স্যার ওয়েসলি উইনফিল্ড হল (ইংরেজি: Wes Hall; জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৭) বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেলে জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা এবং বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। দীর্ঘদেহী ওয়েস হল মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। বেশ দূর থেকে বোলিং করা স্বত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে অনেক ওভার বোলিং করার দারুণ ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি।
প্রারম্ভিক জীবন
বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেলে অপরিণত মাতা ও লাইট-হেভিওয়েট বক্সার পিতার সন্তান ছিলেন ওয়েস হল।[১][২] বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় উইকেট-রক্ষক / ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন তিনি। পরবর্তীকালে ফাস্ট বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে দলের সদস্য থাকা স্বত্ত্বেও কেবলমাত্র একটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন। এছাড়াও কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে দুই মৌসুম খেলে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি।
খেলোয়াড়ী জীবন
১৯৫৮ সালে ভারত গমনের জন্যে ওয়েস হলকে মনোনীত করা হয় ও সফলকাম হন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যাসিল বুচারের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। শেষমুহুর্তে ফ্রাঙ্ক ওরেলের নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার ফলে চমৎকার ফাস্ট বোলার হিসেবে ওয়েস হলের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ২৮ নভেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।
১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সফরে টেস্ট হ্যাট্রিক লাভ করেন। এরফলে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে তিনি এ কৃতিত্ব গড়েন। লাহোরের বাগ-ই-জিন্নাহ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তিনি একে-একে তৎকালীন টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার মুশতাক মোহাম্মদ, নাসিম-উল-গণি ও ফজল মাহমুদকে আউট করেন। হলের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নিজ দেশ বার্বাডোসের চার্লি গ্রিফিথ ছিলেন নিত্য অনুষঙ্গ। তাকে সাথে নিয়ে ১৯৬০-এর দশকে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নিয়মিত অগ্রযাত্রায় প্রভূত ভূমিকা রাখেন। তার সময়কালে তিনি বেশ জনপ্রিয় ক্রিকেটারে পরিণত হন।
১৯৬০ সালে বিখ্যাত টাই টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চূড়ান্ত ওভারে তিনি বোলিং করে সফলকাম হয়েছিলেন।[৩] ঐ খেলাটি টাইয়ে পরিণত হয়, যা টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম। খেলায় তিনি ৯/২০৩ লাভ করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনংসে ৫/৬৩ লাভ করেছিলেন। শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান ও হাতে ছিল ৩ উইকেট। শেষ বলে লিন্ডসে ক্লাইনকেবোল্ড করায় ২৩২ রানে স্বাগতিক দল অল-আউট হয় ও খেলাটি টাইয়ে পরিণত হয়।
ওয়েস, মনে রেখো, যদি তুমি নো-বল ছুঁড়ো, তাহলে তুমি কখনো বার্বাডোসে ফিরে যেতে পারবে না! - টাই টেস্টের চূড়ান্ত বলের পূর্বে হলের উদ্দেশ্যে ফ্রাঙ্ক ওরেল।[৪]
অব্যাহতভাবে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ ও ধারাবাহিকভাবে আঘাতপ্রাপ্তি ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ফলে টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ দিকে তার বোলিংয়ের কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে থাকে।[৫]
অবসর
খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর বার্বাডিয়ান রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। বার্বাডোসের সিনেট ও আইনসভার সদস্য হন তিনি।[৬] ১৯৮৭ সালে পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন ওয়েস হল।[৭] এছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট প্রশাসনেও জড়িত ছিলেন তিনি। কয়েক বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য ও দলীয় ম্যানেজারের দায়িত্ব পান।[৮][৯] ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট হল অব ফেমের সদস্য হন।[১০] এছাড়াও, ২০১৫ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।[১১] ২০১২ সালে খেলাধূলার সাথে জড়িত থাকার ফলে নাইট ব্যাচেলর পদবী লাভ করেন।
তথ্যসূত্র
↑"Wes Hall"। Player Oracle। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১১।
↑Spooner, Philip (১৪ অক্টোবর ২০০৭)। "All hail Hall!"। The Nation। ১৮ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১১।
↑Croft, Colin (২৮ জুন ২০০১)। "From legend to leader"। BBC Sport। British Broadcasting Corporation। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১১। Few can forget the acrimonious West Indies cricket tour to England in 1995. [...] The manager of that team was West [sic] Hall.