রূপলাল হাউজবাংলাদেশেরঢাকা শহরের পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় ঊনবিংশ শতকে নির্মিত একটি ভবন। এটি ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ একটি দ্বিতল ভবন। এর পেছনভাগে বুড়িগঙ্গা নদী প্রবহমান।এটি জমিদার ও বণিকদের তৈরি।[১]
ইতিহাস
ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। রূপলাল দাস (১৮৪৫-১৯১৩) ঢাকারজমিদার ও ব্যাংকার ছিলেন।[২] এটি বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পারে ফরাসগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। রূপলাল ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন।[৩] এর নির্মাণ কাল ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক। মার্টিন এন্ড কোং কোম্পানির একজন স্থপতি এর নকশা প্রণয়ন করেছিলেন। দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী অভিনব। এটি দুইটি অসম অংশে বিভক্ত যার প্রতিটিতে কিছুটা ভিন্ন স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়। এর ভিত্তিভূমি ইংরেজি E অক্ষরের ন্যায়।, যার বাহুত্রয় শহরের দিকে প্রসারিত। মাঝের দীর্ঘতম বাহুটির দৈর্ঘ্য ১৮.৩৩ মিটার। ভবনটির ছাদ নির্মাণ করা হয়েছিল 'কোরিনথীয়' রীতিতে। এর উপরে রয়েছে রেনেসাঁ যুগের কায়দায় নির্মিত 'পেডিমেন্ট'। রূপলাল হাউজে দ্বিতীয় তলায় দুটি অংশে বিভিন্ন আয়তনের মোট ৫০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত দরবার কক্ষ । ভবনের পশ্চিামংশে দোতলায় অবস্থিত নাচঘরটি আকষণীয়ভাবে তৈরী। এর মেঝে ছিল কাষ্ঠ নির্মিত। পুরো বাড়ি জুড়ে উত্তর-দক্ষিণ পার্ম্বে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা দুটি ইট-নির্মিত 'সেমি-কোরিনথীয়' স্তম্ভ বা সমায়ত ইটের স্তম্ভের ওপর সংস্থাপিত। [১] নদীর দিকে সম্মুখভাগে ভবনের চূড়াতে একটি বড় ঘড়ি ছিল যা ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ার পড়ে আর ঠিক করা হয়নি।[৪] ১৮৮৮ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন ঢাকা সফরের সময় তাঁর সম্মানে এখানে একটি বল নাচবল নাচের আসর আয়োজন করা হয়েছিলো।[৫]
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগকালে রূপলালের উত্তরাধিকাররা ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। সাম্প্রতিক কালে রূপলাল হাউজ মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে এটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা রয়েছে।