গে আছে। এর বেশিরভাগ জনগণই মালয়ালম ভাষা এবং জেসেরী নামক একটি মালয়ালম উপভাষা ব্যবহার করে। কেবল মিনিকয় দ্বীপে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাটি হল মাহি বা ধিবেহী ভাষা। দ্বীপপুঞ্জটি আগাটি দ্বীপের একটি বিমানবন্দর দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযোজিত হয়েছে। এই সমুদ্র বেষ্টিত দ্বীপপুঞ্জের লোকদের প্রধান পেশা হল মাছ ধরা এবং নারকেলের চাষ করা। টুনা মাছ হল এই দ্বীপসমূহ থেকে মূল ভারত ভূখন্ডে রপ্তানি করা প্রধান সামগ্রী ।
ভূগোল
লক্ষদ্বীপ ১২টা প্রবাল-দ্বীপ, ৩টা রিফ এবং ৫টা জল-প্লাবিত তীরের একটি দ্বীপপুঞ্জ যেখানে সর্বমোট ৩৯টি দ্বীপ আছে। আসলে এই রিফগুলিও জলে ডুবে যাওয়া প্রবাল-দ্বীপ, এর কেবল গাছপালা হীন অল্প বালিময় অংশ জলপৃষ্ঠের ওপরে দেখা যায়।[৪] দ্বীপপুঞ্জটির দশটা দ্বীপে মানুষের বসতি আছে ও ১৭টি জনশুন্য দ্বীপ আছে । দেশী পর্যটকদের এর ৬টা দ্বীপে যাবার অনুমতি আছে, অন্যদিকে বিদেশী পর্যটকদের কেবল ২টি দ্বীপ (আগাটি ও বংগারাম)-তে যাবার অনুমতি আছে। লক্ষদ্বীপেের প্রধান দ্বীপসমূহ হল কাবারট্টী, আগাটি, মিনিকয় এবং আমিনী। আগাটি তে বিমান বন্দর কোচির সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তিনটি খণ্ডে বিভক্ত, সেগুলি হলো লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ, মিনিকয় ও আমিনদিভি৷
প্রশাসন
লক্ষদ্বীপের সমগ্র অঞ্চলটিকে নিয়ে একটি জেলা গঠন করা হয়েছে। জেলাটি ভারতের সংবিধানর ২৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়। জেলাটিকে দশটা মহকুমায় ভাগ করা হয়েছে। মিনিকয় ও আগাটি মহকুমা এক উপায়ুক্তর অধীনে এবং বাকী আটটা দ্বীপের উন্নয়নমূলক কাজ মহকুমাধিপতির হাতে অর্পণ করা হয়েছে। উপায়ুক্ত তথা ডেভেলপমেন্ট কমিশনার দ্বীপপুঞ্জটির জেলা প্রশাসনের কাজকর্ম, রাজস্ব, ভূমি বন্দোবস্ত, আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদি কাজের তদারকি করেন। জেলাটির সদর কাবারট্টীতে অবস্থিত।[৫] দ্বীপপুঞ্জটি কেরালা উচ্চ ন্যায়ালয়ের ক্ষেত্রাধিকার অন্তর্গত।[৬] লক্ষদ্বীপে ভারতীয় সংসদের নিম্ন সদন লোকসভার একটি আসন আছে।[৭]
এখানে অধিকাংশ (৯৬.৫৮%) লোক ইসলাম ধর্ম পালন করে। এছাড়া হিন্দু (২.৭৭%), খ্রিষ্টান (০.৪৯%), বৌদ্ধ (০.০২%), জৈন (০.০২%), শিখ (০.০১%) ধর্ম ও পালন করা হয় এখানে।
↑"Who's Who | Lakshadweep | India"। U.T. Administration of Lakshadweep। ২৬ মে ২০২১। ৩০ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০২০।