রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী স্নান করার জন্য লাঙ্গলবন্দ গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পথে তিনি একটি পুত্র বল্লাল সেনকে জন্ম দেন। পরবর্তীকালে সিংহাসনে আরোহণের পর বল্লাল সেন স্বীয় জন্মস্থানকে মহিমান্বিত করার জন্য এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।[২] কিংবদন্তি অনুযায়ী, বল্লাল সেন একবার জঙ্গলে আচ্ছাদিত দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বল্লাল সেন সেখানে দেবীকে আবিষ্কার করেন এবং একটি মন্দির নির্মাণ করান। মূর্তিটি ঢাকা ছিল বলে ঢাকেশ্বরী নামকরণ করা হয়।[২] হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঢাকেশ্বরীকে গুরুত্বপূর্ণ দেবী হিসেবে বিবেচনা করে। তারা মনে করে ঢাকেশ্বরী মাতা দেবী দুর্গা বা আদি পরা মহাশক্তির একটি রূপ।
বিগ্রহের বর্ণনা
বিগ্রহের উচ্চতা দেড় ফুট এবং দেবী দশভুজা। দেবীর সামনের হাত দু’টি বড় এবং পিছনের আটটি হাত তুলনায় ছোট। কাত্যায়নীমহিষাসুরমর্দিনীদুর্গা রূপেই অবস্থান করছেন। উপরে পাশে লক্ষ্মীসরস্বতী ও নিচে দুপাশে কার্তিক ও গণেশ। বাহন রূপে পশুরাজ সিংহ দন্ডায়মান যার ওপর দাঁড়িয়ে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছেন। তবে সিংহটি পৌরাণিক সিংহ।[৩]
কুমারটুলিতে বিগ্রহ আনয়ন
দেবী ঢাকেশ্বরী বিগ্রহটি ৮০০ বছরেরও প্রাচীন। সেই বিগ্রহটিই কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে দুর্গাচারণ স্ট্রিট বর্তমানে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে বিরাজ করছে।[১] এখন যে বিগ্রহটি ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আছে তা হলো এই মূর্তির প্রতিরূপ। দেশ ভাগের সময় কয়েক লক্ষ ভিটেমাটি হারা হয়। সেই সময় মূর্তিটিকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। দেশভাগ-পরবর্তী দাঙ্গার সময় সম্ভাব্য আক্রমণ এবং লুন্ঠনের হাত থেকে দেবীকে রক্ষা করতে ঢাকার মূল বিগ্রহটিকে গোপনে এবং দ্রুততার সঙ্গে ১৯৪৮-এ কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন রাজেন্দ্রকিশোর তিওয়ারি (মতান্তরে প্রহ্লাদকিশোর তিওয়ারি) এবং হরিহর চক্রবর্তী। তিনি শোভা বাজারের ধনবান ব্যবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরি মহাশয়ের বাড়ির গুদামঘরে বিগ্রহকে লুকিয়ে রাখেন।বিশেষ একটি বিমানে ঢাকেশ্বরী আসল বিগ্রহটি কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল।কলকাতায় বিগ্রহটি আনার পর প্রথম দু'বছর হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরির বাড়িতে দেবী পূজিতা হন।চৌধুরি মহাশয় মাত্র ৬ মাসের ভেতরে কুমারটুলিতে জমি ও একটি বিশাল বাড়ি ক্রয় করে মন্দির নির্মাণ করে সেই আদি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা করে দেবীর নিত্য সেবার জন্য কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি দান করেছিলেন, সেই সঙ্গে তেওয়ারি পরিবারকে এই বাড়ির স্বত্ব ও বংশ পরম্পরায় মাকে পূজার ভার অর্পণ করেন। অদ্যাবধি এখানেই দেবী পূজিতা হয়ে চলেছেন।১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ মায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় কলকাতাতে। দেশভাগের বেদনাময় পরিণামের কারণেই বিগ্রহ আনয়ন এবং মন্দিরের প্রতিষ্ঠা। দেবীকে যেভাবে অলংকারহীন এবং প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় লুকিয়ে আনা হয়েছিল, তার ছবিও এই মন্দিরে সংরক্ষিত আছে।দেবীর বেদীমূলে লেখা হল
অর্থাৎ - হে দেবী জগন্মাতা ঢাকেশ্বরী তুমি পরম ভক্তবৎসলা। আজ থেকে এই তোমার স্বস্থান (নিজের জায়গা), তোমার স্বস্থানে তোমায় স্বাগত জানাই মা। ঢাকায় যে লীলায় তুমি ছিলে আজ থেকে এই খানে তুমি স্বরূপে স্বমহিমায় স্থিরভাবে বাস করে নিজ লীলা বিস্তার কর।[১]
পূজা-অর্চনা
রোজকার দর্শনের ও পূজা দেওয়ার সময়সূচি
সকল ৭:০০ - ১২:০০
বৈকাল ৪:০০- ৯:০০
রোজকার সন্ধ্যা আরতির সময়
গরমকালে ৬ :০০ পরে
শীতকালে ৫ :০০ পরে
যদি কোনো ভক্ত মাতৃ পূজা দিতে ইচ্ছুক এই সময়সূচি মধ্যেই পুষ্প,মালা ও মিষ্টি নিয়ে গেলে তেওয়ারি মহাশয় বা শক্তি ঘোষাল মহাশয় আপনাদের পূজা মাকে অর্পন করবেন।
মন্দিরটি খুব ভাল একটি স্থান জপের জন্যে কারণ বেশিরভাগ মানুষ এই মন্দিরের নামও শোনেননি আশাতো দুরে থাক।
মন্দিরের আশেপাশে কোনো ডালার দোকান নেই তবে মায়ের মন্দিরের কাছেই একটি মিষ্টির দোকান আছে।
শারদীয়া পূজা
শুক্লা প্রতিপদে কল্পারম্ভ হয় ও অখণ্ড দীপ প্রজ্জ্বলিত হয়। দেবীর ৩টি ঘট বা কলস স্থাপিত হয় কিন্তু একটু অভিনব পদ্ধতিতে।ঘটের ওপর ডাব গামছার বদলে অখণ্ড দীপ বসানো হয়। ঘটের গায়ে মাটি দিয়ে যব লগানো হয়,তার আকৃতি হলো আমরা যেমন ঘটে মঙ্গল চিহ্ন অঙ্কন করি ঠিক সেরম।
এই মন্দিরে যদিও নবরাত্রি পালিত হয় কিন্তু সপ্তমী থেকে মায়ের বঙ্গমতেও পূজা হয় বৃহনান্দীকেশ্বর দুর্গাপূজা পদ্ধতি মেনে।মহাষ্টমীতে প্রতি ভক্ত খিচুড়ি প্রসাদ পান ও অঞ্জলি দেওয়ারও বেবস্থা আছে এই দিন। মহাষ্টমী তথা সন্ধি পূজায় চালকুমড়োর বলি হয়। এই কদিন মা অন্নভোগ পান।
ভোগের তালিকা
সপ্তমীতে অন্ন পঞ্চ ব্যাঞ্জন ও চাটনি।
মহাষ্টমীতে পোলাও, খিচুড়ি,সব্জি,পায়েস ও চাটনি।
মহানবমীতে পোলাও ও পুরি।
কেবল শারদীয়া দুর্গাপূজাই অনুষ্ঠিত হয় বাসন্তী হয় না।
কিছু মতে, ক্রিকেটার পঙ্কজ রায় অর্থাৎ প্রণব রায়ের পরিবার হলেন মূল পৃষ্ঠপোষক। রায় পরিবার ঢাকার কাছে ভাগ্যকুলের জমিদার ছিলেন। দেশভাগের পর এনারা কলকাতার কুমোরটুলিতে উঠে আসেন।