রণধীর কাপুর (জন্মঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭) সত্তরের দশকের একজন বলিউড অভিনেতা। রণধীর বিখ্যাত কাপুর পরিবার এর একজন সদস্য, তার বাবা রাজ কাপুর পঞ্চাশের দশকের বলিউড অভিনেতা ছিলেন। রণধীর 'শ্রী ৪২০' (১৯৫৫) চলচ্চিত্রে শিশু চরিত্রে অভিনয়ের পর ১৯৭১ সালে 'কাল আজ অর কাল' চলচ্চিত্রে প্রাপ্তবয়স্ক চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর রণধীর 'জিত' (১৯৭২), 'হামরাহি' (১৯৭৪) এবং রোমান্টিক কমেডিসমূহ 'জাওয়ানি দিওয়ানি' (১৯৭২), 'লাফাঙ্গে' (১৯৭৫), 'পোঙ্গা পণ্ডিত' (১৯৭৫), 'ভালা মানুছ' (১৯৭৬) এবং তারকাবহুল চলচ্চিত্র যেমন 'রামপুর কা লাকশমান' (১৯৭২) এবং 'হাথ কি সাফাই' (১৯৭৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের চলচ্চিত্র 'কাসমে ভাদে'তে রণধীর অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার সেরা সহঅভিনেতা বিষয়শ্রেণীতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। রণধীর 'ভাঁওয়ার' (১৯৭৬), 'খলিফা' (১৯৭৬), 'আজ কা মহাত্মা' (১৯৭৬), 'চাচা ভাতিজা' (১৯৭৭), 'মামা ভাঞ্জা' (১৯৭৭), 'হিরালাল পান্নালাল' (১৯৭৮), 'চোর কে ঘর চোর' (১৯৭৮), 'আখরি ডাকু' (১৯৭৮), 'ঢোঙ্গী' (১৯৭৯), 'বিবি ও বিবি' (১৯৮১) এবং 'হাম সে না জিতা কোয়ি' (১৯৮১) এ অভিনয় করে প্রশংসিত হন।
১৯৭১ সালে রণধীর ববিতা শিবদাসানিকে বিয়ে করেন। ববিতা কারিশমা কাপুর (১৯৭৪) এবং কারিনা কাপুর (১৯৮০) নামের দুটি মেয়ের জন্ম দেন, ১৯৮৮ সালে রণধীর আর ববিতা আলাদাভাবে বাস করা শুরু করলেও ২০০৭ সালে তারা আবার একত্র হন।[২]
রণধীর জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বম্বে শহরের মাতুঙ্গার করুণাকরণ মাতৃসদনে, রাজ কাপুর এবং কৃষ্ণা কাপুরের প্রথম সন্তান হিসেবে, রণধীরের ডাকনাম ছিলো ডাব্বু।[৩] তার পরিবার আগে বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে এবং সামুন্দ্রিতে (পাঞ্জাব) ছিলো। রণধীরের দাদা পৃথ্বীরাজ কাপুর (১৯০৬-১৯৭১) বিশের দশকে অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশকে একজন প্রথিতযশা অভিনেতা হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। রণধীরের ছোটো ভাই ঋষি কাপুর যিনি ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭০ সালের চলচ্চিত্র মেরা নাম জোকার-এ শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন এবং সত্তরের দশকের একজন অন্যতম জনপ্রিয় নায়কে পরিণত হন। রণধীরের চাচাদ্বয় শাম্মী কাপুর এবং শশী কাপুরও নামকরা বলিউড অভিনেতা ছিলেন যারা যথাক্রমে ষাট এবং সত্তরের দশকে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন।
চলচ্চিত্র জীবন
শিশুশিল্পী হিসেবে রণধীর তার পিতা রাজ কাপুর অভিনীত চলচ্চিত্র 'শ্রী ৪২০'-এ অভিনয় করেন যদিও তাকে কিছুক্ষণের জন্য দেখানো হয়েছিলো। ১৯৭১ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র 'কাল আজ অর কাল' মুক্তি পায় যেটাতে তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী ববিতা তার প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেন।[৪] চলচ্চিত্রটি রণধীরের বাবা রাজ কাপুরের চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আরকে ব্যানার এর অধীনে নির্মিত হয়েছিলো এবং মোটামুটি ব্যবসাসফল হয়েছিলো।
প্রথম চলচ্চিত্রের পর ১৯৭২ সালে তার তিনটি হিট চলচ্চিত্র মুক্তি পায়; এগুলো হলো জিত, রামপুর কা লক্ষণ এবং জাওয়ানি দিওয়ানি।[৫]জাওয়নি দিওয়ানি ছিলো ১৯৭২ সালের অন্যতম বড় হিট চলচ্চিত্র। রামপুর কা লক্ষণ তে রণধীর শত্রুঘ্ন সিনহা এবং রেখার সঙ্গে কাজ করেছিলেন, চলচ্চিত্রটির পরিচালক ছিলেন সেই সময়কার খ্যাতিমান পরিচালক মনমোহন দেসাই। ববিতা শিবদাসানির সঙ্গে রণধীর জিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। জিত চলচ্চিত্রটি ছিলো তামিল চলচ্চিত্র এন আন্নান এর পুনঃনির্মাণ যেখানে তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের সেই সময়কার মহানায়ক এমজিআর অভিনয় করেছিলেন আর তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন জয়ললিতা জয়রাম। জিত চলচ্চিত্রটি সফল হওয়ার পর রণধীর এমজিআরের আরেকটি চলচ্চিত্র হিন্দি ভাষায় পুনঃনির্মাণ করার কথা ভাবেন। এমজিআর অভিনীত চলচ্চিত্র রিকশাকারান যেটি ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় ওটিকে পুনঃনির্মিত করে বানানো হয় রিকশাওয়ালা নামে এবং নায়িকা হিসেবে নীতু সিংকে নেওয়া হয়; তবে চলচ্চিত্রটি ফ্লপ হয়। ১৯৭৪ সালে রণধীর অভিনীত হামরাহি এবং হাথ কি সাফাই হিট হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
রণধীর বিয়ে করেন ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর তারই অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র 'কাল আজ অর কাল' এর নায়িকা ববিতা শিবদাসানিকে।[৩][৬]কাল আজ অর কাল মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৭১ সালেরই জুলাই মাসে। দুই কন্যা, কারিশমা কাপুর, ১৯৭৪ সালের জুন মাসে এবং কারিনা কাপুর, ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে জন্মগ্রহণ করে।