রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ

রাজা হরিশ্চন্দ্রের প্রাসাদ
স্থানীয় নাম
ইংরেজি: রাজবাড়ি ঢিবি
সাভারে অবস্থিত রাজা হরিশচন্দ্রের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদ
ধরনপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
অবস্থানমজিদপুর, সাভার উপজেলা
অঞ্চলঢাকা জেলা
নির্মিতখ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতক
পরিচালকবর্গবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
মালিকবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ হল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত একটি পুরাকীর্তি বা প্রত্নস্থল। এটি রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি, রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ি, রাজা হরিশচন্দ্রের ভিটা ইত্যাদি নামেও পরিচিত।[]

অবস্থান

প্রত্নস্থলটি রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সাভার উপজেলার অন্তর্গত সাভার পৌরসভার মজিদপুরে (সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড হতে পূর্ব দিকে) অবস্থিত।[]

প্রত্ন উৎখনন প্রসঙ্গ

রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ি বা ঢিবি উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। স্থানীয় লোকজন মাটিচাপা এই স্থানটিকে রাজবাড়ি ঢিবি হিসেবে চিহ্নিত করত।[] ১৯১৮ সালের দিকে রাজবাড়ি-ঢিবির কাছাকাছি গ্রাম রাজাসনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ পরিচালনা করেন।[][] এই খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় বৌদ্ধদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রত্নবস্তু ও গুপ্ত রাজবংশের অনুকৃত মুদ্রাস্মারক।[] এতে সেখানকার বৌদ্ধ মূর্তির পরিচয় পাওয়া যায়। এরই সূত্র ধরে ১৯৯০-১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে হরিশচন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবিতে খননকাজ চালানো হয়।[][]

প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শনসমূহ ও তাৎপর্য

১৯৯০-১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি উৎখননের ফলে অনাবৃত হয় মাঝারি আকারের একটি নিবেদনস্তূপ এবং দক্ষিণে একটি বৌদ্ধ বিহারের ভগ্নপ্রায় অবকাঠামো।[] খ্রিস্ট্রীয় সপ্তম শতকে এখানে বৌদ্ধ ধর্ম সভ্যতা সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্র ছিল বলে বোঝা যায়।[] হরিশ্চন্দ্র রাজার প্রাসাদ-ঢিবির উৎখননে অনাবৃত হওয়া বিহারটির মধ্যে একাধিক পুনর্নির্মাণ এবং একাধিক মেঝের চিহ্ন লক্ষ করা যায়। বিহারের স্থাপত্যশৈলীতে চারটি স্তর অনুধাবনযোগ্য।[] চার স্তরের নির্মাণ কাঠামো পাওয়া যাওয়ায় বোঝা যায়, লম্বা সময় ধরেই এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।[] খননকাজের সময় বিহারের ওপরের স্তর থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা এবং খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকের ব্রোঞ্জ নির্মিত ধ্যানী বুদ্ধ ও তান্ত্রিক মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।[][] এখানে প্রাপ্ত অনেক ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি দেখে বোঝা গেছে যে, মহাযানী বৌদ্ধ মতাদর্শের একটি কেন্দ্র ছিল এটি। এছাড়াও এখানে নানা ধরনের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধূতি পরিহিত, কিরিট মুকুট, চুড়ি, হার, কোমরবন্ধ ও বাজুবন্ধ সজ্জিত লোকেশ্বর-বিষ্ণু মূর্তি, পদ্মপানি, ধ্যানী বুদ্ধ, অবলোকিতেশ্বর ও প্রজ্ঞা পারমিতা প্রভৃতি ভাস্কর্য নিদর্শন এখান থেকে পাওয়া গেছে।[] শিল্পশৈলী বিবেচনায় এসব প্রত্নবস্তু খ্রিষ্টীয় সাত থেকে আট শতকের নিদর্শন বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।[] বর্তমানে এসব নিদর্শন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

বর্তমান সময়ে স্থান হিসেবে মজিদপুরের প্রসিদ্ধি না থাকলেও প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক কিছু সংশয় ছাড়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞের ধারণা অনুযায়ী ঢাকা থেকে প্রায় ২৪ কিমি উত্তর-পশ্চিমে (গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হতে সড়ক পথের দূরত্ব) প্রাচীন বংশাবতী বা অধুনা বংশী নদীর বাঁ তীরে অবস্থিত ছিল পাল বংশীয় রাজা হরিশ্চন্দ্রের শাসনাধীন সর্বেশ্বর রাজ্যের রাজধানী। এ রাজধানীর নাম ছিল সম্ভার এবং সম্ভার নাম থেকেই পরবর্তীকালে সাভার নামের উৎপত্তি হয়েছে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকে তৎকালীন সম্ভার রাজ্যের রাজা হরিশ্চন্দ্রের প্রাসাদ-ভিটা সাভারের মজিদপুরে অবস্থিত ছিল।[][] এছাড়াও সাভারের এ এলাকার গুরুত্বের কথা বোঝা যায় রেনেলের মানচিত্রে স্থানটির উল্লেখ দেখে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও ভূগোলবিদ জেমস রেনেল সাভার এলাকায় ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে জরিপ করে মানচিত্রটির সংশ্লিষ্ট খণ্ড তৈরি করেছিলেন।[]

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "হরিশচন্দ্র রাজার বাড়ি"দৈনিক সমকাল। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 
  2. চন্দ, দীপংকর (১০ মার্চ ২০১০)। "রাজা হরিশ্চন্দ্রের প্রাসাদ-ঢিবি"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৮-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৭ 
  3. প্রত্নতত্ত্ব: উদ্ভব ও বিকাশ; লেখক - মোঃ মোশারফ হোসন; পৃষ্ঠা নম্বর - ১৯৭ ও ১৯৮; প্রকাশকাল - ১৯৯৮ ইং
  4. Help for Disability and Distress (HDD) কর্তৃক প্রকাশিত বই: সাভার ডিরেক্টরি (সাভার উপজেলার তথ্য সংবলিত বই); প্রকাশকাল: ডিসেম্বর, ২০১২ ইং

বহিসংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!