তেত্রিশ দেবতা বা তেত্রিশ কোটি দেবতাহিন্দুধর্মেদেবতাদের প্রকারভেদ অনুযায়ী সমষ্টিবদ্ধ সংখ্যা। তেত্রিশ কোটি দেবতা বলে প্রচলিত দেবতাসমূহ প্রকৃতপক্ষে তেত্রিশ প্রকার গুণ সম্পন্ন বৈদিকদেবতাকে বোঝানো হয়।[১][২] হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ, শতপথ ব্রাহ্মণ সহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও এই দেবতাদের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।[৩][১] পরবর্তীকালে এই তেত্রিশ দেবতা লোকমুখে "তেত্রিশ কোটি দেবতা" হিসেবে প্রচলিত হয়।[৪] তবে হিন্দুধর্মে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যক দেবতার ধারণার পরিবর্তে একই দেবতার একাধিক রূপ প্রচলিত।[৫][৬]
দশপ্রাণ ও আত্মা নিয়ে গঠিত সৌরজগতে এগারোটি দেব রয়েছেন। একইভাবে এই পৃথিবীতে রয়েছে এগারটি আর জলেও রয়েছে এগারটি দেব। এরা দশ ইন্দ্রিয় এবং মন সৃষ্টি করেন। হে জ্ঞানীগণ! দেবতাদের জানুন এবং তারপরে যজ্ঞ শুরু করুন।
একাদশ রুদ্র (সংস্কৃত: एकादश रुद्र) দ্বারা হিন্দু দেবতা রুদ্রের (শিব) অনুসারী এগারো দেবতাকে বোঝায়।[২৮] তাদেরকে কখনও কখনও মরুত (শিবের পুত্রগণ) বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে এবং কখনও কখনও সম্পূর্ণ আলাদা রূপে উপস্থাপন করা হয়।[২৯] বামন পুরাণসহ আরও কিছু গ্রন্থে একাদশ রুদ্রকে ঋষি কশ্যপ ও তার সহধর্মিণী অদিতির সন্তান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩০]
অষ্টবসু (সংস্কৃত: अष्टवसु) বলতে হিন্দুধর্মে প্রকৃতির মৌলিক দিকগুলি (পঞ্চভূত) এবং মহাজাগতিক প্রকৃতির প্রতিনিধিত্বকারী আটজন দেবতাগণকে বোঝায় যেমন: সূর্য, চন্দ্র (সোম) ইত্যাদি। তারা হলেন দক্ষের কন্যা ও ধর্মদেবের সহধর্মিণী বসুর সন্তান।[৩১] কিছু পুরাণ ও রামায়ণে তাদেরকে ঋষি কশ্যপ ও অদিতির সন্তান এবং মহাভারতেমনু বা ব্রহ্মার সন্তান বলা হয়েছে।
দুই অশ্বিন (সংস্কৃত: अश्विन्) বলতে সূর্য ও তার পত্নী শরণ্যু (সংজ্ঞা, সঞ্জনা বা সন্ধ্যা) এর দুইজন যমজ পুত্রকে বোঝানো হয়ে থাকে। তারা হলেন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ভোর ও বিজ্ঞানের দেবতা।[৩২]ঋগ্বেদে তাদেরকে তরুণ অশ্বারোহী, দুর্বলদের সহায়তাকারী রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে।[৩৩][৩৪] ঋগ্বেদ অনুসারে সূর্য ও সঞ্জনা অশ্বরূপে মিলিত হবার ফলে দুই অশ্বিনের জন্ম হয়।[৩৫] মহাভারত অনুসারে নকুল ও সহদেব দুই অশ্বিনের মানসপুত্র ছিলেন।[৩৬] তাদের নাম যথাক্রমে নাসত্য (জ্যৈষ্ঠ) ও দস্র (কনিষ্ঠ)।
«There are eight Vasus, eleven Rudras, twelve Âdityas; and these two, Heaven and Earth, are the (thirty-second and) thirty-third. And there are thirty-three gods, and Pragâpati is the thirty-fourth;--thus he makes him (the sacrificer, or Yagña) to be Pragâpati: now that is, for that is immortal, and what is immortal that is. But what is mortal that also is Pragâpati; for Pragâpati is everything: thus he makes him to be Pragâpati, and hence there are these thirty-four utterances, called expiations. শতপথ ব্রাহ্মণ ৪।৫।৭।২[১০]»
(বাংলা)
«অষ্টবসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য; এবং এই দুটি, স্বর্গ এবং পৃথিবী, (বত্রিশ এবং) তেত্রিশটি। এবং তেত্রিশটি দেবতা আছে, আর প্রজাপতি হল চৌত্রিশতম;--এইভাবে তিনি তাকে (যজ্ঞকারী বা যজ্ঞ) প্রজাপতি হিসাবে তৈরি করে তোলেন: কারণ ইহা অমর, এবং যা কিছু অমর ইহাই সেই। আবার যা মরণশীল, তা-ও প্রজাপতি; কারণ প্রজাপতিই সবকিছু: এইভাবে তিনি তাকে প্রজাপতি হিসেবে গড়ে তোলেন, এবং তাই এই চৌত্রিশটি নির্বচন আছে, যাক প্রায়শ্চিত্য বলা হয়। - শতপথ ব্রাহ্মণ ৪।৫।৭।২»
তথ্যসূত্র
↑ কখগগ্রেগর উইলিয়াম্স (২০০৮), এ হ্যান্ডবুক অব হিন্দু মিথোলোজি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন৯৭৮-০১৯৫৩৩২৬১২, পৃষ্ঠা ৯০, ১১২
↑ওয়েস্ট, এম. এল.; ওয়েস্ট, রয়্যাল হলওয়েতে গ্রীকের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং বেডফোর্ড নিউ কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এম. এল.; ওয়েস্ট, মরিস (২০০৭-০৫-২৪)। ইন্দো-ইউরোপিয়ান পয়েট্রি এন্ড মিথ। ওইউপি অক্সফোর্ড। আইএসবিএন978-0-19-928075-9। ২০২২-০৬-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২১।
↑ল্যাং, এন্ড্রু (১৮৮৭)। মিথ, রিচুয়াল এন্ড রিলিজিয়ন (ইংরেজি ভাষায়)। লংগমেন্স, গ্রিন। ২১ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০২২।