এডগার অ্যালান পো (জানুয়ারি ১৯, ১৮০৯ – অক্টোবর ৭, ১৮৪৯) একাধারে ছিলেন একজন মার্কিন লেখক, কবি, সম্পাদক এবং সাহিত্য সমালোচক। পো তার লেখা কবিতা, ছোট গল্প এবং বিশেষ করে মৃত্যুর সাথে সম্বন্ধযুক্ত ছোটোগল্প ও রহস্য গল্পগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। পোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং পুরো আমেরিকান সাহিত্যের রোমান্টিসিজমের একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি যে সময় ছোটোগল্প লিখতেন সেইসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছোটগল্প লেখকের সংখ্যা ছিল নগন্য। এছাড়াও তিনি গোয়েন্দা কথাসাহিত্যের উদ্ভাবক ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। শুধু তাই নয় সেইসময়ে সাহিত্যের উদীয়মান ধারা বিজ্ঞানকল্পকাহিনীতে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।[১] পোই প্রথম মার্কিন লেখক যিনি শুধুমাত্র লেখার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন, ফলত তার জীবন ছিল আর্থিকভাবে অসচ্ছল।[২]
পো ১৮১০ সালে আমেরিকার বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডেভিড পো এবং মা এলিজাবেথ "এলিজা" পো[৩] উভয়েরই পেশা ছিল অভিনয় করা। ১৮১০ সালে তার বাবা পরিবার ত্যাগ করেন চলে যান। এর পরের বছরই তার মা মারা যান। পো অনাথ হয়ে পরেন। এরপর পোকে ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডের জন এবং ফ্রান্সেস অ্যালান তাদের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা কখনই পোকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি যদিও ছোট্ট পোর সাথে তাদের সম্পর্ক ভালোই ছিল। পরবর্তীতে বড় হয়ে পো জুয়ায় আসক্ত হন এবং ফলশ্রুতিতে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। জুয়ার দেনা এবং পোয়ের পড়াশোনার ব্যয়কে কেন্দ্র করে জন এবং ফ্রান্সেস অ্যালানের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তিনি ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও অর্থের অভাবে এক বছর পর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। ১৮২৭ সালে তিনি ছদ্মনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এই সময়েই তিনি বেনামে তার সাহিত্যকর্ম প্রকাশ করতে শুরু করেন। একজন বোস্টোনিয়ান ছদ্মনামে প্রকাশ করেন তামেরলেন এবং অন্যান্য কবিতা (১৮২৭)। এটাই ছিলো তার প্রথম প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম। ১৮৩১ সালে যখন পো সামরিক অফিসার হতে ব্যর্থ হন তখন তার কবি ও লেখক হবার ইচ্ছা আরও দৃঢ় হয়।
পো এসময় গদ্য লেখায় মনোনিবেশ করেন। পরবর্তী কয়েক বছর একাধিক সাহিত্য পত্রিকা এবং সাময়িকীতে কাজ করেছেন। তিনি তার নিজস্ব সাহিত্য সমালোচনার স্টাইলের জন্য খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। কাজের জন্য তাকে বাল্টিমোর, ফিলাডেলফিয়া, নিউ ইয়র্ক সিটি সহ বেশ কয়েকটি শহরে থাকতে হয়। ১৮৩৬ সালে তিনি তার ১৩ বছর বয়সী ফুফাত বোন ভার্জিনিয়া ক্লেমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী ভার্জিনিয়া ক্লেম যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৪৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৪৪ সালের জানুয়ারিতে পো তার "দ্যা রেভেন" কবিতাটি প্রকাশ করেন যা তাঁকে তাৎক্ষণিক সাফল্য এনে দেয়। এরপর তিনি তার নিজস্বপত্রিকা দ্যা পেন প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেন, কিন্তু দুখঃখজনকভাবে এটি প্রকাশের আগেই ১৯৪৯ সালে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। অনেকে এও মনে করে যে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।[২]
পো এবং তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে শুধুমাত্র বিশ্ব সাহিত্যই নয় বরং মহাজাগতিক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির মতো বিশেষায়িত ক্ষেত্রগুলোও প্রভাবিত হয়েছিল। তিনি এবং তার কাজ নিয়ে অনেক নাটক, চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, গান লেখা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তার স্মৃতিবিজড়িত কয়েকটি বাড়িকে জাদুঘর ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও মিস্ট্রি রাইটার্স অফ আমেরিকা প্রতিবছর একটি পুরস্কার প্রদান করে যা এডগার অ্যাওয়ার্ড নামে পরিচিত।
প্রারম্ভিক জীবন
এডগার পো ১৮০৯ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস আঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ইংরেজ বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী এলিজাবেথ আর্নল্ড হপকিন্স পো এবং বাবা অভিনেতা ডেভিড পো জুনিয়র। তিনি বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। তার বড় ভাই উইলিয়াম হেনরি লিওনার্ড পো। এছাড়াও রোজালি পো নামে একটি ছোট বোন ছিল তার।[৪] তাদের দাদা ডেভিড পো সিনিয়র আনুমানিক ১৭৫০ সালের দিকে আয়ারল্যান্ডের কাভান জেলা থেকে আমেরিকায় আসেন।[৫] এডগার নামটি সম্ভবত উইলিয়াম শেকসপিয়র এর কিং লিয়ার নাটকের একটি চরিত্রের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে, যে নাটকটি পোর বাবা মা ১৮০৯ সালে অভিনয় করেছিলেন।[৬] তার বাবা ১৮১০ সালেই পরিবার ত্যাগ করেন[৭] এবং এক বছর পরে মা যক্ষ্মা হয়ে মারা যান। পোকে তখন ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডের একজন সফল ব্যবসায়ী জন অ্যালানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। জন অ্যালান দাস, কাপড়, গম, তামাকসহ আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ব্যবসা করতেন।[৮] অ্যালানরা তাকে "এডগার অ্যালান পো" নাম দেয়[৮] যদিও তারা কখনোই তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে দত্তক গ্রহণ করেনি।[৯]
জন অ্যালানের আক্রমণাত্মক অনুশাসনের কারণে পো বখে যেতে শুরু করেন।[৮] অ্যালান পরিবার ১৮১৫ সালে যুক্তরাজ্যে যায়। সঙ্গে ছিলেন পো। ১৮১৫ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত পো যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। পরবর্তীতে ১৮২০ সালে অ্যালান পরিবারের সাথে রিচমন্ডে ফিরে আসেন।[১০]
এডগার পো প্রাচীন ও আধুনিক ভাষা অধ্যয়নের জন্য ১৮২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[১০][১১] বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন প্রসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আদর্শ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুয়া, বন্দুক, তামাক এবং অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকলেও এই নিষেধ প্রায়ই উপেক্ষা করা হতো।[৮] পো এসময় জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তাঁর দেনা বেড়েই চলছিল।[১০] এই নিয়ে জন অ্যালানের সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অর্থাভাবে পো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেড়ে দেন। কিন্ত তিনি রিচমন্ডে ফিরে যাননি কারণ তখন তিনি জানতে পারেন যে তাঁর প্রিয়তমা সারাহ এলমিরা রয়স্টার অন্য একজনকে বিয়ে করেছে। তিনি ১৮২৭ সালের এপ্রিলে মাসে বোস্টনে যান এবং জীবিকার তাগিদে কেরানী ও সংবাদপত্রের লেখক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন[৮], এই সময়েই তিনি হেনরি লে রেনেট ছদ্মনামটি ব্যবহার করতে শুরু করেন।[১২]
সামরিক বাহিনীতে
পো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবার উদ্দেশ্যে ১৯২৭ সালে এডগার এ পেরি নাম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। এসময় তাঁর বয়স যদিও ছিলো ১৮ বছর , কিন্তু তিনি ২২ বছর বলে দাবি করেন।[১৩] প্রথমে তিনি বোস্টন হারবারের ফোর্ট ইন্ডিপেনডেন্সে ৫ ডলার বেতনে চাকরি করতেন। এই বছরই তার কাব্যগ্রন্থ তামেরলেন ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের মাত্র ৫০টি মুদ্রিত কপি বের হয়েছিল। বইটি সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়।[৮] এরপর পো সাউথ ক্যারোলিনার ফোর্ট মোলট্রিতে বদলি হন এবং আর্টিলারির আর্টিফিশিয়ার পদে উন্নীত হন। ফলে তাঁর পারিশ্রমিক দ্বিগুণ হয়ে যায়।[৮] দুই বছর সামরিকবাহিনীতে কাজ করার পর পো সার্জেন্ট মেজর পদপ্রাপ্ত হন। এসময় তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন লেফটেনেন্ট হাওয়ার্ড কে তাঁর প্রকৃত নাম জানান। তিনি পোকে বলেন যে সে যদি অ্যালানের সাথে পুনর্মিলিত হয় শুধুমাত্র তখনই তাঁকে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হবে এবং তিনি সামরিক একাডেমীতে যোগ দিতে পারবেন। পো অ্যালানকে চিঠি লেখে। আ্যালান প্রথম কয়েকমাস পোর চিঠির উত্তর দেয়া দেখে বিরত থাকে। এরপর যখন তার স্ত্রী মারা যায় এবং তাকে সমাধিস্থকরণের পরদিন পো এসে উপস্থিত হন তখন পোর প্রতি তার রাগ কোমল হয় এবং তারা পুরোনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলে।[১০]
ফলে পো ১৮২৯ সালে তাঁর সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পেয়ে বাল্টিমোরে তাঁর আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে যায়।[২] এদের মধ্যে ছিলেন ভার্জিনিয়া ক্লেম যিনি পরবর্তীতে পোর স্ত্রী হন।[১৪] ঐ বছরই পোর কবিতা খ্যাতনামা কাব্যসমালোচক জন নিল এর দ্বারা প্রশংসিত হয়।[১৫] এরপর পো তাঁর একটি কবিতা নিলকে উৎসর্গ করেন।[১৬]
পো ১৮৩০ সালে ওয়েস্টপয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।[১৭] এসময় পোর সঙ্গে অ্যালানের সম্পর্ক পুনরায় খারাপ হতে থাকে।[৮] পোও তাঁর দায়িত্বে অবহেলা করতে থাকেন এবং ১৯৩১ সালে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।[১৮]
এরপর তিনি নিউ ইয়র্কে যান এবং পোয়েমস নামে তাঁর তৃতীয় কাব্যসংকলন প্রকাশ করেন। এই বইটি প্রকাশে তাঁকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন ওয়েস্টপয়েন্ট মিলিটারি একাডেমির ক্যাডেটরা।[৮] বইটিতে পোর পূর্বে প্রকাশিত কবিতা তামেরলেন এবং আল আরাফ ছাড়াও ছয়টি পূর্বে অপ্রকাশিত কবিতাও ছিল।[১৯] এই বইটি পো ইউ এস ক্যাডেট কোরকে উৎসর্গ করেন।[২০]
প্রকাশক জীবন
১৮৩১ সালের পহেলা আগস্ট পোর বড় ভাই হেনরি অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মারা যান।[২১] এরপর পো একজন লেখক হিসেবে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা তাঁর জন্য সহজ ছিলনা। সেটা ছিল এমন একটা সময় যখন হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র আমেরিকান লেখনীর মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতেন।[৮][২২] এছাড়াও সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন না থাকায় সেখানকার প্রকাশকেরা ব্রিটিশ লেখকদের লেখা কোনো অনুমোদন ছাড়াই ছাপাতেন।[১০] ফলে তারা পারিশ্রমিক দিয়ে মার্কিন লেখকদের লেখা ছাপাতে আগ্রহী ছিলেন না।[২১]
এজন্য প্রথমে কিছুকাল কবিতা নিয়ে কাজ করলেও পো এবার গদ্যসাহিত্য লেখায় মনোযোগী হন।[২৩] তিনি ফিলাডেলফিয়া প্রকাশনীতে কিছু লেখা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি তাঁর একমাত্র নাটক পলিশিয়ান লেখায় হাত দেন। ১৯৩৩ সালে ছোটোগল্প বোতলে পাওয়া পান্ডুলিপি এর জন্য তাঁকে পুরস্কারে ভূষিত করে বাল্টিমোর সানডে টাইমস।[২৪] এই ছোটোগল্পটি লিখে তিনি জন পি কেনেডি নামে একজন প্রভাবশালী লেখক ও রাজনীতিবিদের নজরে আসেন। কেনেডি পোকে সাদার্ন লিটারারি মেসেঞ্জার সাময়িকীর সম্পাদক টমাস হোয়াইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং পো ১৯৩৫ সাল নাগাদ সেখানে সহকারী সম্পাদক পদে কাজ করতে শুরু করে।[২৫] কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হোয়াইট কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পোকে বরখাস্ত করে।[২৬] পো এরপর বাল্টিমোরে ফিরে যান। ১৯৩৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফুফাত বোন ভার্জিনিয়া ক্লেমের সাথে পো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এসময় পোর বয়স ছিলো ২৬ আর ভার্জিনিয়ার ১৩।[২৭]
পোর তরফ থেকে ভাল আচরণের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরে হোয়াইট পোকে পুনর্বহাল করে এবং তিনি ভার্জিনিয়া ও ভার্জিনিয়ার মার সঙ্গে রিচমন্ডে ফিরে আসেন। তিনি ১৮৩৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মেসেঞ্জারে চাকরিরত ছিলেন। পো দাবি করেন যে এসময়ের মধ্যে ঐ পত্রিকার বিক্রি ৭০০ থেকে বেড়ে ৩,৫০০ হয়ে গিয়েছিল।[৪] তিনি তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতা, বইয়ের পর্যালোচনা, সমালোচনা, ছোটোগল্প ঐ পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন।
পোয়ের উপন্যাস দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পাইম অফ ন্যান্টুকেট ১৮৩৮ সালে প্রকাশিত হয়।[১০] উপন্যাসটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। ১৮৩৯ সালের গ্রীষ্মে পো বার্টনের জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিনের সহকারী সম্পাদক হন। তিনি এখানে অসংখ্য নিবন্ধ, গল্প এবং সমালোচনা প্রকাশ করেন এবং মেসেঞ্জারে থাকাকালীন নিজেকে যে একজন মর্মভেদী সমালোচক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন তাঁর সেই খ্যাতি এসময় বহুগুণে বেড়ে যায়। ১৮৩৯ সালে তাঁর লেখা গ্রোটেস্ক এবং অ্যারাবিস্কের কাহিনী দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়, যদিও এর থেকে তিনি সামান্য অর্থই পেয়েছিলেন।[৮]
১৮৪০ সালের জুনে পো তাঁর নিজস্ব একটি জার্নাল শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি প্রস্তাবনা প্রকাশ করেন। তিনি পেনসিলভানিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ার নামানুসারে এটিকে পেন নামকরণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে এর নাম স্টাইলাস বলে ঘোষণা করেন।[১০] জার্নালটি পোয়ের মৃত্যুর আগে কখনই পৃথিবীর আলো দেখেনি।
পো প্রায় এক বছর পর বার্টনের ম্যাগাজিনের কাজ ছেড়ে সেইসময়ের অন্যতম নামী মাসিক গ্রাহামস ম্যাগাজিনে লেখক এবং সহ-সম্পাদক হিসেবে চাকরি নেন।[২৫] গ্রাহামস ম্যাগাজিনের ১৮৪১ সালের শেষ সংখ্যায় ঐ বছরে ম্যাগাজিনটির অসাধারণ সাফল্য অর্জন উদযাপনের জন্য যে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়, পো ছিলেন সেখানে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে একজন। পো লেখেন,
"আমেরিকা বা ইউরোপের কোনও ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা বোধহয় না আমাদের মতো বছর শেষ হবার আগেই তাদের কাজে তারা যে অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে তা নিয়ে এতটা সন্তুষ্ট হতে পারে। আমাদের এ সাফল্য সত্যিই নজিরবিহীন, প্রায় অবিশ্বাস্যই বলতে হয় বিশেষত যখন এতটা সংক্ষিপ্ত সময়কালে এটা সম্ভব হয়েছে তা বিবেচনা করি।" [২৮]
এই সময়ে, পো যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জন টাইলারের প্রশাসনে একটি অবস্থান সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য তিনি নিজেকে হুইগ পার্টির সদস্য বলে দাবি করেন।[৫] পো তাঁর বন্ধু ফ্রেডরিক টমাসের[৮] মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট টাইলারের ছেলে রবার্টের[১০] সাথে পরিচিত হন। তিনি রবার্টের কাছে ফিলাডেলফিয়ার কাস্টম হাউসে একটি পদ পাওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু পো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন। পো বলেন তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু টমাস ধারণা করে যে পো মদ্যপ অবস্থায় ছিলো।[১০] ফলে পোকে একটি পদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও শেষপর্যন্ত তিনি কোনো পদ পাননি।[১০]
১৮৪২ সালের জানুয়ারি মাসে এক সন্ধ্যায় স্ত্রী ভার্জিনিয়ার মধ্যে যক্ষ্মার প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভার্জিনিয়া তখন পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন।[১০] তিনি আংশিক সুস্থ হয়ে উঠলেও পো তাঁর অসুস্থতার চাপে আরও বেশি মদ্যপান করতে শুরু করলেন। তিনি গ্রাহামস ম্যাগাজিনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরকারি চাকরির সন্ধান করছিলেন কিন্তু সফল হননি। এরপর তিনি নিউইয়র্কে যান এবং সেখানে ব্রডওয়ে জার্নালে এবং পরে মিরর এ কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন।[২৯] সেখানে পো কবি হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলোর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সাহিত্যকর্মে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনেন। ফলে তিনি অন্য লেখকদের থেকে অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েন।[২০] ১৮৪৫ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর "দ্যা রাভেন" কবিতাটি ইভিনিং মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং পো প্রায় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান।[৩০] পোকে এই কবিতা প্রকাশের জন্য মাত্র ৯ ডলার সম্মানী দেয়া হয়েছিল।[৩১] কবিতাটি একই সাথে দ্যা আমেরিকান রিভিউ-এও প্রকাশিত হয়।[৩২]
১৮৪৬ সালে পোর মালিকানাধীন ব্রডওয়ে জার্নাল উঠে যায়।[২৯] পো সেসময় নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের একটি বাংলোয় থাকতেন। ভার্জিনিয়া ১৮৪৭ সালের ৩০ জানুয়ারি ঐ বাংলোতেই মারা যান।[৩৩] বাংলোটি এখন এডগার অ্যালান পো কটেজ নামে পরিচিত। সেখানে থাকার সময়ে পো নিকটবর্তী সেন্ট জনস কলেজের জেসুইট মিশনারীদের সাথে বন্ধুত্ব করেন।[৩৪] পোয়ের জীবনীকার এবং সমালোচকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পোয়ের সাহিত্যকর্ম তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর মা সহ জীবন থেকে চলে যাওয়া বিভিন্ন নারীর দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।[৩৫]
স্ত্রীর মৃত্যুর পরে পো ক্রমশ অস্থিরচিত্ত হয়ে পড়েন। এসময় রোড আইল্যান্ডের প্রোভেডেন্সে বসবাসকারী কবি সারা হেলেন হুইটম্যানের ও তাঁর বাগদান সম্পন্ন হয়। কিন্তু পো-র মদ্যপান এবং অসংলগ্ন আচরণের কারণে এই সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। এছাড়াও হুইটম্যানের মা এই সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেন।[৩৬] পো এরপর রিচমন্ডে ফিরে আসেন এবং তাঁর শৈশব প্রণয়ীনী সারা এলমিরা রয়েস্টারের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্কে জড়ান।[৯]
মৃত্যু
১৮৪৯ সালের ৩ অক্টোবর পোকে বাল্টিমোরের রাস্তায় বিকারগ্রস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।[২০] ওয়াশিংটন মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই ১৮৪৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোর ৫ টায় তিনি মারা যান।[৮] পোকে যখন পাওয়া যায় তখন সে এতটাই অসংগলগ্ন অবস্থায় ছিলো যে তাঁর কাছ থেকে এটাও জানা সম্ভব হয়নি যে তিনি কীভাবে এরকম শোচনীয় অবস্থায় পতিত হলেন। এসময় পো যে পোশাক পরে ছিলেন সেগুলোও ছিলো অন্য কারোর। মৃত্যুর পূর্বের রাতে তিনি “রেনল্ডস” নামটি বারবার বলছিলেন। তিনি রেনল্ডস নামের কাকে বা কাদের ডাকছিলেন তা জানা যায়না। কেউ কেউ বলেন মৃত্যর পূর্বে পোর শেষ কথাছিলো “ঈশ্বর আমার সহায় হোন”।[৮]
পোর মৃত্যুসনদসহ হাসপাতালের নথিগুলো এখন আর পাওয়া যায় না।[৩৭] সেসময়ের পত্রিকাগুলো পোর মৃত্যুর কারণ হিসেবে মস্তিষ্কে রক্ত জমা হওয়া বা মস্তিষ্কের প্রদাহকে[৮] দায়ী করে। পোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগ, সিফিলিস, কলেরা[৩৮], রাবিস[৩৯] এবং অতিরিক্ত মদ্যপানকে দায়ী করা হয়।[১০] ১৮৭২ সালের একটি সূত্রে পাওয়া যায় যে ভোট জালিয়াতি এবং এর থেকে সৃষ্ট সহিংসতার সাথে পোর মৃত্যুর কোন যোগ থাকতে পারে।[৪০]
গ্রিজওয়াল্ডের স্মৃতিচারণ
পোর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই প্রতিদ্বন্দ্বী রুফাস উইলমোট গ্রিজওয়াল্ড বেনামে তার মৃত্যুসম্বন্ধীয় নিবন্ধ লিখতে শুরু করে। নিবন্ধে সে পোকে উন্মাদ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে।[৪১]
নিবন্ধটি পোকে সমাধিকরণের দিনে নিউ ইয়র্ক ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গ্রিজওয়াল্ড নিবন্ধে নিজের ছদ্মনাম লিখেছিল লুডভিগ। নিবন্ধের শুরু হয়েছিল এভাবে,
এডগার অ্যালান পো মারা গেছেন। গত পরশু দিন বাল্টিমোরে। এই সংবাদ অনেককেই চমকে দেবে, তবে খুব কম লোকই শোকাহত হবে।[৪২]
লুডভিগ অনতিবিলম্বে নিজেকে প্রকাশ করে গ্রিজওয়াল্ড হিসেবে। ১৮৪২ সাল থেকেই সে পোর বিরোধীরা করে আসছিলো। সে এরপর "একজন লেখকের স্মৃতিচারণ" নামে একটি জীবনীপ্রবন্ধ লেখে।[৩০] এটা পোর ১৮৫০ সালের সাহিত্য সংগ্রহের সাথে প্রকাশিত হয়। ঐ প্রবন্ধে গ্রিজওয়াল্ড পোকে দুশ্চরিত্র, মদ্যপ, মাদকাসক্ত ও উন্মাদ বলে দাবি করে। সে এর সপক্ষে যুক্তি দেখানোর জন্য পোর একটি চিঠিকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরে।[৩০] প্রকৃতপক্ষে তার সিংহভাগ দাবিই ছিলো অতিরঞ্জন ও মিথ্যা। যেমন এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে পো মাদকাসক্ত ছিলো।[২০] এমনকি গ্রিজওয়াল্ড তাদেরকেও ছেড়ে কথা বলেনি যারা পোকে ভালোভাবে জানত।[২৯] জন নিল গ্রিজওয়াল্ডের প্রবন্ধের বিরোধীরা করে একটি প্রবন্ধ লেখে।[২৩] এসব সত্ত্বেও গ্রিজওয়াল্ডের লেখা জীবনী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই কারণে যে এটাই ছিলো পোর একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনী।[৮] তবে যে চিঠিগুলো গ্রিজওয়াল্ড তার দাবির সপক্ষে উপস্থাপন করেছিলো সেগুলো পরে জাল প্রমাণিত হয়।[৪৩]
সাহিত্যশৈলী ও মুলভাব
সাহিত্যরীতি
পোয়ের সর্বাধিক পরিচিত রচনাগুলো গথিক স্টাইলের।[৮] তার এই কাজগুলো জনসাধারণের রুচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে লেখা। তার লেখায় মৃত্যুর কারণ, এর লক্ষণ, পচন, বিকার, পরিণতি, জীবন্ত কবর দেয়া, বিলাপ করা এবং পুনর্জন্ম এই বিষয়গুলোই ফিরে ফিরে এসেছে।[৪৪] তার লেখাগুলোকে অতীন্দ্রিয়বাদের প্রতিক্রিয়া ডার্ক রোমান্টিসিজমের[৪৫] উদাহরণ হিসেবে দেখানো হলেও এরূপ সংজ্ঞায়িত করাতে পোর ঘোরতর আপত্তি ছিল।[৩৫] পো অতীন্দ্রিয়বাদ চর্চাকারীদের উপহাস করতেন।[৪৬][৪৬][৪৭] তবে তিনি তার বন্ধু টমাস হোলি শিভার্সকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন যে তিনি শুধু অতীন্দ্রিয়বাদ চর্চার নামে যারা ভন্ডামি করে তাদেরকে ঘৃণা করেন।[১০]
হরর বা অতঙ্কবাদী ঘরানার লেখা ছাড়াও পো লিখেছেন প্রহসন ও ব্যঙ্গকৌতুকধর্মী রচনা। কৌতুকপ্রদ করার জন্য তিনি লোখায় হাস্যকর বিদ্রুপ ব্যবহার করতেন।[৪৬] পোর প্রথম প্রকাশিত গল্প হলো মেটজেঙ্গারস্টেইন যেটি ছিল একটি হরর স্টোরি।[১০] পো এছাড়াও লিখেছেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনী যেখানে বাষ্পচালিত বেলুনের মতো উদীয়মান প্রযুক্তির কথাও ছিল।[৪৮]
পোর তার বেশিরভাগ লেখাই জনমানসের রুচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে লিখেছেন।[২১] ফলে শেষতক তিনি তার বিজ্ঞানকল্পকাহিনীগুলোর জন্য সিউডোসায়েন্স থেকে জনপ্রিয় উপাদান সংগ্রহ করেন।[৪৯]
সাহিত্য তত্ত্ব
পোর সাহিত্যকর্মে তার নিজস্ব সাহিত্যত্ত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। এই সাহিত্যতত্ত্বই তিনি তার প্রবন্ধ “দ্যা পোয়েটিক প্রিন্সিপাল” এ তুলে ধরেছিলেন।[১৭] তিনি লেখায় রূপক[৫০] ব্যবহার করতে কিংবা নীতিবাক্য[৫১] যোগ করতে অপছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন লেখার মর্মকথা এর ভেতরেই প্রকাশ পাবে। তিনি বলতেন যে সাহিত্যে কি বলা হয়েছে তা জলের মতো পরিষ্কার সেই সাহিত্য শিল্পগুণ বিচারে ব্যর্থ প্রতিপন্ন হয়।[৫২] তিনি বিশ্বাস করতেন মানসম্পন্ন সাহিত্য হবে সংক্ষিপ্ত।[১৭] তিনি আরও বিশ্বাস করতেন একজন লেখকের সক্ষমতা থাকবে তার লেখার সবরকম অনুভূতি এবং অভিপ্রায় নিরূপন করার।[৫৩]
পো দ্যা রাভেনের লেখনী পদ্ধতি নিয়ে রচনা দর্শন নামে এমনি প্রবন্ধে আলোচনা করেন। তিনি দাবি করেন যে তিনি তার উল্লিখিত এই পদ্ধতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করেন। পরবর্তীতে তার এই দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কবি টি এস এলিয়ট বলেন, “পো কীভাবে এই পদ্ধতি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অনুসরণ করেছিলেন তা বোঝা আমাদের পক্ষে কষ্টকর যদিনা আমার চিন্তা করি তিনি কীভাবে তার কবিতা যথাযথভাবে নিরূপন করেছেন। তার সাহিত্যের কাজগুলো নিজস্ব কর্মপন্থার ফলাফল, কোনো একটিপদ্ধতির নয়।”[৩০] জীবনীকার জোসেফ উড ক্রুচ ঐ প্রবন্ধটিকে পোর শিল্পকে যুক্তি দিয়ে বর্ণনা করার প্রয়াস হিসেবে মনে করেন।[৫৪]
উত্তরকাল
প্রভাব
জীবদ্দশায় পো সাহিত্যসমালোচক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। অপর একজন সাহিত্য সমালোচক জেমস রাসেল লোয়েল পোকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিচক্ষণ, দার্শনিক ও নির্ভীক সাহিত্যসমালোচকের আখ্যা দেন। পোর তিক্ত সাহিত্যসমালোচনার কারণে তাঁকে টোমাহক ম্যান বলে উল্লেখ করা হতো।[৫৫] পোর সমালোচনার জন্য পছন্দের শিকার ছিলেন বোস্টনের বিখ্যাত কবি হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলো। লংফেলোকে তার বন্ধুরা পোর সমালোচনা থেকে রক্ষা করার চেষ্টাকরতেন সবসময় এবং এটাকে লংফেলো যুদ্ধ বলে আখ্যা দেন। পো লংফেলোর কবিতাগুলোকে ধর্মীয় উপদেশদাতা, মৌলিকত্বহীন ও চুরি করা বলে তীব্র সমালোচনা করতেন।[৫৬] পো সঠিকভাবেই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন যে লংফেলোর জনপ্রিয়তা আর দীর্ঘকাল স্থায়ী হবেনা।[৫৬]
পোই ছিলেন ১৯ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের সেইসব লেখকদের প্রথম যারা গল্পলেখক হিসেবে ইয়োরোপে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।[৮] ফ্রান্সে লেখক শার্ল বোদেলেয়ার পোর লেখাগুলো ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন। এই অনুবাদগুলো পোকে ফ্রান্সে এবং ইয়োরোপে পরিচিত করে তুলেছিল।[৫১]
পোর কাল্পনিক গোয়েন্দা অগাস্ত দুঁপেকে নিয়ে লেখা গল্পগুলোই ভবিষৎতের গোয়েন্দা উপন্যাসগুলোর জন্য বুনিয়াদ তৈরি করে দেয়। শার্লক হোমসের লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল বলেন, “পোর প্রতিটি গোয়েন্দা গল্পই বৃক্ষের মূলস্বরূপ যেখান থেকে পরবর্তীতে পুরো গোয়েন্দা কথাসাহিত্য বেড়ে উঠেছে। কোথায় ছিলো গোয়েন্দাকাহিনী পো আসার আগে ? “[৫৭] মিস্ট্রি রাইটার্সআমেরিকা পোর নামানুসারে এডগার অ্যালান পো অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এই সম্মাননা এডগারস নামেই বেশি পরিচিত।[৪৬] পোর বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ফরাসি লেখক জুল ভার্নকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি পোর লেখা নানটুকেটের আর্থার গর্ডন পাইমের আখ্যানের সিক্যুয়েল লিখেছিলেন। জুল ভার্নের লেখা সিক্যুয়েলটির নাম অ্যান অ্যানটার্কটিক মিস্ট্রি।[৫৭] এই উপন্যসটি বরফাবৃত ময়দানের স্ফিংস নামেও পরিচিত। ইংরেজ সায়েন্স ফিকশন লেখক এইচ জি ওয়েলস বলেন, “এক শতাব্দী আগে দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে খুব বিচক্ষণ মানুষের চিন্তা কি হতে পারত সেটাই পাইম আমাদেরকে বলে।”[৫৭] ২০১৩ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকা পাইম উপন্যাসটিকে সর্বকালের সেরা উপন্যাসগুলোর একটি বলে তালিকাভুক্ত করে এবং তুলে ধরে যে এই উপন্যসটির প্রভাব কীভাবে পরবর্তী প্রজন্মের লেখক ডয়েল, হেনরি জেমস, বি টাভের্ন ও ডেভিড মোরেল এর লেখায় লক্ষ্যণীয়।[৫৮]
হরর গল্পের লেখক এইচ পি লাভক্রাফট পোর একই ঘরানার লোখাগুলো থেকে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিল যে তার একটি দীর্ঘপ্রবন্ধের একটি গোটা অংশই ছিল পোর এই ঘরানার লেখা নিয়ে। লাভক্রাফট তার একটি চিঠিতে লেখে, “গল্প লেখায় এডগার অ্যালান পো আমার আদর্শ।”[৫৯] বিখ্যাত ইংরেজ চলচ্চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচকক একবার বলেছিলেন যে তিনি এডগার অ্যালান পোর লেখা গল্প পড়তে ভালোবাসতেন বলেই পরবর্তীতে সাসপেন্স ঘরানার সিনেমা তৈরিতে হাত দেন।[৬০]
অনেক বিখ্যাত লেখকের লেখার স্টাইলের যেমন অনুকরণকারী দেখা যায় তেমনি পোর লেখার স্টাইলেরও অনেক অনুকরণকারী আছে।[৮] এই অনুকরণকারীদের একদল দাবি করে যে তারা পোর মৃত আত্মার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এই কবিতাগুলো পেয়েছে। এরকম একজন হলেন মার্কিন কবি লিজি ডোটেন যিনি ১৮৬৩ সালে অন্তর্জীবনের কবিতা নামে একটি কবিতারসংকলন প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন পোর আত্মা তাকে এই কবিতাগুলো দিয়েছে। এই কবিতাগুলো আসলে পোর কবিতা দ্যা বেলস এরই প্রতিলিপি।[৬১]
পোর বিরুদ্ধে সমালোচনাও কিন্তু কম হয়নি। এর কিছুটা পোর ব্যক্তিগত চরিত্রের ত্রুটি এবং সেই নিমিত্তে তার দুর্নামের দ্বারা প্রভাবিত।[৮] আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস কখনো কখনো পোর কাজের সমালোচনা করেছেন।[৮] ইয়েটস একবার পোকে অমার্জিতও বলেছিলেন। অতীন্দ্রিয়বাদী রালফ ওয়ালডো এমারসন পোর দ্যা রাভেন কবিতার সমালোচনা করে বলেন যে তিনি এর মধ্যে কোনো সারবস্তুই দেখেননা।[৩২] পোকে তিনি ব্যঙ্গ করে দ্যা জিঙ্গেল ম্যান বলে ডাকেন।[৬২] ব্রিটিশ লেখক অ্যালডাস হাক্সলি পোর কবিতায় কাব্যভাবের অতিরঞ্জনের সমালোচনা করেন এবং অমার্জিত বলে আভিহিত করেন।[৫২]
মনে করা হয় যে পোর প্রথম বই তামেরলেন ও অন্যান্য কবিতা বইটির মাত্র ১২টি কপি এখনো টিকে আছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ক্রিস্টিস অকশনিয়ারস এর নিলামে এগুলোর একটি কপি রেকর্ড মূল্য ৬৬২৫০০ ডলারে বিক্রি হয়।[৬৩]
পদার্থবিদ্যা ও মহাজগত
পো তার ১৮৪৮ সালে লেখা “ইউরেকা : একটি গদ্য কবিতা” প্রবন্ধে বিগ ব্যাং তত্ত্ব প্রমাণিত হবার প্রায় ৮০ বছর আগে অনুরূপ একটি তত্ত্বের উল্লেখ করেন।[৬৪][৬৫] শুধু তাই নয় এটি ছিল ওলবারস প্যারাডক্স এর সাম্ভব্য সমাধান।[৬৬][৬৭] পো ইউরেকায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ বর্জন করে শুধুমাত্র নিজস্ব অনুমানের ওপর ভিত্তি করে প্রবন্ধটি লেখেন।[৮] ফলে তার লেখাটি শুধুমাত্রই শিল্প, কোনোভাবেই বিজ্ঞান নয়।[৮] তারপরেও পো জোর দিয়ে বলেন যে এটাই সত্য[৩২] এবং তিনি মনে করতেন ইউরেকা তার সাহিত্যিকজীবনের সেরা কাজ।[৮] প্রকৃতপক্ষে ইউরেকা প্রবন্ধটি বিজ্ঞানগত দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ। এমনকি পো সেখানে পৃথিবীর ঘনত্ব ও ঘূর্ণনগতি নিয়ে নিউটনের প্রমাণিত নীতিকেও উপেক্ষা করেন।[২৯]
সংকেতলিপি
পোর সংকেতলিপি নিয়েও আগ্রহ ছিলো। তিনি ফিলাডালফিয়ার আলেক্সান্ডার সাপ্তাহিকে দাবি করেন যে তিনি সংকেতলিপির মর্মোদ্ধার করতে পারেন এবং অন্যদেরকে সংকেতবার্তা পাঠানোর জন্য আহ্বান জানান যেগুলো তিনি সমাধান করে দেবেন।[৩২] ১৮৪১ সালের জুলাই মাসে পো “এ ফিউ ওয়ার্ডস অব সিক্রেট রাইটিং “ নামে একটি প্রবন্ধ গ্রাহামস ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। এই বিষয়ে মানুষের উৎসাহকে পুঁজি করে তিনি “দ্যা গোল্ড বাগ” নামে সংকেতলিপি নিয়ে একটি গল্প লেখেন।[৬৮] পো এতে সফলতা পেলেও প্রকৃতপক্ষে সংকেতলিপি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ছিলনা তার। পোর যেটা ছিল সেটা হলো ভালো বিশ্লেষণ ক্ষমতা । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রতিস্থাপনের মধ্যমে যে সংকেতলিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব সেই তথ্যও সাধারণ পাঠকের অজ্ঞাত। ফলে পো খুব সহজেই পাঠকদের মধ্যে সংকেতলিপি সম্পর্কে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন এবং পত্রিকা ও মাসিকপত্রগুলোতে সংকেতলিপি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।[৬৯]
১৮৪১ সালে পো ডাব্লিউ বি টাইলার ছদ্মনামে দুটি সংকেত প্রকাশ করেন। সংকেতদুটি যথাক্রম ১৯৯২ এবং ২০০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এদের একটি ছিলো জোসেফ এডিসনের নাটক কেটো থেকে নেয়া একটি উক্তি। অপরটি সম্ভবত হেস্টার থারলের একটি কবিতার ওপর ভিত্তি করে।[৭০][৭১]
পো তার সময়ের অন্য যে কারও তুলনায় সংকেতলিপি নিয়ে অধিক আগ্রহী ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রধান সংকেতলিপি বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ফ্রিডম্যান পোর থেকেই আনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ছেলেবেলায় পোর লেখা দ্যা গোল্ডবাগ গল্পটি পড়ে ফ্রিডম্যানের সংকেতলিপির ব্যাপারে জানার উৎসাহ জন্মায়। ফ্রিডম্যান পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের পার্পল কোডের পাঠোদ্ধার করেছিলেন।[৬৮]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
একটি চরিত্র হিসেবে
পোকে ঐতিহাসিকভাবে খেপাটে প্রতিভা কিংবা যন্ত্রণাগ্রস্থ শিল্পীর একটি সাহিত্যিক চরিত্র হিসেবে চিত্রিত করা হয়ে থাকে।[৩৫] এরকম অনেক চিত্রণেই পোর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর সঙ্গে তাঁকে এক করে ফেলা হয়।[৭২] অনেকক্ষেত্রেই পোর এই মনগড়া রূপায়ণে তাঁকে রহস্যভেদী ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। আমরা এর উদাহরণ দেখতে পাই ম্যাথিউ পার্লের লেখা দ্যা পো শ্যাডো উপন্যাসে।[৭৩]
সংরক্ষিত বাসস্থান, জাদুঘর
পো বাল্যকালে যে বাড়িগুলোতে ছিলেন সেগুলোর একটিও এখন টিকে নেই। রিচমন্ডের বাড়িটি এখনো আছে যেটা ওল্ডস্টোনহাউস নামে পরিচিত। বাড়িটি এখন এডগার অ্যালান পো মিউজিয়াম , যদিও পো কখনো সেখানে থাকেননি। সেখানে সংগ্রহশালায় পো অ্যালান পরিবারের সাথে থাকার সময় যেসব জিনিস ব্যবহার করছিলেন সেগুলো আছে, এছাড়াও আছে পোর প্রথমদিকের প্রকাশিত দুষ্প্রাপ্য কিছু সাহিত্যকর্ম।[৭৪] ২৩ বছর বয়সী পো তার হবু স্ত্রী ভার্জিনিয়া ও দাদীর সাথে দেখা করার সময় ১৩ ওয়েস্ট রেঞ্জের ছাত্রাবাস কক্ষটিতে ছিলেন বলে মনে করা হয়। এটাও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং এখন সেখানে এডগার পো সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পো তার স্ত্রী ভার্জিনিয়া ও শাশুড়ি মারিয়া ক্লেমের সাথে ফিলাডেলফিয়াতে যে ভাড়াবাড়িগুলোতে ছিলেন সেগুলোর শেষেরটি এখনও টিকে আছে। পো ১৮৪৩ থেকে ১৮৪৪ সাল অব্দি যে স্প্রিং গার্ডেন হোম এ ছিলেন সেটি এখন ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস কর্তৃক এডগার অ্যালেন পো হিস্টোরিক সাইট নামে সংরক্ষিত। পোর শেষ বাড়িটি যেটা ব্রঙ্কসে অবস্থিত সেটাকে এডগার অ্যালান পো কটেজ নামে সংরক্ষণ করা হয়েছে।[৭৫]
বোস্টনের বয়লস্টন স্ট্রিটে পোর জন্মস্থান থেকে সামান্য দুরত্বে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি ফলক স্খাপন করা হয়েছে।[৭৬][৭৭][৭৮][৭৯] পো ৬২কার্ভার স্ট্রিটের যে বাড়িটিতে জন্মেছিলেন সেটি আর এখন নেই। ওই রাস্তাটির নামও পরিবর্তন করে চার্লস স্ট্রিট সাউথ নামকরণ করা হয়েছে।[৭৯][৮০] ব্রডওয়ে, ফায়েট ও কার্ভার স্ট্রিটের মিলনচত্বরটি একসময় পোর নামে নামকরণ করা হয়েছিলো।[৮১] কিন্তু রাস্তাগুলোর পুনর্বিন্যসের ফলে চত্বরটি আর এখন নেই। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে চার্লস স্ট্রিট যেখানে বয়লস্টন স্ট্রিটের সাথে মিলিত হয়েছে সেই চত্বরটিকে এডগার অ্যালান পো চত্বর নামকরণ করা হয়। এই চত্বরটি পো যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখান থেকে দুই ব্লক দুরত্বে অবস্থিত।[৮২]
২০১৪ সালের মার্চে পোর বোস্টনে ফিরে আসা নামক ভাস্কর্যটি নির্মাণের জন্য অর্থসংগ্রহ কর্মসূচি শেষ হয়। অন্য অনেক নকশার মধ্যে ভাস্কর স্টেফানি রকনাকের ভাস্কর্য নকশাটি জয়ী হয়। এই ভাস্কর্যটিতে দেখা যায় একজন পূর্ণায়ত পো বাতাসের বিপরীতে হেঁটে আসছেন, পাশে তারই লেখা দ্যা রাভেন কবিতার দাঁড়কাকটি তাকে অনুসরণ করে আসছে, তার সুটকেসের পাল্লা খুলেপড়েছে, সেখান থেকে তারই সাহিত্যকর্মের পান্ডুলিপির পৃষ্ঠাগুলো একের পর এক পাশের সাইডওয়াকে ভূপাতিত হচ্ছে।[৮৩][৮৩] ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর এই ভাস্কর্যটি উন্মোচন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পোয়েট লরিয়েট রবার্ট পিনস্কি।[৮৪]
পোর স্মৃতি বিজড়িত আরেকটি বাড়ির দেখা মেলে আপার ওয়েস্ট সাইডে। পো প্রথমবার যেবার নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন সেবার ঐ বাড়িতে থেকেছেন। একটি স্মৃতিফলকের তথ্য অনুযায়ী পো এই বাড়িটিতে বসেই দ্যা রাভেন লিখেছিলেন। সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটনের সুলিভানস আইল্যান্ড যা পোর দ্যা গোল্ড বাগ গল্পের পটভূমি এবং যেখানকার মোল্ট্রি দুর্গে পো সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ছিলেন সেই সুলিভান আইসল্যান্ডে পোর সরাইখানা নামে একটি রেঁস্তোরা আছে। এছাড়াও বাল্টিমোরের ফেল’স পয়েন্টে যে পানশালায় পো মৃত্যুর আগে শেষবার সুরাপান করেছিলেন বলে কথিত আছে সেই পানশালাটি এখনো সেখানেই আছে। সেখানকার জনশ্রুতি এই যে এডগার নামের একটি ভূত ওপরের কক্ষগুলোতে এখনো ঘুরে বেড়ায় l[৮৫]
আলোকচিত্র
পোর যে ডাগেরোটিপগুলো ( গোড়ার দিকে যে পদ্ধতিতে ফটোগ্রাফ তোলা হতো ) পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে সাহিত্য সম্বন্ধীয় ঐতিহাসিকগণ এখনো দারুণ উৎসাহী।[৮৬] এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য :
“আল্টিমা থুলে” (“সুদূর ভবিষ্যতের আবিষ্কার”), যেটির নামকরণ করা হয়েছিল সদ্য আবিস্কৃত ফটোগ্রাফিক পদ্ধতির সম্মানার্থে। ছবিটি ১৮৪৮ সালে রোড আইল্যান্ডের প্রোভেডেন্স এ তোলা হয়েছিল। সাম্ভব্য আলোকচিত্রী এডউইন এইচ ম্যানচেস্টার।
“অ্যানি”, যে ছবিটি পো তার বান্ধবী অ্যানি এল রিচমন্ডকে দিয়েছিলেন। ছবিটি সম্ভবত ১৮৪৯ সালের জুনে ম্যাসাচুসেটসের লোয়েল আইল্যান্ডে তোলা হয়েছিল। আলোকচিত্রীর নাম জানা যায়নি।
পো টোস্টার
১৯৪৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে কোনো এক ভক্ত একটি কনিয়াক মদের বোতল ও তিনটি গোলাপ পোর সমাধিসৌধে রেখে যেতেন। এই অজ্ঞাতনামা ভক্তকে পো টোস্টার বলা হয়। পোকে যেখানে সমাধিস্থ করা হয় সেই বাল্টিমোরের ওয়েস্টমিনিস্টার গীর্জার একজন ঐতিহাসিক স্যাম পোরপোরা ২০০৭ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে দাবি করেন যে তিনি ১৯৪৯ সাল থেকে এই শ্রদ্ধার্ঘ দিয়ে আসছেন যাতে গীর্জাটির সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং একই সঙ্গে অধিক তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়। তার এই দাবি সত্যি বলে প্রমাণিত হয়নি।[৮৭] তার গণমাধ্যমকে দেয়া তথ্যের মধ্যেও ভুল ছিল।[৮৮] পো টোস্টার শেষবার পোর সমাধিতে যান ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারিতে। ঐদিন ছিল পোর মৃত্যুর দ্বিশতবার্ষিকী।[৮৯]
নির্বাচিত কাজের তালিকা
ছোট গল্প
"কালো বিড়াল"
"দ্য ক্যাস্ক অফ অ্যামোনটিল্যাডো"
"ম্যালাস্ট্রোর্মে অবতরণ"
"এম ভালদেমারের মামলার তথ্যসমূহ"
"হাউস অফ আশারের পতন"
"দ্য গোল্ড-বাগ"
"হপ-ফ্রগ"
"দ্যা ইমপ অব দ্যা পারভার্স"
"লিজিয়া"
"লাল মৃত্যুর মুখোশ"
"মোরেলা"
"দ্যা মার্ডার ইন দ্যা রু মর্গ"
"শয়তানকে কখনো মাথায় তুলতে নেই"
"দ্যা ওভাল পোর্ট্রেট"
"দ্যা পিট অ্যান্ড দ্যা পেন্ডুলাম"
"অকাল সমাধি"
"দ্যা পারলোইনড লেটার"
"দ্যা সিস্টেম অব ডক্টর টার অ্যান্ড প্রফেসর ফেদার"
"দ্যা টেল দ্যা হার্ট"
"লস অব ব্রেথ"
কবিতা
"আল আরাফ"
"আনাবেল লি"
"বেলস"
"সমুদ্রের শহর"
"বিজয়ী কীট"
"স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন"
"এল্ডোরাডো"
"ইউলালি"
"ভুতুড়ে প্রাসাদ"
"টু হেলেন"
"লেনোর"
"তামেরলেন"
"দাঁড়কাক"
"উলালিউম"
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ
পলিশিয়ান (1835) - পোর লেখা একমাত্র নাটক
দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পিম অফ ন্যান্টুকেট (1838) - পোয়ের একমাত্র সম্পূর্ণ উপন্যাস
"দ্য বেলুন-হোয়াক্স" (1844) - সত্য গল্প হিসাবে মুদ্রিত একটি বানানো গল্প
"রচনা দর্শন" (1846) - প্রবন্ধ
ইউরেকা: একটি গদ্য কবিতা (1848) - প্রবন্ধ
"দ্য পোয়েটিক প্রিন্সিপল" (1848) - প্রবন্ধ
"দ্য লাইট-হাউস" (1849) - পোয়ের শেষ, অসম্পূর্ণ কাজ
↑ কখগMeyers, Jeffrey (1992). Edgar Allan Poe: His Life and Legacy (Paperback ed.). New York: Cooper Square Press. ISBN 978-0-8154-1038-6.।
↑Semtner, Christopher P. (2012). Edgar Allan Poe's Richmond : the Raven in the River City. Charleston [SC]: History Press. p. 15. ISBN 978-1-60949-607-4. OCLC 779472206।
↑ কখAllen, Hervey (1927). "Introduction". The Works of Edgar Allan Poe. New York: P.F. Collier & Son. OCLC 1050810755
↑"Edgar Allan Poe"। web.archive.org। ২০০৭-০৫-১৮। Archived from the original on ২০০৭-০৫-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৩।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑University of Virginia. A Catalogue of the Officers and Students of the University of Virginia. Second Session, Commencing February 1st, 1826. Charlottesville, VA: Chronicle Steam Book Printing House, 1880, p. 10
↑Cornelius, Kay (2002). "Biography of Edgar Allan Poe". In Harold Bloom (ed.). Bloom's BioCritiques: Edgar Allan Poe. Philadelphia, PA: Chelsea House Publishers. ISBN 978-0-7910-6173-2.।
↑Sova, Dawn B. (2001). Edgar Allan Poe A to Z: The Essential Reference to His Life and Work (Paperback ed.). New York: Checkmark Books. ISBN 978-0-8160-4161-9.।
↑Hecker, William J. (2005), Private Perry and Mister Poe: The West Point Poems, Baton Rouge, LA: Louisiana State University Press, ISBN 978-0-8071-3054-4।
↑Quinn, Arthur Hobson (1998). Edgar Allan Poe: A Critical Biography. Baltimore: Johns Hopkins University Press. ISBN 978-0-8018-5730-0. (Originally published in 1941 by New York: Appleton-Century-Crofts, Inc.)।
↑"BCHS | About | Poe Cottage"। web.archive.org। ২০০৭-১০-১১। Archived from the original on ২০০৭-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৩।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑Schroth, Raymond A. Fordham: A History and Memoir. New York: Fordham University Press, 2008: 22–25.
↑Walsh, John Evangelist (2000) [1968]. Poe the Detective: The Curious Circumstances behind 'The Mystery of Marie Roget'. New York: St. Martins Minotaur. ISBN 978-0-8135-0567-1. (1968 edition printed by Rutgers University Press)
↑"Though some wondered whether Poe wrote the source text, I find that it previously appeared in the Baltimore Sun of July 4, 1840; and that it was in turn based on a widely reprinted poem (“Nuptial Repartee”) that first appeared in the June 21, 1813, Morning Herald of London. A manuscript in the hand of Hester Thrale (i.e., Hester Lynch Piozzi) in Harvard’s library hints that she may be the true author." From Edgar Allan Poe: The Fever Called Living by Paul Collins. Boston: New Harvest/Houghton Mifflin Harcourt, 2014: p. 111.
↑"History"। The Raven Society (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-১১-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৪।
↑"BCHS | About | Poe Cottage"। web.archive.org। ২০০৭-১০-১১। Archived from the original on ২০০৭-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৪।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑"An Interactive Map of Literary Boston: 1794–1862" Forgotten Chapters of Boston's Literary History. The Trustees of Boston College. July 30, 2012. Retrieved May 22, 2012.
Vila Nova de Cerveira Estação Ferroviária de Vila Nova de Cerveiraa estação de Vila Nova de Cerveira, em 2022 Identificação: 18341 VNC (V.N.Cerveira)[1] Denominação: Estação de Vila Nova de Cerveira Administração: Infraestruturas de Portugal (norte)[2] Classificação: E (estação)[1] Tipologia: C [3] Linha(s): Linha do Minho (PK 115+582) Altitude: 5 m (a.n.m) Coordenadas: 41°56′9.98″N × 8°44′53.99″W (=+41.93611;−8.74833) Localização na red...
Prime Minister of the United Kingdom from 1963 to 1964 Douglas-Home redirects here. For other people with this name, see Douglas-Home (surname). The Right HonourableThe Lord Home of the HirselKT PC JP DLPortrait c. 1963Prime Minister of the United KingdomIn office18 October 1963 – 16 October 1964MonarchElizabeth IIPreceded byHarold MacmillanSucceeded byHarold WilsonLeader of the OppositionIn office16 October 1964 – 28 July 1965MonarchElizabeth IIPrime M...
Ріші Сунак англ. Rishi Sunak {{{ім'я}}} 79-й Прем'єр-міністр Великої Британії Нині на посадіНа посаді з 25 жовтня 2022Монарх Чарльз IIIПопередник Ліз ТрассГолова Консервативної партії Великої Британії Нині на посадіНа посаді з 24 жовтня 2022Попередник Ліз ТрассКанцлер скарбниці 13 лютог...
Building in China Zuiweng Pavilion The Zuiweng Pavilion (Chinese: 醉翁亭; pinyin: Zùiwēng Tíng; lit. 'Old Toper's Pavilion') is a pavilion lying to the south east of Chuzhou City, Anhui Province, People's Republic of China. Located in The Northern Song Dynasty whilst the structure that exists today dates to the Qing Dynasty (1644–1911). The pavilion takes its name from the Northern Song poet Ouyang Xiu, who called himself the Old Toper and wrote a poem entitled Zui...
هذه المقالة يتيمة إذ تصل إليها مقالات أخرى قليلة جدًا. فضلًا، ساعد بإضافة وصلة إليها في مقالات متعلقة بها. (سبتمبر 2018) رون ويليمز معلومات شخصية الميلاد 20 سبتمبر 1966 (العمر 57 سنة) الطول 1.83 م (6 قدم 0 بوصة) مركز اللعب مهاجم الجنسية مملكة هولندا المسيرة الاحترافية1 س...
Mary Russell-Vick Plaats uw zelfgemaakte foto hier Persoonlijke informatie Volledige naam Mary Russell-Vick Geboortedatum 16 juli 1922 Overlijdensdatum 1 maart 2012 Overlijdensplaats Pembury Nationaliteit Britse Sportieve informatie Discipline Hockey Portaal Sport Mary Russell-Vick, geboren als Mary de Putron, (16 juli 1922[1] – Pembury, 1 maart 2012) was een Brits hockeyer, afkomstig uit Guernsey.[2] Russell-Vick speelde 30 wedstrijden voor de Engelse vrouwenho...
هذه المقالة يتيمة إذ تصل إليها مقالات أخرى قليلة جدًا. فضلًا، ساعد بإضافة وصلة إليها في مقالات متعلقة بها. (أبريل 2019) ديفيد ر. باركر معلومات شخصية الميلاد 7 مايو 1961 (62 سنة) مواطنة الولايات المتحدة الحياة العملية المدرسة الأم جامعة شيكاغوجامعة كاليفورنيا، بركلي ...
Iglesia de San Juan bien de interés cultural LocalizaciónPaís España EspañaComunidad Aragón AragónProvincia Huesca HuescaLocalidad San Juan, La FuevaCoordenadas 42°27′04″N 0°17′08″E / 42.45098, 0.28556Información religiosaCulto CatólicoDiócesis Barbastro-MonzónAdvocación San Juan BautistaPatrono Juan el BautistaHistoria del edificioConstrucción Primera mitad del siglo siglo XIIDatos arquitectónicosTipo Iglesia parroquialEstilo Román...
У этого термина существуют и другие значения, см. Левченко. ХуторЛевченко 47°34′01″ с. ш. 38°42′03″ в. д.HGЯO Страна Россия Субъект Федерации Ростовская область Муниципальный район Матвеево-Курганский Сельское поселение Новониколаевское История и география Час...
American tech entrepreneur Greg WylerGreg Wyler in 2015Born12 November 1969 Gregory Thane Wyler (born 12 November 1969)[not verified in body] is an American tech entrepreneur, engineer, and inventor. He was the founder and executive chairman of OneWeb[1] and the founder of O3b Networks. Business ventures Wyler spent four years developing telecommunications in Africa in rural locations. In 2003,[2] he built a local team and connected over 200 schools to the Internet, pr...
Species of moth Thyrocopa apatela At Haleakala National ParkMaui, Hawaii Scientific classification Kingdom: Animalia Phylum: Arthropoda Class: Insecta Order: Lepidoptera Family: Xyloryctidae Genus: Thyrocopa Species: T. apatel Binomial name Thyrocopa apatela(Walsingham, 1907) Synonyms Hodegia apatela Walsingham, 1907 Thyrocopa mediomaculata Walsingham, 1907 Thyrocopa apatela, the grasshopper moth[1] or Haleakala flightless moth,[2] is a species of brachypterous (flightles...
This article contains the Meitei alphabet. Without proper rendering support, you may see errors in display. 2000 Indian filmPaariPosterDirected byAribam Syam SharmaDance Director:Pukhrambam DhanajitWritten byAribam GautamProduced byChildren's Film Society, IndiaStarringR.K. SurchandraCinematographyPhurailatpam ImochaAssistants:Irom Maipak, Yumnam Imo & N. DilipStills:Phurailatpam SwadhinkumarVideography:Saikhom BungobiEdited byUjjal NandyMusic byNgangom EbopishakSound:A. ShantimoMusic Sco...
Untuk bupati Seruyan pertama, lihat Darwan Ali. Universitas Darwan AliJenisPerguruan Tinggi SwastaDidirikan2008RektorDr. Wendy KesumaStaf akademik57Jumlah mahasiswa1.342LokasiSampit, Kalimantan Tengah, IndonesiaKoordinat: 2°32′32″S 112°56′47″E / 2.5422067°S 112.9463395°E / -2.5422067; 112.9463395KampusUrbanWarnaMerah Situs webwww.unda.ac.id Universitas Darwan Ali (disingkat UNDA) adalah sebuah perguruan tinggi swasta di Kota Sampit, Kabupaten Kotawari...
Species of fish Common dentex Common dentex off Tenerife (Spain) Conservation status Vulnerable (IUCN 3.1)[1] Scientific classification Domain: Eukaryota Kingdom: Animalia Phylum: Chordata Class: Actinopterygii Order: Spariformes Family: Sparidae Genus: Dentex Species: D. dentex Binomial name Dentex dentex(Linnaeus, 1758) Distribution map Synonyms Dentex vulgaris Valenciennes, 1830 Sparus dentex Linnaeus, 1758 The common dentex (Dentex dentex) is a species of fish in the fam...
In Heilbronn gibt es 15 Landschaftsschutzgebiete.[1] Nach der Schutzgebietsstatistik der Landesanstalt für Umwelt, Messungen und Naturschutz Baden-Württemberg (LUBW)[2] stehen 2.255,00 Hektar der Fläche des Stadtgebiets unter Landschaftsschutz, das sind 22,58 Prozent. Inhaltsverzeichnis 1 Liste 2 Siehe auch 3 Einzelnachweise 4 Weblinks Liste Name Bild Kennung Einzelheiten Position FlächeHektar Datum Stiftsberg-Wartberg 1.21.001 WDPA: 324853 Heilbronn ⊙ 330,0 8. ...
United Nations resolution adopted in 2005 UN Security CouncilResolution 1608Presidential palace in Port-au-PrinceDate22 June 2005Meeting no.5,210CodeS/RES/1608 (Document)SubjectThe question concerning HaitiVoting summary15 voted forNone voted againstNone abstainedResultAdoptedSecurity Council compositionPermanent members China France Russia United Kingdom United StatesNon-permanent members Algeria Argentina Benin Brazil Denmark Greec...
Far East OrchardJenisPublikSubsidier Far East OrganizationKode emitenSGX: O10IndustriProperti dan HotelDidirikan1967; 56 tahun lalu (1967) (sebagai Ming Court Limited)KantorpusatSingapuraWilayah operasiSingapuraTokohkunciKoh Boon Hwee, Ketua[1]Lui Chong Chee, CEO[2]IndukFar East OrganizationSitus webFar East Orchard Far East Orchard Limited (FEO), dulunya disebut sebagai Orchard Parade Holdings Limited[3] adalah sebuah subsidier terdaftar dari Far East Organizatio...
Đóng cửa chính phủ liên bang Hoa Kỳ năm 2013Bảng báo rằng Tượng Nữ thần Tự do (phía sau) và đảo Ellis bị đóng cửaĐịa điểmHoa KỳHệ quảĐạo luật Tiếp tục Cấp tiền năm 2014 Từ ngày 1 tháng 10 đến 17 tháng 10 năm 2013, chính phủ liên bang Hoa Kỳ bị đóng cửa, tức ngừng các dịch vụ được coi là không loại trừ theo Đạo luật Phòng ngừa Thiếu hụt.[1][2][3] Vì Quốc ...