কারিনা কাপুর (হিন্দি: करीना कपूर; উচ্চারিত [kəˈriːnaːkəˈpuːr]; জন্ম: (১৯৮০-০৯-২১)২১ সেপ্টেম্বর ১৯৮০; বিবাহোত্তর কারিনা কাপুর খান নামে পরিচিত) হলেন একজন ভারতীয় বলিউড অভিনেত্রী।[১] তিনি অভিনেতা রণধীর কাপুর ও ববিতা শিবদাসানির কন্যা এবং অভিনেত্রী কারিশমা কাপুরের ছোট বোন। প্রায়ই তাকে ঘরোয়াভাবে বেবো বলা হয়,[২] অভিনয় জীবনে তিনি ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
২০০০ সালে রিফিউজি চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। ঐতিহাসিক নাট্যধর্মী অশোক এবং মেলোড্রামাধর্মী ব্লকব্লাস্টার কভি খুশি কভি গম... চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। শুরুর সাফল্যের পর তার কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয় এবং নেতিবাচক সমালোচনা অর্জন করে। ২০০৪ সাল ছিল তার ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। এই বছর তিনি নাট্যধর্মী চামেলি চলচ্চিত্রে একজন যৌনকর্মীর ভূমিকায় এবং দেব চলচ্চিত্রে দাঙ্গা কবলিত এক নারী আলিয়া ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে তিনি উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত ওথেলো নাটকের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত ওমরকার চলচ্চিত্রে মূল নাটকের ডেসডিমোনা চরিত্রের সংকলিত ডলি মিশ্রা ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার এই ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৭ সালের জব উই মেট চলচ্চিত্রে গীত চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার এবং ২০১০ সালের উই আর ফ্যামিলি চলচ্চিত্রে তার ভূমিকার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। কাপুর বলিউডের সর্বাধিক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র হাস্যরসাত্মক নাট্যধর্মী থ্রি ইডিয়টস (২০০৯) এবং সামাজিক নাট্যধর্মী বজরঙ্গী ভাইজান (২০১৫) চলচ্চিত্রে প্রধান নারী ভূমিকায় করে সাফল্য লাভ করেন। এছাড়া তার অভিনীত ২০০৯ সালে থ্রিলারধর্মী কুরবান এবং ২০১২ সালে হিরোইন চলচ্চিত্র দুটি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।
প্রারম্ভিক জীবন
১৯৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবারিকভাবে তাকে "বেবো" নামে ডাকা হয়।[৪] তার পিতা অভিনেতা রণধীর কাপুর এবং মাতা অভিনেত্রী ববিতা শিবদাসানি। তার বড় বোন অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর। তার পিতামহ ছিলেন অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজ কাপুর, অন্যদিকে তার মাতামহ ছিলেন অভিনেতা হরি শিবদাসানি। তার প্র-পিতামহ ছিলেন অভিনেতা পৃথ্বীরাজ। অভিনেতা ঋষি কাপুর ও রাজীব কাপুর তার চাচা এবং অভিনেত্রী নীতু সিং ও উদ্যোক্তা রিতু নন্দা তার চাচী। তার চাচাতো ভাই অভিনেতা রণবীর কাপুর, আরমান জৈন ও আদর জৈন এবং ব্যবসায়ী নিখিল নন্দ। অভিনেতা শাম্মী কাপুর ও শশী কাপুর তার পিতামহের ভাই এবং অভিনেত্রী সাধনা শিবদাসানি তার মায়ের ফুফু। কারিনার মতে, তার নাম আন্না কারেনিনা বই থেকে নেয়া হয়েছে, তার মাতা যখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তখন তিনি এই বইটি পড়ছিলেন।[৫] কাপুর তার পিতার দিক থেকে হিন্দু পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত[৬] এবং মাতার দিক থেকে সিন্ধি ও ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত। [৭] ছোটবেলায় কারিনা পারিবারিক কারণে হিন্দু ও খ্রিস্টান দুই ধর্মের আবহে বেড়ে উঠেন।[৮] কারিনার উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।[৯]
কর্মজীবন
২০০০ সালে রিফিউজিতে অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেকের সাথে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল।এরপর তিনি ৩১ টি অন্যান্য হিন্দি সিনেমাতে উপস্থিত হয়েছিলেন । এছাড়া তিনি 'তাশান', 'লাজ্জো', 'কিসমত টকিজ'-এ হাজির হন।
২০১৩ সালে কারিনা ও অজয় দেবগনসত্যগ্রহ চলচ্চিত্রে চতুর্থবারের মত একসাথে কাজ করেন। প্রকাশ ঝা পরিচালিত তারকাবহুল সামাজিক-রাজনৈতিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রটিতে আরও অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন, অর্জুন রামপাল, মনোজ বাজপেয়ী ও অমৃতা রাও। এটি ২০১১ সালে সমাজকর্মী আন্না হাজারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত।[১০] চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের নিকট থেকে অল্প প্রশংসা অর্জন করে এবং বক্স অফিসে ₹৬৭৫ মিলিয়ন আয় করে।[১১]ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস-এর এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয় যে প্রতিবেদক ইয়াসমিন আহমেদ চরিত্রে কাপুরের ভূমিকা "কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংলাপ বলা এবং প্রধান অভিনেত্রীর মত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে উপস্থিত থাকার মধ্য সীমাবদ্ধ ছিল।"[১০] এরপর প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক গোরি তেরে প্যায়ার মেঁ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর বৈবাহিক জীবন ও পরিবারের প্রতি দৃষ্টি দিতে গিয়ে তিনি পরবর্তী দুই বছর কাজ কমিয়ে দেন।[১২] এই সময়ে তিনি ২০১১ সালের সিংহাম চলচ্চিত্রের অনুবর্তী পর্ব মারপিটধর্মী সিংহাম রিটার্নস (২০১৪) চলচ্চিত্রে অজয় দেবগনের বিপরীতে এবং নাট্যধর্মী বজরঙ্গি ভাইজান (২০১৫) চলচ্চিত্রে সালমান খানের বিপরীতে তাদের প্রেমিকার চরিত্রে ছোট অংশে কাজ করেন। সিংহাম রিটার্নস ছবিটিতে পরিচালক রোহিত শেঠী কারিনার চরিত্রটি বিশেষ করে তার জন্যই লিখেছিলেন এবং এটি ছিল তাদের একসাথে তৃতীয় কাজ।[১৩] চলচ্চিত্রটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে এবং কারিনা অল্প গুরুত্বের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সমালোচিত হন।[১৪] তবে চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফলতা অর্জন করে এবং ₹১.৪ বিলিয়নের অধিক আয় করে।[১৫] মোট ₹৩.২০ বিলিয়ন আয় করা কবির খানেরবজরঙ্গি ভাইজান চলচ্চিত্রটি সেই বছরের ভারতের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র।[১৬] এছাড়া চলচ্চিত্রটি ৬৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সুস্থ্য বিনোদন প্রদানকারী সেরা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।[১৭]
২০১৬ সালে কারিনা অর্জুন কাপুরের বিপরীতে প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক কি অ্যান্ড কা চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে কাজ করেন। লেখক-পরিচালক আর. বালকির চলচ্চিত্রটি গৎবাঁধা লৈঙ্গিক ধারণা নিয়ে নির্মিত, যেখানে তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিয়া বনসল চরিত্রে অভিনয় করেন। সমালোচকগণ ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রকার মতামত প্রদান করেন,[১৮] কিন্তু চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় এবং বিশ্বব্যাপী ₹১ বিলিয়ন আয় করে।[১৯] একই বছর তিনি অভিষেক চৌবের সমাদৃত উড়তা পাঞ্জাব চলচ্চিত্রে ডাক্তার প্রীত সহনি চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে মাদকের ব্যবহার নিয়ে নির্মিত অপরাধ নাট্য চলচ্চিত্র, যাতে তার সহশিল্পী ছিলেন শাহিদ কাপুর, আলিয়া ভাট ও দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ। কারিনা শুরুতে চলচ্চিত্রটিতে তার চরিত্রের দৈর্ঘ্যের জন্য কাজ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু পরে পুরো গল্পটি পড়ে এতে কাজ করতে সম্মত হন এবং তার পারিশ্রমিকও কমিয়ে নিয়ে আসেন।[২০][২১] এই কাজের জন্য কারিনা শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও জি সিনে পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[২২][২৩]
বিয়ে
তিনি সাইফ আলি খান কে বিয়ে করেন। কারিনা কাপুর খানের ২য় স্ত্রী।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই দ্বিতীয়বার মা হবেন করিনা কাপুর খান। ব্যাস অপেক্ষার অবসান! চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই করিনা ও সাইফের ঘরে আসবে পরবর্তী সদস্য। ফের একবার দাদু হতে চলার জন্য উচ্ছ্বসিত রণধীর কাপুর জানান, “চিকিৎসকরা করিনাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ডেট দিয়েছেন।” [২৪][২৫]
↑IndiaFM News Bureau (২৯ ডিসেম্বর ২০০৪)। "What's a book got to do with Kareena?"। Bollywood Hungama। ২৯ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০০৭।
↑চৌধুরী, মোহিনী (২৫ মার্চ ২০১৬)। "Role reversal"। বিজনেস লাইন (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।
↑Jha, Lata (৪ জানুয়ারি ২০১৬)। "Top ten Bollywood grossers of 2015"। মিন্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০।