ভৈরবীহিন্দু দেবী মহাবিদ্যার সাথে যুক্ত। তিনি ভৈরবের পত্নী।[২][৩]
প্রতীকায়ন
ভৈরবী নামের অর্থ "সন্ত্রাস" বা "বিস্ময়কর"। তিনি দশটি মহাবিদ্যার পঞ্চম। তাঁকে ত্রিপুরভৈরবী বলেও বলা হয়। "ত্রি" অর্থ তিনটি, "পুর" অর্থ দুর্গ, শহর, নগর ইত্যাদি। ত্রিপুর সচেতনতার তিনটি পৃথক অবস্থা বোঝায় অর্থাৎ সক্রিয়, স্বপ্ন এবং গভীর নিদ্রা। তিনি সব ত্রিদেব রূপে থাকেন এবং একবার এই ত্রয়ী অতিক্রান্ত হ’লে ব্রহ্ম অর্জিত হন। ভিন্ন জনশ্রুতিতে, একবার তার কৃপা পেলে আমরা শিব চেতনা উপলব্ধি করতে পারি। তাই তাঁকে ত্রিপুরভৈরবী বলা হয়।[৪][৫]
দেবীমাহাত্ম্যে তার ধ্যান শ্লোকে তার রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। তার চার হাত, এক হাতে গ্রন্থ, একটিতে জপমালা, একটিতে অভয় মুদ্রা এবং অন্যটিতে বরদা মুদ্রা নিয়ে পদ্মের ওপর বসে আছেন। তিনি রক্তবর্ণ পোশাক পরিধান করেন এবং গলায় বিচ্ছিন্ন মুণ্ডের মালা পরিধান করেন। তার তিনটি চক্ষু আছে এবং তার মাথায় একটি অর্ধচন্দ্র সাজানো আছে। ভিন্ন রূপে তিনি একটি তরোয়াল এবং এক পাত্র রক্ত নিয়ে এবং ভিন্ন দুইহাতে অভয় তথা বরদা মুদ্রা আছে। তাঁকে শিবের ওপর বসা অবস্থায় চিত্রিত করা হয়েছে, যা তান্ত্রিক পূজায় অধিক প্রাধান্য পায়। রাজরাজেশ্বরীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একজন রাণী হিসাবেও তাঁকে চিত্রিত করা হয়েছে।[৬]
ত্রিপুরভৈরব মূলাধার চক্রে অবস্থান করছেন। তার মন্ত্রটিতে তিনটি বর্ণ আছে এবং এইগুলি সব মূলাধার চক্রের কেন্দ্রস্থলে একটি উল্টো ত্রিভুজ সৃষ্টি করে। তিনি কামরূপ আকারে মূলাধার চক্রের স্রষ্টা, এখানে তিনটি বিন্দু গঠিত যার একটি উল্টো ত্রিভুজ গঠন করেন, যার থেকে সব ত্রিদ জন্ম গ্রহণ করেন, যা শেষ পর্যন্ত এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে পরিচালিত হয়। মূলাধার চক্রের অন্তঃস্থের ত্রিভুজটি কামরূপ নামে পরিচিত। ত্রিভুজের তিনটি বিন্দুতে তিনটি বীজাক্ষরের (পবিত্র অক্ষর) এবং তিনটি বীজাক্ষর ত্রিভুজের নিকট দিয়ে একটি অন্যটির সাথে যুক্ত এবং এই উভয় পক্ষের ইচ্ছাশক্তি, জ্ঞানশক্তি এবং ক্রিয়াশক্তি বা ঐশিক ইচ্ছা, ঐশিক জ্ঞান এবং ঐশিক ক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে। ত্রিপুরসুন্দরী এবং ত্রিপুরভৈরবী নিবিড়ভাবে জড়িত কিন্তু ভিন্ন। ত্রিপুরভৈরবীকে সুপ্ত শক্তি হিসাবেও চিহ্নিত করা হয় যেখানে ত্রিপুরের সুন্দর এই সুপ্ত শক্তিকে বাস্তব রূপদান করে এবং এই শক্তিটিকে উচ্চতর চক্রের সহস্রার চক্রের দিকে নিয়ে যায়। দেবী ভৈরবী ঊর্ধ্ব আন্মায়ের দেবী।[৭]
ব্যুৎপত্তি
ভৈরবী মহাবিশ্বে সংঘটিত পরিবর্তনসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন। মহাবিদ্যারা বিশ্বে আদি পরাশক্তির ভূমিকাকে উপস্থাপন করেন, ত্রিপুরসুন্দরী সৃষ্টির প্রতিনিধিত্ব করেন, ভুবনেশ্বরী সৃষ্টি মহাবিশ্বের স্থায়িত্বের প্রতীক এবং কমল সমৃদ্ধি তথা বিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যান্য মহাবিদ্যায় মহাবিশ্বের সময়কালে ঘটা বিভিন্ন প্রক্রিয়া প্রদর্শিত হয়। সৃষ্টি এবং ধ্বংসের এই অবিচ্ছিন্ন চক্রে, ভৈরবী জ্ঞান এবং সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি মানবজাতির দ্বারা মহাবিশ্বের পরিবর্তনসমূহ, মানুষের অগ্রগতি এবং বিস্তৃত অধ্যয়নের প্রতীক।
পৌরাণিক উপাখ্যান
ভৈরবী তন্ত্রের কুণ্ডলিনীর একজন মহিলা পারদর্শী হয়ে উপাধি প্রাপ্ত হয়েছেন। একজন যোগিনী তন্ত্রের শিক্ষার্থী বা অভিলাষী। একজন ভৈরবী হলেন তিনি যা সফল হয়েছেন। যিনি ভৈরবীর অবস্থা অর্জন করেছেন, তিনি মৃত্যুর ভয়ের ঊর্ধে এবং সেজন্য অধিক ভয়ঙ্কর; মঙ্গলকেও তিনি শাসন করেন।
মহিষাসুরকে বধ করার সময় দেবী উত্তম মধু (মদ্য) পান করে উন্মত্ত ও ক্রোধে লোহিতলোচনা হয়ে পড়েছিলেন।
দেবী বলিলেন,
অর্থাৎ, রে মূঢ় আমি যতক্ষণ মধু পান করছি ততক্ষণ যত ইচ্ছে গর্জন কর। আমি তোকে হত্যা করে দেবগণের কার্যসিদ্ধি করব।
তিনি এক লাফে শূলহস্তে মহিষরূপী মহিষাসুরের ঘাড়ে বাম পা দিয়ে চাপ দিলে মহিষের মাথা খসে পড়েছিল। দেবীর এই রূপকেই ভৈরবী বলা হয়।
ভৈরবী পুরাণ তথা তন্ত্র অনুসারে ভৈরবের পত্নী।
তাঁকে শুভঙ্করী নামেও ডাকা হয়, যার অর্থ হল যে তিনি তার ভক্তদের যারা তার সন্তান, তাঁদের শুভকর্মের কর্তা, যার অর্থ তিনি একজন ভাল মা। যারা অযৌক্তিক তথা নিষ্ঠুর তাঁদের প্রতি সহিংসতা, শাস্তি এবং রক্তপাতের পক্ষে তিনি থাকেন, যার অর্থ এই যে তিনি তাঁদের সব সহিংসতার জনক। তাঁকে হিংসাত্মক এবং ভয়ানক হিসাবে দেখা যায় বলে বোধ করা হয় কিন্তু তিনি তার সন্তানদের কাছে সৌম্য জননী (মাতা)।[৮][৯]
↑Erndl, Kathleen M. “Rapist or Bodyguard, Demon or Devotee: Images of Bhairo in the Mythology and Cult of Vaiṣṇo Devī.” In Criminal Gods and Demon Devotees: Essays on the Guardians of Popular Hinduism. Edited by Alf Hiltebeitel, 239–250. Albany: State University of New York Press, 1989